1 হে আমার আপন জাতি, আমার শিক্ষায় কান দাও, আমার মুখের কথা কান পেতে শোন।
2 এক উপমা-কাহিনীর জন্য আমি মুখ খুলব, অতীতের গূঢ় ইতিকথা উচ্চারণ করব।
3 আমরা যা শুনেছি জেনেছি, আমাদের পিতৃগণ যা বর্ণনা করেছেন আমাদের কাছে,
4 আমরা তা গোপন রাখব না তাদের সন্তানদের কাছে; আগামী যুগের মানুষের কাছে বর্ণনা করব প্রভুর প্রশংসা, তাঁর প্রতাপ, সেই সব আশ্চর্য কাজ যা তিনি সাধন করলেন।
5 যাকোবে তিনি এক সাক্ষ্য স্থাপন করলেন, ইস্রায়েলে এক বিধান জারি করলেন: আমাদের পিতৃগণকে আজ্ঞা দিলেন তাঁরা যেন তাই শেখান আপন সন্তানদের কাছে,
6 আগামী যুগের মানুষ, অনাগত যত সন্তান তা যেন জানতে পারে, আর তারাও তেমনি যেন উঠে আপন সন্তানদের কাছে তা বর্ণনা করে ;
7 তারাও যেন পরমেশ্বরে আস্থা রাখে, ঈশ্বরের কর্মকাহিনী ভুলে না যায়, বরং তাঁর সমস্ত আজ্ঞা যেন পালন করে ;
8 তারা যেন না হয় তাদের আপন পিতৃগণের মত, সেই বিদ্রোহী ও জেদি যুগের মানুষ, এমন যুগের মানুষ যাদের অন্তর ছিল অস্থির, যাদের আত্মা ঈশ্বরের প্রতি ছিল অবিশ্বস্ত।
9 এফ্রাইম সন্তানেরা ধনুকে সজ্জিত হয়েও পিঠ ফিরিয়ে দিল সংগ্রামের দিনে।
10 তারা পরমেশ্বরের সন্ধি মানল না, তাঁর বিধানের পথে চলতে অস্বীকার করল।
11 তারা ভুলে গেল তাঁর মহাকর্মের কথা, সেই সব আশ্চর্য কাজ যা তিনি দেখিয়েছিলেন তাদের।
12 তাদের পিতৃগণের সামনে তিনি সাধন করেছিলেন আশ্চর্য কর্মকীর্তি মিশর দেশে, তানিসের মাঠে।
13 সাগর দু'ভাগ করে তিনি পার করিয়েছিলেন তাদের, জলকে দাঁড় করিয়েছিলেন বাঁধের মত :
14 দিনের বেলায় একটা মেঘ দ্বারা, সারারাত ধরে আগুনের আলো দ্বারা তাদের চালনা করতেন।
15 মরুপ্রান্তরে শৈলশিলা বিদীর্ণ ক'রে তিনি তাদের প্রচুর জল পান করালেন যেন সমুদ্রের অতল থেকে ;
16 শৈল থেকে বের করে আনলেন কত জলস্রোত, নদনদীর মতই বইয়ে দিলেন জল।
17 অথচ মরুদেশে পরাৎপরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তারা তাঁর বিরুদ্ধে পাপ করে চলল ;
18 মনোমত খাদ্য চেয়ে অন্তরে ঈশ্বরকে যাচাই করল।
19 তারা পরমেশ্বরের বিরুদ্ধে গজগজ করে একথা বলল, ‘ঈশ্বর কি মরুপ্রান্তরে ভোজনপাট সাজাতে পারবেন ?
20 এই যে! তিনি শৈলে আঘাত হানলেই বইতে লাগল জল, উছলে পড়ল যত খরস্রোত। "তিনি কি রুটিও দিতে পারবেন, আপন জনগণের জন্য কি মাংস যোগাতে পারবেন ?”
