1 কিংবা, একটা লোক উত্তাল তরঙ্গ পার হতে জাহাজে ওঠে, সেও এমন কাঠকে ডাকে, যা তার বহনকারী জাহাজের চেয়ে ভঙ্গুর।
2 বস্তুত জাহাজ অর্থলাভের কামনার ফল, তার গঠনও দক্ষ কারুকর্মের প্রজ্ঞার ফল,
3 কিন্তু, হে পিতা, তোমারই তত্ত্বাবধানতা তা চালিত করে, কারণ তুমি সমুদ্রেও একটা পথ নিরূপণ করেছ, তরঙ্গের মধ্যেও নিরাপদ একটা মার্গ স্থির করেছ,
4 এতে দেখাও যে, তুমি সমস্ত কিছু থেকে ত্রাণ করতে সক্ষম, যেন অভিজ্ঞতা না থাকলেও একটি মানুষ সমুদ্রপথ ধরতে পারে।
5 তুমি তো চাও না যে, তোমার প্রজ্ঞার সমস্ত কর্ম অনুর্বর হবে, এজন্য মানবকুল ক্ষুদ্র একটা কাঠের উপরেও রাখে নিজের প্রাণের নির্ভর, এবং ভেলায় করে তরঙ্গমালা পার হয়েও বাঁচে।
6 আদিতে, যখন সেই গর্বিত মহাবীরেরা মারা পড়ছিল, তখনও বিশ্বের আশা একটা ভেলায় আশ্রয় নিয়ে তোমার হাত দ্বারা চালিত হয়ে বিশ্বের কাছে নবীন প্রজন্মের বীজ রাখল।
7 যে কাঠ ন্যায্য কর্মের জন্য ব্যবহৃত, সেই কাঠ ধন্য,
8 কিন্তু হাতের কাজের ফল যে মূর্তি ও তার নির্মাতা উভয়েই অভিশপ্ত, নির্মাতা একারণে অভিশপ্ত যে, সে তা গড়েছে, মূর্তি একারণে অভিশপ্ত যে, ক্ষয়শীল হলেও তা ঈশ্বর বলে অভিহিত হল।
9 কেননা দুর্জন ও তার দুষ্কর্ম, উভয়েই ঈশ্বরের ঘৃণার পাত্র :
10 কর্ম ও কর্তা উভয়ে সমান দণ্ডের বস্তু হবে।
11 এজন্য বিজাতীয়দের দেবমূর্তিগুলির জন্যও দণ্ড থাকবে, কেননা ঈশ্বরের সৃষ্টবস্তুর মধ্যে সেগুলি হয়েছে জঘন্য বস্তু, হয়েছে মানুষদের প্রাণের জন্য পদস্খলন, হয়েছে নির্বোধদের পায়ে ফাঁস।
12 দেবমূর্তি তৈরি করার প্রথম কল্পনা— তা-ই হল বেশ্যাচারের সূচনা, সেগুলোর আবিষ্কার—তা-ই জীবনে আনল অবক্ষয়।
13 সেগুলি আদিতেও ছিল না, চিরকালেও থাকবে না।
14 মানুষের অসারতাই সেগুলিকে জগতে আনল, এজন্য সেগুলির জন্য শীঘ্র পরিণাম নিরূপিত।
15 একটি পিতা, অকাল মৃত্যুশোকে অতিদুঃখিত হয়ে পড়ে ব্যবস্থা করল, যেন তার সেই অতিশীঘ্রই কেড়ে নেওয়া সন্তানের একটা মূর্তি তৈরি করা হয় ; এর ফলে সে তাই দেবতা বলে সম্মান জানাল, কিছুক্ষণ আগে যা ছিল লাশমাত্র, লোকদের মধ্যে রহস্যময় উপাসনা-রীতি ও ধর্মানুষ্ঠানেরও প্রচলন করল।
16 আর তেমন ভক্তি-বিরুদ্ধ প্রথা দিনের পর দিন সবল হয়ে উঠে শেষে বিধিরূপেই পালন করা হল।
