Index

যেরেমিয়া - Chapter 38

1 যেরেমিয়া গোটা জনগণের কাছে যে সমস্ত কথা বলছিলেন, মাত্তানের সন্তান শেফাটিয়া, পাদুরের সন্তান গেদালিয়া, শেলেমিয়ার সন্তান ইহুকাল ও মানিয়ার সন্তান পাদুর সেই সমস্ত কথা শুনল; তিনি বলছিলেন,
2 “প্রভু একথা বলছেন : যে কেউ এই নগরীতে থাকবে, সে খড়েল, দুর্ভিক্ষে ও মহামারীতে মারা পড়বে; কিন্তু যে কেউ কান্দীয়দের কাছে গিয়ে আত্মসমর্পণ করবে, সে বাঁচবে : এতে খুশি হবে যে, সে কমপক্ষে প্রাণ বাঁচিয়েছে, আর আসলে বাঁচবে।
3 প্রভু একথা বলছেন : এই নগরী অবশ্য বাবিলন-রাজের সৈন্যদের হাতে তুলে দেওয়া হবে, ও সে তা হস্তগত করবে।
4 তখন সমাজনেতারা রাজাকে বললেন, 'এই লোকের প্রাণদণ্ড হোক, কেননা এ লোকদের কাছে তেমন কথা বলে এই নগরীতে বাকি যোদ্ধাদের সাহস ও জনগণের সাহস নিঃশেষ করছে; কারণ লোকটা জাতির মঙ্গল নয়, কেবল তার অমঙ্গল চাচ্ছে।'
5 সেদেকিয়া রাজা বললেন, 'দেখ, সে তোমাদেরই হাতে! কারণ তোমাদের বিরুদ্ধে রাজার কিছু করার সাধ্য নেই।
6 তখন তাঁরা যেরেমিয়াকে ধরে রাজবংশীয় মাস্কিয়ার কুয়োর মধ্যে ফেলে দিলেন; কুয়োটা কারাবাসের প্রাঙ্গণে অবস্থিত। লোকে দড়িতে করে যেরেমিয়াকে নামিয়ে দিল; সেই কুয়োতে জল ছিল না, কিন্তু কাদা ছিল, তাই যেরেমিয়া কাদায় ডেবে গেলেন।
7 সেই সময়ে রাজপ্রাসাদে নিযুক্ত এবেদ-মেলেক নামে একজন ইথিওপীয় কঞ্চুকী শুনতে পেল যে, যেরেমিয়াকে কুয়োতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। রাজা বেঞ্জামিন-দ্বারে বসে ছিলেন,
8 এমন সময় এবেদ মেলেক রাজপ্রাসাদ থেকে বের হয়ে রাজাকে বলল,
9 “হে আমার প্রভু মহারাজ, এই লোকেরা যেরেমিয়া নবীর প্রতি এভাবে ব্যবহার করে খুবই দুর্ব্যবহার করেছে। কুয়োতেই তাঁকে ফেলে দিয়েছে। তিনি তো সেই জায়গায় ক্ষুধায় মরবেন, কেননা নগরীতে আর রুটি নেই।'
10 তখন রাজা ইথিওপীয় এবেদ মেলেককে এই হুকুম দিলেন, তুমি এখান থেকে ত্রিশজন পুরুষকে সঙ্গে নিয়ে যেরেমিয়া নবী মরবার আগে তাঁকে কুয়ো থেকে তুলে আন।”
11 এবেদ মেলেক সেই লোকদের সঙ্গে নিয়ে রাজপ্রাসাদে গিয়ে ধনভাণ্ডারের পোশাক-আগার থেকে কতগুলি চেরাকাপড় ও পুরাতন চেরানেকড়া নিয়ে তা দড়ি দিয়ে কুয়োতে যেরেমিয়ার কাছে নামিয়ে দিল।
12 ইথিওপীয় এবেদ মেলেক যেরেমিয়াকে বলল, 'এই চেরাকাপড় ও চেরানেকড়া আপনার বগলে দড়ির উপরে দিন।' যেরেমিয়া সেইমত করলেন।
13 তখন ওরা ওই দড়ি ধরে টেনে কুয়ো থেকে তাঁকে তুলল, এবং যেরেমিয়া কারাবাসের প্রাঙ্গণে থাকলেন।
14 সেদেকিয়া রাজা লোক পাঠিয়ে নবী যেরেমিয়াকে প্রভুর গৃহের তৃতীয় প্রবেশস্থানে নিজের কাছে আনালেন ; রাজা তাঁকে বললেন : 'আমি আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করব, আমার কাছ থেকে কিছুই গোপন রাখবেন না।'
15 যেরেমিয়া উত্তরে সেদেকিয়াকে বললেন, 'আমি তা বললে আপনি কি আমাকে নিশ্চয়ই বধ করবেন না? আরও, আমি আপনাকে পরামর্শ দিলে আপনি তো আমার কথায় কান দেবেন না।'
