Index

বিচারকচরিত - Chapter 9

1 যেরুব-বায়ালের ছেলে আবিমেলেক সিখেমে তার মায়ের ভাইদের কাছে গিয়ে তাদের এবং তার মায়ের পিতৃকূলের গোটা গোত্রকে এই কথা বলল,
2 ‘আমার অনুরোধ, তোমরা সিখেমের সকল সমাজনেতার কাছে এই প্রশ্ন রাখ : তোমাদের পক্ষে ভাল কী? তোমাদের উপরে যেরুব-বায়ালের সকল ছেলেদের অর্থাৎ সত্তরজনের শাসন ভাল, না একজনেরই শাসন ভাল? এই কথাও মনে রেখ, আমি তোমাদের নিজেদেরই হাড় ও তোমাদের নিজেদেরই মাংস।
3 তার মায়ের ভাইয়েরা তার পক্ষ থেকে সিখেমের সকল সমাজনেতার কাছে এই সমস্ত কথা বলল, আর সেই সকলের মন আবিমেলেকের দিকে আকর্ষিত হল; তারা ভাবছিল, “সে তো আমাদের ভাই।
4 তাই তারা বায়াল-বেরিতের মন্দির থেকে তাকে সত্তর রুপোর শেকেল দিল ; আর আবিমেলেক নিষ্কর্মা ও দুঃসাহসী লোকদের সেই টাকা মজুরি দিলে তারা তার অনুগামী হল।
5 পরে সে অফ্রায় পিতার বাড়িতে গিয়ে তার ভাইদের অর্থাৎ যেরুব-বায়ালের সত্তরজন ছেলেকে এক পাথরের উপরে বধ করল ; কেবল যেরুব-বায়ালের কনিষ্ঠ পুত্র যোথাম লুকিয়ে থাকায় রক্ষা পেল।
6 তখন সিখেমের সকল সমাজনেতা ও গোটা বেখ্-মিল্লো সমবেত হয়ে, সিখেমে যেখানে ওক গাছের স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে, সেইখানে গিয়ে আবিমেলেককে রাজা বলে ঘোষণা করল।
7 কিন্তু যোথানকে যখন ব্যাপারটা জানানো হল, তখন সে গিয়ে গারিজিম 9 পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে জোর গলায় চিৎকার করে বলল, হে সিখেমের সমাজনেতা সকল, আমার কথায় কান দাও, তবে পরমেশ্বর তোমাদের কথায় কান দেবেন :
8 একদিন যত গাছপালা নিজেদের উপরে এক রাজা তৈলাভিষিক্ত করার জন্য তেমন রাজার খোঁজে যাত্রা করল। তারা জলপাইগাছকে বলল, আমাদের উপরে রাজত্ব কর।
9 জলপাইগাছ উত্তরে বলল, আমার যে তেল দিয়ে দেবতা ও মানুষের প্রতি সম্মান দেখানো হয়, তা ছেড়ে দিয়ে আমি কি আমার শাখা দুলিয়ে সমস্ত গাছের উপরে থাকতে যাব?
10 গাছগুলো ডুমুরগাছকে বলল, এসো, আমাদের উপরে রাজত্ব কর।
11 ডুমুরগাহ উত্তরে বলল, আমার মিষ্টতা ও শ্রেষ্ঠ ফল ছেড়ে দিয়ে আমি কি আমার শাখা দুলিয়ে সমস্ত গাছের উপরে থাকতে যাব?
12 গাছগুলো আঙুরলতাকে বলল, এসো, আমাদের উপরে রাজত্ব কর।
13 আঙুরলতা উত্তরে বলল, আমার যে রস দেবতা ও মানুষকে আনন্দিত করে তোলে, তা ছেড়ে দিয়ে আমি কি আমার শাখা দুলিয়ে সমস্ত গাছের উপরে থাকতে যাব?
