1 তিনি বললেন : আমি তোমাকে ভালবাসি, প্রভু, আমার বল !
2 প্রভুই আমার শৈল, আমার গিরিদুর্গ, আমার মুক্তিদাতা, আমার ঈশ্বর, আমার সেই শৈল যার কাছে নিয়েছি আশ্রয়, আমার ঢাল, আমার ত্রাণশক্তি, আমার দুর্গ।
3 আমি প্রশংসনীয় সেই প্রভুকে ডাকি, আমার শত্রুদের হাত থেকে পাবই পরিত্রাণ।
4 মৃত্যুর বাঁধন জড়িয়ে ধরেছিল আমায়, ধ্বংসের খরস্রোত আতঙ্কিত করেছিল আমায় ;
5 পাতালের বাঁধন আমায় ঘিরে ফেলেছিল, সম্মুখীন ছিল মৃত্যুর ফাঁদ ।
6 সেই সঙ্কটে আমি প্রভুকে ডাকলাম, আমার পরমেশ্বরের কাছে চিৎকার করলাম: তাঁর মন্দির থেকে তিনি শুনলেন আমার কণ্ঠ, আমার সেই চিৎকার তাঁর কানে গেল।
7 পৃথিবী টলে উঠল, কাঁপতে লাগল পাহাড়পর্বতের ভিত আলোড়িত হল, টলে উঠল তিনি রেগে উঠেছিলেন বলে।
8 তাঁর নাসারন্ধ্র থেকে উদগীর্ণ হল ধোঁয়া, তাঁর মুখ থেকে সর্বগ্রাসী আগুন ; তাঁর কাছ থেকে জ্বলন্ত অঙ্গার।
9 আকাশ নত করে তিনি নেমে এলেন, কালো মেঘ ছিল তাঁর পদতলে।
10 খেরুব-পিঠে চড়ে তিনি উড়তে লাগলেন, বায়ুর পাখায় ভর করে ভেসে এলেন।
11 অন্ধকারকে তিনি করলেন নিজের সর্বাঙ্গীণ আবরণ, কালো জলরাশি, ঘন ঘন মেঘ ছিল তাঁর তাঁবু।
12 তাঁর অগ্রণী দীপ্তি থেকে নির্গত হল মেঘপুঞ্জ, শিলাবৃষ্টি ও জ্বলন্ত অঙ্গার।
13 প্রভু আকাশ থেকে বজ্রনাদ করলেন, পরাৎপর শোনালেন নিজ কন্ঠস্বর।
14 তীর ছুড়ে ছুড়ে তিনি ওদের ছত্রভঙ্গ করলেন, বিদ্যুৎ হেনে ওদের বিহ্বল করলেন।
15 তোমার ধমকে, প্রভু, তোমার নাকের ফুৎকারের তাড়নায় দেখা দিল সাগরের তলদেশের স্রোত, অনাবৃত হল জগতের ভিত।
16 ঊর্ধ্ব থেকে হাত বাড়িয়ে তিনি আমায় ধরলেন, জলরাশি থেকে আমায় টেনে তুললেন,
17 শক্তিশালী শত্রুর হাত থেকে আমাকে উদ্ধার করলেন, আমার সেই বিদ্বেষীদের হাত থেকে, যারা আমার চেয়ে বলিষ্ঠ ছিল।
18 আমার বিপদের দিনে ওরা রুখে দাঁড়াল আমার সামনে, প্রভু কিন্তু হলেন অবলম্বন আমার ;
19 তিনি আমাকে বের করে আনলেন উন্মুক্ত স্থানে, আমাতে প্রীত বলেই আমাকে নিস্তার করলেন।
20 প্রভু আমার ধর্মময়তা অনুযায়ী আমাকে প্রতিদান দেন, আমার হাতের শুচিতা অনুযায়ী আমাকে পুরষ্কৃত করেন ;
21 কারণ আমি পালন করেছি প্রভুর পথসকল, আমার পরমেশ্বরকে ত্যাগ করেছি, তেমন কুকর্ম করিনি।
22 তাঁর সমস্ত সুবিচার রয়েছে আমার সামনে, আমি তাঁর বিধিনিয়মও সরিয়ে দিইনি আমা থেকে,
23 বরং তাঁর সঙ্গে থেকেছি নিষ্কলঙ্ক, অন্যায় থেকে নিজেকে রেখেছি মুক্ত।
24 প্রভু আমার ধর্মময়তা অনুযায়ী আমাকে পুরস্কৃত করেন, তাঁর দৃষ্টিতে আমার হাতের শুচিতা অনুযায়ী পুরস্কৃত করেন।
25 সৎমানুষের প্রতি তুমি সৎ, খাঁটি মানুষের প্রতি তুমি খাঁটি ;
26 পুণ্যবানের প্রতি তুমি পুণ্যবান, কুটিলের প্রতি তুমি কিন্তু বিচক্ষণ।
27 হ্যাঁ, বিনীত জনগণকেই তুমি পরিত্রাণ কর গর্বোদ্ধতদের চোখ কিন্তু অবনত কর।
28 তুমিই তো, প্রভু, আমার প্রদীপ আলোময় করে রাখ, আমার পরমেশ্বরই আমার অন্ধকার উজ্জ্বল করে তোলেন।
29 তোমার সঙ্গে আমি সেনাদলের বিরুদ্ধে ছুটেই যাব, আমার পরমেশ্বরের সঙ্গে লাফ দিয়ে প্রাচীর পার হতে পারব।
30 তিনিই ঈশ্বর, তাঁর পথ নিখুঁত, প্রভুর কথা পরিশুদ্ধ ; তাঁর আশ্রয় নিয়েছে যারা, তিনি নিজেই তাদের সকলের ঢাল।
31 আসলে, প্রভু ছাড়া, কেবা পরমেশ্বর? আমাদের পরমেশ্বর ব্যতীত, শৈল কেইবা আছে?
