1 যুদা-রাজ সেদেকিয়ার দশম বর্ষে, অর্থাৎ নেবুকাদ্রেজারের অষ্টাদশ বর্ষে, প্রভুর কাছ থেকে যে বাণী যেরেমিয়ার কাছে এসে উপস্থিত হল, তা এ।
2 সেসময়ে বাবিলন-রাজের সৈন্যসামন্ত যেরুসালেম অবরোধ করছিল, এবং যেরেমিয়া নবী ছুদার রাজপ্রাসাদে, কারাবাসের প্রাঙ্গণে, আবদ্ধ ছিলেন,
3 যেহেতু যুদারাজ সেদেকিয়া এই বলে তাঁকে আটকিয়ে রেখেছিলেন: “তুমি কেন তেমন ভাববাণী দিচ্ছ? তথা : প্রভু একথা বলছেন: দেখ, আমি এই নগরী বাবিলন-রাজের হাতে তুলে দেব, আর সে তা হস্তগত করবে;
4 যুদারাজ সেদেকিয়া কান্দীয়দের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবে না; না, তাকে বাবিলন-রাজের হাতে তুলে দেওয়া হবে, তার মুখোমুখি হয়ে তার সঙ্গে কথা বলবে ও নিজের চোখেই তাকে দেখবে;
5 সে সেদেকিয়াকে বাবিলনে নিয়ে যাবে, এবং আমি তাকে না দেখতে যাওয়া পর্যন্ত সে সেখানে থাকবে—প্রভুর উক্তি। তোমরা কান্দীয়দের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করলে সফল হবে না।'
6 যেরেমিয়া বললেন, ‘প্রভুর বাণী আমার কাছে এসে উপস্থিত হয়ে বলল :
7 দেখ, তোমার জেঠা মশায় শাল্লুমের সন্তান হানামেল তোমার কাছে এসে একথা বলবে : আনাথোতে আমার যে জমি আছে, তা তুমি কিনে নাও, কারণ তা কিনবার জন্য মুক্তিকর্ম সাধনের অধিকার তোমারই।'
8 পরে প্রভুর কথামত আমার জেঠার সন্তান হানামেল কারাবাসের প্রাঙ্গণে আমার কাছে এসে বলল, 'দোহাই আপনার, বেঞ্জামিন-এলাকায় আনাথোতে আমার যে জমি আছে, তা আপনি কিনে নিন; কারণ উত্তরাধিকারী হওয়ার অধিকার ও মুক্তিকর্ম সাধনের অধিকার আপনার। তাই তা কিনে নিন।” তখন আমি বুঝতে পারলাম, এ প্রস্তুর আদেশ;
9 তাই জেঠা মশায়ের সন্তান আনাথোৎ-নিবাসী হানামেলের কাছ থেকে জমিটা কিনলাম, ও তাকে তার মূল্য বুঝিয়ে দিলাম: সতের রুপোর শেকেল।
10 আর দলিলপত্র লিখে তাতে সীল মারলাম, এবং সাক্ষীদের ডেকে সেই রুপো নিক্তিতে ওজন করে দিলাম।
11 পরে নিয়মনীতি অনুসারে আমি সীল মারা দলিলপত্র ও তার খোলা অনুলিপি নিলাম,
12 ও আমার জাতি হানামেলের সাক্ষাতে, এবং দলিলপত্রে স্বাক্ষরকারী সাক্ষীদের সাক্ষাতে, কারাবাসের প্রাঙ্গণে উপস্থিত সমস্ত ইহুদীদের সাক্ষাতে দলিলপত্রটাকে মাহসিয়ার পৌত্র নেরিয়ার সন্তান বারুকের হাতে তুলে দিলাম।
13 পরে বারুককে এই আড্ডা দিলাম :
14 সেনাবাহিনীর প্রভু, ইস্রায়েলের পরমেশ্বর, একথা বলছেন : তুমি এই সীল-মারা দলিল ও তার খোলা অনুলিপি দু'টোই নিয়ে এক মাটির পাত্রে রাখ, তা যেন অনেক দিন থাকে।
15 কেননা সেনাবাহিনীর প্রভু, ইস্রায়েলের পরমেশ্বর, একথা বলছেন: এদেশে বাড়ি, মাঠ ও আঙুরখেতের ক্রয়-বিক্রয় আবার চলবে!”
16 নেরিয়ার সন্তান বারুককে সেই দলিলপত্র দেওয়ার পর আমি প্রভুর কাছে এই বলে প্রার্থনা করলাম :
17 আহা, প্রভু পরমেশ্বর! দেখ, তুমি তো তোমার মহাপরাক্রমে ও প্রসারিত বাহুতে আকাশ ও পৃথিবী নির্মাণ করেছ; তোমার অসাধ্য কিছু নেই!
