1 প্রভুর বাণী আমার কাছে এসে উপস্থিত হয়ে বলল :
2 “যাও, যেরুসালেমের কানে একথা চিৎকার করে বল : প্রভু একথা বলছেন : তোমার কথা আমার স্মরণ হয়, তোমার যৌবনের আসক্তি, তোমার বিবাহকালের ভালবাসার কথাও আমার স্মরণ হয়, যখন তুমি মরুপ্রান্তরে আমার পিছু পিছু আসতে, —এমন দেশে যেখানে কিছুই বোনা ছিল না।
3 তখন ইস্রায়েল প্রভুর উদ্দেশে পবিত্রীকৃতই ছিল, ছিল তাঁর ফসলের প্রথমাংশ : যে কেউ তার ফল খেত, তাদের সকলকে অপরাধী বলে সাব্যস্ত করা হত, তাদের সকলের উপর অমঙ্গল নেমে পড়ত। প্রভুর উক্তি।
4 হে যাকোবকুল, হে ইস্রায়েলকুলের সকল গোত্র, প্রভুর বাণী শোন!
5 প্রভু একথা বলছেন : তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমাতে কী অন্যায় পেল যে, আমাকে ত্যাগ করে দূরে গিয়ে, যা অসার, তারই পিছনে গেল ও নিজেরাই অসার হল?
6 তারা তো কখনও বলল না, কোথায় সেই প্রভু, যিনি মিশর দেশ থেকে আমাদের এখানে আনলেন, যিনি মরুপ্রান্তরের মধ্য দিয়ে, মরুভূমি ও গর্তভরা এক ভূমির মধ্য দিয়ে, জলহীন ও অন্ধকারময় এক ভূমির মধ্য দিয়ে, পথিক ও নিবাসীশূন্যই এক ভূমির মধ্য দিয়ে আমাদের চালনা করলেন ?
7 আমি তোমাদের এক উর্বরতম দেশে আনলাম, যেন তোমরা এখানকার ফল ও উৎকৃষ্ট সবকিছু ভোগ কর। কিন্তু তোমরা প্রবেশ করামাত্র আমার এই দেশ কলুষিত করলে, আমার এই উত্তরাধিকার জঘন্য বস্তু করলে।
8 যাজকেরাও কখনও বলল না, প্রভু কোথায় ? না! বিধানপণ্ডিতেরা আমাকে জানল না, পালকেরাও আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করণ, এবং নবীরা বায়াল-দেবের নাম নিয়ে বাণী দিল এবং অনর্থক পদার্থের অনুগামী হল।
9 তাই আমি তোমাদের সঙ্গে আবার বিবাদ করব—প্রভুর উক্তি — তোমাদের পৌত্রদেরও সঙ্গে বিবাদ করব।
10 যাও, নিজেরাই কিত্তিম দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে চেয়ে দেখ, কেদারেও লোক পাঠিয়ে সূক্ষ্ম বিচার-বিবেচনা কর, দেখ সেখানে এমন কিছু কখনও ঘটেছে কিনা।
11 কোন জাতি কি কখনও তার আপন দেবতাদের বদলি করেছে? —তাছাড়া সেগুলো ঈশ্বরও নয়!- অথচ আমার আপন জনগণ অনর্থক একটা বস্তুর সঙ্গে তাদের “গৌরবের” বদলি করেছে।
12 আকাশমণ্ডল, এতে স্তম্ভিত হও! রোমাঞ্চিত হও, নিতান্ত অভিভূত হয়ে পড়! প্রভুর উক্তি।
13 কারণ আমার আপন জনগণ এই অপরাধ দু'টো করেছে : তারা আমাকে—জীবনময় জলের উৎস এই আমাকে ত্যাগ করেছে, এবং পাথর কেটে নিজেদের জন্য এমন জলভাণ্ডার তৈরি করেছে, যেগুলো ফাটল-ধরা, জল ধরে রাখতে অক্ষম।
14 ইস্রায়েল কি দাস? সে কি ক্রীতদাস অবস্থায় জাত? তবে সে কেন হয়েছে লুটের বস্তু?
15 যুবসিংহেরা গর্জন করছে, নিজেদের হুঙ্কার শোনাচ্ছে। তার দেশ মরুভূমি হয়েছে, তার শহরগুলি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, নিবাসী কেউ নেই।
16 নোফ ও তাফানেসের লোকেরাও তোমার মাথার খুলি ভেঙে দিয়েছে!
17 তেমন কিছু তুমি কি নিজে নিজের প্রতি ঘটাগুনি ? বাস্তবিকই তোমার পরমেশ্বর প্রভু যখন তোমাকে পথ দিয়ে চালনা করছিলেন, তখন তুমি তাঁকে পরিত্যাগই করেছ।
18 এখন হোরুস-দিঘিতে জল পান করতে তুমি মিশরের দিকে কেন দৌড়াচ্ছ? কেন [ইউফ্রেটিস] নদীর জল পান করতে আসিরিয়ার দিকেও দৌড়াচ্ছ?