32 ঈশ্বর যিনি, তিনিই আমার কোমরে শক্তির বন্ধনী বাঁধেন, তিনিই নিখুঁত করেন আমার চলার পথ।
33 তিনি আমার পা হরিণীর পায়ের মত করেন, তাঁরই গুণে আমি পর্বতশিখরে অবিচল হয়ে থাকতে পারি;
34 তিনি আমার হাত যুদ্ধকুশল করে তোলেন, তাই আমার বাহু ব্রঞ্জের ধনুক বাঁকাতে পারে।
35 তুমি আমাকে দিয়েছ তোমার বিজয়ের ঢাল, আমায় ধরে রেখেছে তোমার ডান হাত, তোমার রণশিক্ষা আমায় করেছে মহান ;
36 প্রসারিত করেছ আমার চলার পথ, তাই টলেনি আমার দু'টো পা।
37 আমার শত্রুদের ধাওয়া করে আমি ধরেই ফেলেছি তাদের, আর ফিরে আসিনি তাদের শেষ না করে দিয়ে।
38 তাদের চূর্ণ করেছি, আর উঠতে পারেনি তারা, পড়েছে আমার পদতলে।
39 যুদ্ধের জন্য তুমি আমার কোমরে শক্তির বন্ধনী বাঁধলে, আমার আক্রমণকারীদের আমার অধীনে নত করলে,
40 আমাকে দেখিয়েছ আমার শত্রুদের পিঠ, আমার বিদ্বেষীদের আমি স্তব্ধ করে দিলাম।
41 চিৎকার করছিল তারা, কিন্তু তাদের ত্রাণ করার মত কেউই ছিল না, প্রভুর কাছেও, তিনি কিন্তু সাড়া দিলেন না।
42 আমি তাদের গুঁড়িয়ে দিলাম বাতাসে ওড়া ধুলার মত, তাদের মাড়িয়ে দিলাম পথের কাদার মত।
43 জনতার বিদ্রোহ থেকে তুমি রেহাই দিয়েছ আমায়, আমায় রেখেছ জাতিসকলের শীর্ষপদে অপরিচিত এক জাতি আমার সেবা করে,
44 আমার কথা শোনামাত্র আমার প্রতি বাধ্য হয়। বিদেশীরা আমাকে অনুনয়-বিনয় করে,
45 বিদেশীরা ম্লান হয়ে দুর্গ ছেড়ে কম্পিত হয়ে বেরিয়ে পড়ে।
46 চিরজীবী হোন প্রভু ! ধন্য আমার শৈল ! আমার ত্রাণেশ্বর বন্দিত হোন !
47 হে ঈশ্বর, তুমিই তো আমার পক্ষে প্রতিশোধ নাও, জাতিসকলকে আমার অধীনে আন,
48 তুমি তো আমার শত্রুদের ক্রোধ থেকে আমাকে রেহাই দাও, তুমি তো আমার আক্রমণকারীদের ঊর্ধ্বেই আমাকে তুলে আন, হিংসক মানুষের হাত থেকে আমাকে উদ্ধার কর।
49 তাই প্রভু, জাতি-বিজাতির মাঝে আমি করব তোমার স্তুতি, করব তোমার নামের গুণগান।
50 তিনি তাঁর রাজাকে বিজয়দানে মহিমান্বিত করেন, তাঁর মসীহের প্রতি, দাউদ ও তাঁর বংশের প্রতি কৃপা দেখান চিরকাল।