1 প্রভু মোশীকে বললেন, **‘আগেকার মত দু'টো পাথরফলক কেটে নাও; প্রথম যে ফলক দু'টো তুমি ভেঙে ফেলেছ, সেগুলোতে যা কিছু লেখা ছিল, সেই সকল কথা আমি এই দু'টো ফলকে লিখব।**
2 তুমি কাল সকালে প্রস্তুত হও : কাল সকালে সিনাই পর্বতে উঠে এসো, এবং সেখানে, পর্বতচূড়ায়, আমার জন্য অপেক্ষা করে থাক।
3 কিন্তু তোমার সঙ্গে কেউই যেন উপরে না আসে, এই ত পর্বতের কোন জায়গায়ও কেউই যেন না থাকে, কোন গবাদি পশু বা মেষের পালও যেন এই পর্বতের সামনে না চরে।'
4 তাই মোশী দু'টো পাথরফলক কেটে নিলেন যা প্রথম পাথরগুলোর মত, এবং প্রভুর আজ্ঞামত সকালে উঠে সিনাই পর্বতের উপরে গেলেন, তাঁর হাতে ছিল সেই পাথরফলক দু'টো।
5 তখন প্রভু মেঘে নেমে এসে সেইখানে তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে 'প্রভু' নাম ঘোষণা করলেন।
6 প্রভু তাঁর সামনে দিয়ে যেতে যেতে ঘোষণা করলেন : **'প্রভু, প্রভু, স্নেহশীল, দয়াবান ঈশ্বর; ক্রোধে ধীর, কৃপা ও বিশ্বস্ততায় ধনবান।**
7 তিনি সহস্র সহস্র পুরুষ ধরে কৃপা রক্ষা করেন; অপরাধ, অন্যায় ও পাপ ক্ষমা করেন; কিন্তু শাস্তি থেকে আদৌ রেহাই দেন না; পিতার শঠতার দণ্ড সন্তানদের ও সন্তানদের সন্তানসন্ততিদের উপরে ডেকে আনেন তাদের তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষ পর্যন্ত।'
8 মোশী সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে মাথা নত করে প্রণিপাত করলেন;
9 বললেন, 'প্রভু, আমি যদি সত্যিই তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পেয়ে থাকি, দোহাই তোমার, প্রভু, আমাদের মাঝখানে থেকে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে চল। হ্যাঁ, এরা তো কঠিনমনা এক জাতি; কিন্তু তুমি আমাদের শঠতা ও পাপ মোচন কর : আমাদের তোমার আপন উত্তরাধিকার রূপে গ্রহণ কর।”
10 প্রভু বললেন, **'দেখ, আমি এক সন্ধি স্থাপন করি : তোমার গোটা জনগণের সামনে আমি এমন কতগুলো আশ্চর্য কর্মকীর্তি সাধন করব, যার মত কোন দেশ বা কোন জাতির মধ্যে কখনও সাধন করা হয়নি; যে সমস্ত লোকের মাঝে তুমি বসবাস করছ, তারা দেখবে প্রভু কিনা সাধন করতে পারেন, কেননা তোমার সঙ্গে আমি যা করতে যাচ্ছি, তা ভয়ঙ্কর!**
11 আমি আজ তোমাকে যা আজ্ঞা করি, তাতে বাধ্য হও। দেখ, আমি আমোরীয়, কানানীয়, হিত্তীয়, পেরিজীয়, হিব্বীয় ও যেবুসীয়কে তোমার সামনে থেকে তাড়িয়ে দেব।
12 সাবধান, যে দেশে তুমি প্রবেশ করতে যাচ্ছ, তার অধিবাসীদের সঙ্গে কোন সন্ধি স্থাপন করো না, পাছে সেই লোকেরা তোমার মধ্যে ফাঁদস্বরূপ হয়।
13 তোমরা বরং তাদের বেদিগুলো ভেঙে ফেলবে, তাদের স্মৃতিস্তম্ভগুলো টুকরো টুকরো করবে, ও সেখানকার যত পবিত্র দণ্ড কেটে ফেলবে।
14 তুমি অন্য দেবতার উদ্দেশে প্রণিপাত করবে না, কারণ প্রভুর নাম ঈর্ষাভিমানী : তিনি এমন ঈশ্বর, যিনি কোন প্রতিপক্ষ সহ্য করেন না।
15 সেই দেশের অধিবাসীদের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করবে না, নইলে তারা যখন তাদের দেবতাদের অনুগমনে ব্যভিচার করবে ও তাদের দেবতাদের কাছে বলি দেবে, তখন তোমাকে ডাকবে আর তুমি তাদের প্রসাদ খাবে ;
16 আর তুমি যদি তোমার ছেলেদের জন্য তাদের মেয়েদের বধূরূপে নাও, তাহলে তারা যখন তাদের দেবতাদের অনুগমনে ব্যভিচার করবে, তখন তোমার ছেলেদেরও তাদের দেবতাদের অনুগামী করে ব্যভিচার করাবে।
17 তুমি নিজের জন্য ছাঁচে ঢালাই করা কোন দেবতা তৈরি করবে না।