16 তখন সেদেকিয়া রাজা গোপনে যেরেমিয়ার কাছে এই বলে শপথ করলেন, 'আমাদের জীবনদাতা সেই জীবনময় প্রভুর দিব্যি ! আমি আপনাকে বধ করব না; যারা আপনার প্রাণনাশে সচেষ্ট আছে, সেই লোকদেরও হাতে আপনাকে তুলে দেব না।”
17 তখন যেরেমিয়া সেদেকিয়াকে বললেন, "প্রশ্ন, সেনাবাহিনীর পরমেশ্বর, ইস্রায়েলের পরমেশ্বর, একথা বলছেন: তুমি যদি বাইরে গিয়ে বাবিলন-রাজের সেনাপতিদের হাতে আত্মসমর্পণ কর, তবে তোমার প্রাণ বাঁচবে, এই নগরীও আগুনে দেওয়া হবে না; তুমি বাঁচবে, তোমার পরিবারও বাঁচবে।
18 কিন্তু যদি বের হয়ে বাবিলন-রাজের সেনাপতিদের হাতে আত্মসমর্পণ না কর, তবে এই নগরী কান্দীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হবে; তারা তা আগুনে পুড়িয়ে দেবে, আর তুমিও তাদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবে না।'
19 সেদেকিয়া রাজা যেরেমিয়াকে বললেন, যে ইহুদীরা কান্দীয়দের পক্ষে যোগ দিয়েছে, আমি তাদেরই ভয় পাই ; কি জানি, আমাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে, আর তারা আমার প্রতি দুর্ব্যবহার করবে।
20 যেরেমিয়া বললেন, “না, আপনাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে না; বিনয় করি, আমি আপনাকে যা কিছু বলছি, সেই বিষয়ে আপনি প্রভুর বাণী মেনে নিন, তবে আপনার মঙ্গল হবে, আপনি প্রাণে বাঁচবেন।
21 কিন্তু আপনি যদি আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করেন, তবে প্রভু যা আমাকে দেখিয়েছেন, তা এ:
22 এই যে, যুদার রাজপ্রাসাদে বাকি সমস্ত স্ত্রীলোককে বাবিলন-রাজের সেনাপতিদের কাছে আনা হবে, এবং বলবে, তোমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা তোমাকে ভুলিয়েছে, চালাকি করেছে; তোমার পা কাদামাটিতে ডুবে গেছে। কিন্তু ওরা সকলে পিছটান দিয়ে চলে গেছে।
23 সকল স্ত্রীলোককে ও তোমার সকল সন্তানকে কান্দীয়দের হাতে আনা হবে, তুমিও তাদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবে না, বরং তোমাকে বাবিলন-রাজের হাতে বন্দি অবস্থায় রাখা হবে, এবং এই নগরী আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হবে।'
24 সেদেকিয়া যেরেমিয়াকে বললেন, 'কেউই যেন এই সমস্ত কথা না জানে, নইলে আপনার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।
25 আমি আপনার সঙ্গে কথাবার্তা করেছি, তা জানতে পেরে জননেতারা এসে যদি আপনাকে বলে, রাজাকে যা কিছু বলেছ, তা আমাদের বল ; আমাদের কাছ থেকে কিছু গোপন রেখো না, নইলে আমরা তোমাকে বধ করব ; রাজা তোমাকে কী কী বলেছেন, তা আমাদের জানাও ;
26 তবে আপনি তাদের একথা বলবেন: রাজার কাছে আমি এই মিনতি নিবেদন করেছি, যেন তিনি আমাকে যোনাথানের বাড়িতে মরতে ফিরিয়ে না পাঠান।
27 প্রকৃতপক্ষে সেই সকল জননেতা এসে যেরেমিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন; আর তিনি রাজার আজ্ঞামত তাঁদের সেই সকল কথা বললেন, ফলে তাঁরা ক্ষান্ত হয়ে চলে গেলেন ; বস্তুত সেই আলাপ জানাজানি হয়নি।
28 যেরুসালেম হস্তগত হওয়ার দিন পর্যন্ত যেরেমিয়া কারাবাসের প্রাঙ্গণে থাকলেন। যেরুসালেম এইভাবে হস্তগত হওয়ার পর।