21 তখন একথা শুনে প্রভু কুপিত হলেন, যাকোবের বিরুদ্ধে আগুন জ্বলে উঠল, ইস্রায়েলের উপর জাগল তাঁর ক্রোধ ;
22 তারা যে পরমেশ্বরে বিশ্বাস রাখল না, ভরসা রাখল না তাঁর পরিত্রাণে।
23 তবুও তিনি উর্ধ্বের মেঘপুঞ্জকে আজ্ঞা দিলেন, খুলে দিলেন আকাশের যত দ্বার,
24 তাদের উপর খাদ্যরূপে বর্ষণ করলেন মান্না, তাদের দিলেন স্বর্গের গোধুম।
25 মানুষ খেল শক্তিশালীদের রুটি, তিনি তাদের কাছে পাঠালেন অপর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য :
26 আকাশে তিনি পুব হাওয়া বইয়ে দিলেন, আপন প্রতাপে আনলেন দক্ষিণ হাওয়া ;
27 তাদের উপর তিনি মাংস বর্ষণ করলেন ধুলার মত, উড়ন্ত পাখি সাগরের বালুকণার মত,
28 তা পড়ালেন তাদের শিবিরের মাঝে, তাদের আবাসগুলির চতুর্দিকে।
29 তারা খুব তৃপ্তির সঙ্গেই খোল, তিনি তো তাদের সেই বাসনা করেছিলেন মঞ্জুর।
30 সেই বাসনা তখনও তাদের ছাড়েনি, খাদ্য তখনও ছিল তাদের মুখে,
31 সেই সময় পরমেশ্বরের ক্রোধ তাদের বিরুদ্ধে জেগে উঠল, তাদের মধ্যে বলিষ্ঠ যত মানুষকে তিনি সংহার করলেন, ইস্রায়েলের যত যুবযোদ্ধাকে নিপাতিত করলেন।
32 এসব কিছু সত্ত্বেও তারা পাপ করে চলল, তাঁর আশ্চর্য কর্মকীর্তিতে বিশ্বাস রাখল না :
33 তাই তিনি এক ফুৎকারেই ফুরিয়ে দিলেন তাদের আয়ুর দিন, ভয়-ভীতিতে তাদের আয়ুর সন।
34 তিনি তাদের সংহার করলে তারা তাঁকে খুঁজত, তাঁর দিকে ফিরত, ঈশ্বরকে অনুসন্ধান করত;
35 তখন স্মরণ করত যে পরমেশ্বরই তাদের শৈল, ঈশ্বর, সেই পরাৎপরই, তাদের মুক্তিসাধক।
36 মুখে তারা তাঁকে তোষামোদ করত, জিহ্বায় তাঁকে মিথ্যা বলত ;
37 তাঁর প্রতি নিষ্ঠাবান ছিল না কো তাদের অন্তর, বিশ্বস্ত ছিল না তারা তাঁর সন্ধির প্রতি।
38 তবুও তাঁর করুণায় তিনি তাদের শঠতা ক্ষমা ক'রে তাদের ধ্বংস করলেন না, বহুবার ক্রোধ সংযত করলেন, জাগাননি সমস্ত রোষ।
39 বরং স্মরণ করলেন, দেহমাংসের মানুষই মাত্র তারা, তারা বাতাসই যেন— বয়ে গেলে আর ফেরে না।
40 প্রান্তরে তারা কতবার তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল, মরুভূমিতে কতবার তাঁকে দুঃখ দিল;
41 বারবার ঈশ্বরকে যাচাই করল, ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনকে ব্যথা দিল।
42 তারা স্মরণ করল না তাঁর হাতের কথা, সেদিনের কথা, যেদিন তিনি অত্যাচারীর কবল থেকে তাদের মুক্ত করলেন
43 যেদিন মিশরে তার নানা চিহ্ন দেখিয়ে দিলেন, যেদিন তানিসের মাঠে ঘটালেন কত অলৌকিক কাজ।
44 তিনি তাদের নদনদী রক্তে পরিণত করলেন তারা যেন কোন জলধারা থেকে পান না করতে পারে।
45 তাদের গ্রাস করতে তিনি পাঠিয়ে দিলেন ডাঁশের ঝাঁক, তাদের যন্ত্রণা দিতে বেঙের পাল।
46 তিনি শঁয়াপোকার হাতে দিলেন তাদের ফসল, পঙ্গপালের কবলে তাদের শ্রমের ফল।
47 শিলাবৃষ্টি দ্বারা ধ্বংস করলেন তাদের সমস্ত আঙুরখেত, তুষারপাতে তাদের সমস্ত ডুমুরগাছ।