14 সমস্ত গাছ কাঁটাগাছকে বলল, এসো, আমাদের উপরে রাজত্ব কর।
15 কাঁটাগাছ উত্তরে সেই গাছগুলোকে বলল, তোমরা যদি তোমাদের উপরে সত্যিই আমাকে রাজা বলে তৈলাভিষিক্ত কর, তবে এসো, আমার ছায়ায় আশ্রয় নাও; তোমরা না এলে, তবে এই কাঁটাঝোপ থেকে আগুন জ্বলে উঠুক, ও লেবাননের সমস্ত এরসগাছ গ্রাস করুক।
16 আচ্ছা, আবিমেলেককে রাজা করায় তোমরা যদি বিশ্বস্ততা ও সততার সঙ্গে কাজ করে থাক, এবং যদি যেরুব-বায়ালের ও তাঁর কুলের প্রতি সদ্ব্যবহার করে থাক, ও তাঁর হাতের সাধিত যত উপকার অনুসারে তাঁর প্রতি ব্যবহার করে থাক-
17 কেননা আমার পিতা তোমাদের জন্য যুদ্ধ করে নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই মিদিয়ানের হাত থেকে তোমাদের উদ্ধার করেছিলেন;
18 অথচ তোমরা আজ আমার পিতৃকুলের বিরুদ্ধে উঠে এক পাথরের উপরে তাঁর সত্তরজন ছেলেকে বধ করেছ, ও তাঁর দাসীর ছেলে আবিমেলেককে তোমাদের ভাই বলে সিখেমের সমাজনেতাদের উপরে রাজা করেছ—
19 আজ যদি তোমরা যেরুব-বায়ালের ও তাঁর কুলের প্রতি বিশ্বস্ততা ও সততার সঙ্গে আচরণ করে থাক, তবে সেই আবিমেলেককে নিয়ে আনন্দিত হও, সেও তোমাদের নিয়ে আনন্দিত হোক।
20 কিন্তু তা যদি না হয়, তবে আবিমেলেক থেকে আগুন জ্বলে উঠে সিখেমের সমাজনেতাদের ও বেথ-মিল্লোর লোকদের গ্রাস করুক; আবার সিখেমের সমাজনেতাদের কাছ থেকে ও বেথ-মিল্লোর লোকদের কাছ থেকে আগুন জ্বলে উঠে আবিমেলেককে গ্রাস করুক।'
21 যোথাম দৌড়ে পালিয়ে গেল, নিজেকে বাঁচাল, এবং তার ভাই আবিমেলেক থেকে দূরেই, বেয়েরে, বসতি করল।
22 আবিমেলেক ইস্রায়েলের উপরে তিন বছর কর্তৃত্ব করল।
23 পরে পরমেশ্বর আবিমেলেকের ও সিখেমের সমাজনেতাদের মধ্যে অমঙ্গলকর এক আত্মা প্রেরণ করলেন আর সিখেমের সমাজনেতারা আবিমেলেকের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করল।
24 এমনটি ঘটল, যেন যেরুব-বায়ালের সত্তরজন ছেলের প্রতি যে কুকাজ সাধন করা হয়েছিল, তার প্রতিফল ঘটে, এবং তাদের ভাই আবিমেলেক, যে তাদের মৃত্যু ঘটিয়েছিল, তার উপরে, এবং ভাইদের হত্যাকাণ্ডে যারা তার হাত সবল করেছিল, সিখেমের সেই সমাজনেতাদের উপরেও ওই রক্তপাত-অপরাধের দণ্ড পড়ে।
25 সিখেমের সমাজনেতারা তার জন্য নানা পর্বতচূড়ায় লোক ওত পেতে রাখল, আর যত লোক সেই পথের কাছ দিয়ে পথ চলছিল, তারা তাদের সবকিছু লুট করে নিত। ব্যাপারটা আবিমেলেকের কাছে জানানো হল।
26 পরে এবেদের ছেলে গাল তার ভাইদের সঙ্গে নিয়ে সিখেমে বাস করতে এল, আর সিখেমের সমাজনেতারা তার উপরেই আস্থা রাখল।
27 তারা মাঠে বের হয়ে আঙুরখেতে ফল জড় করল; পরে তা মাড়াই করে উৎসব করল এবং তাদের দেবতার মন্দিরে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে আবিমেলেককে অভিশাপ দিল।
28 এবেদের ছেলে গাল বলল : 'আবিমেলেক কে, সিখেম কে যে আমরা তার দাস হব? এ কি বরং উচিত নয় যে, যেরুব-বায়ালের ছেলে আর তার সেনাপতি জেবুল সিখেমের পিতা সেই হামোরের লোকদেরই দাস হবে? আমরা তার দাস হব কেন ?
