1 যোসিয়ার সন্তান যুদা রাজ যেহোইয়াকিমের চতুর্থ বর্ষে প্রস্তুর কাছ থেকে এই বাণী যেরেমিয়ার কাছে এসে উপস্থিত হল:
2 একটা পাকানো পুঁথি নাও, এবং আমি যে দিন তোমার কাছে কথা বলতে শুরু করেছি, সেই দিন থেকে, যোসিয়ারই সময় থেকে আজ পর্যন্ত ইস্রায়েল, যুদা ও সকল দেশের বিষয়ে তোমাকে যা কিছু বলেছি, সেই সকল বাণী সেই পুঁথিতে লেখ।
3 কি জানি, আমি যুদাকুলের উপরে যে সমস্ত অমঙ্গল ঘটাবার সঙ্কল্প করেছি, তারা সেই কথা শুনে প্রত্যেকে নিজ নিজ কুপথ থেকে ফিরবে, আর আমি তখন তাদের শঠতা ও পাপ ক্ষমা করব।'
4 যেরেমিয়া নেরিয়ার সন্তান বারুককে ডাকলেন, এবং যেরেমিয়ার মুখ থেকে শুনতে শুনতে বারুক পুঁথিতে সেই সমস্ত বাণী লিখে নিলেন, যা প্রভু যেরেমিয়াকে বলেছিলেন।
5 পরে যেরেমিয়া বারুককে এই আজ্ঞা দিলেন, ‘প্রভুর গৃহে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়, আমি সেখানে ঢুকতে পারি না;
6 তাই তুমিই যাও, এবং আমার মুখ থেকে শুনতে শুনতে তুমি এই পুঁথিতে যা কিছু লিখে নিয়েছ, প্রভুর সেই সকল বাণী উপবাস-দিনে প্রভুর গৃহে সকলের সামনে স্পষ্ট করে পড়ে শোনাও এভাবে যুদার যে সকল মানুষ নিজ নিজ শহর থেকে এসেছে, তাদের সামনেও তা স্পষ্ট করে পড়ে শোনাবে।
7 কি জানি, প্রভুর সামনে কাকুতি-মিনতি জানিয়ে নিজেদের নত করে তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ কুপথ থেকে ফিরবে, কারণ প্রভু এই দেশের বিরুদ্ধে ভীষণ ক্রোধ ও রোষের কথা ব্যক্ত করেছেন।
8 নেরিয়ার সন্তান বারুক নবী যেরেমিয়ার আজ্ঞামত সেইসবই পালন করলেন, তিনি সেই পুঁথিতে লেখা প্রভুর বাণী প্রভুর গৃহে পড়ে শোনালেন।
9 ঘোসিয়ার সন্তান ঘুদা রাজ যেহোইয়াকিমের পঞ্চম বর্ষের নবম মাসে যেরুসালেমের সমস্ত লোকের জন্য, এবং যুদার শহরগুলি থেকে যারা যেরুসালেমে এসেছিল, সেই সমস্ত লোকের জন্যও প্রভুর সামনে উপবাস ঘোষণা করা হল।
10 তাই বারুক প্রস্তুর গৃহে, উপরের প্রাঙ্গণে, প্রভুর গৃহের 'নতুন' দ্বারের প্রবেশস্থানে, শাস্ত্রী শাফানের সন্তান গেমারিয়ার কক্ষে সেই পাকানো পুঁথি নিয়ে গোটা জনগণের কাছে যেরেমিয়ার কথা স্পষ্ট করে পড়ে শোনালেন।
11 শাফানের পৌত্র গেমারিয়ার সন্তান মিথা সেই পাকানো পুঁথিতে লেখা প্রভুর সমস্ত বাণী শুনে
12 রাজপ্রাসাদে নেমে শাস্ত্রীর কক্ষে গেলেন; আর দেখ, সেখানে সমাজনেতারা সকলে, অর্থাৎ শাস্ত্রী এলিসামা, শেমাইয়ার সন্তান দেলাইয়া, আকবোরের সন্তান এম্লাথান, শাফানের সন্তান পেমারিয়া ও হানানিয়ার সন্তান সেদেকিয়া ইত্যাদি সকল সমাজনেতা বৈঠকে বসে ছিলেন।
13 যখন বারুক লোকদের কাছে ওই পাকানো পুঁথি স্পষ্টভাবে পড়ে শুনিয়েছিলেন, তখন মিখা যে সকল কথা শুনেছিলেন, তা এখন তাঁদের জানালেন।
14 আর সমাজনেতারা সকলে একমত হয়ে ইথিওপীয়ের প্রপৌত্র শেলেমিয়ার পৌত্র নেথানিয়ার সন্তান ইহুদিকে দিয়ে বারুককে এই কথা বলে পাঠালেন : “তুমি লোকদের কাছে যে পাকানো পুঁথি স্পষ্টভাবে পড়ে শুনিয়েছ, তা হাতে করে এসো।' তাই নেরিয়ার সন্তান বারুক পুথিখানি হাতে করে তাঁদের কাছে এসে উপস্থিত হলেন।
15 তাঁরা বললেন, ‘বস, আমাদের কাছে ওটা পড়ে শোনাও।' বারুক তাঁদের কাছে তা পড়ে শোনালেন।
16 ওই সমস্ত কথা শুনে তাঁরা সকলে উদ্বিগ্ন হয়ে একে অপরের দিকে তাকাতাকি করে বারুককে বললেন, 'ব্যাপারটা আমাদের অবশ্যই রাজাকে জানাতে হবে।'
17 পরে তাঁরা বারুককে এই বলে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, ‘আমাদের বল, তুমি কেমন করে এই সমস্ত কথা লিপিবদ্ধ করলে? যেরেমিয়া কি নিজের মুখে তা উচ্চারণ করছিল?
