1 প্রভুর বাণী আমার কাছে এসে উপস্থিত হয়ে বলল :
2 ‘আদমসন্তান, তোমার জাতির সন্তানদের কাছে কথা বল; তাদের বল : আমি কোন দেশের বিরুদ্ধে খড়্গা আনলে যদি সেই দেশের লোকেরা নিজেদের মধ্য থেকে একজন লোককে নিয়ে তাকে প্রহরী নিযুক্ত করে,
3 এবং সে খড়্গাকে দেশের বিরুদ্ধে আসতে দেখলে যদি তুরি বাজিয়ে লোকদের সতর্ক করে,
4 তবে যে কেউ তুরির শব্দ শুনেও সতর্ক না হয়, যদি খড়্গা এসে পৌঁছে ও তাকে সংহার করে, সে নিজে নিজের সর্বনাশের দায়ী হবে।
5 সে তুরির শব্দ শুনেও সতর্ক হয়নি; সে নিজে নিজের সর্বনাশের দায়ী হবে : যদি সতর্ক হত, তবে নিষ্কৃতি পেত।
6 কিন্তু সেই প্রহরী খড়্গা আসতে দেখলে যদি তুরি না বাজায়, এবং লোকদের সতর্ক করা না হয়, আর যদি খড়া এসে পৌঁছে ও তাদের মধ্যে কাউকে সংহার করে, তবে তার অপরাধের কারণে তার সংহার হবে বটে, কিন্তু আমি সেই প্রহরীর কাছেই তার রক্তের কৈফিয়ত চাইব।
7 হে আদমসন্তান, আমি তোমাকেই ইস্রায়েলকুলের পক্ষে প্রহরীরূপে নিযুক্ত করলাম ; আমার মুখের একটা বাণী শুনলে তুমি আমার পক্ষ থেকে তাদের সতর্ক কর।
8 যখন আমি দুর্জনকে বলি : হে দুর্জন, তুমি মরবেই মরবে, তখন তুমি তার পথের বিষয়ে সেই দুর্জনকে সতর্ক করার জন্য যদি কিছু না বল, তবে সেই দুর্জন নিজের অপরাধের কারণে মরবে বটে, কিন্তু তোমারই কাছে আমি তার রক্তের কৈফিয়ত চাইব!
9 কিন্তু তুমি সেই দুর্জনকে তার পথ থেকে ফেরাবার জন্য তার পথের বিষয়ে সাবধান বাণীর মত কিছু শোনালে যদি সে তার পথ থেকে না ফেরে, তবে সে তার নিজের অপরাধের কারণে মরবে, কিন্তু তুমি নিজের প্রাণ বাঁচাবে।
10 আদমসন্তান, ইস্রায়েলকুলকে বল: তোমরা নাকি বলে থাক, আমাদের যত অন্যায়, যত পাপের ভার আমাদের উপরেই রয়েছে, ফলে আমরা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছি! কী করে বাঁচব?
11 তাদের তুমি বল : আমার জীবনেরই দিব্যি – প্রভু পরমেশ্বরের উক্তি—দুর্জনের মৃত্যুতে আমি প্রীত নই; বরং সে যে নিজের পথ থেকে ফিরে বাঁচে, এতেই আমি প্রীত। তোমরা মন ফেরাও, তোমাদের কুপথ থেকে ফের কারণ হে ইস্রায়েলকুল, তোমরা কেন মরবে?
12 আদমসন্তান, তোমার জাতির সন্তানদের একথাও বল : ধার্মিকজন পাপ করলে এ তার আগের ধর্মিষ্ঠতা তাকে বাঁচাবে না; আবার দুর্জন দুষ্কর্ম থেকে ফিরলে তার আগের দুষ্কর্ম তার হোঁচটের কারণ হবে না, যেমনটি ধার্মিকজনও পাপ করলে তার আগের ধর্মিষ্ঠতা গুণে বাঁচবে না।
13 আমি যখন ধার্মিককে বলি : তুমি বাঁচবে, তখন সে যদি নিজের ধর্মিষ্ঠতায় ভরসা রেখে অন্যায় করে, তবে তার আগের যত ধর্মকর্ম আর স্মরণ করা হবে না; সে যে অন্যায় করেছে, তার কারণে মরবে।
14 আর যখন আমি দুর্জনকে বলি তুমি মরবেই মরবে, তখন সে যদি তার পাপ থেকে ফিরে ন্যায় ও ধর্মাচরণ করে—
15 সেই দুর্জন যদি বন্ধকী দ্রব্য ফেরত দেয়, কেড়ে নেওয়া জিনিস ফিরিয়ে দেয়, এবং অন্যায় না করে জীবনদায়ী বিধিপথে চলে—তবে সে অবশ্যই বাঁচবে, সে মরবে না।
16 তার আগেকার সাধিত সমস্ত পাপ তার বিরুদ্ধে আর স্মরণ করা হবে না; সে ন্যায় ও ধর্মাচরণ করেছে, অবশ্য বাঁচবে।
17 অথচ তোমার জাতির সন্তানেরা নাকি বলছে: প্রভুর ব্যবহার সঠিক নয় ; কিন্তু তাদেরই ব্যবহার সঠিক নয়!
