1 এলিহু বলে চললেন :
2 প্রজ্ঞাবান সকলে, আমার কথা শুনুন; জ্ঞানবান সকলে, আমার বচনে কান দিন,
3 কেননা মুখের তালু যেমন নানা খাদ্যের নানা স্বাদ পায়, তেমনি কান কথা নির্ণয় করে।
4 আসুন, যা ন্যায়, তা বিচার-বিবেচনা করি, মঙ্গল কি, আমাদের নিজেদের মধ্যে তা নিশ্চিত করি।
5 দেখুন, যোব বললেন, “আমি নিরপরাধী, কিন্তু ঈশ্বর আমার ন্যায্য অধিকার অবহেলা করেন;
6 আমার অধিকারের বিরুদ্ধে আমি মিথ্যাবাদী বলে পরিগণিত, নির্দোষী হয়েও আমি এমন আঘাতে আঘাতগ্রস্ত, যা নিরাময়ের অতীত।'
7 যোবের মত কেইবা আছে? তিনি তো জলের মতই উপহাস পান করেন,
8 দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে চলেন, ধূর্তদের সঙ্গে পথ চলেন।
9 কেননা তিনি বলেছেন: 'পরমেশ্বরের প্রসন্নতার পাত্র হওয়ায় মানুষের কিছুই লাভ নেই।'
10 সুতরাং, হে বুদ্ধিমান সকলে, আমার কথা শুনুন : এ দূরের কথা যে, ঈশ্বর দুষ্কর্ম করবেন, সর্বশক্তিমান অন্যায় করবেন!
11 কারণ তিনি মানুষকে তার কাজ অনুযায়ী প্রতিফল দেন, মানুষের আচরণ অনুযায়ী তার দশা ঘটান।
12 তিনি যে অন্যায় করবেন, তা ধারণার অতীত, সর্বশক্তিমান তো ন্যায়বিচার বিকৃত করেন না !
13 কেইবা তাঁকে পৃথিবীর কর্তৃত্বভার দিল? কে তাঁর হাতে তুলে দিল সমগ্র জগতের শাসনভার ?
14 তাঁর যদি এমন সঙ্কল্প থাকত যে, তিনি নিজের আত্মা ও প্রাণবায়ু নিজের কাছে ফিরিয়ে আনবেন,
15 তবে সমস্ত মানবকুল একনিমেষেই মরত, এবং মানুষ আবার ধুলায় ফিরে যেত।
16 আপনার যদি সদ্বিবেচনা থাকে, তবে একথা শুনুন, আমার বচনে কান দিন।
17 যে ন্যায়বিরোধী, সে কি শাসন করবে? আপনি কি সেই ধর্মময় ও পরাক্রমীকে দোষী করবেন?
18 রাজাকে কি বলা যায়, আপনি পাপিষ্ঠ? নেতৃবৃন্দকে কি বলা যায়, আপনারা দুর্জন?
19 তিনি তো ক্ষমতাশালীদেরও মুখাপেক্ষা করেন না, দরিদ্রের চেয়ে ধনীকেও নিজের প্রীতির পাত্র করেন না, কেননা তারা সকলেই তাঁর হাতের রচনা।
20 তারা একনিমেষে মরে, মধ্যরাতেই মরে, প্রতাপশালীরা বিলুপ্ত হয়ে মিলিয়ে যায়, বিনা কষ্টেই পরাক্রমীদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
21 কেননা তিনি মানুষের পথে দৃষ্টি রাখেন, তার সমস্ত পদক্ষেপ লক্ষ করেন।
22 এমন অন্ধকার বা মৃত্যু-ছায়া নেই, যেখানে দুষ্কৃতকারীরা লুকোতে পারে।
23 কেননা ঈশ্বরের বিচারমঞ্চে দাঁড়াবার জন্য মানুষের পক্ষে স্থিরীকৃত কোন বিশেষ কাল নেই।
24 তিনি কিছুই তদন্ত না করে ক্ষমতাশালীদের খণ্ড খণ্ড করেন, আর তাদের স্থানে অন্যদের দাঁড় করান।
25 তিনি তাদের কর্ম জানেন বলেই রাতে তাদের উল্টিয়ে ফেলেন আর তারা চূর্ণ হয়।
26 তারা দুর্জন বলেই তিনি তাদের প্রহার করেন, সকলের দৃষ্টিগোচরেই করেন ;
27 কারণ তারা তাঁর অনুসরণে ক্ষান্ত হয়ে পিঠ ফেরাল, তাঁর সমস্ত পথ অবহেলা করল,
28 ফলে তারা তাঁর কাছে আনাল গরিবের চিৎকার, তাঁকে শুনিয়ে দিল দুঃখীদের হাহাকার।
29 তিনি মৌন থাকলে কে তাকে দোষ আরোপ করতে পারে ? তিনি শ্রীমুখ ঢাকলে কে তাঁর দর্শন পেতে পারে? অথচ তিনি জাতিগুলির বা ব্যক্তির উপরে চোখ রাখেন,
30 ভক্তিহীন মানুষ যেন রাজত্ব না করে, জনগণকে ফাঁদে ফেলতে যেন কেউ না থাকে।
31 ধরুন, কেউ ঈশ্বরকে বলে “আমি অপরাধী, আর পাপ করব না ;
32 আমাকে উদ্বুদ্ধ কর, যেন দেখতে পাই ; যদি অন্যায় করে থাকি, আর করব না।'
33 তাই আপনার বিবেচনায় কি তেমন মানুষকে শাস্তি দেওয়া উচিত ? আমি তো জানি, এসব কিছু নিয়ে আপনি শুধু হাসেন! কাজেই যেহেতু সিদ্ধান্ত নেওয়া আপনারই ব্যাপার, আমার নয়, সেহেতু আপনি যা জানেন, তা-ই বলুন।
34 বুদ্ধিমান লোকেরা আমাকে একথা বলবেন, আমার কথা শুনে প্রজ্ঞাবান মানুষেরাও মিলে বলবেন :
35 যোব কিছু না জেনেই কথা বলেন, তার কথাগুলোর মধ্যে সুবুদ্ধিটুকুও নেই।'
36 আচ্ছা, যোবকে শেষ পর্যন্তই পরীক্ষা করা হোক, কেননা তিনি শঠতাপূর্ণ মানুষেরই মত উত্তর দিয়েছেন।
37 বস্তুত তিনি পাপের সঙ্গে বিদ্রোহও যোগ করছেন, আমাদের মধ্যে হাততালিও দিচ্ছেন, আর ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বেশি কথা বলছেন।