Index

যেরেমিয়া - Chapter 23

1 "ধিক সেই পালকদের, যারা আমার পালের মেষগুলিকে বিনষ্ট ও বিক্ষিপ্ত করে।প্রভুর উক্তি।
2 এজন্য প্রভু, ইস্রায়েলের পরমেশ্বর, যে পালকেরা আমার জনগণকে চরাতে নিযুক্ত, তাদের সম্বন্ধে একথা বলছেন : 'তোমরা আমার মেষদের বিক্ষিপ্ত করেছ, তাদের তাড়িয়ে দিয়েছ, তাদের জন্য চিন্তা করনি; দেখ, আমি তোমাদের ও তোমাদের দুর্ব্যবহারের জন্য চিন্তা করব! — প্রভুর উক্তি।
3 আমি যে সকল দেশে আমার পাল তাড়িয়ে দিয়েছি, সেখান থেকে তার অবশিষ্টাংশকে নিজেই জড় করব, তাদের চারণভূমিতে ফিরিয়ে আনব ; তারা উর্বর হবে ও তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
4 আমি তাদের জন্য এমন পালকদের উদ্ভব ঘটাব যারা তাদের চরাবে, যেন তাদের আর ভীত বা নিরাশ না হতে হয় ; তাদের একটাও হারানো থাকবে না।' প্রভুর উক্তি।
5 "দেখ, এমন দিনগুলি আসছে—প্রভুর উক্তি- যখন আমি দাউদের জন্য ধর্মময় এক অঙ্কুর উৎপন্ন করব। তিনি প্রকৃত রাজারূপে রাজত্ব করবেন, হবেন সুবুদ্ধিসম্পন্ন দেশজুড়ে ন্যায় ও ধর্মময়তা অনুশীলন করবেন।
6 তাঁর দিনগুলিতে যুদা পরিত্রাণ পাবে ও ইস্রায়েল ভরসাভরে বসবাস করবে ; তিনি এ নামেই আখ্যাত হবেন : “প্রভু আমাদের-ধর্মময়তা।”
7 অতএব, দেখ, এমন দিনগুলি আসছে—প্রভুর উক্তি —যখন কেউ আর বলবে না : সেই জীবনময় প্রভুর দিব্যি, যিনি মিশর দেশ থেকে ইস্রায়েল সন্তানদের বের করে এনেছেন ;
8 বরং তারা বলবে, সেই জীবনময় প্রভুর দিব্যি, যিনি উত্তর দেশ থেকেই ইস্রায়েলকূলের বংশধরদের বের করে এনেছেন, তাদের সেই সকল দেশ থেকেও বের করে এনেছেন, যেখানে তিনি তাদের বিক্ষিপ্ত করেছিলেন। আর তারা তাদের আপন দেশভূমিতে বসবাস করবে।”
9 নবীদের বিষয়। আমার বুকে হৃদয় ফেটে যাচ্ছে, আমার সমস্ত হাড় কেঁপে উঠছে; প্রস্তুর কারণে ও তাঁর পবিত্র বাণীর কারণে আমি মত্ত মানুষের মত, আঙুররসে পরাভূত মানুষের মত।
10 কেননা দেশ ব্যক্তিচারী মানুষে ভরা ; অভিশাপের কারণে সমগ্র দেশ শোক করছে; প্রান্তরের চারণভূমি শুষ্ক হয়ে গেছে। অপকর্মই তেমন লোকদের লক্ষ্য, অন্যায়ই ওদের বল।
11 নবী ও যাজক, উভয়েই ধূর্ত, আমার নিজের গৃহেই আমি ওদের দুষ্কর্ম দেখেছি—প্রভুর উক্তি।
12 তাই ওদের পক্ষে ওদের চলার পথ হবে পিচ্ছিল পথের মত, অন্ধকারে তাড়িত হয়ে সেই অন্ধকারেই হবে ওদের পতন, কারণ ওদের প্রতিফল-বর্ষে আমি ওদের উপরে অমঙ্গল ডেকে আনব।' —প্রভুর উক্তি।
