Index

এজেকিয়েল - Chapter 34

1 প্রভুর বাণী আমার কাছে এসে উপস্থিত হয়ে বলল :
2 ‘আদমসন্তান, ইস্রায়েলের পালকদের বিরুদ্ধে ভাববাণী দাও; ভাববাণী দাও, সেই পালকদের বল : প্রভু পরমেশ্বর একথা বলছেন: ইস্রায়েলের সেই পালকদের ধিক্, যারা নিজেদেরই পালন করছে! এ কি বরং উচিত নয় যে, পালকেরা মেষগুলিকেই পালন করবে?
3 তোমরা তো দুধ খেয়ে নিজেদের পুষ্ট কর, পশমের কাপড় পর, সবচেয়ে হৃষ্টপুষ্ট মেঘকে বলি দাও, কিন্তু পালকে প্রতিপালন কর না।
4 যে মেষগুলি দুর্বল, তাদের তোমরা বলবান করনি, যেগুলি পীড়িত, তাদের যত্ন করনি, যেগুলি ক্ষতবিক্ষত, তাদের ক্ষতস্থান বাঁধনি, যেগুলি পথভ্রষ্ট, তাদের ফিরিয়ে আননি, যেগুলি পথহারা, তাদের খোঁজ করনি, বরং নিষ্ঠুরতা দেখিয়ে ও অত্যাচার চালিয়েই তাদের শাসন করেছ।
5 পালকের দোষে মেষগুলি বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে; তারা বন্যজন্তুদের শিকার হয়েছে : হ্যাঁ, তারা এখন বিক্ষিপ্ত।
6 আমার মেষপাল পর্বতে পর্বতে ও যত উপপর্বতে ভ্রষ্ট হয়ে বেড়াচ্ছে; আমার মেষগুলি সারা পৃথিবী জুড়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে আছে ; আর তাদের অন্বেষণ বা সন্ধান করবে এমন কেউ নেই!
7 সুতরাং, হে পালকেরা, প্রভুর বাণী শোন।
8 আমার জীবনেরই দিব্যি – প্রশ্ন পরমেশ্বরের উক্তি— যেহেতু পালকের দোষে আমার পাল শিকারের বস্তু ও আমার মেষগুলি বন্যজন্তুদের খাদ্য হয়েছে; আরও, যেহেতু আমার পালকেরা আমার পালের অন্বেষণ করেনি, বরং সেই পালকেরা নিজেদেরই পালন করেছে, আমার মেষপাল পালন করেনি,
9 সেজন্য, হে পালকেরা, প্রভুর বাণী শোন।
10 প্রভু পরমেশ্বর একথা বলছেন : দেখ, আমি সেই পালকদের বিপক্ষে! আমি তাদের হাত থেকে আমার মেষপাল আদায় করব, এবং তাদের পালন-দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত করব। সেই পালকেরা নিজেদের আর পালন করবে না, কেননা আমি আমার মেষগুলিকে তাদের মুখ থেকে উদ্ধার করব, তাদের খাদ্য হতে দেব না।
11 কারণ প্রভু পরমেশ্বর একথা বলছেন: দেখ, আমি নিজেই আমার মেষপাল খোঁজ করব, তার দিকে দৃষ্টি রাখব।
12 বিক্ষিপ্ত পালের মধ্যে থাকার সময়ে পালক যেমন মেষগুলির খোঁজখবর রাখে, তেমনি আমি আমার মেষগুলির খোঁজখবর রাখব। মেঘাচ্ছন্ন ও অন্ধকারময় দিনে তারা যেখানে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছিল, সেই সমস্ত জায়গা থেকে আমি তাদের উদ্ধার করব।
13 আমি জাতিসকলের মধ্য থেকে তাদের ফিরিয়ে আনব, সমস্ত দেশ থেকে তাদের সংগ্রহ করব, ও আমি তাদের নিজেদের দেশভূমিতে ফিরিয়ে আনব। আমি ইস্রায়েলের পর্বতে পর্বতে ও যত উপত্যকায় ও অঞ্চলের সকল চারণভূমিতে তাদের চরার।
14 আমি সেরা চারণমাঠে তাদের চালনা করব, এবং তাদের ঘেরি হবে ইস্রায়েলের উচ্চ উচ্চ পর্বতের উপর; সেখানে তারা উত্তম ঘেরিতে শুয়ে বিশ্রাম করবে, এবং ইস্রায়েলের পর্বতমালায় উর্বরতম চারণমাঠে চরে বেড়াবে।
15 আমি নিজেই আমার মেষগুলিকে চরাব, আমি নিজেই তাদের শুইয়ে রাখব—প্রভু পরমেশ্বরের উক্তি।
16 যে মেষ পথহারা আমি তাকে গোজ করব, যেটা পথভ্রষ্ট তাকে ফিরিয়ে আনব, যেটা ক্ষতবিক্ষত তার ক্ষতস্থান বেঁধে দেব, যেটা দুর্বল তাকে বলবান করব, যেটা হৃষ্টপুষ্ট ও বলবান তাকে বলি দেব। আমি ন্যায়ের সঙ্গেই তাদের চরাব।
17 আর তোমাদের বিষয়ে, হে আমার মেষপাল, প্রভু পরমেশ্বর একথা বলছেন: দেখ, আমি মেষ ও মেষের মধ্যে, আবার ভেড়া ও ছাগের মধ্যে বিচার করব।
18 তোমাদের কাছে এ কি সামান্য ব্যাপার যে, উত্তম চারণমাঠে চরছ, আবার নিজেদের ফেলে রাখা ঘাস পায়ে মাড়িয়ে দিচ্ছ? এবং নির্মল জল পান করছ, আবার বাকিটুকুটা পা দিয়ে ময়লা করছ?