18 তুমি সহস্র পুরুষের কাছে কৃপা দেখিয়ে থাক ও পিতৃপুরুষদের অপরাধের দণ্ড তাদের পরবর্তী সন্তানদের কোল ভরে দিয়ে থাক; তুমি মহান ও পরাক্রমশালী ঈশ্বর, সেনাবাহিনীর প্রভুই তোমার নাম।
19 তুমি চিন্তা-ভাবনায় মহান ও কর্মসাধনে শক্তিমান; এবং তোমার চোখ, প্রত্যেকজনকে নিজ নিজ পথের ও নিজ নিজ কাজকর্মের যোগ্য ফল দেবার জন্য, আদমসন্তানদের সমস্ত পথের প্রতি উন্মীলিত রয়েছে।
20 তুমি মিশর দেশে নানা চিহ্ন ও অলৌকিক লক্ষণ দেখিয়েছিলে, যার অর্থ আজ পর্যন্তও ইস্রায়েল ও অন্যান্য লোকদের মধ্যে বলবৎ রয়েছে; এবং নিজে নিজের সুনাম অর্জন করেছ, যেমনটি আজও দেখা যাচ্ছে।
21 তুমি নানা চিহ্ন, অলৌকিক লক্ষণ, শক্তিশালী হাত, প্রসারিত বাহু ও ভয়ঙ্কর মহাকর্ম সাধনে তোমার আপন জনগণ ইস্রায়েলকে মিশর দেশ থেকে বের করে এনেছিলে।
22 আর যে দেশ দেবে ব'লে তাদের পিতৃপুরুষদের কাছে শপথ করেছিলে, এই দেশ তাদের দিয়েইছিলে— দুধ ও মধু-প্রবাহী এক দেশ!
23 তারা প্রবেশ করে দেশ অধিকার করে নিয়েছিল, কিন্তু তোমার প্রতি বাধ্য হল না, তোমার নির্দেশ-পথেও চলল না, আর তুমি যা পালন করতে আজ্ঞা করেছিলে, তারা তার কিছুই পালন করল না; এজন্য তুমি তাদের উপরে এই সমস্ত অমঙ্গল ঘটিয়েছ।
24 দেখ, নগরী হস্তগত করার জন্য সেই সমস্ত অবরোধ-যন্ত্র ঠিক জায়গায় বসানো হয়েছে; এবং খড়া, দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর মধ্য দিয়ে এবার নগরী আক্রমণকারী কান্দীয়দের হাতে পড়ে যাচ্ছে; তুমি যা বলেছিলে, তা সত্য হয়ে উঠেছে; এই যে, তুমি নিজেই তা দেখতে পাচ্ছ।
25 অথচ তুমি, হে প্রভু পরমেশ্বর, তুমি নাকি আমাকে বলেছ : অর্থ দিয়ে সেই জমি কিনে নাও ও সাক্ষীদের ডাক; আর ইতিমধ্যে নগরী কান্দীয়দের হাতে দেওয়া হচ্ছে!'
26 তখন প্রভুর বাণী যেরেমিয়ার কাছে এসে উপস্থিত হয়ে বলল :
27 দেখ, আমিই প্রভু যত প্রাণীর পরমেশ্বর ; আমার পক্ষে কি অসাধ্য কিছু আছে?
