Index

যেরেমিয়া - Chapter 50

1 প্রভু যেরেমিয়া নবীর মধ্য দিয়ে বাবিলন সম্বন্ধে, কান্দীয়দের দেশ সম্বন্ধে যে কথা বলেছিলেন, তার বৃত্তান্ত।
2 তোমরা দেশগুলোর মাঝে তা প্রচার কর, ঘোষণা কর, নিশানা উত্তোলন কর, প্রচার কর, গুপ্ত রেখো না ; বল : বাবিলন হস্তগত! বেল লজ্জায় অভিভূত, মাদুক সন্ত্রাসিত, তার সকল প্রতিমা লজ্জায় পরিবৃত, তার পুতুলগুলো আতঙ্কিত।
3 কেননা উত্তরদিক থেকে এমন এক জাতি উঠে আসছে, যা তার দেশ প্রান্তরে পরিণত করবে, সেই দেশে আর কেউ বাস করবে না ; মানুষ কি পশু সবাই পালিয়েছে, সবাই চলে গেছে।
4 সেই দিনগুলিতে ও সেই কালে প্রচুর উদ্ভি—ইস্রায়েল সন্তানেরা আসবে, তারা ও ঘুদা-সন্তানেরা মিলে আসবে, কাঁদতে কাঁদতে চলে আসবে, ও তাদের পরমেশ্বর প্রভুর অন্বেষণ করবে।
5 তারা সিয়োন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করবে, সেইদিকে মুখ নিবদ্ধ রাখবে, বলবে: এসো, আমরা এমন চিরস্থায়ী সন্ধি দ্বারা প্রভুর সঙ্গে মিলিত হই, যা কখনও বিস্মৃত হবার নয়।
6 হারানো মেষের দল : তা-ই ছিল আমার জনগণ; তাদের পালকেরা তাদের ভ্রান্ত করেছিল, পর্বতে পর্বতে তাদের পথহারা করে ফেলেছিল; সেই মেষগুলো উপপর্বতে উপপর্বতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, ভুলে গেছিল। তাদের শয়নস্থান।
7 যারা তাদের পেত, তারা তাদের গ্রাস করত, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা বলত: আমাদের কোন দোষ নেই, যেহেতু তারাই ধর্মময়তার নিবাস-ভূমি সেই প্রভুর বিরুদ্ধে, তাদের পিতৃপুরুষদের আশাভূমি সেই প্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছে।
8 তোমরা বাবিলন থেকে শীঘ্রই বেরিয়ে পড়, কান্দীয়দের দেশ থেকে বের হও, ছাগের মত হও, মেষপাল চালিত কর।
9 কেননা দেখ, আমি উত্তরদিক থেকে কতগুলো মহাদেশ উত্তেজিত করে বাবিলনের বিরুদ্ধে প্রেরণ করছি: তারা বাবিলনের বিরুদ্ধে সৈন্যশ্রেণী বিন্যাস করবে, তখন বাবিলনের পক্ষে শেষ ! তাদের তীর নিপুণ তীরন্দাজের তীরের মত, একটাও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ফিরে আসে না।
10 কান্দিয়া লুটের বস্তু হবে, তার সকল লুটেরা পরিতৃপ্ত হবে—প্রভুর উক্তি।
11 ওহে তোমরা, যারা আমার উত্তরাধিকার লুট করছে, তোমরা আনন্দ কর, উল্লাসও কর! মাঠের উপরে বাছুরের মত লাফালাফি কর, তেজস্বী ঘোড়ার মত হ্রেষা শব্দ কর!