18 ধার্মিকজন যখন নিজের ধর্মিষ্ঠতা থেকে ফিরে অন্যায় করে, তখন সে তার কারণে মরবে।
19 আর দুর্জন যখন তার দুষ্কর্ম থেকে ফিরে ন্যায় ও ধর্মাচরণ করে, তখন তার কারণেই বাঁচবে।
20 অথচ তোমরা নাকি বলছ : প্রভুর ব্যবহার সঠিক নয়। হে ইস্রায়েলকুল, আমি তোমাদের ব্যবহার অনুসারে তোমাদের প্রত্যেকের বিচার করব।'
21 আমাদের নির্বাসনের দ্বাদশ বর্ষের দশম মাসে, মাসের পঞ্চম দিনে, যেরুসালেম থেকে একজন পলাতক আমার কাছে এসে বলল, “নগরী হস্তগত হয়েছে।"
22 সেই পলাতকের আসবার আগের সন্ধ্যায় প্রভুর হাত আমার উপর নেমে এসেছিল, এবং সকালে সেই পলাতক এলে প্রশ্ন আমার মুখ খুলে দিলেন, আমি আর বোবা রইলাম না।
23 প্রভুর বাণী আমার কাছে এসে উপস্থিত হয়ে বলল :
24 আদমসন্তান, ইস্রায়েল-দেশভূমিতে যারা সেই ধ্বংসস্তূপে বাস করে, তারা বলছে: আব্রাহাম একমাত্র ছিলেন আর দেশ উত্তরাধিকাররূপে পেয়েছিলেন; কিন্তু আমরা অনেক লোক, আমাদেরই কাছে দেশ উত্তরাধিকাররূপে দেওয়া হয়েছে।
25 তাই তুমি তাদের বল : প্রভু পরমেশ্বর একথা বলছেন : যখন তোমরা রক্ত সমেত মাংস খেয়ে থাক, নিজ নিজ পুতুলগুলোর দিকে চোখ তুলে থাক, ও রক্তপাত করে থাক, তখন তোমরাই কি দেশের উত্তরাধিকারী হবে?
26 যখন তোমরা তোমাদের খঙ্গে নির্ভর করে থাক, জঘন্য কর্ম সাধন করে থাক, ও প্রত্যেকে পরের স্ত্রীকে কলুষিত করে থাক, তখন তোমরাই কি দেশের উত্তরাধিকারী হবে?
27 তাই তুমি তাদের একথা বলবে : প্রভু পরমেশ্বর একথা বলছেন : আমার জীবনেরই দিব্যি! যারা সেই সকল ধ্বংসস্তূপে আছে, তারা খড়ের আঘাতে মারা পড়বে। আর যে কেউ মাঠে আছে, তাকে আমি পশুদের কাছে খাদ্যরূপে দেব; এবং যারা শৈলের ফাটলে বা গুহাতে থাকে, তারা মহামারীতে মরবে।
28 আমি দেশকে উৎসন্নস্থান ও মরুপ্রান্তর করব, তার পরাক্রমের গর্ব খর্ব হবে। ইস্রায়েলের পর্বতমালা ধ্বংসিত হবে, সেই পথ দিয়ে কেউই আর যাবে না।
29 তখন তারা জানবে যে, আমিই প্রভু, যখন আমি তাদের সাধিত সমস্ত জঘন্য কর্মের কারণে দেশকে উৎসন্নস্থান ও মরুপ্রান্তর করব।
30 আদমসন্তান, তোমার জাতির সন্তানেরা প্রাচীরের কাছে ও ঘরের দরজায় দরজায় তোমার বিষয়ে কথাবার্তা বলে। তারা একে অপরকে বলে: চল, আমরা গিয়ে শুনি প্রভু থেকে কী বাণী আসছে।
31 তারা রীতিমত তোমার কাছে আসে, এবং তোমার সামনে বসে তোমার সমস্ত বাণী শোনে, কিন্তু তা কাজে লাগায় না। তারা তো মুখেই মাত্র প্রীত, অথচ তাদের হৃদয় লোভের পিছনে যায়।
32 দেখ, তাদের কাছে তুমি প্রেমগানের মত : কণ্ঠ মধুর ও বাদ্যের ঝঙ্কার সুচারু। তারা তোমার বাণী শোনে, কিন্তু তা কাজে লাগায় না।
33 কিন্তু যখন এর সিদ্ধি ঘটবে— দেখ, তা ঘটছেই—তখন তারা জানবে যে, তাদের মধ্যে একজন নবী রয়েছে।'