19 তোমারই অপকর্ম তোমাকে শাস্তি দিচ্ছে, তোমারই বিদ্রোহিতা তোমাকে দণ্ডিত করছে। তাই চিন্তা কর, বিবেচনা করে দেখ, তোমার পক্ষে এটি কতই না অমঙ্গলকর ও তিক্ত বিষয় যে, তুমি তোমার আপন পরমেশ্বর প্রভুকে পরিত্যাগ করেছ, ও তোমার অন্তরে আমার প্রতি আর সম্ভ্রম নেই। সেনাবাহিনীর প্রভু পরমেশ্বরের উক্তি।
20 আসলে দীর্ঘকাল পূর্বেই তুমি তোমার জোয়াল ভেঙে ফেলেছ, তোমার বন্ধন ছিন্ন করেছ; তুমি নাকি বলেছ, আমি তোমার অধীন হয়ে দাসকর্ম করব না! বাস্তবিকই সমস্ত উচ্চ পর্বতের উপরে ও সমস্ত সবুজ গাছের তলায় তুমি শুয়ে ব্যভিচার করে এসেছ।
21 অথচ আমি একেবারে উৎকৃষ্ট জাতের সেরা আঙুরলতা করেই তোমাকে পুঁতেছিলাম ; তুমি কেমন করে জারজ আঙুরলতার শাখায় রূপান্তরিত হয়েছ?
22 যদিও সোডা দিয়ে তুমি নিজেকে ধুয়ে নাও ও অনেক পটাশ লাগাও, তবু তোমার অপরাধের কলঙ্ক আমার দৃষ্টিগোচর থাকবেই। —প্রভু পরমেশ্বরের উক্তি।
23 তুমি কেমন করে বলতে পার, আমি কলুষিতা নই, বায়াল-দেব-দেবীর পিছনে যাইনি? উপত্যকায় তোমার আচরণ বিবেচনা করে দেখ; যা করেছ, তা স্বীকার কর, হে অসার ও যাযাবর যুবতী উটী,
24 মরুপ্রান্তরে অভ্যস্ত হে বন্য গাধী, যা কামের উত্তাপে বাতাস হা করে খায় ! তার কামাবেশে কে তাকে সামলাতে পারে ? তার খোঁজ পাবার জন্য গাধার পক্ষে তত কষ্ট করার দরকার হয় না, তার নিয়মিত মাসে তাকে পাবেই!
25 সাবধান, পাছে তোমার পা পাদুকা-ছাড়া হয়, পাছে তোমার নিজের গলাই শুষ্ক হয়। কিন্তু তুমি তো উত্তরে বল, না! এ বৃথা চেষ্টা ! আমি বিদেশীদের ভালবাসি, তাদেরই পিছনে যাব।
26 চোর ধরা পড়লে যেমন লজ্জাবোধ করে, তেমনি ইস্রায়েলকুল—তারা নিজেরা, তাদের রাজারা, তাদের জনপ্রধানেরা, তাদের যাজকেরা ও তাদের নবীরা- সকলেই লজ্জায় অভিভূত হয়েছে।
27 তারা এক টুকরো কাঠকে উদ্দেশ করে বলে: তুমি আমার পিতা, একটা পাথরকে উদ্দেশ করে বলে: তুমি আমার জননী। আমার প্রতি তারা পিঠ ফেরায়, মুখ নয়; কিন্তু অমঙ্গলের দিনে তারা বলে। ওঠ, আমাদের বাঁচাও !
28 কিন্তু যা তুমি নিজের জন্য তৈরি করেছ, তোমার সেই দেব-দেবী কোথায়? তারাই উঠুক, যদি অমঙ্গলের দিনে তোমাকে বাঁচাতে পারে ; কেননা, হে মুদা, তোমার যত শহর, তত দেব-দেবী!
29 তোমরা কেন আমার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছ? সকলেই আমার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়েছ। প্রভুর উক্তি।
30 আমি তোমাদের সন্তানদের বৃথাই আঘাত করেছি, তারা সংশোধন গ্রহণ করে নেয়নি। তোমাদেরই খড়া বিনাশক সিংহের মত তোমাদের নবীদের গ্রাস করেছে।
31 তবে এই প্রজন্মের মানুষ যে তোমরা, তোমরাই প্রভুর বাণী বিবেচনা করে দেখ! ইস্রায়েলের কাছে আমি কি মরুপ্রান্তর হয়েছি? কিংবা আমি কি ঘোর অন্ধকারের দেশ হয়েছি? আমার জনগণ কেন বলে : আমরা এখন স্বাধীন, তোমার কাছে আর ফিরব না!
32 যুবতী কি নিজের ভূষণ, ও কনে কি নিজের বিবাহ-পোশাক ভুলে যায় ? অথচ আমার আপন জনগণ আমাকে ভুলে রয়েছে —অসংখ্য দিন ধরে।
33 প্রেমের অনুসন্ধানে তুমি তোমার পথ কেমন বেছে নিতে পার! এজন্য তুমি ধূর্তা স্ত্রীলোকদেরও শিখিয়েছ তোমার সেই সমস্ত পথ।
34 তোমার পোশাকের আঁচলেও নির্দোষী দীনহীনদের রক্ত পাওয়া যাচ্ছে; তেমন কিছুর উপরেই আমি রক্ত পাচ্ছি, প্রাচীরের কোন ছিদ্রে নয়!
35 তা সত্ত্বেও তুমি প্রতিবাদ করে বল : আমি নির্দোষী, তাঁর ক্রোধ ইতিমধ্যে আমা থেকে দূরেই গেছে। কিন্তু দেখ, আমি তোমার বিচার করব, যেহেতু তুমি বলেছ : আমি পথভ্ৰষ্টা হইনি।
36 তোমার পথ পরিবর্তন করার জন্য তুমি কেন এত ঘুরে বেড়াও? আসিরিয়ার বেলায় যেমন আশাভ্রষ্টা হয়েছিলে, মিশরের বেলায়ও সেইমত আশাভ্রষ্টা হবে।
37 সেখান থেকেও হাত মাথায় করে ফিরে আসবে, কেননা যাদের উপর তুমি ভরসা রেখেছিলে, প্রভু তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন ; না! তাদের সাহায্য তোমার কোন উপকারে আসবে না।'