13 ‘আমি সামারিয়ার নবীদের মধ্যে অযৌক্তিক বেশ কিছু দেখেছি। তারা বায়াল দেবের নামে ভাববাণী দিচ্ছিল, এবং আমার আপন জনগণ ইয়ায়েলকে পথভ্রষ্ট করছিল।
14 কিন্তু আমি যেরুসালেমের নবীদের মধ্যে ভীষণ খারাপ কিছু দেখেছি : তারা ব্যভিচার করে ও মিথ্যায় অবলম্বন করে, অপকর্মাদের এমন সহায়তা দেয় যে, কেউ নিজের কুপথ থেকে ফেরে না ; আমার কাছে তারা সকলে সদোমের মত, এবং সেখানকার অধিবাসীরা গমোরার মত।'
15 তাই সেনাবাহিনীর প্রভূ তেমন নবীদের বিষয়ে একথা বলছেন : “দেখ, আমি তাদের নাগদানা খাওয়াব, তাদের বিষাক্ত জল পান করাব, কারণ যেরুসালেমের নবীদের মধ্য থেকে ধূর্ততা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।'
16 সেনাবাহিনীর প্রভু একথা বলছেন : “সেই নবীরা তোমাদের কাছে যে ভাববাণী দেয়, তা তোমরা শুনো না; তারা তোমাদের ভোলায়, তাদের মনের যে মিথ্যাদর্শন, তারা তা-ই বলে, প্রভুর মুখ থেকে যা নির্গত, তা নয়।
17 যারা আমাকে অবজ্ঞা করে, তাদের ওরা শুধু বলে থাকে : প্রভু একথা বলেছেন: তোমাদের শান্তি হবে! এবং যারা নিজেদের জেদি হৃদয়ের অনুগামী, তাদের ওরা শুধু বলে থাকে : তোমাদের উপর কোন অমঙ্গল এসে পড়বে না।
18 কিন্তু কে প্রভুর মন্ত্রণাসভায় উপস্থিত হয়ে তাঁর বাণী দেখতে ও শুনতে পেরেছে? কে তাঁর বাণী শুনে তার প্রতি বাধ্য হয়েছে?
19 দেখ, প্রভুর ঝড়ঝঞ্ঝা প্রচণ্ড ক্রোধে বইবে ঘূর্ণিবাতাস ও ঝড়ঝঞ্ঝা দুর্জনদের মাথায় নেমে পড়বে।
20 প্রভুর ক্রোধ প্রশমিত হবে না, যতদিন না তিনি নিজের মনের সঙ্কল্প সিদ্ধ ও সফল করেন। অন্তিম দিনগুলিতে তোমরা তা সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারবে।
21 আমি তো এই নবীদের পাঠাইনি, অথচ তারা দৌড়োচ্ছে। আমি তো তাদের কাছে কথা বলিনি, অথচ তারা ভাববাণী দিচ্ছে।
22 তারা যদি আমার মন্ত্রণাসভায় উপস্থিত হয়ে থাকে, তবে আমার জনগণের কাছে আমারই বাণী শুনিয়ে দিক, তাদের কুপথ থেকে ও তাদের দুর্ব্যবহার থেকে তাদের ফিরিয়ে নিক।'
23 “আমি কি শুধু কাছেই ঈশ্বর?—প্রভুর উক্তি আমি কি দূরেও ঈশ্বর নই?
24 কেউ কি এমন গুপ্ত জায়গায় লুকিয়ে থাকতে পারে যে, আমি তাকে দেখতে পাব না? —প্রভুর উক্তি । স্বর্গ ও মর্ত কি আমাতে পরিপূর্ণ নয়?' –প্রভুর উক্তি।
25 যে নবীরা আমার নামে মিথ্যা ভারবাণী দেয়, আমি তো শুনেছি তারা কী বলে; তারা বলে স্বপ্ন দেখেছি, স্বপ্ন দেখেছি!
26 মিথ্যা ভাববাণী দেয় ও নিজেদের মনের ছলনারই নবী, নবীদের মধ্যে এমন নবীরা আর কতকাল থাকবে?
