1 গিলেয়াদীয় যেফ্থা বলবান এক বীরপুরুষ ছিলেন; তিনি এক বেশ্যার ছেলে: গিলেয়াদ ছিলেন তাঁর পিতা।
2 গিলেয়াদের স্ত্রী তাঁর ঘরে কয়েকটি পুত্রসন্তান প্রসব করল, যারা একবার বড় হলে যেফ্থাকে তাড়িয়ে দিল ; তারা বলল, "আমাদের পিতৃকুলের মধ্যে তুমি উত্তরাধিকার পাবে না, কারণ তুমি অপর একটা স্ত্রীর ছেলে।"
3 যেফ্থা তাঁর আপন ভাইদের কাছ থেকে পালিয়ে টোব অঞ্চলে গিয়ে বসতি করলেন। যেফ্থার কাছে বেশ কয়েকটা দুঃসাহসী লোক জড় হল, তারা তাঁর সঙ্গে বাইরে এটা সেটা লুট করে নিত।
4 কিছুকাল পরে আম্মোনীয়েরা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল।
5 যখন আম্মোনীয়েরা ইস্রায়েলকে আক্রমণ করল, তখন গিলেয়াদের প্রবীণেরা যেফ্থাকে টোব অঞ্চল থেকে আনতে গেলেন।
6 তাঁরা যেফ্থাকে বললেন, 'এসো, আমাদের নেতা হও, তবে আমরা আম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারব।'
7 যেফ্থা গিলেয়াদের প্রবীণদের উত্তরে বললেন, 'আপনারাই কি আমাকে ঘৃণা করে আমার পিতার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেননি? এখন বিপদে পড়েছেন বলে আমার কাছে কেন এসেছেন?'
8 গিলেয়াদের প্রবীণেরা যেফ্থাকে বললেন, 'ঠিক এজন্যই আমরা এখন তোমার দিকে ফিরেছি এসো, আমাদের সঙ্গে আম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, এবং আমাদের অর্থাৎ গিলেয়াদ অধিবাসী সকল লোকের প্রধান হও।'
9 তখন যেফ্থা গিলেয়াদের প্রবীণদের বললেন, 'আপনারা যদি আম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমাকে আবার স্বদেশে নিয়ে যান, আর প্রভু যদি আমার হাতে তাদের তুলে দেন, তবে আমি কী আপনাদের প্রধান হব?'
10 গিলেয়াদের প্রবীণেরা যেফ্থাকে বললেন, ‘আমাদের মধ্যে প্রভুই সাক্ষী! আমরা অবশ্য তোমার কথামত কাজ করব।'
11 তাই যেফ্থা গিলেয়াদের প্রবীণদের সঙ্গে গেলেন : জনগণ তাঁকে তাদের প্রধান ও অগ্রনেতা নিযুক্ত করল, আর যেফ্থা মিস্পাতে প্রভুর সাক্ষাতে পুনরায় তাঁর সেই সমস্ত কথা বললেন।
12 পরে যেফ্থা আম্মোনীয়দের রাজার কাছে দূত পাঠিয়ে বললেন, 'আমার ও আপনার মধ্যে ব্যাপারটা কি যে আপনি আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আমার দেশে এলেন?'
