Index

ইসাইয়া - Chapter 40

1 সান্ত্বনা দাও, আমার জাতিকে সান্ত্বনা দাও, —একথা বলছেন তোমাদের পরমেশ্বর-
2 যেরুসালেমের হৃদয়ের কাছে কথা বল, তার কাছে একথা প্রচার কর : তার কঠোর দাসত্বকাল পূর্ণ হল, দেওয়াই হল তার শঠতার দাম, কারণ তার সকল পাপের জন্য প্রভুর হাত থেকেই সে পেল দ্বিগুণ শাস্তি।
3 এক কন্ঠস্বর চিৎকার করে বলে : মরুপ্রান্তরে প্রভুর জন্য পথ প্রস্তুত কর মরুভূমিতে আমাদের পরমেশ্বরের জন্য রাস্তা সমতল কর।
4 উঁচু করা হোক প্রতিটি উপত্যকা, নিচু করা হোক প্রতিটি পর্বত, প্রতিটি উপপর্বত, অসমতল ভূমি হোক সমতল, শৈলশিরা হয়ে উঠুক সমভূমি।
5 তখনই প্রকাশ পাবে প্রভুর গৌরব, মানবকুল সবাই মিলে তার দর্শন পাবে, কারণ প্রভুর মুখ কথা উচ্চারণ করল।'
6 এক কণ্ঠস্বর বলে, 'চিৎকার কর!' আর আমি বলি, “চিৎকার করে কী বলব?' ‘প্রতিটি মানুষ ঘাসের মত, আর তার সমস্ত কান্তি মাঠের ফুলের মত।
7 শুষ্ক হয় ঘাস, ম্লান হয় ফুল, কারণ প্রভুর ফুৎকার তার উপর বয়ে যায়। —সত্যি, মানবকুল ঘাসেরই মত।
8 শুষ্ক হয় ঘাস, ম্লান হয় ফুল, কিন্তু আমাদের পরমেশ্বরের বাণী চিরস্থায়ী।'
9 হে শুভসংবাদ-দাত্রী সিয়োন, উচ্চ পর্বতে গিয়ে ওঠ ! হে শুভসংবাদদাত্রী যেরুসালেম, যথাসাধ্য উচ্চকণ্ঠে চিৎকার কর। উচ্চকণ্ঠে চিৎকার কর, ভয় করো না; যুদার শহরগুলোকে বল : “এই যে তোমাদের পরমেশ্বর !
10 দেখ, প্রভু পরমেশ্বর মহাপরাক্রমে আসছেন, আপন বাহুবলেই তিনি আধিপত্য করেন। দেখ, তাঁর মজুরি আছে তাঁর সঙ্গে, তাঁর আগে আগে চলছে তাঁর আপন পুরস্কার।
11 পালকের মত তিনি চরিয়ে বেড়ান তাঁর আপন পাল, শাবকদের বাহুতে সংগ্রহ করেন ; কোলে করে তাদের বহন করেন, দুগ্ধদাত্রী মেষিকাদের ধীরে ধীরেই চালনা করেন।
12 নিজ করতলে কেবা মেপেছে জলরাশি, বিঘত দিয়ে নিরূপণ করেছে আকাশমণ্ডল? এক পাত্রে কেবা ধরে রেখেছে পৃথিবীর ধুলা, দাঁড়িপাল্লায় ওজন করেছে পাহাড়পর্বত, তুলাদণ্ডে উপপর্বত সকল ?
13 প্রভুর আত্মাকে কেইবা দিয়েছে নির্দেশ, কিংবা পরামর্শদাতা রূপে তাঁকে কেইবা দিয়েছে জ্ঞান?
14 এমন কার কাছেই বা তিনি পরামর্শ চাইলেন, সে যেন তাঁকে বুদ্ধি দেয় ও শেখায় ন্যায়পথ, তাঁকে যেন জ্ঞানশিক্ষা দেয় ও দেখায় সদ্বিবেচনার পথ?