29 আহা, এই গোটা জনগণ আমার হাতে থাকলে আমিই আবিমেলেককে তাড়িয়ে দিতাম, তাকে বলতাম : তোমার সৈন্যদল আরও বড় করে বের হয়ে এসো দেখি!'
30 তখন এমনটি ঘটল যে, এবেদের ছেলে গালের সেই কথা শহরের শাসনকর্তা জেবুলের কানে এলে তিনি ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। তিনি ছদ্মবেশে আবিমেলেকের
31 কাছে দূত পাঠিয়ে বললেন, 'দেখুন, এবেদের ছেলে গাল ও তার ভাইয়েরা সিখেমে এসেছে; আর দেখুন, তারা আপনার বিরুদ্ধে নগর ক্ষেপিয়ে তুলছে।
32 তাই আপনি ও আপনার সঙ্গে যে লোক আছে, আপনারা রাতে উঠে খোলা মাঠে লুকিয়ে থাকুন :
33 সকালে সূর্যোদয় হলেই আপনি উঠে শহরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়বেন; সে ও ৩৩ তার লোকেরা আপনার বিরুদ্ধে বেরিয়ে গেলে আপনার হাত যা করতে চাইবে, আপনি সেইমত করবেন।
34 আবিমেলেক ও তার পক্ষের সমস্ত লোক রাতে উঠে চার দল হয়ে সিখেমের বিরুদ্ধে ওত পেতে থাকল।
35 এবেদের ছেলে গাল বাইরে গিয়ে নগরদ্বারের প্রবেশস্থানে দাঁড়িয়েছিল, এমন সময় আবিমেলেক ও তার লোকেরা গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে এল।
36 সেই লোকদের দেখে গাল জেবুলকে বলল : 'দেখ, পর্বতচূড়া থেকে বহু লোক নেমে আসছে।' জেবুল তাকে বলল, 'তুমি পর্বতের ছায়া দেখে তা মানুষ মনে করছ।'
37 কিন্তু গাল জোর করে বলে চলল, 'দেখ, “অঞ্চলের নাভি” থেকে বহু লোক নেমে আসছে, আর গণকদের ওক্ গাছের পথ দিয়ে আর এক দল আসছে!
38 তখন জেবুল বলল, 'কোথায় এখন তোমার সেই মুখ, যে মুখে তুমি বলেছিলে : আবিমেলেক কে যে আমরা তার দাস হব? যাদের তুমি অবজ্ঞা করেছিলে, ওরা কি সেই লোক নয়? এখন যাও, বের হয়ে ওর সঙ্গে সংগ্রাম কর!
