Index

Wisdom - Chapter 18

1 তোমার পুণ্যজনদের জন্য উজ্জ্বলতম এক আলো জ্বলছিল ; সেই মিশরীয়েরা তাদের কণ্ঠস্বর শুনে কিন্তু তাদের না দেখতে পেয়ে ওদের ভাগ্যবান বলছিল, – ওরা যে তাদের মত পীড়া ভোগ করেনি ;
2 এমনকি ওদের প্রতি কৃতজ্ঞও ছিল, ওরা প্রথম অত্যাচারিত হয়েও তাদের কোন ক্ষতি করছিল না ; তারা যে ওদের শত্রু হয়েছিল, এজন্য ওদের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করছিল।
3 অন্ধকারের চেয়ে তুমি তোমার সন্তানদের দিলে একটি অগ্নিস্তম্ভ, তা যেন অজানা যাত্রাপথে তাদের দিশারী হয়, তাদের গৌরবময় প্রস্থানে যেন অনপকারী সূর্য স্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়।
4 যাদের দ্বারা বিধানের অক্ষয়শীল আলো জগতের কাছে মঞ্জুর করার কথা, তোমার সেই সন্তানদের যারা কারাগারে রুদ্ধ করে রেখেছিল, তারা আলো-বঞ্চিত হতে ও অন্ধকারে বন্দি হতে সত্যিই যোগ্য ছিল!
5 তারা তো পুণ্যঞ্জনদের নবজাত শিশুদের হত্যা করতে স্থির করেছিল, -ফেলে রাখা হয়েছিল যাদের, তাদের মধ্য থেকে কেবল একজন শিশুই ত্রাণ পেয়েছিল!— তাই শাস্তি স্বরূপ তুমি তাদের সন্তানদের বিপুল সংখ্যা মুছে দিলে, প্রবল জলরাশির মধ্যে তাদের সকলের বিনাশ ঘটালে।
6 সেই রাতটি আমাদের পিতৃপুরুষদের কাছে পূর্বঘোষিত হয়েছিল, কেমন প্রতিশ্রুতিতে তারা বিশ্বাস রাখছিল, তা জেনে তারা যেন নিরাপদে আনন্দ করতে পারে।
7 তাই তোমার জনগণের প্রত্যাশা এ ছিল, ধার্মিকদের পরিত্রাণ ও শত্রুদের সংহার।
8 আর আসলে তুমি বিরোধীদের উপর যেমন প্রতিশোধ নিলে, তোমার কাছে আমাদের আহ্বান করায় আমাদের তেমনি গৌরবান্বিত করলে।
9 সৎলোকদের পুণ্যময় সন্তানেরা আড়ালে যজ্ঞবলি উৎসর্গ করল, এবং একমত হয়ে এ দিব্য নিয়ম প্রচলন করল যে, পুণ্যজনেরা মঙ্গল-অমঙ্গল সবকিছুরই একইভাবে সহভাগী হবে : আর সঙ্গে সঙ্গে তারা পিতৃপুরুষদের স্তুতিবন্দনা গেয়ে উঠল।
10 শত্রুদের এলোমেলো চিৎকারের স্বরধ্বনি আসছিল, যারা আপন সন্তানদের উপর কাঁদছিল, ছড়িয়ে পড়ছিল তাদের বিলাপের সুর।
11 একই দণ্ড দাস মনির দু'জনকেই আঘাত করেছিল, রাজা প্রজা উভয়েই একই দুর্দশায় ভুগছিল।
12 একই মৃত্যুতে আঘাতগ্রস্ত অগণিত মৃতলোক ছিল সবারই ঘরে, তাদের সমাধি দিতে জীবিতেরা আর যথেষ্ট ছিল না, কারণ এক আঘাতেই বিনষ্ট হয়েছিল তাদের বংশের সবচেয়ে উত্তম ফল।
13 তাদের মন্ত্রতন্ত্রের কারণে যারা অবিশ্বাসী হয়ে থেকেছিল, তাদের প্রথমজাতদের মৃত্যুর সামনে তারা তখন একথা স্বীকার করল যে, এই জাতি সত্যি ঈশ্বরের সন্তান।
14 সবকিছুর উপরে তখন গভীর নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে, রজনী তখন অর্ধপথ পেরিয়ে যাচ্ছে,
15 এমন সময় তোমার সর্বশক্তিমান বাণী স্বর্গ থেকে রাজাসন ছেড়ে সেই বিনাশ-ভূমির মধ্যে নির্মম বীরের মত ঝাপিয়ে পড়ল, শাণিত খড়্গারূপে সঙ্গে করে আনছিল তোমার আপন চূড়ান্ত আদেশ।
16 তখন উঠে দাঁড়িয়ে সবকিছুই মৃত্যুতে পরিপূর্ণ করল; সেই বাণী গগনস্পর্শী ছিল, আবার পৃথিবীতে হেঁটে বেড়াচ্ছিল।
17 তখন ভয়ঙ্কর স্বপ্নের নানা আকস্মিক ছায়ামূর্তি তাদের আতঙ্কিত করল, অচিন্তনীয় আশঙ্কা ভয় তাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
18 আধমরা অবস্থায় এখানে সেখানে পড়তে পড়তে তারা দেখাচ্ছিল তাদের নিজ নিজ মৃত্যুর কারণ,
19 কেননা ভয়ঙ্কর তাদের সেই স্বপ্নগুলি আগে থেকে তাদের সতর্ক করেছিল যেন তারা না মরে নিজ নিজ যন্ত্রণার কারণ না জেনে।
20 মৃত্যুর অভিজ্ঞতা কিন্তু ধার্মিকদেরও স্পর্শ করল, বস্তুত মরুপ্রান্তরে বহুজনেরই মহাসংহার হল ; কিন্তু ক্রোধ বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না,
21 কেননা অনিন্দ্য এক মানুষ তাদের পক্ষে মিনতি জানাবার জন্য তৎপর হয়ে আপন সেবাকাজের অস্ত্রস্বরূপ প্রার্থনা তুলে নিল, এবং সেই সঙ্গে প্রায়শ্চিত্তকারী ধূপস্বরূপ মিনতিও অর্পণ করল, ক্রোধ প্রতিরোধ করল, দুর্বিপাকের শেষ ঘটাল, এতে সে দেখাল যে, সে তোমার আপন সেবক।
22 সে ঐশ ক্ষোভের উপর জয়ী হল, কিন্তু দৈহিক শক্তিতে নয়, অস্ত্রের বলেও নয় ; বরং বাণী দ্বারাই সে শাস্তিদানকারীকে প্রশমিত করল, পিতৃগণের কাছে দেওয়া শপথ ও নানা সন্ধি তাঁকে স্মরণ করায়ই তেমনটি করল।
23 মৃতেরা একে অপরের উপরে রাশি রাশি হয়ে পড়ে ছিল, এমন সময় সেই অনিন্দ্য মানুষ তাদের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে ঐশ ক্রোধ থামাল, জীবিতদের কাছে তার যাওয়ার পথ ছিন্ন করল।
24 কেননা সারা বিশ্ব ছিল তার দীর্ঘ পোশাকে, বহুমূল্য মণির চার শ্রেণিতে খোদাই করা ছিল পিতৃগণের গৌরবময় নাম, এবং তার মাথার কিরীটে তোমার মহত্ত্ব।
25 তেমন কিছুর সামনে থেকে বিনাশক পিছটান দিল, তাতে ভীত হল। বস্তুত ক্রোধের এই একমাত্র প্রমাণই যথেষ্ট ছিল।