18 বারুক উত্তরে বললেন, 'হ্যাঁ, তিনি নিজের মুখেই এই সমস্ত কথা উচ্চারণ করলেন, আর আমি কালি দিয়ে এই পাকানো পুঁথিতে তা লিখে নিলাম।
19 সমাজনেতারা বারুককে বললেন, ‘তুমি ও যেরেমিয়া যাও, লুকিয়ে থাক; কেউ যেন তোমাদের উদ্দেশ না পায়।
20 পরে তাঁরা শাস্ত্রী এলিসামার কক্ষে পুঁথিখানি রেখে প্রাঙ্গণে রাজার কাছে গিয়ে ব্যাপারটা জানালেন।
21 তখন রাজা পুঁথিটা আনার জন্য ইহুদিকে পাঠালেন, আর ইহুদি শাস্ত্রী এলিসামার কক্ষ থেকে তা তুলে নিয়ে রাজার কাছে ও তাঁর চারদিকে দাঁড়িয়ে থাকা সমাজনেতাদের কাছে তা পড়ে শোনালেন।
22 সেসময়ে রাজা প্রাসাদের শীতকালীন এলাকায় বসে ছিলেন—তখন তো নরম মাস চলছে—তাঁর সামনে জ্বলন্ত আগুনের আঙড়া ছিল।
23 তাই ইহুদি তিন চার পাতা পড়া শেষ করলে রাজা শাস্ত্রীর ছুরিকা দিয়ে পুঁথিটা কেটে সেই আগুড়া আগুনে ফেলে দিতেন; এইভাবে শেষে পুঁথিটা সম্পূর্ণরূপেই আগুড়া আগুনে ছাই হল।
24 পুঁথির সেই সমস্ত কথা শোনা সত্ত্বেও রাজা ও তাঁর পরিষদেরা কেউই উদ্বিগ্ন হলেন না, কেউই পোশাকও ছিঁড়ে ফেললেন না।
25 অথচ এম্লাথান, দেলাইয়া ও গেমারিয়া রাজাকে মিনতি করেছিলেন, যেন পুঁথিটা পুড়িয়ে দেওয়া না হয়; তবু তিনি তাঁদের কথা শুনলেন না।
26 এমনকি রাজা রাজপুত্র যেরাহমেল, আজিয়েলের সন্তান সেরাইয়া ও আব্দেয়েলের সন্তান শোলমিয়াকে শাস্ত্রী বারুক ও নবী যেরেমিয়াকে গ্রেপ্তার করতে আজ্ঞা দিলেন : কিন্তু প্রভু তাঁদের লুকিয়ে রেখেছিলেন।
27 যেরেমিয়া বলতে বলতে বারুক যে পুঁথিতে সে সকল বাণী লিখেছিলেন, তা রাজা পুড়িয়ে দেবার পর প্রভুর বাণী যেরেমিয়ার কাছে এসে উপস্থিত হয়ে বলল :
28 আর একটা পাকানো পুঁথি নাও, এবং যুদা রাজ যেহোইয়াকিম যে পুঁথি পুড়িয়ে দিয়েছে, সেই প্রথম পুঁথির সমস্ত বাণী এই পুঁথিতে লেখ।
29 যুদা-রাজ যেহোইয়াকিমের বিরুদ্ধে তুমি একথা ঘোষণা করবে : প্রভু একথা বলছেন : তুমি এই পুঁথি এই বলে পুড়িয়ে দিয়েছ। কেন এর মধ্যে একথা লিখেছ যে, বাবিলন-রাজ অবশ্যই আসবেন, এই দেশ বিনাশ করবেন, এবং দেশ থেকে মানুষ পশু সবই নিশ্চিহ্ন করবেন?
30 এজন্য যুদা রাজ যেহোইয়াকিম সম্বন্ধে প্রভু একথা বলছেন : দাউদের সিংহাসনে থাকবার মত তার কোন বংশধর থাকবে না; এবং তার মৃতদেহ দিনের বেলায় রোদে ও রাতের বেলায় বরফে নিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে থাকবে।
31 আর আমি তাকে, তার বংশকে ও তার পরিষদদের তাদের অপরাধের যোগ্য শাস্তি দেব ; এবং তাদের উপরে, যেরুসালেমের উপরে ও যুদার লোকদের উপরে সেই সমস্ত অমঙ্গল ডেকে আনব, যা তাদের জন্য স্থির করেছি, যেহেতু তারা কান দিল না।”
32 তাই যেরেমিয়া আর একটা পাকানো পুঁথি নিয়ে নেরিয়ার সন্তান শাস্ত্রী বারুকের হাতে তা তুলে দিলেন; এবং যেরেমিয়া বলতে বলতে তিনি, যুদ্ধা-রাজ যেহোইয়াকিম যে পুঁথি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন, তার সমস্ত কথা নতুন করে লিখলেন ; তাছাড়া সেই ধরনের আরও আরও অনেক কথা এই পুঁথিতে লেখা হল।