1 পৃথিবীতে কি মানুষ কঠোর পরিশ্রমের অধীন নয় ? তার দিনগুলি কি দিনমজুরের দিনগুলির মত নয় ?
2 দাস যেমন ছায়ার আকাঙ্ক্ষা করে, দিনমজুর যেমন তার মজুরির অপেক্ষায় থাকে,
3 মাসের পর মাসের শূন্যতাই তেমনি হল আমার প্রাপ্য, দুর্দশাপূর্ণ রাত্রিই হল আমার ভাগ্য।
4 শুয়ে পড়ে আমি ভাবি, আবার কখন উঠব? কিন্তু রাত আর শেষ হয় না, আর আমি ভোর পর্যন্ত শুধু ছট্ফট্ করতে থাকি।
5 কীট ও মাটির ঢেলা আমার মাংসের আচ্ছাদন, আমার চামড়া ফেটে ক্ষয় হয়েছে।
6 আমার আয়ু তাঁতীর মাকুর চেয়েও দ্রুত চলে গেল, আশাবিহীন হয়ে ফুরিয়ে গেল।
7 স্মরণে রেখ, আমার জীবন শ্বাসমাত্র, আমার চোখ আর মঙ্গল দেখতে পাবে না।
8 একদিন আমাকে যে দেখতে পেল, তার চোখ আমাকে আর দেখতে পাবে না, তোমার দৃষ্টি আমার দিকে ফিরবে, কিন্তু আমি তখন আর থাকব না।
9 মেঘ উবে গেলে সেই মেঘ আর দেখা দেয় না ; তেমনি পাতালে যে নেমে যায়, সেও আর কখনও উঠে আসে না।
10 সে নিজের ঘরে আর কখনও ফিরবে না, তার স্থান তাকে আর চিনতে পারবে না।
11 এজন্যই আমি মুখ বুজে থাকব না, আত্মার এই সঙ্কটে আমি কথা বলব, প্রাণের এই তিক্ততায় বিলাপ করব।
12 আমি কি সাগর বা কোন সমুদ্র-দানব যে তুমি আমাকে প্রহরীর অধীনে রাখবে?
13 আমি যখন বলি, আমার বিছানাই আমাকে স্বস্তি দেবে, আমার যন্ত্রণায় আমার শয্যাই আমাকে আরাম দেবে,
14 তখন তুমি নানা স্বপ্নে আমাকে আতঙ্কিত কর, বিভীষিকার নানা দৃশ্যে আমাকে সন্ত্রাসিত কর।
15 এর চেয়ে আমার প্রাণ শ্বাসরোধেই প্রীত, আমার এই সমস্ত ব্যথার চেয়ে বরং মরণেই প্রীত!
16 আমি এসব কিছু নিয়ে শুধু হাসি! আমি তো আর বেশি দিন বাঁচব না : তবে আমাকে ছাড়, আমার আয়ু যে শ্বাসমাত্র !
17 মানুষ কী যে তুমি তাকে তত মূল্য দেবে, ও তার উপর তত মনোযোগ রাখবে?
18 তুমি তো প্রতি সকালেই তাকে তলিয়ে দেখ, পলে পলে তাকে যাচাই কর।
19 আর কতকাল? কখন তুমি আমা থেকে দৃষ্টি ফেরাবে? আমাকে কি ঢোঁক গিলবার সুযোগও দেবে না ?
20 হে মানবদ্রষ্টা, আমি যদিও পাপ করে থাকি, তাতে তোমার বিরুদ্ধে কীরা করেছি? কেন আমাকে তোমার তীরের লক্ষ্যবস্তু করেছ? তোমার পক্ষে আমি কি বোঝাই হয়েছি?
21 আমার অধর্ম মুছে দাও না কেন ? আমার শঠতা ভুলে যাও না কেন? আমি তো কিছুক্ষণের মধ্যেই দুলায় শায়িত হব তুমি আমার সন্ধান করবে, কিন্তু আমি তখন আর থাকব না।