Index

যেরেমিয়া - Chapter 25

1 ঘোসিয়ার সন্তান যুদা-রাজ যেহোইয়াকিমের চতুর্থ বর্ষে, অর্থাৎ বাবিলন-রাজ নেবুকাল্লেজারের প্রথম বর্ষে, যুদার গোটা জনগণের জন্য এই বাণী যেরেমিয়ার কাছে এসে উপস্থিত হল।
2 যেরেমিয়া নবী যুদার গোটা জনগণের ও যেরুসালেম অধিবাসীদের কাছে তা প্রচার করে বললেন :
3 আমোনের সন্তান যুদা-রাজ ঘোসিয়ার ত্রয়োদশ বর্ষ থেকে আজ পর্যন্ত, অর্থাৎ এই তেইশ বছর-কাল ধরে প্রভুর বাণী আমার কাছে এসে উপস্থিত হয়েছে, এবং আমি তৎপরতা ও যত্নের সঙ্গে তোমাদের কাছে কথা বলেছি, কিন্তু তোমরা শুনলে না।
4 প্রভু তৎপরতা ও যত্নের সঙ্গে তাঁর সকল দাস সেই নবীদের তোমাদের কাছে প্রেরণ করতে থাকলেন, কিন্তু তোমরা শুনলে না, শুনবার জন্যও কান দিলে না;
5 বাণী ছিল এ: তোমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ কুপথ থেকে ও নিজ নিজ আচরণের ধূর্ততা থেকে ফের, তবে প্রভু প্রাচীনকাল থেকে চিরকালের মত তোমাদের ও তোমাদের পিতৃপুরুষদের যে দেশভূমি দিয়েছেন, তোমরা সেখানে বাস করতে পারবে।
6 অন্য দেবতাদের সেবা করার জন্য ও তাদের উদ্দেশে প্রণিপাত করার জন্য তাদের অনুগামী হয়ো না, তোমাদের হাতে তৈরী বস্তু দিয়ে আমাকে ক্ষুব্ধ করো না ; তবে আমি তোমাদের কোন অমঙ্গল ঘটাব না।
7 কিন্তু তোমরা আমার কথা শুনলে না—প্রভুর উক্তি—এবং তোমাদের হাতে তৈরী বস্তু দিয়ে আমাকে ক্ষুব্ধ করে তোমাদের নিজেদের অমঙ্গল ঘটিয়েছ।
8 তাই সেনাবাহিনীর প্রভু একথা বলছেন: যেহেতু তোমরা আমার কথা শুনলে না,
9 সেজন্য দেখ, আমি উত্তরদিকের সকল গোত্রকে ও আমার দাস বাবিলন-রাজ নেবুকাদ্রেজারকেও আনাব,—প্রভুর উক্তি—তাদের আমি এদেশের বিরুদ্ধে, তার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে ও তার চতুর্দিকের সমস্ত দেশগুলোর বিরুদ্ধে আনব, এদের বিনাশ-মানতের বস্তু করব, আবার এদের এমন উৎসন্নস্থান করব, যেখানে আতঙ্কের চিৎকার ধ্বনিত হবে, আর এদের ধ্বংসস্তূপের জায়গায় পরিণত করব।
10 এদের মধ্য থেকে ফূর্তির সুর ও আনন্দের সুর বরের কন্ঠ ও কনের কণ্ঠ, জাঁতার শব্দ ও প্রদীপের আলো নিঃশেষ করে দেব।
11 গোটা অঞ্চলটা ধ্বংসস্তূপের জায়গা ও উৎসম্মস্থান হবে, এবং এই দেশগুলো সত্তর বছর ধরে বাবিলন-রাজের বশীভূত হবে।
12 সত্তর বছর-কাল পূর্ণ হলে আমি বাবিলন-রাজকে ও সেই দেশকে তাদের অপরাধের যোগ্য শাস্তি দেব—প্রভুর উক্তি—হ্যাঁ, সেই কান্দীয়দের দেশকে শাস্তি দেব ও তা চিরস্থায়ী উৎসন্নস্থান করব।
13 আর সেই দেশের বিরুদ্ধে আমি যা কিছু বলেছি, এই পুস্তকে যা কিছু লেখা আছে, যেরেমিয়া সমস্ত জাতির বিরুদ্ধে যে ভাববাণী দিয়েছে, ওই দেশের প্রতি আমার সেই সমস্ত বাণীর সিদ্ধি ঘটাব।
14 কেননা বহু দেশ ও মহান রাজারা তাদের বশীভূত করবে, এভাবে আমি তাদের কাজ অনুযায়ী ও তাদের হাতের কাজকর্ম অনুযায়ী প্রতিফল তাদের দেব।'
15 প্রভু, ইস্রায়েলের পরমেশ্বর, আমাকে একথা বললেন: “তুমি আমার ক্রোধের এই আঙুররসের পানপাত্র নাও, এবং যে সকল দেশের কাছে আমি তোমাকে পাঠাই, তাদের তুমি তা পান করাও,
16 তা পান করে তারা যেন মত্ত হয় এবং তাদের মধ্যে যে খরুণ আমি পাঠাব, তার সামনে দিশেহারা হয়ে পড়ে।
17 তাই আমি প্রভুর হাত থেকে সেই পানপাত্র নিলাম, এবং প্রভু যে সকল দেশের কাছে আমাকে পাঠালেন, তাদের তা পান করালাম ;