39 গাল সিখেমের সমাজনেতাদের আগে আগে বেরিয়ে গিয়ে আবিমেলেকের সঙ্গে যুদ্ধ করল।
40 আবিমেলেক তাকে ধাওয়া করল, ও সে তার সামনে থেকে পালিয়ে গেল ; নগরদ্বারের প্রবেশস্থানে পৌঁছবার আগে বহু বহু লোক মারা পড়ল।
41 আবিমেলেক আরুমায় ফিরে গেল, আর জেবুল গালকে ও তার ভাইদের তাড়িয়ে দিল; তারা আর সিখেমে থাকতে পারল না।
42 পরদিন জনগণ বেরিয়ে খোলা মাঠে গেল, আর কথাটা আবিমেলেককে জানানো হল।
43 তার নিজের লোকজন নিয়ে সে তিন দল করে মাঠে ওত পেতে যখন দেখল, লোকেরা শহর থেকে বের হয়ে আসছে, তখন সে তাদের থাকল; বিরুদ্ধে উঠে তাদের মেরে ফেলল।
44 আবিমেলেক ও তার সঙ্গী দল হঠাৎ কাঁপিয়ে পড়ে নগরদ্বারের প্রবেশস্থানে গিয়ে থামল, আর সেইসঙ্গে অন্য দুই দল, মাঠে যারা ছিল, তাদের উপরে নেমে পড়ে তাদের মেরে ফেলল।
45 আবিমেলেক সেই সমস্ত দিন ওই নগর আক্রমণ করল, এবং নগরটাকে দখল করে সেখানকার লোকদের বধ করল ; পরে নগরটাকে ভূমিসাৎ করে তার উপরে লবণ ছড়িয়ে দিল।
46 সিখেমের দুর্গের সমাজনেতারা সকলে একথা শুনে এল-বেরিৎ দেবের মন্দিরের নিম্নকক্ষে ঢুকে আশ্রয় নিল।
47 আবিমেলেককে যখন একথা জানানো হল যে, সিখেমের দুর্গের সকল সমাজনেতা একত্র হয়েছে,
48 সে ও তার সঙ্গী দল তখনই সালমোন পর্বতে উঠল; হাতে একটা কুড়াল নিয়ে সে একটা গাছের ডাল কেটে কাঁধে নিল, ও তার সঙ্গী লোকদের বলল, “তোমরা আমাকে যা করতে দেখলে, শীঘ্রই সেইমত কর!
49 তাই সমস্ত লোক প্রত্যেকে এক একটা ডাল কেটে নিয়ে আবিমেলেকের পিছু পিছু চলল; সেই সব ডাল নিম্নকক্ষের গায়ে বসিয়ে সেই ঘরে ও তার মধ্যে যত লোক ছিল, সবকিছুতেই আগুন লাগিয়ে দিল; আর সিখেমের দুর্গের সকল লোক মরল : স্ত্রীলোক ও পুরুষলোক আনুমানিক এক হাজার লোক ছিল।
50 পরে আবিমেলেক তেবেসে গেল, এবং অবরোধ করার পর তা দখল করল।
51 নগরটার মাঝখানে একটা দৃঢ়দুর্গ ছিল, সেইখানে গিয়ে সমস্ত পুরুষলোক ও স্ত্রীলোক এবং শহরের সকল সমাজনেতা আশ্রয় নিল ও দরজা বন্ধ করে দুর্গের ছাদের উপরে উঠল।
52 দুর্গের কাছে পৌঁছে আবিমেলেক তা আক্রমণ করল। আগুন ধরাবার জন্য সে দুর্গের দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল,
53 এমন সময় একটি স্ত্রীলোক একটা জাঁতার উপরের পার্ট নিয়ে আবিমেলেকের মাথার উপরে তা ফেলে দিয়ে তার মাথার খুলি ভেঙে ফেলল।
54 আবিমেলেক সঙ্গে সঙ্গে তার অস্ত্রবাহক যুবককে ডেকে বলল, 'খড়া খুলে আমাকে বধ কর, পাছে লোকে আমার বিষয়ে বলে, একটা স্ত্রীলোকই ওকে বধ করেছে। যুবকটি তাকে বিধিয়ে দিলে সে মারা গেল।
55 আবিমেলেক মরেছে দেখে ইস্রায়েলীয়েরা প্রত্যেকে যে যার বাড়িতে চলে গেল।
56 এইভাবে আবিমেলেক তার সত্তরজন ভাইকে বধ করে তার পিতার বিরুদ্ধে যে অপকর্ম করেছিল, পরমেশ্বর সেই অপকর্ম তার মাথায় ফিরিয়ে আনলেন ;
57 সিখেমের লোকদের মাথার উপরেও পরমেশ্বর তাদের সমস্ত অপকর্ম ফিরিয়ে আনলেন ; এভাবে যেরুব বায়ালের ছেলে যোথামের অভিশাপ তাদের বিষয়ে খেটে গেল।