13 আম্মোনীয়দের রাজা যেফ্থার দূতদের বললেন, 'কারণটা এই ইস্রায়েল যখন মিশর থেকে আসে, তখন, আর্নোন থেকে যাব্বোক ও যদন পর্যন্ত আমার ভূমি কেড়ে নিয়েছিল; সুতরাং এখন তোমরা তা স্বেচ্ছায়ই ফিরিয়ে দাও।'
14 যেফ্থা আম্মোনীয়দের রাজার কাছে আবার দূত পাঠালেন; তাঁকে বললেন,
15 যেফ্থা একথা বলছেন: মোয়াবের ভূমি বা আম্মোনীয়দের ভূমি ইস্রায়েল কেড়ে নেয়নি।
16 মিশর থেকে আসবার সময়ে ইস্রায়েল লোহিত সাগর পর্যন্ত মরুপ্রান্তরের মধ্যে চলতে চলতে যখন কাদেশে এসে পৌঁছে
17 তখন এদোমের রাজার কাছে দূত পাঠিয়ে বলেছিল: আপনার দোহাই, আপনি আপনার দেশের মধ্য দিয়ে আমাকে যেতে দিন; কিন্তু এদোমের রাজা সেই কথায় কান দিলেন না; সেইভাবে মোয়াবের রাজার কাছে বলে পাঠালে তিনিও রাজি হলেন না, ফলে ইস্রায়েল কাদেশে রইল।
18 পরে তারা মরুপ্রান্তরের মধ্য দিয়ে এদোম দেশ ও মোয়াব দেশের পাশ কাটিয়ে মোয়াব দেশের পুবদিক দিয়ে এসে আর্নোনের ওপারে শিবির বসাল, মোয়াবের এলাকার মধ্যে তারা তো ঢুকল না, কেননা আর্নোন মোয়াবের সীমানা।
19 পরে ইস্রায়েল হেসবোনের রাজা, আমোরীয়দের রাজা, সেই সিহোনের কাছে দূত পাঠাল ; ইস্রায়েল তাঁকে বলল : আপনার দোহাই, আপনি আপনার দেশের মধ্য দিয়ে আমাদের গন্তব্য স্থানে আমাদের যেতে দিন।
20 কিন্তু ইস্রায়েল যে তাঁর এলাকার মধ্য দিয়ে যাবে, তিনি তা বিশ্বাস করলেন না; এমনকি, তাঁর সমস্ত লোক জড় করে যাহাসে শিবির বসালেন ও ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন।
21 ইস্রায়েলের পরমেশ্বর প্রভু সিহোনকে ও তাঁর সমস্ত লোককে ইস্রায়েলের হাতে তুলে দিলেন, আর তারা তাদের পরাজিত করল : এইভাবে ইস্রায়েল সেই দেশের অধিবাসী আমোরীয়দের সমস্ত দেশ অধিকার করে নিল।
22 তারা আর্নোন থেকে যাব্বোক পর্যন্ত ও মরুপ্রান্তর থেকে যদন পর্যন্ত আমোরীয়দের সমস্ত অঞ্চল অধিকার করে নিল।
23 আর এখন যে ইস্রায়েলের পরমেশ্বর প্রভু তাঁর আপন জাতি ইস্রায়েলের সামনে আমোরীয়দের দেশছাড়া করলেন, আপনি কি তাদের দেশ অধিকার করে নেবেন?
24 আপনার কামোশ দেব আপনার স্বত্বাধিকার-রূপে যা-কিছু দিয়েছে, আপনি কি তারই অধিকারী নন? তাই আমাদের পরমেশ্বর প্রভু আমাদের সামনে যাদের দেশছাড়া করেছেন, আমরাও তাদের সমস্ত দেশের অধিকারী!
25 বলুন দেখি, আপনি কি মোয়াবের রাজা সিপ্পোরের সন্তান বালাকের চেয়েও ভাল? তিনি কি ইস্রায়েলের সঙ্গে বিবাদ করলেন বা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন ?
26 হেসবোনে ও তার উপনগরগুলোতে, আরোয়েরে ও তার উপনগরগুলোতে, ও আর্নোনের তীর জুড়ে সমস্ত শহরে তিনশ' বছর হল যে ইস্রায়েল সেখানে বাস করছে! এত দিনের মধ্যে আপনারা কেন সেই সমস্ত দেশ ফিরিয়ে নেননি?
27 আমি আপনাদের কোন অপকার করিনি, কিন্তু আমার সঙ্গে যুদ্ধ করায় আপনিই আমার প্রতি অন্যায় করছেন; বিচারকর্তা প্রভু আজ ইস্রায়েল সন্তানদের ও আম্মোন-সন্তানদের মধ্যে বিচার করুন!'
