1 মোশীর পক্ষে ও তাঁর আপন জনগণ ইস্রায়েলের পক্ষে পরমেশ্বর যে সমস্ত কাজ সাধন করেছিলেন, কেমন করেই প্রভু ইস্রায়েলকে মিশর থেকে বের করে এনেছিলেন, এই সমস্ত কথা মোশীর শ্বশুর মিদিয়ানের যাজক যেপ্পো জানতে পারলেন।
2 তখন মোশীর শ্বশুর যেপ্পো মোশীর স্ত্রীকে, পিতৃগৃহে ফিরিয়ে দেওয়া সেই সেফোরাকে,
3 ও তাঁর দুই ছেলেকে সঙ্গে নিলেন। ওই দুই ছেলের মধ্যে একজনের নাম গেশোম, কেননা তিনি বলেছিলেন, “আমি পরদেশে প্রবাসী;
4 আর একজনের নাম এলিয়েজের, কেননা তিনি বলেছিলেন, 'আমার পিতার পরমেশ্বর আমার সহায়তায় এসে ফারাওর খড়্গা থেকে আমাকে উদ্ধার করেছেন।'
5 মোশীর শ্বশুর যেথ্রো তাঁর দুই ছেলে ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মরুপ্রান্তরে মোশীর কাছে, পরমেশ্বরের সেই পর্বতে যেখানে তিনি শিবির স্থাপন করেছিলেন, সেইখানে এলেন।
6 তিনি মোশীকে বলে পাঠালেন 'তোমার শ্বশুর যেপ্পো আমি, এবং তোমার স্ত্রী ও তাঁর সঙ্গে তাঁর দুই ছেলে, আমরা তোমার কাছে আসছি।'
7 মোশী তাঁর শ্বশুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বেরিয়ে গেলেন, ও প্রণিপাত করে তাঁকে চুম্বন করলেন; পরে পরস্পর মঙ্গল জিজ্ঞাসা করে দু'জনে তাঁবুতে প্রবেশ করলেন।
8 ইস্রায়েলের জন্য প্রভু ফারাওর প্রতি ও মিশরীয়দের প্রতি যা কিছু করেছিলেন, এবং যাত্রাপথে তাদের যত ক্লেশ ঘটেছিল, ও প্রভু কেমন ভাবে তাদের উদ্ধার করেছিলেন, সেই সমস্ত বিবরণ মোশী তাঁর শ্বশুরকে দিলেন।
9 মিশরীয়দের হাত থেকে ইস্রায়েলকে উদ্ধার করার সময়ে প্রভু তাদের যে সমস্ত উপকার করেছিলেন, এসব কিছুর জন্য যেথ্রো আনন্দিত হলেন।
10 যেথ্রো বললেন, 'ধন্য প্রভু, যিনি মিশরীয়দের হাত থেকে ও ফারাওর হাত থেকে তোমাদের উদ্ধার করেছেন।
11 এখন আমি জানি, প্রভু সকল দেবতার চেয়ে মহান, কারণ তিনি মিশরের হাতের অধীন থেকে এই জনগণকে কেড়ে নিলেন যখন ওরা তাদের প্রতি উদ্ধতভাবে ব্যবহার করল!'
12 মোশীর শ্বশুর যেথ্রো পরমেশ্বরের কাছে আহুতি ও নানা যজ্ঞবলি আনলেন, এবং আরোন ও ইস্রায়েলের সমস্ত প্রবীণবর্গ এসে পরমেশ্বরের সাক্ষাতে মোশীর শ্বশুরের সঙ্গে ভোজসভায় বসলেন।
13 পরদিন মোশী লোকদের মধ্যে বিচার সম্পাদন করতে আসন নিলেন, আর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জনগণ মোশীর কাছে দাঁড়িয়ে রইল।
14 কিন্তু, লোকদের প্রতি মোশী যা যা করেছিলেন, তা দেখে তাঁর শ্বশুর বললেন, 'লোকদের প্রতি তুমি এ কী করছ? কেন তুমি একাকী আসন নিয়ে থাক, আর সমস্ত লোক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তোমার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে?'
15 মোশী উত্তরে তাঁর শ্বশুরকে বললেন, “জনগণ তো পরমেশ্বরের অভিমত অনুসন্ধান করার জন্য আমার কাছে আসে ;
16 তাদের কোন ঝগড়া-বিবাদ হলে তারা আমার কাছে আসে, আর আমি বাদী বিবাদীর মধ্যে বিচার সম্পাদন করি ও পরমেশ্বরের সমস্ত বিধিবিধান বিষয়ে তাদের অবগত করি।'
17 মোশীর শ্বশুর তাঁকে বললেন, 'না, তুমি যেভাবে করছ, তা ভাল না।
18 শেষ মুহূর্তে তুমি ও তোমার সঙ্গে রয়েছে এই যে লোকেরা সকলেই ক্লান্ত হয়ে পড়বে, কারণ এই কাজ তোমার পক্ষে গুরুতর; তা একাকী সম্পন্ন করা তোমার অসাধ্য।
19 এখন আমার কথা শোন: আমি তোমাকে একটা পরামর্শ দিতে যাচ্ছি, আর পরমেশ্বর তোমার সঙ্গে থাকুন! তুমি পরমেশ্বরের সামনে জনগণের পক্ষে দাঁড়াও ও পরমেশ্বরের কাছে তাদের সমস্যা উপস্থাপন কর,
20 তাদের তুমি সমস্ত বিধিবিধান বুঝিয়ে দাও, এবং তাদের গন্তব্য পথ ও কর্তব্য কাজ দেখাও।
21 উপরন্তু তুমি গোটা জনগণের মধ্য থেকে এমন কার্যক্ষম ও ঈশ্বরভীরু মানুষ বেছে নাও, যাঁরা ন্যায়বান ও উৎকোচ-বিরোধী; তাঁদেরই তুমি লোকদের উপরে সহস্রপতি, শতপতি, পঞ্চাশপতি ও দশপতি করে নিযুক্ত কর।
22 তাঁরাই সবসময় লোকদের জন্য বিচারক ভূমিকা অনুশীলন করুন: বড় বড় সমস্যা হলে তা তাঁরা তোমারই কাছে উপস্থাপন করুন, কিন্তু হীনতর সমস্যাগুলো তাঁরাই মিটিয়ে দিন; তোমার ভার লঘুতর হোক, আর তাঁরা তোমার সঙ্গে সেই ভার বহন করুন।
23 তুমি এভাবে করলে ও পরমেশ্বর তেমন আজ্ঞা তোমাকে দিলে, তবে তুমি সহ্য করতে পারবে, এবং এই সকল লোকেও সন্তুষ্ট মনে ঘরে ফিরে যাবে।'
24 মোশী তাঁর শ্বশুরের পরামর্শ মেনে নিলেন; তিনি যা কিছু বলেছিলেন, সেইমত কাজ করলেন।
25 তাই মোশী গোটা ইস্রায়েলের মধ্য থেকে কার্যক্ষম মানুষ বেছে নিয়ে লোকদের উপরে তাদের সহস্রপতি, শতপতি, পঞ্চাশপতি ও দশপতি করে নিযুক্ত করলেন।
26 তাঁরা সবসময় লোকদের জন্য বিচারক ভূমিকা অনুশীলন করতেন : কঠিন সমস্যাগুলো মোশীর কাছে উপস্থাপন করতেন, কিন্তু হীনতর সমস্যাগুলোর বিচার নিজেরাই করতেন।
27 পরে মোশী তাঁর শ্বশুরকে বিদায় দিলেন, আর তিনি নিজের দেশে ফিরে গেলেন।