19 আমার মেষগুলির দশা এ: তোমরা যা পায়ে মাড়িয়েছ, সেগুলিকে তা-ই খেতে হচ্ছে, ও তোমরা যা পা দিয়ে ময়লা করেছ, সেগুলিকে তা-ই পান করতে হচ্ছে!
20 সুতরাং প্রভু পরমেশ্বর তাদের বিষয়ে একথা বলছেন: দেখ, আমি, আমিই হৃষ্টপুষ্ট মেষ ও রুগ্ন মেষের মধ্যে বিচার করব।
21 যেহেতু তোমরা পাশ ও কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দিতে দিতে ও শিং দিয়ে গুঁতো মারতে মারতে সেগুলিকে বাইরে বিক্ষিপ্ত না করা পর্যন্ত ক্ষান্ত হওনি,
22 সেজন্য আমি আমার মেষপালকে ত্রাণ করব, তারা আর শিকারের বস্তু হবে না; এবং আমি মেষ ও মেঘের মধ্যে বিচার করব।
23 তাদের জন্য আমি অনন্য এক পালকের উদ্ভব ঘটাব, যিনি তাদের প্রতিপালন করবেন—তিনি আমার দাস দাউদ; তিনিই তাদের চরাবেন, তিনিই তাদের পালক হবেন ;
24 আর আমি প্রভু হব তাদের আপন পরমেশ্বর, এবং আমার দাস দাউদ তাদের মধ্যে জনপ্রধান হবেন; আমিই, প্রভু, একথা বললাম।
25 আমি তাদের সঙ্গে শান্তির এক সন্ধি স্থির করব, হিংস্র যত জন্তুকে দেশ থেকে দূর করে দেব; তখন তারা নিরাপদে প্রান্তরে বাস করবে ও বনে বনে বিশ্রাম করবে।
26 আমি তাদের সকলকে ও আমার পর্বতের চারদিকের সমস্ত অঞ্চল আশীর্বাদের পাত্র করব : যথাসময় জলধারা বর্ষণ করব, আর সেই জলধারা হবে আশিসধারা!
27 মাঠের গাছপালা ফলশালী হয়ে উঠবে, ভূমি তার আপন ফসল দেবে, আর তারা তাদের নিজেদের দেশভূমিতে ভরসাভরে বাস করবে; আর তাতে তারা জানবে যে, আমিই প্রভু, যখন আমি তাদের জোয়ালের ডাণ্ডা ছিন্ন করব, ও যারা তাদের উপর প্রভুত্ব চালাচ্ছে, তাদের হাত থেকে তাদের উদ্ধার করব।
28 তারা জাতিগুলির লুটতরাজের বস্তু আর হবে না, বন্যজন্তুও তাদের আর গ্রাস করবে না; তারা বরং নিরাপদে বাস করবে, তাদের ভয় দেখাবে এমন কেউ থাকবে না।
29 আমি তাদের জন্য উর্বরতম উদ্যান প্রস্ফুটিত করব, তখন দেশের মধ্যে তারা আর ক্ষুধায় ভুগবে না, এবং জাতিগুলির অপমানও তাদের আর ভোগ করতে হবে না।
30 তাতে তারা জানবে যে, আমি— তাদের পরমেশ্বর প্রভু—তাদের সঙ্গে আছি, এবং তারা—ইস্রায়েলকূল – আমার আপন জনগণ। প্রভু পরমেশ্বরের উক্তি।
31 আর তোমরা, হে আমার মেষগুলো, তোমরাই আমার আপন চারণভূমির মেষপাল, আর আমি তোমাদের আপন পরমেশ্বর। ' — প্রভু পরমেশ্বরের উক্তি।