18 তুমি খামিরবিহীন রুটি উৎসব পালন করবে। আবীব মাসের নির্ধারিত সময়ে তুমি সাত দিন ধরে খামিরবিহীন রুটি খাবে, যেমনটি তোমাকে আজ্ঞা করেছি; কেননা সেই আবীব মাসেই তুমি মিশর দেশ থেকে বেরিয়ে এসেছিলে।
19 মাতৃগর্ভের যত প্রথমফল আমারই : তাই সেই প্রথমজাত পুংশাবক গবাদি পশুরই হোক বা মেষেরই হোক, প্রতিটি পালের মধ্যে তোমার পক্ষে একটা স্মরণ-চিহ্ন থাকবেই।
20 কিন্তু গাধার প্রথমফলের মুক্তির জন্য তার বিনিময়ে মেষ বা ছাগের একটা শাবক দেবে; যদি বিনিময় দ্বারা মুক্ত না কর, তবে তার গলা ভাঙবে। তোমার প্রথমজাত সন্তানদের তুমি মুক্তিমূল্য দিয়ে মুক্ত করবে; কেউই যেন খালি হাতে আমার শ্রীমুখদর্শন করতে না আসে।
21 তুমি ছ' দিন পরিশ্রম করবে, কিন্তু সপ্তম দিনে বিশ্রাম করবে; চাষ ও ফসল কাটার সময়েও বিশ্রাম করবে।
22 তুমি সপ্ত সপ্তাহ উৎসব, অর্থাৎ গমের প্রথমফসল-কাটা উৎসব ও বছর শেষে ফসল কাটা উৎসব পালন করবে।
23 বছরে তিনবার তোমাদের সমস্ত পুরুষলোক ইস্রায়েলের ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের শ্রীমুখদর্শন করতে হাজির হবে;
24 কারণ আমি তোমার সামনে থেকে জাতিগুলিকে তাড়িয়ে দেব, ও তোমার চতুঃসীমানা বিস্তার করব; তাই যখন তুমি বছরে তিনবার তোমার পরমেশ্বর প্রভুর শ্রীমুখদর্শন করতে যাত্রা করবে, তখন কেউই তোমার দেশ দখল করার ইচ্ছা পোষণ করবে না।
25 তুমি আমার বলির রক্ত খামিরযুক্ত কোন কিছুর সঙ্গে উৎসর্গ করবে না ; পাস্কা উৎসবের বলি সকাল পর্যন্ত রাখা হবে না।
26 তুমি তোমার ভূমির সেরা ফলের প্রথমাংশ তোমার পরমেশ্বর প্রভুর গৃহে আনবে। তুমি ছাগের শাবককে তার মায়ের দুধে সিদ্ধ করবে না।”
27 প্রভু মোশীকে আরও বললেন, 'তুমি এই সকল বাণী লিখে রাখ, কারণ আমি এই সকল বাণী অনুসারে তোমার ও ইস্রায়েলের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করেছি।'
28 সেসময়ে মোশী চল্লিশদিন চল্লিশরাত সেখানে প্রভুর সঙ্গে থাকলেন—রুটি খেলেন না, জল পান করলেন না। তিনি সেই দু'টো পাথরে সন্ধির বাণীগুলো অর্থাৎ দশ বাণী লিখে রাখলেন।
29 যখন মোশী পর্বত থেকে নেমে এলেন—তিনি পর্বত থেকে নেমে আসার সময়ে তাঁর হাতে সেই দু'টো সাক্ষ্যপ্রস্তর ছিল—তখন প্রভুর সঙ্গে কথা বলেছিলেন বিধায় তাঁর মুখের চামড়া যে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল, এবিষয়ে তিনি সচেতন ছিলেন না।
30 কিন্তু আরোন ও সমস্ত ইস্রায়েল সন্তান যখন মোশীকে দেখতে পেলেন, তখন তাঁর মুখের চামড়া উজ্জ্বল দেখে তারা তাঁর কাছে এগিয়ে আসতে ভয় পেল।
31 কিন্তু মোশী তাদের ডাকলেন, আর আরোন ও জনমণ্ডলীর প্রধানেরা সকলে মিলে তাঁর কাছে ফিরে এলেন, এবং মোশী তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন।
32 তারপর ইস্রায়েল সন্তানেরা সকলেও তাঁর কাছে এগিয়ে এল, এবং সিনাই পর্বতে প্রভু তাঁকে যা কিছু আজ্ঞা করেছিলেন, তা তিনি তাদের জানিয়ে দিলেন।
33 তাদের সঙ্গে কথা বলা শেষ করার পর মোশী মুখের উপরে একটা কাপড় দিলেন।
34 যখন মোশী প্রভুর সঙ্গে কথা বলার জন্য ভিতরে তাঁর সামনে যেতেন, তখন বাইরে না যাওয়া পর্যন্ত সেই কাপড় খুলে রাখতেন; পরে যে সকল আজ্ঞা পেতেন, বেরিয়ে গিয়ে তা ইস্রায়েল সন্তানদের জানাতেন,
35 আর মোশীর মুখমণ্ডলের দিকে তাকিয়ে ইস্রায়েল সন্তানেরা দেখতে পেত তাঁর মুখের চামড়া কেমন উজ্জ্বল : পরে, প্রভুর সঙ্গে কথা বলতে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি নিজ মুখের উপরে আবার সেই কাপড় রাখতেন।