Index

যেরেমিয়া - Chapter 6

1 হে বেঞ্জামিন সন্তানেরা, পালিয়ে যাও, যেরুসালেমের ভিতর থেকে পালিয়ে যাও। তেকোয়াতে তুরি বাজাও, বেথ্-হাক্কেরেমে বিপদ সঙ্কেত উত্তোলন কর, কেননা উত্তরদিক থেকে মহা অমঙ্গল আসছে, আসছে মহা সর্বনাশ।
2 সুন্দরী ও কোমলা যে সিয়োন-কন্যা, তাকে আমি স্তব্ধ করে দেব।
3 রাখালেরা নিজেদের পাল সঙ্গে নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে; তারা তার চারদিকে তাঁবু গেড়ে প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশে পাল চরাচ্ছে।
4 তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য তৈরী হও ; ওঠ, আমরা মধ্যাহ্নেই আক্রমণ চালাব। ধিক আমাদের! বেলা হয়েই গেছে, সন্ধ্যাকালের ছায়া দীর্ঘান্বিত হচ্ছে।
5 ওঠ, আমরা রাতের বেলায় আক্রমণ চালাব, তার যত প্রাসাদ ধ্বংস করব।'
6 কেননা সেনাবাহিনীর প্রভু একথা বলছেন: ‘তোমরা গাছ কেটে যেরুসালেমের গায়ে জাঙ্গাল বাঁধ এই নগরী শান্তির যোগ্য, তার ভিতরে শুধু অত্যাচার!
7 কুয়ো যেমন নিজের জল টাটকা রাখে, সে তেমনি নিজের শঠতা টাটকা রাখে। তার মধ্যে হিংসা ও অত্যাচার ধ্বনিত, ব্যথা ও ঘা আমার সামনে সর্বদাই উপস্থিত।
8 যেরুসালেম, সাবধান বাণী গ্রহণ কর, পাছে আমি তোমাকে ত্যাগ করে দূরে চলে যাই, পাছে তোমাকে ধ্বংসস্থান করি, জনহীন ভূমি করি।'
9 সেনাবাহিনীর প্রভু একথা বলছেন : “ওরা ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশকে বাকি আঙুরফলের মত ঘন ঘন কুড়িয়ে নিক; আঙুর ফল যে সংগ্রহ করে, তার মত তার শাখাগুলোর উপর আবার হাত বাড়াও।'
10 আমি কার কাছে কথা বলব, কাকেই বা সাধাসাধি করব, সে যেন শোনে? দেখ, তাদের কান পরিচ্ছেদিত নয়, মনোযোগ দিতে তারা অক্ষম। দেখ, প্রভুর বাণী তাদের কাছে তাচ্ছিল্যের বিষয়, সেই বাণী তাদের প্রীতির পাত্র নয়।
11 কিন্তু আমি প্রভুর ক্রোধে পরিপূর্ণ, তা আর সংযত রাখতে পারি না। “রাস্তায় ছেলেদের উপরে, যুবকদের সভার উপরেও তা ঢেলে দাও, কারণ নর-নারী যুবা-বৃদ্ধ সকলেই একসঙ্গে তাতে ধরা পড়বে।
12 তাদের বাড়ি-ঘর পরের অধিকার হবে, তাদের জমি ও নারীরাও তাই, কারণ আমি এদেশের অধিবাসীদের উপরে বাড়াব আমার হাত!' প্রভুর উক্তি।
13 কেননা ছোটজন থেকে বড়জন পর্যন্ত সকলেই লোভী ও কুটিল ; নবী থেকে যাজক পর্যন্ত সকলেই ছলনায় রত।
14 তারা আমার জাতির ক্ষতের যত্ন নেয় বটে, কিন্তু ভাসা ভাসাই সেই যত্ন: হ্যাঁ, তারা ‘শান্তি শান্তি' বলে, কিন্তু শাস্তি নেই।
15 তারা তেমন জঘন্য কাজ করে কি লজ্জাবোধ করে? না, আদৌ লজ্জাবোধ করে না, লজ্জায় লাল হতেও জানে না। 'এজন্য পতিতদের মধ্যে তাদেরও পতন হবে, শাস্তির ক্ষণে তাদের লুটিয়ে দেওয়া হবে। প্রভুর উক্তি।
16 প্রভু একথা বলছেন : “তোমরা পথে পথে দাঁড়িয়ে দেখ ; অতীতকালের মার্গের কথা, উত্তম পথ কোথায় জিজ্ঞাসা ক'রে সেই পথে চল। তবে তোমাদের প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাবে।' কিন্তু তারা বলল, ‘আমরা সে পথে চলব না!'