12 কিন্তু তোমাদের মাতা ভীষণ লজ্জায় অস্তিম্ভূতা হবে, তোমাদের জননী হতাশায় পড়বে। দেখ, দেশগুলোর মধ্যে সে সবার শেষে পড়বে, সে হবে প্রান্তর, দগ্ধ মাটি, মরুভূমি।
13 প্রভুর ক্রোধের কারণেই তার মধ্যে আর নিবাসী কেউ থাকবে না, সে সম্পূর্ণ উৎসন্নস্থান হবে: যে কেউ বাবিলনের কাছ দিয়ে যাবে, তার সমস্ত ক্ষত দেখে সে আতঙ্কে চিৎকার করবে।
14 ওহে তোমরা, যারা ধনুক টান, বাবিলনের বিরুদ্ধে চারদিকে সৈন্যশ্রেণী বিন্যাস কর, তীর ছোড় তার প্রতি, তীরবায়ে ক্ষান্ত হয়ো না, কেননা প্রভুর বিরুদ্ধে সে করেছে পাপ।
15 তার চারদিক থেকে তোল রণনিনাদ : আত্মসমর্পণ সে হাত পাতছে, তার দুর্গগুলো পড়ে যাচ্ছে, তার প্রাচীর উৎপাটিত হচ্ছে, কেননা এ প্রস্তুর প্রতিশোধ। তোমরা ওর উপর প্রতিশোধ নাও, সে পরের প্রতি যেমন ব্যবহার করেছে, তার প্রতি সেইমত ব্যবহার কর।
16 রাবিলন থেকে বীজবুনিয়েকে নিশ্চিহ্ন কর ফসল কাটার দিনে যে কাস্তে ধরে, তাকেও নিশ্চিহ্ন কর, বিনাশী খড়োর সামনে থেকে প্রত্যেকে নিজ নিজ জাতির কাছে ফিরে যাক, প্রত্যেকে নিজ নিজ দেশের দিকে পালিয়ে যাক।
17 ইস্রায়েল বিক্ষিপ্ত এক মেষপাল, যার পিছু পিছু সিংহে ধাওয়া করে; প্রথম আসিরিয়া-রাজই তাকে গ্রাস করেছিল, এখন, শেষে, এই বাবিলন-রাজ নেবুকারেজার তার হাড় চূর্ণ করেছে।
18 এজন্য সেনাবাহিনীর প্রভু, ইস্রায়েলের পরমেশ্বর, একথা বলছেন: দেখ, আমি আসিরিয়া-রাজকে যেমন শাস্তি দিয়েছি, বাবিলন রাজ ও তার দেশকে তেমনি শাস্তি দেব।
19 আমি ইস্রায়েলকে তার চারণভূমিতে ফিরিয়ে আনব, সে কার্মেল ও বাশানের উপরে চরবে, এবং এফ্রাইমের পার্বত্য অঞ্চলে ও গিলেয়াদে তার প্রাণ তৃপ্ত হবে।
20 সেই দিনগুলিতে ও সেই কালে—প্রভুর উক্তি – ইস্রায়েলের শঠতার অনুসন্ধান করা হবে, কিন্তু কৈ, তা আর নেই; যুদার পাপের অনুসন্ধান করা হবে, কিন্তু তা পাওয়া যাবে না; কেননা আমি যাদের অবশিষ্ট রাখব, তাদের ক্ষমা করব।'
21 মেরাথাইম দেশের বিরুদ্ধে রণযাত্রা কর, তার বিরুদ্ধে ও পেকোদ অধিবাসীদের বিরুদ্ধে রণযাত্রা কর। তাদের ধ্বংস কর, বিনাশ-মানতের বস্তু করা ; -প্রভুর উক্তি- আমি যা করতে আজ্ঞা করেছি, সেইমত কর।
22 দেশে সংগ্রামের শব্দ, মহাসর্বনাশের শব্দ!
23 সমস্ত পৃথিবীর সেই হাতুড়ি কেন ছিন্ন ও ভগ্ন হল ? দেশগুলোর মধ্যে কেন বালিন আতঙ্কের বস্তু হল?
24 হে বাবিলন, তোমার জন্য আমি ফাঁদ পেতেছি, আর তুমি অজান্তে তাতে ধরা পড়েছ ; তোমাকে পাওয়া গেছে, তুমি ধরা পড়েছ, কারণ প্রভুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছ।
25 প্রভু নিজের অস্ত্রাগার খুললেন, তাঁর ক্রোধের যত অস্ত্র বের করলেন, কেননা কান্দীয়দের দেশে সেনাবাহিনীর পরমেশ্বর প্রভুর একটা কাজ আছে!
26 তোমরা পৃথিবীর শেষপ্রান্ত থেকে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়, তার যত শস্যভাণ্ডার খুলে দাও, আটির মত তাকে গাদা কর, তাকে বিনাশ-মানতের বস্তু কর, তার কিছুই বাকি রেখো না।
27 তার সকল বলদ জবাই কর, সেগুলো জবাইস্থানে নেমে যাক। হায়, তাদের দিন এসে গেছে, এসে গেছে তাদের শাস্তির ক্ষণ।
28 ওই যে তাদের কণ্ঠস্বর, যারা পালিয়েছে ও বাবিলন দেশ থেকে রেহাই পেয়েছে, যেন সিয়োনে জানাতে পারে আমাদের পরমেশ্বর প্রভুর প্রতিশোধ, তাঁর মন্দিরের জন্য প্রতিশোধ।'