28 তাই প্রভু একথা বলছেন: দেখ, আমি কাদীয়দের হাতে ও বাবিলন- রাজ নেবুকাড্রেজারের হাতে এই নগরী তুলে দেব, আর সে তা হস্তগত করবে।
29 নগরীকে আক্রমণকারী এই কান্দীয়েরা প্রবেশ করে তাতে আগুন লাগাবে, এবং আমাকে ক্ষুব্ধ করার জন্য যে সকল বাড়ির ছাদে লোকেরা বায়াল-দেবের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাত ও অন্য দেবতাদের উদ্দেশে পানীয়-নৈবেদ্য ঢালত, সেই সকল বাড়িও তারা আগুনে পুড়িয়ে দেবে।
30 কারণ আমার দৃষ্টিতে যা অন্যায়, ইস্রায়েল সন্তানেরা ও যুদা সন্তানেরা ছেলেবেলা থেকে কেবল তা-ই করে আসছে; বস্তুত তাদের কাজকর্ম দ্বারা ইস্রায়েল সন্তানেরা আমাকে কেবল ক্ষুব্ধই করেছে—প্রভুর উক্তি।
31 কারণ নির্মাণের দিন থেকে আজ পর্যন্ত এই নগরী আমার এমন ক্রোধ ও রোষের কারণ হয়ে এসেছে যে, আমি এখন আমার সামনে থেকে তা দূর করে দেব;
32 কেননা ইস্রায়েল সন্তানেরা ও যুদা সন্তানেরা—তারা, তাদের রাজারা, নেতারা, যাজকেরা, নবীরা, যুদার লোকেরা ও যেরুসালেমের অধিবাসীরা, এরা সকলেই আমাকে ক্ষুব্ধ করে তোলার জন্য শুধু অপকর্মই করেছে।
33 আমার প্রতি তারা তো পিঠ ফিরিয়েছে, মুখ নয়! আর আমি তৎপর ও যত্নশীল হয়ে উপদেশ দিলেও, তারা শুনতে চায়নি, সংশোধন গ্রহণ করে নেয়নি।
34 বরং, যে গৃহ আমার আপন নাম বহন করে, তা কলুষিত করার জন্য তার মধ্যে তাদের সেই সব ঘৃণ্য বস্তু দাঁড় করিয়েছে;
35 মোলক-দেবের উদ্দেশে তাদের নিজেদের ছেলেমেয়েদের আগুনের মধ্য দিয়ে পার করাবার জন্য বেন্-হিন্নোম উপত্যকায় বায়াল-দেবের উদ্দেশে উচ্চস্থান নির্মাণ করেছে—তা এমন কিছু, যা আমি আজ্ঞা করিনি, এমনকি তেমন জঘন্য কর্ম জারি করার কল্পনাও কখনও করিনি— এইসব কিছু তারা করেছে যেন যুদাকে পাপ করাতে পারে।
36 তাই তোমরা যে নগরী সম্বন্ধে বলে থাক, তা খড়্গণ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর মধ্য দিয়ে বাবিলন-রাজের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, এই নগরী সম্বন্ধে এখন প্রভু, ইস্রায়েলের পরমেশ্বর, একথা বলছেন :
37 “দেখ, আমি আমার ক্রোধে, রোষে ও প্রচণ্ড আক্রোশে তাদের যে সকল দেশে বিক্ষিপ্ত করেছি, সেই সকল দেশ থেকে তাদের জড় করব, তাদের এখানে ফিরিয়ে আনব ও তাদের ভরসাভরেই বাস করতে দেব।
38 তারা হবে আমার আপন জনগণ, আর আমি হব তাদের আপন পরমেশ্বর।
39 আর আমি তাদের মঙ্গলের জন্য ও তাদের পরে তাদের সন্তানদেরও মঙ্গলের জন্য তাদের একনিষ্ঠ হৃদয় দেব, সদাচরণেও তাদের নিষ্ঠাবান করব, যেন তারা সবসময় আমাকে ভয় করতে পারে।
40 আমি তাদের সঙ্গে এই চিরন্তন সন্ধি স্থাপন করব যে, তাদের মঙ্গল করার জন্য আমি আমার প্রচেষ্টায় কখনও ক্ষান্ত হব না; এবং তারা যেন আমাকে আর কখনও ত্যাগ না করে সরে যায়, আমি তাদের হৃদয়ে আমার ভয় সঞ্চার করব।
41 তাদের নিয়ে ও তাদের মঙ্গল করায় আমি পুলকিত হব, তাদের স্থায়ীভাবেই এদেশে রোপণ করব— আমার সমস্ত হৃদয় ও সমস্ত প্রাণ দিয়েই তাদের রোপণ করব।'
42 কেননা প্রভু একথা বলছেন : “আমি যেমন এই জনগণের উপরে এই সমস্ত মহা অমঙ্গল এনেছি, তেমনি তাদের কাছে যে সমস্ত মঙ্গল প্রতিশ্রুত হয়েছি, সেই সমস্তও আনব।
43 আর এই যে দেশ সম্বন্ধে তোমরা বলছ: “এ তো উৎসন্নস্থান, নরশূন্য ও পশুশূন্য এবং কাদীয়দের হাতে তুলে দেওয়াই উৎসন্নস্থান,” এদেশের মধ্যে আবার জমি কেনা যাবে।
44 বেঞ্জামিন-এলাকায়, যেরুসালেমের চারদিকের অঞ্চলে, যুদার সকল শহরে, পার্বত্য অঞ্চলের শহরগুলিতে, সেফেলার শহরগুলিতে ও নেগেবের শহরগুলিতে লোকেরা অর্থ দিয়ে জমি কিনবে, দলিলপত্রে লিখে দেবে, সীল মারবে ও তার সাক্ষী রাখবে; কেননা আমি তাদের দশা ফেরাব। প্রভুর উক্তি।