17 আমি তোমাদের উপরে প্রহরী নিযুক্ত করলাম, বললাম, “তোমরা তুরিধ্বনিতে কান দাও।' কিন্তু তারা বলল, ‘কান দেব না !'
18 এজন্য, হে জাতি-বিজাতি, শোন ; জনমণ্ডলী, তাদের প্রতি কি কি ঘটতে যাচ্ছে, তা জ্ঞাত হও।
19 পৃথিবী, শোন! “দেখ, আমিই এই জাতির উপরে অমঙ্গল ডেকে আনব, তাদের চিন্তা-ভাবনার ফল নামিয়ে আনব, কারণ তারা আমার বাণীতে মনোযোগ দেয়নি, আমার নির্দেশগুলো পরিত্যাগ করেছে।
20 কিসের জন্য শেবা থেকে আনা ধূপ আমাকে নিবেদন করা হচ্ছে? কিসের জন্যই বা দূরদেশ থেকে আসা সুগন্ধি মসলা আমাকে দেওয়া হচ্ছে? তোমাদের আহুতিগুলি গ্রহণীয় নয়, তোমাদের যজ্ঞাবলিতেও আমি প্রীত নই।
21 সুতরাং প্রভু একথা বলছেন : “দেখ, আমি এই জাতির সামনে নানা হোঁচট-পাথর বসাব, পিতারা ও সন্তানেরা নির্বিশেষে সেগুলোতে হোঁচট খাবে : প্রতিবেশী ও বন্ধুরা বিনষ্ট হবে।”
22 প্রভু একথা বলছেন : “দেখ, উত্তর দেশ থেকে এক সেনাদল আসছে, পৃথিবীর প্রান্ত থেকে এক মহাজাতিকে উত্তেজিত করা হচ্ছে।
23 তারা ধনুক ও বর্শাধারী, নিষ্ঠুর ও মমতাবিহীন। তাদের শব্দ সমুদ্রগর্জনের মত, তারা ঘোড়ায় চড়ে আসছে ; হায়, সিয়োন-কন্যা, তোমারই বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে তারা এক মানুষই যেন তৈরী।'
24 ‘আমরা তাদের বিষয়ে কথা শুনেছি, আমাদের হাত অবশ হল, যন্ত্রণা, প্রসবিনীর ব্যথার মত ব্যথা আমাদের ধরল।'
25 খোলা মাঠে বের হয়ো না, পথে পা বাড়িয়ো না, কেননা সেখানে রয়েছে শত্রুর খড়্গা, আর চারদিকে বিরাজ করছে সন্ত্রাস।
26 হে আমার জাতি-কন্যা, চটের কাপড় পর ছাইয়ে গড়াগড়ি দাও। একমাত্র সন্তানের মৃত্যুর জন্য শোকের মত শোক কর, তিক্ততা ভরে বিলাপ কর, কেননা বিনাশক অকস্মাৎ আমাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়বে!
27 আমি জনগণের মধ্যে তাদের আচরণ জানবার ও পরীক্ষা করার জন্য তোমাকে পরীক্ষক করে নিযুক্ত করেছি।
28 তারা সকলে বিদ্রোহীদের চেয়েও বিদ্রোহী, পরনিন্দা রটিয়ে বেড়ায়; তারা ব্রঞ্জ ও লোহার মত: সকলেই ভ্রষ্ট।
29 সীসা আগুনে শেষ করে দেবার জন্য হাপর তীব্র বাতাস দেয় ; কিন্তু তা নিখাদ করার প্রচেষ্টা বৃথা ; অপকর্মাদেরও বিযুক্ত করা যায় না!
30 তাদের 'অগ্রাহ্য রুপো' বলে ডাকা হয়, কারণ প্রভু তাদের অগ্রাহ্য করেছেন।