1 সামসোন গাজায় গেলেন; সেখানে একটি বেশ্যাকে দেখে তার কাছে গেলেন।
2 "সামসোন এসেছে!' একথা শুনে গাজার লোকেরা তাঁকে ঘিরে সারারাত ধরে নগরদ্বারে তাঁর জন্য ওত পেতে থাকল; তারা সারারাত চুপ করে রইল ; বলছিল : 'এসো, ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করি; তখন তাকে বধ করব।'
3 সামসোন মাঝরাত পর্যন্ত শুয়ে থাকলেন ; মাঝরাতে উঠে তিনি নগরদ্বারের অর্গল সমেত দুই কবাট ও দুই বাজু ধরে উপড়িয়ে দিলেন ও কাঁধে করে হেব্রোনের সামনে যে পর্বত, সেই পর্বত-চূড়ায় নিয়ে গেলেন।
4 পরে তিনি সোরেক উপত্যকার দালিলা নামে একটি স্ত্রীলোকের প্রেমে পড়লেন।
5 ফিলিস্তিনিদের নেতারা সেই স্ত্রীলোককে এসে বললেন, “তাকে ফুসলিয়ে একটু দেখ, তার এমন মহাবল কোথা থেকে আসে, ও কেমন করে আমরা তার উপর জয়ী হতে পারি, যেন তাকে বেঁধে দমন করতে পারি। আমরা প্রত্যেকে তোমাকে এগারোশ' রুপোর শেকেল দেব।'
6 দালিলা সামসোনকে বলল, 'আমাকে একটু বুঝিয়ে দাও, তোমার এমন মহাবল কোথা থেকে আসে, ও তোমাকে দমন করার জন্য বাঁধবার উপায় কি।
7 সামসোন তাকে বললেন, 'শুষ্ক হয়নি এমন সাত গাছা কাঁচা তাঁত দিয়ে যদি আমাকে বাঁধা হয়, তবে আমি দুর্বল হয়ে অন্য সকল মানুষের মত হব।'
8 ফিলিস্তিনিদের নেতারা শুষ্ক নয় এমন সাত গাছা কাঁচা তাঁত এনে সেই স্ত্রীলোককে দিলেন, আর সে তা দিয়ে তাঁকে বাঁধল।
9 লোকেরা বাড়ির মধ্যে একটা কক্ষেই ওত পেতে ছিল। স্ত্রীলোকটি তাঁর দিকে চিৎকার করে বলল, 'সামসোন, ফিলিস্তিনিরা তোমাকে ধরে ফেলেছে!' তখন আগুনের গন্ধে শণসুতো যেমন ছিন্ন হয়, সেইমত তিনি ওই তাঁতগুলো ছিঁড়ে ফেললেন, ফলে তাঁর বলের রহস্য জানা গেল না।
10 পরে দালিলা সামসোনকে বলল, 'তুমি আমাকে নিয়ে তামাশাই করলে, আমাকে মিথ্যা কথা বললে; এখন আমাকে বল, তোমাকে বাঁধবার জন্য কি দরকার।'
11 তিনি তাকে বললেন, 'কখনও ব্যবহার করা হয়নি এমন কয়েকটা গাছা নতুন দড়ি দিয়ে যদি আমাকে বাঁধা হয়, তবে আমি দুর্বল হয়ে অন্য সকল মানুষের মত হব।”
12 তাই দালিলা নতুন দড়ি নিয়ে তা দিয়ে তাঁকে বাঁধল, পরে তাঁর দিকে চিৎকার করে বলল, 'সামসোন, ফিলিস্তিনিরা তোমাকে ধরে ফেলেছে!' লোকেরা বাড়ির মধ্যে একটা কক্ষেই ওত পেতে ছিল; কিন্তু তিনি বাহু থেকে সুতোর মতই ওই সকল দড়ি ছিঁড়ে ফেললেন।
13 পরে দালিলা সামসোনকে বলল, 'তুমি আবার আমাকে নিয়ে তামাশাই করলে, আবার আমাকে মিথ্যা কথা বললে ; আমাকে বল, তোমাকে বাঁধবার জন্য কি দরকার।' তিনি বললেন, “তুমি যদি আমার মাথার সাত গুচ্ছ চুল তাঁতের তানায় বুনে গোঁজের সঙ্গে শক্ত করে বাঁধ, তবে হতে পারে।
14 তাই সে তাঁকে ঘুম পাড়াল, এবং তাঁর মাথার সাত গুচ্ছ চুল তাঁতের তানায় বুনে গোঁজের সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে তাঁর দিকে চিৎকার করে বলল, 'সামসোন, ফিলিস্তিনিরা তোমাকে ধরে ফেলেছে!' কিন্তু তিনি ঘুম থেকে জেগে তানা সমেত তাঁতের গোঁজ উপড়িয়ে ফেললেন।
15 পরে দালিলা তাঁকে বলল, 'কেমন করে বলতে পার যে তুমি আমাকে ভালবাস যখন তোমার হৃদয় আমার সঙ্গে নয়? এই তিন তিন বার তুমি আমাকে নিয়ে তামাশাই করলে; তোমার এমন মহাবল কোথা থেকে আসে, তা আমাকে বললে না।'
16 এইভাবে সে দিনের পর দিন সেই কথা বলে তাঁকে পীড়াপীড়ি করে এমন নির্যাতন করল যে, শেষে প্রাণপণেই তাঁর বিরক্তি লাগল।
