1 তখন প্রভু মোশীকে বললেন, 'ফারাওর কাছে যাও, কেননা আমি তার ও তার পরিষদদের হৃদয় ভারী করলাম, যেন আমি তাদের মাঝে আমার এই সকল চিহ্ন দেখাতে পারি,
2 এবং আমি যে মিশরীয়দের তাচ্ছিল্যের বস্তু করেছি, ও তাদের মাঝে আমার যে সমস্ত চিহ্ন দেখিয়ে দিয়েছি, তা যেন তুমি তোমার পুত্র ও পৌত্রের কাছে বর্ণনা করতে পার, ফলত তোমরা যেন জানতে পার যে, আমিই প্রভু!'
3 মোশী ও আরোন ফারাওকে গিয়ে বললেন, 'প্রভু, হিব্রুদের পরমেশ্বর, একথা বলছেন : তুমি আমার সামনে নিজেকে নমিত করতে আর কতকাল অস্বীকার করে যাবে? আমার জনগণকে যেতে দাও, যেন তারা আমার সেবা করতে পারে।
4 অন্যথা, তুমি যদি আমার জনগণকে যেতে দিতে সম্মত না হও, আমি আগামীকাল তোমার অঞ্চলে পঙ্গপাল আনব।
5 সেগুলো মাটির বুক এমনভাবে আচ্ছন্ন করবে যে, কেউই ভূমি দেখতে পাবে না; এবং শিলাবৃষ্টি থেকে রেহাই পেয়েছে ও বাকি রয়েছে তোমাদের এমন যা কিছু আছে, সেগুলো তা খেয়ে ফেলবে এবং মাঠে উৎপন্ন তোমাদের যত গাছপালাও গ্রাস করবে।
6 আর তোমার ঘর ও তোমার সমস্ত পরিষদদের ঘর ও সমস্ত মিশরীয়দের ঘর সেগুলোতে ভরে যাবে। তা এমন কিছু, যা তোমার পিতৃপুরুষদের ও তাদের পিতৃপুরুষদের জন্মদিন থেকে আজ পর্যন্ত এদেশভূমিতে কখনও দেখা যায়নি।' এরপর তিনি মুখ ফিরিয়ে ফারাওর কাছ থেকে বিদায় নিলেন।
7 ফারাওর পরিষদেরা তাঁকে বললেন, 'লোকটা আর কতকাল আমাদের মধ্যে ফাঁদ হয়ে থাকবে? এই জনগণকে যেতে দিন, তারা তাদের পরমেশ্বর প্রভুর সেবা করুক। আপনি কি এখনও বুঝছেন না যে, মিশর দেশ ছারখার হয়ে যাচ্ছে?'
8 তাই মোশী ও আরোনকে আবার ফারাওর সামনে আনা হল ; তাঁদের তিনি বললেন, “যাও, তোমাদের পরমেশ্বর প্রভুর সেবা করতে যাও! কিন্তু এরা যারা যাবে, তারা কে কে?
9 মোশী উত্তর দিলেন, 'আমরা আমাদের যুবক ও বৃদ্ধদের, আমাদের ছেলেমেয়েদের, আমাদের মেষপাল ও গবাদি পশুও সঙ্গে করে নিয়ে যাব, কেননা প্রভুর উদ্দেশে উৎসব করতে হবে।'
10 তখন ফারাও তাঁদের বললেন, “তাই আমাকে তোমাদের ছাড়া তোমাদের যুবকদেরও যেতে দিতে হবে! প্রভু তোমাদের সঙ্গে থাকুন! তোমাদের উদ্দেশ্য অবশ্যই অমঙ্গলকর।
11 তা হবে না! তোমাদের পুরুষেরাই গিয়ে প্রভুর সেবা করুক; কারণ তোমরা তো তা-ই প্রথমে চেয়েছিলে।' আর ফারাওর সামনে থেকে তাঁদের দূর করা হল।
12 তখন প্রভু মোশীকে বললেন, 'পঙ্গপাল ডেকে আনবার জন্য মিশর দেশের উপরে হাত বাড়াও, যেন সেগুলো মিশর দেশে এসে ভূমির সমস্ত উদ্ভিদ গ্রাস করে, ও শিলাবৃষ্টি যা কিছু রেখে গেছে, তা সবই যেন গ্রাস করে।
13 মোশী মিশর দেশের উপরে লাঠি বাড়ালেন, আর প্রভু সারাদিন ও সারারাত দেশে পুববাতাস বয়ে দিলেন; সকাল হলে পুবাতাস পঙ্গপাল উঠিয়ে আনল।
