1 আমার সখার উদ্দেশে আমি একটা গান গাইব, তার আঙুরখেতের প্রেমগান। আমার সখার ছিল একটা আঙুরখেত, উর্বরতম এক উপপর্বতের উপর।
2 সে তার চারপাশ কোদাল দিয়ে কোপাল, তার যত পাথর তুলে ফেলল, সেখানে পুঁতল সেরা আঙুরগাছ ; তার মাঝখানে একটা উচ্চ দুর্গ গেঁথে তুলল, মাড়াইকুণ্ডও খুঁড়ে নি। সে প্রত্যাশা করছিল, লতায় ফল ধরবে, কিন্তু ধরল বুনো আঙুর।
3 তাই এখন, যেরুসালেম অধিবাসীরা ও যুদার মানুষ, বিনয় করি, আমার ও আমার আঙুরখেতের মধ্যে তোমরাই বিচার কর।
4 আমার আঙুরখেতে আমার পক্ষে আর এমন কী করার ছিল, যা আমি করিনি? আমি যখন প্রত্যাশা করছিলাম, আঙুরফল ধরবে, তখন কেন তাতে ধরল বুনো আঙুর?
5 এখন শোন, আমার আঙুরখেতের প্রতি যা করতে যাচ্ছি, তা তোমাদের জানিয়ে দেব : আমি তার বেড়া উঠিয়ে দেব যাতে খেতটা চারণমাঠ হয়ে যায় : তার প্রাচীর ভেঙে ফেলব যাতে খেতটা পদদলিত হয়।
6 আমি তা মরুভূমি করব, তার লতা ছাঁটা হবে না, খেত কোদাল দিয়ে কোপানো হবে না, সেখানে গজিয়ে উঠবে শেয়ালকাটা ও কাঁটাগাছ : মেঘপুঞ্জকে আজ্ঞা দেব, যেন তার উপর বৃষ্টির জল আর বর্ষণ না করে।
7 আচ্ছা, সেনাবাহিনীর প্রভুর সেই আঙুরখেত, সে তো ইস্রায়েলকুল; তাঁর সুখের সেই চারাগাছ, তা তো ঘুদার মানুষ : তিনি ন্যায় প্রত্যাশা করছিলেন, কিন্তু দেখ, অন্যায়! তিনি ধর্মময়তা প্রত্যাশা করছিলেন, কিন্তু দেখ, অত্যাচারিতের চিত্কার !
8 ধিক্ তোমাদের, যারা ঘরের সঙ্গে ঘর যোগ কর, জমির সঙ্গে জমি যুক্ত কর ; শেষে আর জায়গা থাকবে না, ফলে কেবল তোমরাই হবে দেশের বাসিন্দা।
9 আমি নিজের কানেই সেনাবাহিনীর প্রভুর এই উক্তি শুনেছি, 'একথা নিশ্চিত! বহু বহু বাড়ি ধ্বংসস্তূপ হবে, বড় বড় সুন্দর সুন্দর হলেও তা নিবাস-বিহীন হবে।'
10 কারণ ত্রিশ বিঘা আঙুরখেতে কেবল এক মণ আঙুররস উৎপন্ন হবে দশ মণ বীজে কেবল এক মণ শস্য উৎপন্ন হবে !
11 ধিক্ তাদের, যারা সকালে সকালে উঠে উগ্র পানীয়ের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়, যারা অনেক রাত করে যতক্ষণ না আঙুররস তাদের উত্তপ্ত করে তোলে!
