Index

যোব - Chapter 30

1 এখন কিন্তু যারা আমার চেয়ে অল্পবয়সী,
তারা আমাকে নিয়ে উপহাস করে;
অথচ অবজ্ঞায় আমি তাদের পিতাদের
আমার মেষপালের কুকুরদের সঙ্গেও রাখতাম না !
2 তাদের হাতের বলে আমার কী উপকার?
তাদের তেজ তো গেল !
3 অভাবে ও ক্ষুধায় অসাড় হয়ে
তারা উৎসন্ন শূন্যভূমি ঘুরে ঘুরে
জলহীন প্রান্তরে জাবর কাটে।
4 তারা ঝোপের কাছে তেতো শাক তোলে,
রোতনগাছের শিকড়ই তাদের খাদ্য।
5 তারা মানবসমাজ থেকে বিতাড়িত,
যেমন চোরের পিছু পিছু, তেমনি তাদের পিছু পিছু লোকে চিৎকার করে
6 তাই তারা ভয়ঙ্কর উপত্যকায় বাস করতে বাধ্য,
পৃথিবীর গুহায় ও শৈল-ফাটলে থাকতে বাধ্য।
7 তারা ঝোপের মধ্য থেকে গর্জন করে,
জঙ্গলের মধ্যে সমবেত হয়।
8 তারা মূর্খের জাত, এমনকি অনামা মানুষের সন্তান :
মাটির চেয়েও তারা অধিক পদদলিত।
9 অথচ আমি এখন তাদের গানের বিষয় হয়েছি,
হ্যাঁ, তাদের রূপকথার বিষয় হয়েছি!
10 বিতৃষ্ণা-ভরে তারা আমা থেকে দূরে থাকে,
আমার মুখে থুথু ফেলতেও ক্ষান্ত হয় না।
11 তিনি আমার ছিলা খুলে আমাকে নত করেছেন,
তাই তারা আমার সামনে বল্লা ছেড়ে দিয়েছে।
12 সাপের ওই বাচ্চারা আমার ডানে রুখে দাঁড়ায়,
চলার পথে আমাকে ঠেলা দেয়,
আমার বিনাশের জন্য ষড়যন্ত্র খাটাতে ব্যস্ত থাকে।
13 তারা আমার পথ ধ্বংস করেছে,
আমার সর্বনাশের জন্য মতলব আঁটে,
তাদের রোধ করবে এমন কেউ নেই!
14 যেন প্রাচীরের বিরাট ছিদ্রের মধ্য দিয়েই তারা এগিয়ে আসে
আর আমি তেমন ধ্বংসস্তূপের নিচে টলে যাই।
15 যত বিভীষিকা সবদিক দিয়ে আমার সম্মুখীন,
আমার দৃঢ় আস্থা বাতাসের মত উবে গেল,
আমার ত্রাণের আশা মেঘের মত কেটে গেল।
16 এখন আমার প্রাণ আমার মধ্যে ক্ষয় হচ্ছে,
দুঃখের দিনগুলো আমাকে আঁকড়ে ধরছে।
17 রাত্রিকালে আমার হাড় ব্যথায় বিদ্ধ হয়,
আমার জ্বালা আমায় দংশন করে, কখনও নিদ্রা যায় না।
18 তাঁর প্রবল শক্তির আঘাতে আমার পোশাক জীৰ্ণ হয়,
তিনি আমার জামার কলার ধরে আমার গলা এঁটে ধরেন।
19 তিনি আমাকে কাদার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন,
এখন আমি ধুলা ও ছাইমাত্র ।
20 আমি তোমার কাছে চিৎকার করি, কিন্তু তুমি সাড়া দাও না
আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকি, কিন্তু তুমি লক্ষও কর না।
21 আমার প্রতি তুমি নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছ,
তোমার শক্ত হাতে আমাকে পীড়ন করছ ;
22 তুমি আমাকে তুলে ঝড়ো বাতাসের পিঠে চড়াচ্ছ,
ঝড়ঝঞ্ঝায় আমায় বিক্ষিপ্ত করছ।
23 আমি তো জানি, তুমি আমাকে মৃত্যুর দিকেই নিয়ে যাচ্ছ,
সমস্ত জীবিতের মিলন-স্থানেই নিয়ে যাচ্ছ।
24 তিনি একবার হাত বাড়ালে তাঁকে ডাকায় কোন লাভ নেই,
যদিও তাঁর কশার আঘাতে মানুষ সাহায্য চেয়ে চিৎকার করে।
25 বিপদগ্রস্তের জন্য আমি কি চোখের জল ফেলতাম না?
নিঃয়ের জন্য কি শোকার্ত হতাম না?
26 অথচ আমি মঙ্গলের প্রতীক্ষায় ছিলাম, কিন্তু অমঙ্গল ঘটল,
আলোর প্রতীক্ষায় ছিলাম, কিন্তু এল অন্ধকার।
27 আমার অম্ল জ্বলতে থাকে, ক্ষান্ত হয় না,
দুঃখের দিন আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
28 আমি এগিয়ে যাচ্ছি কৃষ্ণবর্ণ হয়ে, কিন্তু রোদের কারণে নয়,
আমার আর্তনাদ শোনাবার জন্যই জনসমাবেশে উঠে দাঁড়াই।
29 আমি শিয়ালদের ভাই হয়েছি,
হয়েছি উটপাখিদের সাথী।
30 আমার চামড়া কৃষ্ণবর্ণ হয়েছে, খসে পড়ছে,
আমার হাড় উত্তাপে পুড়ে যাচ্ছে।
31 আমার বীণার সুর হাহাকারে পরিণত,
বিলাপগানেই পরিণত আমার বাঁশির সুর।