14 পঙ্গপাল সমগ্র মিশর দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল, মিশরের সকল স্থান দখল করল, — বিশাল এক পঙ্গপাল ! তেমন পঙ্গপাল আগে কখনও হয়নি, পরেও কখনও হয়নি।
15 সেগুলো সমস্ত মাটির বুক আচ্ছন্ন করল, যতক্ষণ না দেশ অন্ধকার হল, এবং ভূমির যে উদ্ভিদ ও গাছপালার যে ফল শিলাবৃষ্টি থেকে রেহাই পেয়েছিল, সেই সমস্ত কিছু সেগুলো গ্রাস করল : সমস্ত মিশর দেশ জুড়ে গাছপালা বা মাঠের উদ্ভিদ, সবুজ কিছুই রইল না।
16 ফারাও শীঘ্রই মোশী ও আরোনকে ডাকিয়ে বললেন, 'আমি তোমাদের পরমেশ্বর প্রভুর বিরুদ্ধে ও তোমাদের বিরুদ্ধে পাপ করেছি।
17 দোহাই তোমাদের, এবারও আমার পাপ ক্ষমা কর; তোমাদের পরমেশ্বর প্রভুর কাছে মিনতি কর, তিনি যেন আমা থেকে এই মরণ দূর করে দেন।
18 তিনি ফারাওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে প্রভুর কাছে মিনতি করলেন।
19 আর প্রভু অধিক প্রবল বাতাস পশ্চিম থেকে আনলেন; তা পঙ্গপালগুলোকে উঠিয়ে নিয়ে লোহিত সাগরে তাড়িয়ে দিল ; মিশরের কোন জায়গায় একটা পঙ্গপালও থাকল না।
20 কিন্তু প্রভু ফারাওর হৃদয় কঠিন করলেন, আর তিনি ইস্রায়েল সন্তানদের যেতে দিলেন না।
21 তখন প্রভু মোশীকে বললেন, “আকাশের দিকে হাত বাড়াও মিশর দেশে অন্ধকার নেমে আসবে, এমন অন্ধকার যা স্পর্শও করা যাবে।'
22 মোশী আকাশের দিকে হাত বাড়ালেই তিন দিন ধরে সারা মিশর দেশে ঘন অন্ধকার নেমে এল।
23 তারা একে অপরের মুখ আর দেখতে পাচ্ছিল না, আর তিন দিন ধরে কেউই নিজের জায়গা থেকে কোথাও যেতে পারল না। কিন্তু সকল ইস্রায়েল সন্তানের জন্য তাদের বাসস্থানে আলো ছিল।
24 তখন ফারাও মোশীকে ডাকিয়ে বললেন, 'যাও, প্রভুর সেবা করতে যাও! তোমাদের শিশুরাও তোমাদের সঙ্গে যেতে পারবে; কেবল তোমাদের মেষপাল ও পশুপাল এখানে থাকবে।'
25 মোশী উত্তরে বললেন, 'কিন্তু আমাদের পরমেশ্বর প্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করার মত যজ্ঞ ও আহুতির প্রয়োজনীয় জিনিসও আমাদের জন্য যোগাড় করতে হবে।
26 'আমাদের সঙ্গে আমাদের পশুরাও যাবে, একটা নখ পর্যন্তও এখানে থাকবে না; কেননা আমাদের পরমেশ্বর প্রভুর সেবা করার জন্য তাদেরই মধ্য থেকে আমাদের বলি নিতে হবে, আর সেই জায়গায় গিয়ে না পৌঁছা পর্যন্ত আমরা তো জানি না, আমরা কী কী দিয়ে প্রভুর সেবা করব।'
27 কিন্তু প্রভু ফারাওর হৃদয় কঠিন করলেন; তিনি তাদের যেতে দিতে সম্মত হলেন না।
28 ফারাও তাঁকে বললেন, 'আমার সম্মুখ থেকে দূর হও। সাবধান, আমার সামনে আর কখনও আসবে না, কেননা যেদিন তুমি আমার মুখ দেখবে, সেদিন মরবে!'
29 তখন মোশী বললেন, 'আপনার কথা ঠিক! আমি আপনার মুখ আর কখনও দেখব না।'