29 তোমরা বাবিলনের বিরুদ্ধে তীরন্দাজাদের, যারা ধনুক টানে, তাদের সকলকে আহ্বান কর। তার চারদিকে শিবির বসাও, কাউকেই রেহাই পেতে দিয়ো না। তার কর্ম অনুযায়ী প্রতিফল দাও, সে পরের প্রতি যেমন ব্যবহার করেছে তার প্রতি সেইমত ব্যবহার কর ; কেননা সে প্রভুর বিরুদ্ধে, ইস্রায়েলের সেই পবিত্রয়জনের বিরুদ্ধেই দর্প করেছে।
30 তাই সেইদিন তার চত্বরে চত্বরে তার যুবকদের পতন হবে, তার সকল যোদ্ধাকেও সেইদিন স্তব্ধ করা হবে।' প্রভুর উক্তি।
31 হে দর্পী, তোমারই সঙ্গে আমার বিবাদ! —সেনাবাহিনীর প্রভুর উক্তি— কেননা তোমার দিন এসে গেছে, এসে গেছে তোমার শাস্তির ক্ষণ।
32 তখন ওই দর্পী হোঁচট খেয়ে পড়বে, কেউ তাকে ওঠাবে না : আর আমি তার শহরগুলিতে আগুন লাগিয়ে দেব, আর সেই আগুন তার চারদিকের সবকিছু গ্রাস করবে।
33 সেনাবাহিনীর প্রভু একথা বলছেন: ইস্রায়েল-সন্তানেরা ও ঘুদা-সন্তানেরা নির্বিশেষে অত্যাচারিত হচ্ছে; যারা তাদের বন্দিদশায় রাখছে, তারা তাদের জোর করে ধরে রাখছে, তাদের ছাড়তে রাজি নয়।
34 কিন্তু তাদের মুক্তিসাধক শক্তিশালী, সেনাবাহিনীর প্রশ্নই তাঁর নাম! তিনি সবলভাবে তাদের পক্ষসমর্থন করবেন, যেন তিনি দেশটা সুস্থির করেন ও বাবিলনের অধিবাসীদের অস্থির করেন।
35 কাদীয়দের উপরে, বাবিলন-অধিবাসীদের উপরে, তার নেতাদের উপরে, তার প্রজ্ঞাবানদের উপরে খড়্গা ! — প্রভুর উক্তি।
36 তার গণকদের উপরে খড়া ! তারা ক্ষিপ্ত হোক। তার বীরপুরুষদের উপরে খড়্গা! তারা আতঙ্কিত হোক।
37 তার অশ্ব ও রথগুলির উপরে, তার মধ্যে যত বিজাতীয় মানুষের উপরে খড়া! তারা মেয়েদের সমান হোক। তার সকল ধনকোষের উপরে খড়্গা! সেগুলি লুণ্ঠিত হোক।
38 তার জলাধারের উপরে খড়্গা! সেগুলি শুষ্ক হোক। কেননা তা প্রতিমার দেশ, ভয়ঙ্কর মূর্তি তাদের মত্ত করে তোলে।
39 এজন্য সেখানে বনবিড়াল ও শিয়ালে বাস করবে, উটপাখিরা বাসা করবে: তা আর কখনও লোকালয় হবে না, পুরুষানুক্রমে সেখানে বসতি হবে না।
40 পরমেশ্বর যখন সদোম, গমোরা ও নিকটবর্তী শহরগুলির উৎপাটন করেছিলেন, তখন যেমন ঘটেছিল—প্রভুর উদ্ভি—তেমনি সেখানেও আর কোন মানুষ বাস করবে না, কোন আদমসন্তান সেখানে বসতি করবে না।'
41 দেখ, উত্তরদিক থেকে এক সেনাদল আসছে, পৃথিবীর চারপ্রান্ত থেকে এক মহাজাতি ও বহু রাজা উত্তেজিত হয়ে আসছে।
42 তারা ধনুক ও বর্শাধারী, নিষ্ঠুর ও মমতাবিহীন; তাদের শব্দ সমুদ্রগর্জনের মত। তারা ঘোড়ায় চড়ে আসছে; হায়, বাবিলন-কন্যা, তোমারই বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তারা এক মানুষই যেন তৈরী !
43 বাবিলন-রাজ তাদের বিষয়ে কথা শুনেছে, তার হাত অবশ হল, যন্ত্রণা, প্রসবিনীর ব্যথার মত ব্যথা তাকে ধরল।
44 দেখ, সিংহ যেমন যদনের বন থেকে উঠে সেই চিরন্তন চারণভূমির দিকে আসে, তেমনি একনিমেষেই আমি বাবিলন থেকে তাদের তাড়িয়ে দেব ও তাদের উপরে আমার মনোনীতজনকে নিযুক্ত করব; কেননা আমার সমকক্ষ কে? আমার বিপক্ষ কে? আমার সামনে দাঁড়াবে এমন পালক কোথায়?
45 তাই তোমরা প্রভুর সঙ্কল্প শোন, যা তিনি বাবিলনের বিরুদ্ধে করেছেন; তাঁর সেই সিদ্ধান্ত শোন, যা তিনি কাদীয়দের দেশের বিরুদ্ধে নিয়েছেন। নিশ্চয়ই পালের ক্ষুদ্রতমদেরও টেনে নিয়ে যাওয়া হবে, নিশ্চয়ই তাদের চোখের সামনে তাদের চারণভূমি উৎসন্ন করা হবে।
46 বাবিলনের পতনের শব্দে পৃথিবী কাঁপছে। দেশগুলোর মধ্যে হাহাকারের সুর ধ্বনিত হচ্ছে।'