27 তাদের প্রচেষ্টা এ তাদের পিতৃপুরুষেরা যেমন বায়াল-দেবের খাতিরে আমার নাম ভুলে গেছিল, তেমনি তারা একে অপরের কাছে নিজেদের স্বপ্নের বর্ণনার মধ্য দিয়ে আমার জনগণকে আমার নাম ভুলে যেতে বাধ্য করছে।
28 যে নবী স্বপ্ন দেখেছে, সে স্বপ্ন বলেই তার বর্ণনা দিক এবং যে আমার বাণী পেয়েছে, সে সত্য রক্ষা করে আমার সেই বাণী ব্যক্ত করুক। গমের সঙ্গে খড়ের কি সম্পর্ক?—প্রভুর উক্তি।
29 আমার বাণী কি আগুনের মত নয়? —প্রভুর উত্তি— তা কি এমন হাতুড়ির মত নয়, যা শৈল চূর্ণবিচূর্ণ করে ?
30 এজন্য দেখ, আমি সেই সকল নবীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছি,—প্রভুর উক্তি— যারা একে অপরের কাছ থেকে আমার বাণী চুরি করে নেয়।
31 দেখ, আমি সেই সকল নবীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছি,—প্রভুর উক্তি – যারা কেবল জিহ্বা নাড়ায়, অথচ বলে “প্রভুর উক্তি!”
32 দেখ, আমি সেই মিথ্যা স্বপ্নের নবীদেরই বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছি,—প্রভুর উক্তি – যারা নিজেদের সেই স্বপ্ন বর্ণনা করে ও মিথ্যাকথা ও দাম্ভিকতা দ্বারা আমার জনগণকে ভ্রান্ত করে। আমি তাদের পাঠাইনি, তাদের কোন আজ্ঞাও দিইনি ; তারা এই জনগণের কিছুমাত্র উপকারে আসবে না। প্রভুর উক্তি।
33 আর যখন এই জনগণ বা কোন নবী বা যাজক তোমাকে জিজ্ঞাসা করবে, প্রভুর ভারবাণী কি?” তখন তুমি তাদের বলবে : তোমরাই প্রভুর ভার! আর আমি তোমাদের দূর করে দেব। প্রভুর উক্তি।
34 আর যে কোন নবী, যাজক, বা জনসাধারণের মধ্যে যে কোন একজন বলবে, ‘প্রভুর ভারবাণী!' আমি তাকে ও তার কুলকে শাস্তি দেব।
35 নিজেদের মধ্যে, একে অপরকে, তোমাদের যা বলতে হবে, তা এ: ‘প্রভু কি উত্তর দিয়েছেন?' এবং প্রিভু কি বলেছেন?”
36 কিন্তু তোমরা ‘প্রভুর ভারবাণী” একথা আর উল্লেখ করো না, কারণ প্রত্যেকজনের নিজ নিজ বাণীই তার পক্ষে ভার বলে পরিগণিত হবে, কেননা তোমরা জীবনময় পরমেশ্বরের, আমাদের আপন পরমেশ্বর, সেনাবাহিনীর প্রস্তুর বাণী বিকৃত করেছ।
37 তুমি নবীর সঙ্গে এভাবে কথা বলবে : 'প্রভু তোমাকে কি উত্তর দিয়েছেন?' কিংবা 'প্রভু কি বলেছেন?
38 কিন্তু 'প্রভুর ভারবাণী' একথা যদি তোমরা বল, তবে প্রভু একথা বলছেন : 'তোমরা বারবার বলছ "প্রভুর ভারবাণী”, অথচ আমি তোমাদের কাছে লোক পাঠিয়ে বলেছি, “প্রভুর ভারবাণী" একথা বলো না।
39 এজন্য দেখ, আমি একটা ভারের মত তোমাদের একেবারে তুলে, তোমাদের ও তোমাদের পিতৃপুরুষদের যে নগরী দিয়েছি, সেই নগরী থেকে ও আমার শ্রীমুখ থেকে তোমাদের ছুড়ে ফেলে দেব।
40 আমি তোমাদের উপরে এমন চিরকালীন দুর্নাম ও চিরকালীন অপমান রাখব, যা কখনও বিস্মৃত হবে না।”