18 সেই দেশগুলো এই এই : যেরুসালেম ও যুদার শহরগুলি এবং তার রাজারা ও নেতারা—যেন তারা ধ্বংসস্তূপ, অভিশাপ ও এমন উৎসন্নস্থানের হাতে সমর্পিত হয়, যেখানে আতঙ্কের চিৎকার ধ্বনিত হয়—আর তেমনটি আজও ঘটছে— ;
19 মিশর-রাজ ফারাও, তার পরিষদেরা, তার অধিনায়কেরা ও তার সমস্ত প্রজা;
20 যত জাতের জাতি, উজ দেশের সমস্ত রাজা, ও ফিলিস্তিনিদের দেশের সমস্ত রাজা, আস্কালোন, গাজা, এক্রোন ও আসদোদের অবশিষ্টাংশ;
21 এদোম, মোয়াব, ও আম্মোনীয়েরা,
22 তুরসের সমস্ত রাজা, সিদোনের সমস্ত রাজা ও সমুদ্রের ওপারে যে দ্বীপ, সেই দ্বীপের রাজারা,
23 দেদান, টেমা, বুজ, ও কেশকোণ মুণ্ডিত সমস্ত লোক,
24 প্রান্তরবাসী আরবদের সমস্ত রাজা,
25 জিম্রির সমস্ত রাজা, এলামের সমস্ত রাজা ও মেদিয়ার সমস্ত রাজা,
26 উত্তরদিকের নিকটবর্তী ও দূরবর্তী সমস্ত রাজা, নির্বিশেষে এই সকলে; পৃথিবীর বুকে যত রাজ্য রয়েছে, পৃথিবীর সেই সমস্ত রাজ্য; আর এদের সকলের শেষে শেশাখের রাজা পান করবে।
27 তুমি তাদের একথা বলবে সেনাবাহিনীর প্রভু, ইস্রায়েলের পরমেশ্বর, একথা বলছেন: তোমরা পান কর, মত্ত হও, বমি কর; এবং তোমাদের মধ্যে যে খড়্গা পাঠিয়েছি, তার সামনে পতিত হও, আর উঠো না।
28 তারা তোমার হাত থেকে পাত্রটা নিতে অস্বীকার করলে তুমি তাদের বলবে: সেনাবাহিনীর প্রভু একথা বলছেন: তোমাদের অবশ্যই পান করতে হবে!
29 দেখ, যে নগরী আমার আপন নাম বহন করে, আমি যখন প্রথম সেই নগরী দণ্ডিত করি, তখন তোমরা কি অদণ্ডিত থাকতে দাবি করবে? না, তোমরা অদণ্ডিত থাকবে না, কারণ আমি পৃথিবীর সকল অধিবাসীদের উপরে খড়্গা ডেকে আনব। সেনাবাহিনীর প্রভুর উক্তি।
30 তুমি এই সমস্ত কিছুর ভাববাণী দেবে; তাদের বলবে: প্রভু ঊর্ধ্বলোক থেকে গর্জনধ্বনি তুলছেন, তাঁর পবিত্র বাসস্থান থেকে বজ্রকন্ঠ শোনাচ্ছেন তিনি চারণভূমির বিরুদ্ধে তীব্র গর্জনধ্বনি তুলছেন, মাড়াইকুণ্ডে আঙুর মাড়াই করে যারা, তাদের মত তিনি হর্ষধ্বনি তুলছেন দেশের সকল অধিবাসীর বিরুদ্ধে।
31 পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তেমন শব্দ ছড়িয়ে পড়বে, কারণ প্রভু দেশগুলোকে বিচারমঞ্চে উপস্থিত করছেন ; তিনি সমস্ত মানবজাতির বিচার করতে যাচ্ছেন, দুর্জনদের খঙ্গের হাতে তুলে দিচ্ছেন। প্রভুর উক্তি ।
32 সেনাবাহিনীর প্রভু একথা বলছেন : দেখ, অমঙ্গল এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, পৃথিবীর শেষ প্রান্ত থেকে প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস উঠছে।
33 সেদিন প্রভুর আঘাতগ্রস্ত যত মানুষ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে পৃথিবীর অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে; তাদের জন্য কোন বিলাপগান হবে না, তাদের কেউ জড় করবে না, তাদের কবরও কেউ দেবে না, কিন্তু তারা পড়ে থাকবে মাটির উপরে সারের মত।
34 মেষপালকেরা, হাহাকার কর, চিৎকার কর ! পালের মনিবেরা, ধুলায় গড়াগড়ি দাও ! কারণ তোমাদের জবাইয়ের দিনগুলি এসে গেছে, আর তোমরা একটা সেরা পাত্রের মত ভেঙে যাবে।
35 পালকদের জন্য আশ্রয় থাকবে না, পালের মনিবদের জন্যও রেহাই থাকবে না।
36 শোন পালকদের চিৎকার! শোন পালের মনিবদের হাহাকার, কারণ প্রভু তাদের চারণভূমি বিনষ্ট করছেন :
37 প্রভুর জ্বলন্ত ক্রোধের কারণে শান্ত চারণমাঠ এখন নিস্তব্ধ।
38 যুবসিংহ নিজের আস্তানা ছেড়ে আসছে: উৎপীড়ক খঙ্গের রোষের কারণে ও তাঁর জ্বলন্ত ক্রোধের কারণে তাদের দেশ এখন একটা ধ্বংসস্থান!'