28 কিন্তু যেফ্থা এই যে সকল কথা বলে পাঠালেন, তাতে আম্মোনীয়দের রাজা কান দিলেন না।
29 তখন প্রভুর আত্মা যেফ্থার উপরে নেমে অধিষ্ঠান করল, আর তিনি গিলেয়াদ ও মানাসে অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গিলেয়াদে মিস্পা শহরে গেলেন ও গিলেয়াদের মিস্পা থেকে আম্মোনীয়দের কাছে এসে পৌঁছলেন।
30 যেফ্থা এই বলে প্রভুর কাছে মানত করলেন, 'তুমি যদি আম্মোনীয়দের আমার হাতে তুলে দাও,
31 তবে আমি যখন আম্মোনীয়দের কাছ থেকে বিজয়ী হয়ে ফিরে আসব, তখন আমার বাড়ির দরজা থেকে যেই কেউ প্রথম আমার সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়ে আসবে, সে নিশ্চয়ই প্রভুরই হবে, আর আমি তাকে আহুতি রূপে উৎসর্গ করব।'
32 যেফ্থা আম্মোনীয়দের আক্রমণ করার জন্য তাদের এলাকায় গেলে প্রভু তাদের তাঁর হাতে তুলে দিলেন।
33 তিনি কুড়িটা শহর দখল করে আরোয়ের থেকে মিন্নিতের প্রান্তসীমা পর্যন্ত আবেল কেরামিম পর্যন্ত তাদের পরাস্ত করলেন। এইভাবে আম্মোনীয়দের ইস্রায়েলের সামনে অবনমিত করা হল।
34 পরে যেফ্থা মিস্পায় তাঁর আপন বাড়িতে ফিরে আসছেন, এমন সময় তাঁর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার জন্য তাঁর মেয়ে খঞ্জনি হাতে করে নাচতে নাচতে বেরিয়ে এল। সে তাঁর একমাত্র মেয়ে, সে ছাড়া তাঁর অন্য ছেলে বা মেয়ে ছিল না।
35 তাকে দেখামাত্র তিনি পোশাক ছিঁড়ে বলে উঠলেন, ‘হায় হায়, মেয়ে আমার, আমার উপরে কেমন দুর্দশা এনেছ! যারা আমার জীবনে দুর্দশা আনে, তুমিও তাদের মধ্যে একজন! কিন্তু আমি প্রভুকে কথা দিয়েছি, আর তা ফিরিয়ে নেওয়া চলবে না।'
36 মেয়েটি বলল, 'পিতা আমার, তুমি যখন প্রভুকে কথা দিয়েছ, তখন তোমার মুখ দিয়ে যে কথা নিঃসৃত হয়েছে, সেই অনুসারে আমার প্রতি ব্যবহার কর; কেননা প্রভু তোমার শত্রু সেই আম্মোনীয়দের উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ তোমাকে মঞ্জুর করেছেন।
37 পরে সে পিতাকে বলল, 'আমাকে শুধু এটুকু মঞ্জুর করা হোক : দু'মাসের জন্য আমাকে যেতে দাও, যেন আমি গিয়ে পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে আমার সখীদের সঙ্গে আমার কুমারী অবস্থার জন্য বিলাপ করি।
38 তিনি বললেন, 'যাও !’ আর তাকে দু'মাসের জন্য যেতে দিলেন; তাই মেয়েটি তার সখীদের সঙ্গে গিয়ে পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে তার কুমারী অবস্থার জন্য বিলাপ করল।
39 সেই দু'মাস কেটে গেলে মেয়েটি পিতার কাছে ফিরে এল ; পিতা যে মানত করেছিলেন, তাকে দিয়ে তা পূরণ করল। মেয়েটির কোন পুরুষের সঙ্গে কখনও মিলন হয়নি; এ থেকে ইস্রায়েলের মধ্যে এই প্রথার উদ্ভব হল যে,
40 বছরে বছরে ইস্রায়েলীয় তরুণীরা বাড়ি ছেড়ে চার দিন গিলেয়াদীয় যেফ্থার মেয়ের জন্য শোকপালন করে।