12 তাদের ভোজসভার জন্য বীণা ও সেতার, খঞ্জনি ও বাঁশি ও আঙুররস আছে বটে, কিন্তু প্রভুর কাজের দিকে তাদের নজর নেই, তাঁর হাতের কাজ তারা দেখেই না।
13 এজন্যই আমার জনগণকে তাদের নির্বুদ্ধিতার ফলে দেশছাড়া করা হবে; তাদের জননায়কেরা ক্ষুধায়, তাদের লোকসমাজ তেষ্টার জ্বালায় নিঃশেষিত হবে।
14 এজন্য পাতাল গলদেশ ব্যাদান করছে, মুখ খুলে হা করে আছে ; ওদের জননায়কেরা, ওদের লোকসমাজ, ওদের কোলাহল ও নগরীর উল্লাস—সবই তার মধ্যে নেমে পড়বে।
15 আদমকে অবনমিত করা হবে, মানুষকে নত করা হবে, দর্পীদের চোখ অবনমিত হবে।
16 সেনাবাহিনীর প্রভুই সেই বিচারে উন্নীত হবেন, সেই পবিত্রজন ঈশ্বরই ধর্মময়তায় নিজেকে পবিত্র বলে দেখাবেন।
17 তখন মেষশিশু যেন নিজ চারণমাঠে চরার মত চরে বেড়াবে, ছাগশিশু ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ঘাস পাবে।
18 ধিক্ তাদের, যারা ছলনার সুতো দিয়ে শঠতা টেনে বেড়ায়, যারা গরুর গাড়ির দড়ি দিয়ে পাপ টেনে নেয় :
19 তারা বলে, 'তিনি দেরি না করে নিজ কাজ শীঘ্রই সেরে ফেলুন, যেন আমরা তা দেখতে পাই ; ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের যত পরিকল্পনা ত্বরান্বিত হোক, সিদ্ধিই লাভ করুক, যেন আমরা তার অভিজ্ঞতা করতে পারি।
20 ধিক্ তাদের, যারা মন্দকে ভাল, আর ভালকে মন্দ বলে, অন্ধকার আলোয়, ও আলো অন্ধকারে পরিণত করে, তিততা মিষ্টতায়, ও মিষ্টতা তিততায় রূপান্তরিত করে।
21 ধিক তাদের, যারা নিজেদের মনে করে প্রজ্ঞাবান, নিজেদের গণ্য করে বুদ্ধিমান!
22 ধিক তাদের, যারা আঙুররস পান করতে মহান, উগ্র পানীয় মেশাতে বীর,
23 যারা উপহারের বিনিময়ে দোষীকে নির্দোষ করে, ও নির্দোষকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।
24 এজন্যই অগ্নি-জিহ্বা যেমন খড়কুটো গ্রাস করে, অগ্নিশিখা যেমন শুষ্ক ঘাস নিঃশেষ করে, তেমনি তাদের শিকড় পচা কাঠের মত হবে, তাদের ফুল ধুলার মত উড়ে যাবে ; কারণ তারা সেনাবাহিনীর প্রভুর নির্দেশবাণী প্রত্যাখ্যান করেছে, ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের বচন অবজ্ঞা করেছে।
25 এজন্য তাঁর আপন জাতির উপর প্রভুর ক্রোধ জ্বলে উঠেছে, আঘাত করতে তিনি তাদের উপরে হাত প্রসারিত করেছেন এজন্য পাহাড়পর্বত কম্পিত হল, ওদের লাশ রাস্তার মধ্যে আবর্জনারই মত হল। তা সত্ত্বেও তাঁর ক্রোধ প্রশমিত হয় না, তাঁর হাত এখনও রয়েছে প্রসারিত।
26 তিনি দূরবর্তী এক জাতির দিকে একটা নিশানা উত্তোলন করবেন, পৃথিবীর প্রান্তবাসীদের জন্য শিস দেবেন, আর দেখ, তারা দ্রুতপদে শীঘ্রই আসবে।
27 তাদের মধ্যে কেউই ক্লান্ত নয়, হোঁচট খায় না কেউ, কারও তন্দ্রাভাব হয় না, কেউই ঘুমায় না, তাদের কটিবন্ধনী খুলে যায় না, তাদের পাদুকার বাঁধন ছেঁড়ে না।
28 তাদের তীর ধারালো, তাদের ধনুকে চাড়া দেওয়া; তাদের ঘোড়ার ক্ষুর চকমকি পাথরের মত, তাদের রথের চাকাগুলো ঘূর্ণিবায়ুর মত।
29 তাদের হুঙ্কার সিংহীর হুঙ্কারের মত, তারা যুবসিংহদের মত গর্জন করে, গর্জন করতে করতে তারা শিকার ধরে ফেলে, তা নিয়ে পালিয়ে যায়— উদ্ধার করার মত কেউ নেই!
30 তারা সেদিন এদের উপরে সমুদ্রগর্জনের মত গর্জে উঠবে। তখন পৃথিবীর দিকে তাকাও : দেখ, সবই অন্ধকার ও সঙ্কট! আলোও মেঘমণ্ডলে অন্ধকারময়!