15 সত্যি, দেশগুলি কলসির এক জলবিন্দুরই মত, তুলাদণ্ডে ধূলিকণার মতই গণ্য তারা ; সত্যি, পাতলা ধুলার মতই তিনি তুলে ধরেন যত দ্বীপ।
16 লেবানন যথেষ্ট নয় ইন্ধনের জন্য, তার যত পশুও যথেষ্ট নয় আহুতির জন্য।
17 তাঁর সামনে কিছুই তো নয় সকল দেশ, তাঁর কাছে অসারের চেয়েও অসার আর শূন্যতা বলেই গণ্য তারা।
18 তোমরা কার সঙ্গেই বা ঈশ্বরের তুলনা করবে ? তাঁর মত ব'লে কোন্ মূর্তিই বা উপস্থিত করবে?
19 শিল্পকার প্রতিমা ছাঁচে ঢালাই করে, স্বর্ণকার তা সোনার পাতায় মোড়ে ও তার জন্য রুপোর শেকল তৈরি করে।
20 বলি উৎসর্গ করার মত যার কম আছে, সে একটা কাঠ বেছে নেয়, যা পচনশীল নয় : সে নিপুণ শিল্পকার খোঁজে, সে যেন তার জন্য এমন এক মূর্তি তৈরি করে, যা থাকবে অচল।
21 তোমরা কি জান না? তোমরা কি শোননি? আদি থেকে কি একথা তোমাদের জানানো হয়নি? তোমরা কি পৃথিবীর ভিত্তি বোঝনি?
22 তিনিই পৃথিবীর উর্ধ্বচারের উপরে সমাসীন! সেখান থেকে তাঁর চোখে মর্তবাসীরা পঙ্গপালমাত্র। তিনি আকাশমণ্ডল চাঁদোয়ার মত বিছিয়ে দেন, তাঁর আপন নিবাস তাঁবুর মত তা বিস্তার করেন।
23 তিনি প্রতাপশালীদের বিলুপ্ত করেন, পৃথিবীর শাসকদের নিশ্চিহ্ন করেন।
24 তারা এখনও রোপিত হয়নি, এখনও তাদের বোনা হয়নি, তাদের মূলকাণ্ডও এখনও মাটিতে শিকড় গাড়েনি, অমনি তিনি তাদের উপর ফুৎকার দেন আর তারা শুকিয়ে যায়, ঘূর্ণিবায়ু তাদের খড়কুটোর মত উড়িয়ে দেয়।
25 তোমরা কার সঙ্গে আমার তুলনা করবে? কেইবা আমার মত?’– সেই পবিত্রজন বলছেন।
26 ঊর্ধ্বের দিকে চোখ তুলে দেখ : এই সমস্ত কিছু কে সৃষ্টি করেছেন? তিনি তাদের বাহিনী সঠিক সংখ্যা অনুসারে বের করে আনেন, সকলের নাম ধরে তাদের আহ্বান করেন, তাঁর সর্বশক্তি ও তাঁর প্রবল পরাক্রম গুণে তাদের একটাও অনুপস্থিত নয়!
27 তবে, যাকোব, তুমি কেমন করে বলতে পার, তুমিও, ইস্রায়েল, কেমন করে বলতে পার : আমার পথ প্রভুর কাছ থেকে গুপ্ত, আমার অধিকার আমার পরমেশ্বরের অবহেলার বিষয় ?”
28 তোমরা কি জান না? তোমরা কি শোননি? প্রভুই সনাতন পরমেশ্বর, তিনিই পৃথিবীর প্রান্তের সৃষ্টিকর্তা। তিনি ক্লান্তও হন না, শ্রান্তও হন না, তাঁর বুদ্ধি অনুসন্ধানের অতীত।
29 তিনি ক্লান্তকে শক্তি দেন, শক্তিহীনের বল বৃদ্ধি করেন।
30 তরুণেরা ক্লান্ত শ্রান্ত হয়, যুবকেরা হোঁচট খেয়ে লুটিয়ে পড়ে :
31 কিন্তু যারা প্রভুতে আশা রাখে, তারা নবীন শক্তি লাভ করবে, তারা ঈগলের মত ডানা মেলবে, দৌড়লে শ্রান্ত হবে না, হাঁটলে ক্লান্ত হবে না।