Index

Wisdom - Chapter 7

1 সকলের মত আমিও মরণশীল মানুষ, মাটি দিয়ে গড়া সেই প্রথম প্রাণীর এক বংশধর। এক জননীর গর্ভে আমাকে মাংসগত রূপ দেওয়া হল,
2 দশ মাস ধরে সেখানে আমি রক্তে সুসংবদ্ধ হয়ে উঠলাম ; পুরুষের বীজ ও নিদ্রার সঙ্গী সেই পরিতোষ—এরই ফল আমি।
3 জন্ম নেওয়ামাত্র আমিও সাধারণ হাওয়া শ্বাস নিলাম, সকলের জন্য সমান সেই ভূমিতে আমিও ভূমিষ্ঠ হলাম, সকলের সমান কান্নায় আমিও আমার প্রথম চিৎকার তুললাম ;
4 কাথার মধ্যে লালিত-পালিত হলাম—সকলেরই যত্নের বস্তু।
5 কোনও রাজার অস্তিত্বের সূত্রপাতও ভিন্ন হয়নি :
6 জীবনে প্রবেশও এক, জীবন থেকে প্রস্থানও সমান !
7 এজন্য আমি যাচনা করলাম, আর আমাকে সম্বিবেচনা দেওয়া হল ; মিনতি করলাম, আর আমার অন্তরে প্রজ্ঞার আত্মা এল।
8 সমস্ত রাজদণ্ড ও রাজাসনের চেয়ে আমি প্রজ্ঞাতেই প্রীত হলাম; তার তুলনায় ধনসম্পদ শূন্যতা বলে গণ্য করলাম ;
9 অমূল্য মণিমুক্তার সঙ্গেও আমি প্রজ্ঞার তুলনা করিনি, কারণ তার তুলনায় যত সোনা মুষ্টিমেয় বালুকামাত্র, তার সামনে রুপোও কাদার মত পরিগণিত হবে।
10 স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের চেয়েও তাকে আমি ভালবাসলাম, আলোর চেয়েও প্রজ্ঞালাভে প্রীত হলাম কারণ প্রজ্ঞা থেকে বিকীর্ণ যে উজ্জ্বল দীপ্তি, তা নিদ্রাহীন।
11 প্রজ্ঞার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত মঙ্গলও আমার কাছে এল, তার হাতে যে ঐশ্বর্য, তা অপরিমেয়।
12 আমি এই সমস্ত মঙ্গল ভোগ করলাম, সেগুলো যে প্রজ্ঞা দ্বারাই চালিত কিন্তু একথা জানতাম না যে, প্রজ্ঞাই তাদের মাতা।
13 সরল মনে যা শিখেছি, আমি সেই প্রজ্ঞার কথা মুক্তহস্তে সম্প্রদান করি, তার ঐশ্বর্য গোপন রাখি না।
14 কেননা প্রজ্ঞা মানুষের কাছে এমন এক ধন, যার সীমা নেই। যারা তা অর্জন করে, তারা ঈশ্বরের বন্ধুত্বেই ভূষিত হয়, সেই শিক্ষাবাণীর দানগুলি গুণেই তারা তাঁর প্রশংসার পাত্র হয়ে ওঠে।
15 ঈশ্বর এমনটি হতে দিন, আমি যেন সুচিন্তিত কথা ব্যক্ত করতে পারি, আমার অন্তরে এমন চিন্তারও যেন উদয় হয়, যা সেই পাওয়া মঙ্গলদানের যোগ্য ; কেননা তিনিই প্রজ্ঞা অভিমুখে পথপ্রদর্শক, তিনিই আবার প্রজ্ঞাবানদের সৎদিশারী।
16 তাঁরই হাতে রয়েছি আমরা, হ্যাঁ, আমরা ও আমাদের সকল উক্তি, তাঁরই হাতে সমস্ত সুবুদ্ধি ও আমাদের সমস্ত কৌশল।
17 তিনি আমাকে সবকিছুর সূক্ষ্মতম জ্ঞান মঞ্জুর করলেন, যেন আমি বুঝতে পারি জগতের গঠন ও সমস্ত পদার্থের গুণ,
18 যেন বুঝতে পারি কালের আদি, তার অন্ত ও তার মধ্যপথ, অয়নান্ত-পালা ও ঋতুর পরম্পর লীলা,
19 বর্ষ-চক্র ও জ্যোতিষ্করাজির স্থান,
20 পশুদের স্বভাব ও বন্যজন্তুদের সহজাত প্রবৃত্তি, আত্মাদের প্রভাব ও মানুষদের চিন্তা-যুক্তি, গাছপালার বৈচিত্র ও শিকড়ের বিশেষ বিশেষ গুণ।
21 যা কিছু গুপ্ত, যা কিছু প্রকাশ্য, তা সমস্তই জানি, নিখিলের নির্মাতা সেই প্রজ্ঞাই যে আমাকে উদ্বুদ্ধ করল!
22 প্রজ্ঞায় এমন আত্মা বিদ্যমান যা সুবুদ্ধিমণ্ডিত, পবিত্র, অদ্বিতীয়, বহুবিধ, সূক্ষ্ম, গতিশীল, প্রাঞ্জল, কলঙ্কমুক্ত, স্বচ্ছ, নিরন্ত্র, মঙ্গলপ্রিয়, তীক্ষ্ণ,
23 বাধামুক্ত, শুভকামী, মানব-প্রেমী, সুস্থির, সুনিশ্চিত, উদ্বেগহীন, সর্বশক্তিমান, সর্বদর্শী, এবং বুদ্ধিসম্পন্ন, বিশুদ্ধ ও সূক্ষ্মতম সকল আত্মায় পরিব্যাপ্ত।
24 প্রজ্ঞা সমস্ত গতির চেয়েও দ্রুতগামী; তার শুদ্ধতা গুণে সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত, সবকিছুতে প্রবেশ করতে সক্ষম।
25 প্রজ্ঞা ঈশ্বরের স্বয়ং পরাক্রমের নিঃসৃত ফুৎকার, সর্বশক্তিমানের পৌরবের শুদ্ধ নির্গমন : এজন্য কলুষিত কোন কিছু তার মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট হয় না।
26 প্রজ্ঞা সনাতন জ্যোতির প্রতিবিম্ব, ঈশ্বরের কর্মসাধনার কলঙ্কমুক্ত দর্পণ, তাঁর মঙ্গলময়তার প্রতিমূর্তি।
27 যদিও একক, তবু সবকিছুই করতে সক্ষম ; নিজে অভিন্ন হয়ে থেকেও সবকিছু নবীন করে তোলে, ও যুগের পর যুগ পুণ্যবানদের প্রাণে প্রবেশ ক'রে তাদের করে তোলে ঈশ্বরের বন্ধু, তাদের করে তোলে নবী।
28 কেননা ঈশ্বর তাকেই মাত্র ভালবাসেন, প্রজ্ঞার সঙ্গে যে বাস করে।
29 সত্যি, প্রজ্ঞা সূর্যের চেয়েও সুন্দরতম, সমস্ত জ্যোতিষ্কমণ্ডলের চেয়েও উজ্জ্বল; আলোর সঙ্গে তার তুলনা করলে, প্রজ্ঞাই আসে প্রথম।
30 বস্তুত আলোর পরে আসে রাত, কিন্তু প্রজ্ঞার উপরে অধর্ম জয়ী হতে অক্ষম।