48 তিনি তাদের গবাদি পশুকে সঁপে দিলেন শিলাবৃষ্টির হাতে, তাদের মেষপাল বজ্রের হাতে।
49 তাদের উপর তাঁর উত্তপ্ত ক্রোধ, কোপ, আক্রোশ, মর্মজ্বালা ঝেড়ে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন দুর্দশার দূতের দল।
50 নিজ ক্রোধের পথ প্রস্তুত করে তিনি মৃত্যু থেকে নিস্তার দিলেন না তাদের, তাদের জীবন তুলে দিলেন মড়কের হাতে;
51 মিশরে সকল প্রথমজাতকে, হামের তাঁবুতে তাঁবুতে বীরত্বের প্রথমফল আঘাত করলেন।
52 তিনি মেষপালের মতই তাঁর আপন জনগণকে বের করে আনলেন, প্রান্তরের মধ্য দিয়ে মেষের মতই তাদের চালনা করলেন ;
53 তাদের তিনি নিরাপদে নিয়ে চললেন, ফলে তারা কিছুই ভয় করল না, সাগর কিন্তু তাদের শত্রুকে ঢেকে দিল।
54 তিনি তাঁর পবিত্র ভূমিতে তাদের নিয়ে গেলেন, সেই পর্বতে যা তাঁর আপন ডান হাত করেছিল জয়,
55 তাদের সম্মুখ থেকে বিজাতীয়দের তাড়িয়ে দিলেন, সেই উত্তরাধিকার তাদেরই বণ্টন করলেন, ওদের তাঁবুতে বসালেন ইস্লায়েলের গোষ্ঠীসকল।
56 তারা কিন্তু তাঁকে যাচাই করল, পরাপর পরমেশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল, তাঁর আদেশ-নির্দেশ মেনে চলল না ;
57 তাদের পিতৃগণের মত তারাও পথভ্রষ্ট, অবিশ্বস্ত হল, ঘুরেই বসল বেয়াড়া ধনুকের মত।
58 তাদের উঁচুস্থানগুলি নিয়ে তারা তাঁকে ক্ষুব্ধ করল, তাদের দেবমূর্তি নিয়ে তাঁকে ঈর্ষান্বিত করল ;
59 তা শুনে পরমেশ্বর কুপিত হলেন, ইস্রায়েলকে সম্পূর্ণরূপেই প্রত্যাখ্যান করলেন।
60 মানুষের মাঝে তিনি যে তাঁবুতে বসবাস করতেন, শীলোর সেই আবাস ছেড়ে
61 বন্দিদশায় নিজ প্রতাপ, শত্রুহাতে নিজ মহিমা তুলে দিলেন;
62 তাঁর আপন জাতিকে তিনি তুলে দিলেন খড়েগর মুখে, তাঁর আপন উত্তরাধিকারের প্রতি কুপিত হলেন।
63 আগুন তাদের যুবকদের গ্রাস করল, তাদের কুমারীদের জন্য বাজল না কোন বিবাহের গান ;
64 তাদের যাজকেরা খড়ের আঘাতে পড়ল, তাদের বিধবা নারীরা ক্রন্দন করতে পারল না।
65 তখন প্রভু যেন ঘুম থেকেই জেগে উঠলেন আঙুররসে মত্ত যোদ্ধাই যেন।
66 তাঁর শত্রুদের তিনি পিঠে আঘাত হানলেন, তাদের দিলেন চিরকালীন অপবাদ।
67 যোসেফের তাঁবুগুলি প্রত্যাখ্যান ক'রে, এফ্রাইম গোষ্ঠীকেও বেছে না নিয়ে,
68 তিনি বরং যুদা গোষ্ঠীকেই বেছে নিলেন, সেই সিয়োন পর্বত যা তাঁর ভালবাসার পাত্র।
69 তিনি তাঁর আপন পবিত্রধাম আকাশের মতই উঁচু করে নির্মাণ করলেন, তা পৃথিবীর মতই সুস্থাপিত করলেন চিরকাল ধরে ;
70 তিনি তাঁর দাস দাউদকে বেছে নিলেন, মেষঘেরি থেকে নিয়ে নিলেন তাঁকে।
71 দুগ্ধবতী মেষিকাদের পিছনে গমনাবস্থা থেকে তাঁকে আনলেন, তাঁর আপন জাতি যাকোব, তাঁর আপন উত্তরাধিকার ইস্রায়েলকে চরাবার জন্য,
72 আর তিনি অন্তরের সততায় চরালেন তাদের, সুদক্ষ হাতেই তাদের চালনা করলেন।