17 নৃপতিদের হুকুমেও একসময় মূর্তিপূজা করা হত : দূরে থাকায় তাদের প্রতি ব্যক্তিময় সম্মান দেখাতে পারত না বিধায় প্রজারা, দূরবর্তী সেই আকৃতির সূক্ষ্ম প্রতিকৃতি অনুসারে, তাদের সম্মানের বস্তু সেই রাজার দৃশ্য প্রতিমূর্তি তৈরি করল, যাতে যে অনুপস্থিত, তাকে ঠিক যেন উপস্থিত বলেই উদ্যোগের সঙ্গে তোষামোদ করতে পারে।
18 এমন জাতি যারা সেই উপাসনা-রীতি সম্বন্ধে কিছুই জানত না, শিল্পীর উৎসাহই সেই পথে তাদের চালিত করল।
19 কেননা প্রভাবশালীর প্রীতির পাত্র হওয়ার বাসনায় সেই শিল্পী শিল্পকর্ম দ্বারা তার প্রতিমূর্তি আরও সুন্দর করতে চেষ্টা করল :
20 ফলে লোকেরা কিছুক্ষণ আগে যাকে মানুষ বলে সম্মান করত, শিল্পকর্মের কাস্তিতে আকর্ষিত হয়ে তাকে পূজার বস্তু বলে গণ্য করল।
21 তেমন প্রথা জীবিতদের পক্ষে ফাঁদ স্বরূপ হয়ে দাঁড়াল, কারণ লোকেরা দুর্দশা বা স্বৈরশাসনের বন্দি হয়ে প'ড়ে পাথরকে ও কাঠকে সেই অনির্বচনীয় নামটি আরোপ করল!
22 ঈশ্বরজ্ঞান বিষয়ে ভ্রষ্ট হওয়া কিন্তু তাদের পক্ষে যথেষ্ট হয়নি, বস্তুত, অজ্ঞতার মহাযুদ্ধের মধ্যে বাস করলেও, তারা তেমন মহা মহা অমঙ্গলের নাম শান্তিই রাখে!
23 শিশুঘাতকময় দীক্ষা ও গুপ্ত রহস্যগুলি উদযাপনে, কিংবা অদ্ভুত উপাসনা সংক্রান্ত হইচইপূর্ণ ভোজসভা পালনে
24 তারা জীবনকেও শুদ্ধ রাখে না, বিবাহকেও নয়, এবং একে অপরকে বিশ্বাসঘাতকতা ক'রে হত্যা করে, কিংবা অপরকে ব্যভিচার দ্বারা ক্লিষ্ট করে।
25 সর্বস্থানে মহা গোলমাল : রক্তপাত ও নরহত্যা, চুরি ও প্রবঞ্চনা, উৎকোচ, বিশ্বাসঘাতকতা, কোলাহল, শপথভঙ্গন ;
26 সৎ লোকদের উপর গোলমাল, উপকারের প্রতি কৃতঘ্নতা, প্রাণের কলুষ, প্রকৃতি-বিরুদ্ধ পাপ, বিবাহ-বন্ধনে বিশৃঙ্খলতা, ব্যভিচার ও উচ্ছৃঙ্খল কদাচার।
27 অনামা দেব-দেবীর মূর্তিপূজা : এ-ই সমস্ত অমঙ্গলের সূচনা, কারণ ও পরিণাম।
28 বস্তুত যারা মূর্তি পূজা করে, তারা হয় হইচইপূর্ণ ভোজসভায় মত্ত হয়, না হয় মিথ্যা-দৈববাণী দেয়, না হয় অপকর্মাদেরই যোগ্য জীবন যাপন করে, না হয় সহজে শপথভঙ্গ করে।
29 কেননা নিষ্প্রাণ বস্তুর উপরে ভরসা রাখায় তারা শপথভঙ্গ করার ফলে যে দণ্ডিত হবে, তা কল্পনা করে না।
30 কিন্তু এই দ্বিবিধ অপরাধের জন্য ন্যায়বিচার তাদের নাগাল পাবেই, কারণ মূর্তির প্রতি আসক্ত হওয়ায় তারা ঈশ্বর সম্বন্ধে ধারণা বিকৃত করল, এবং পবিত্রতা অবজ্ঞা করে প্রবঞ্চনার সঙ্গে শপথভঙ্গ করল।
31 কেননা যার দিব্যি দিয়ে তারা শপথ করে, তার পরাক্রম নয়, কিন্তু পাপীদের প্রাপ্য যে শাস্তি, তা-ই অসৎ মানুষদের অপরাধের পিছু পিছু নিত্যই চলে।