17 তাই তিনি মনের সমস্ত কথা খুলে বললেন; তাকে বললেন, 'আমার মাথায় কখনও ক্ষুর পড়েনি, কেননা মায়ের গর্ভ থেকেই আমি পরমেশ্বরের উদ্দেশে নাজিরীয়। খেউরি হলে আমার বল আমাকে ছেড়ে যাবে, এবং আমি দুর্বল হয়ে অন্য সকল মানুষের মত হব।'
18 তখন দালিলা বুঝল, এবার তিনি তাকে তাঁর মনের সমস্ত কথা খুলে বলেছেন, তাই লোক পাঠিয়ে ফিলিস্তিনিদের নেতাদের কাছে ডেকে বলল, 'শুধু আর একবার আসুন, কেননা সে আমাকে তার মনের সমস্ত কথা খুলে বলেছে।' ফিলিস্তিনিদের নেতারা এলেন; তাঁদের হাতে টাকা ছিল।
19 পরে সে নিজের হাঁটুর উপরে তাঁকে ঘুম পাড়াল, এবং উপযুক্ত একটি লোককে ডেকে তাঁর মাথার সাত গুচ্ছ চুল খেউরি করাল ; এইভাবে তিনি দুর্বল হতে লাগলেন, আর তাঁর বল তাঁকে ; ছেড়ে গেল।
20 তখন সে চিৎকার করে বলল, 'সামসোন, ফিলিস্তিনিরা তোমাকে ধরে ফেলেছে।' তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠে ভাবলেন, 'অন্যান্য সময়ের মত আমি মুক্ত হয়ে বের হব, গা ঝাড়া দেব।' কিন্তু প্রভু যে তাঁকে ত্যাগ করেছেন, তা তিনি জানতেন না।
21 তখন ফিলিস্তিনিরা তাঁকে ধরে তাঁর দু'চোখ উপড়ে ফেলল এবং তাঁকে গাজায় এনে ব্রঞ্জের শেকলে বেঁধে দিল, আর তাঁকে কারাগারে জাঁতা ঘোরাতে হল।
22 কিন্তু খেউরি হবার পর তাঁর মাথার চুল আবার বাড়তে লাগল।
23 ফিলিস্তিনিদের নেতারা তাঁদের দেবতা দাগোনের উদ্দেশে মহাযজ্ঞ উৎসর্গ করতে সমবেত হলেন; আনন্দ-ফুর্তির মধ্যে ভাবছিলেন, 'আমাদের দেবতা আমাদের শত্রু সেই সামসোনকে আমাদের হাতে দিয়েছেন!'
24 তাঁকে দেখে লোকেরা তাদের দেবতার প্রশংসা করতে লাগল, বলল : 'এই যে লোকটা আমাদের শত্রু ও আমাদের দেশের বিনাশী, যে আমাদের অনেক লোক বধ করেছে, একে আমাদের দেবতা আমাদের হাতে দিয়েছেন।
25 তাদের অন্তরের সেই মহা আনন্দে তারা চিৎকার করে বলল, 'আমাদের ফুর্তি দিতে সামসোনকে ডেকে আন!' তাই কারাবাস থেকে সামসোনকে ডেকে আনা হল, আর তিনি তাদের সামনে নানা খেলা দেখাতে লাগলেন। পরে তাঁকে স্তম্ভগুলোর মধ্যে দাঁড় করানো হল।
26 যে ছেলে হাত দিয়ে সামসোনকে চালনা করত, তিনি তাকে বললেন, 'আমাকে ছেড়ে দাও, যে দুই স্তম্ভের উপরে গৃহ ভর করে আছে, তা আমাকে স্পর্শ করতে দাও, আমি এতে হেলান দিয়ে দাঁড়াব।'
27 গৃহটা পুরুষ ও স্ত্রীলোকে পরিপূর্ণ ছিল; ফিলিস্তিনিদের সকল নেতা ; সেখানে ছিলেন, এবং ছাদের উপরে স্ত্রী-পুরুষ প্রায় তিন হাজার লোক সামসোনের সেই খেলা দেখছিল।
28 তখন সামসোন প্রভুকে ডাকলেন, বললেন, ‘প্রভু পরমেশ্বর, দোহাই তোমার, আমাকে স্মরণ কর; হে পরমেশ্বর, দোহাই তোমার, কেবল এই একবার আমাকে বল দাও, আর আমি আমার দুই চোখের জন্য এক আঘাতেই ফিলিস্তিনিদের উপর প্রতিশোধ নেব!
29 আর সামসোন, মধ্যকার যে দু'টো স্তম্ভের উপরে গৃহ ভর করে ছিল, তাতে হাত বুলিয়ে দিলেন, তার একটার উপরে ডান বাহু দিয়ে, অন্যটার উপরে বাঁ বাহু দিয়ে ভর করলেন,
30 এবং "ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আমার প্রাণ যাক!' একথা বলে সামসোন তাঁর সমস্ত বলে নিচু হয়ে পড়লেন, আর সেই গৃহ নেতাদের উপরে ও যত লোক ভিতরে ছিল, তাদের সকলের উপরে ভেঙে পড়ল; এইভাবে তিনি জীবনকালে যত লোক বধ করেছিলেন, মৃত্যুকালে তার চেয়ে বেশি লোককে বধ করলেন।
31 পরে তাঁর ভাইয়েরা ও তাঁর সমস্ত পিতৃকুল এসে তাঁকে নিয়ে জরা ও এন্টায়োলের মধ্যস্থানে তাঁর পিতা মানোয়ার সমাধিমন্দিরে সমাধি দিল। তিনি কুড়ি বছর ইস্লাত্রোলের বিচারক হয়েছিলেন।