Index

আদিপুস্তক - Chapter 9

1 পরমেশ্বর নোয়াকে ও তাঁর ছেলেদের এই বলে আশীর্বাদ করলেন, 'ফলবান হও, বংশবৃদ্ধি কর, পৃথিবী ভরিয়ে তোল।
2 পৃথিবীর সকল জন্তু, আকাশের সকল পাখি, স্থলের সমস্ত প্রাণী ও সমুদ্রের সমস্ত মাছ তোমাদের সামনে ভীত ও সন্ত্রাসিত হোক; এসব কিছু তোমাদের হাতে সমৰ্পিত !
3 যত প্রাণী চরে বেড়ায়, তা তোমাদের জন্য হবে খাদ্য; সবুজ উদ্ভিদের মত সমস্ত কিছুও আমি তোমাদের দিচ্ছি।
4 কিন্তু তোমরা প্রাণের সঙ্গে মাংস, অর্থাৎ রক্তসমেত মাংস খাবে না।
5 এমনকি তোমাদের কাছ থেকে আমি তোমাদের রক্তের, অর্থাৎ তোমাদের প্রাণের হিসাব আদায় করব; প্রতিটি পশুর কাছ থেকেও তারই হিসাব আদায় করব; মানুষের কাছ থেকেও মানুষের প্রাণের হিসাব, তার ভাই মানুষেরই প্রাণের হিসাব আদায় করব।
6 যে কেউ মানুষের রক্ত ঝরাবে,
মানুষ দ্বারাই তার রক্ত ঝরানো হবে ;
কেননা পরমেশ্বরের প্রতিমূর্তিতেই তিনি মানুষকে নির্মাণ করেছেন।
7 তোমরা ফলবান হও, বংশবৃদ্ধি কর,
পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়
পৃথিবী বশীভূত কর।'
8 পরমেশ্বর নোয়াকে ও তাঁর পাশে তাঁর যে ছেলেরা ছিলেন, তাঁদের সকলকে বললেন,
9 আমার পক্ষ থেকে, দেখ, তোমাদের ও তোমাদের ভাবী বংশের সঙ্গে,
10 তোমাদের সঙ্গে যত প্রাণী রয়েছে – যত পাখি, গবাদি পশু ও বন্যজন্তু তোমাদের সঙ্গে রয়েছে, পৃথিবীর যত প্রাণী জাহাজ থেকে বের হয়েছে—তাদের সকলের সঙ্গে আমি আমার সন্ধি স্থাপন করছি।
11 তোমাদের সঙ্গে আমার সন্ধি আমি স্থিতমূল রাখব : জলপ্লাবন দ্বারা সমস্ত প্রাণীকে আর কখনও উচ্ছেদ করা হবে না, পৃথিবীর বিনাশের জন্য জলপ্লাবন আর কখনও দেখা দেবে না।”
12 পরমেশ্বর আরও বললেন, 'এই হবে সেই সন্ধির চিহ্ন, যে সন্ধি আমি নিজের মধ্যে এবং তোমাদের ও তোমাদের সঙ্গী সমস্ত প্রাণীর মধ্যে সকল ভাবীযুগের জন্য স্থাপন করছি
13 আমি মেঘের মধ্যে আমার নিজের ধনু স্থাপন করছি, সেটিই হবে আমার মধ্যে ও পৃথিবীর মধ্যে আমার সন্ধির চিহ্ন।
14 যখন আমি পৃথিবীর ঊর্ধ্বে মেঘ জমিয়ে রাখব, ও মেঘের মধ্যে সেই ধনু দেখা দেবে,
15 তখন আমার মধ্যে এবং তোমাদের ও মর্ত-প্রাণীকুলের মধ্যে আমার যে সন্ধি আছে, তা আমি স্মরণ করব, এবং জলরাশি সকল প্রাণীর বিনাশের জন্য আর কখনও জলপ্লাবনের কারণ হবে না।
16 ধনু মেঘের মধ্যে থাকবে আর আমি তার দিকে চেয়ে দেখব, তখন যত মর্ত-প্রাণী পৃথিবীতে আছে, তাদের মধ্যে ও পরমেশ্বরের মধ্যে চিরস্থায়ী যে সন্ধি, তা আমি স্মরণ করব।'
17 পরমেশ্বর নোয়াকে বললেন, 'এই হবে সেই সন্ধির চিহ্ন, যে সন্ধি আমি আমার মধ্যে ও পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর মধ্যে স্থাপন করেছি।'
18 নোয়ার যে ছেলেরা জাহাজ থেকে বেরিয়ে গেছিলেন, তাঁরা ছিলেন শেম, হাম ও যাফেথ ; সেই হাম হলেন কানানের পিতা।
19 এই তিনজন হলেন নোয়ার ছেলে ; এঁদেরই বংশ সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল।
20 সেই নোয়াই হলেন প্রথম কৃষক, বস্তুত তিনি একটা আঙুরখেত করতে শুরু করলেন।
21 আঙুররস পান করে তিনি মাতাল হলেন, এবং বস্ত্রহীন অবস্থায় তাঁবুর মধ্যে শুয়ে পড়লেন।
22 তখন কানানের পিতা হাম নিজের পিতার উলঙ্গতা দেখে আপন দুই ভাইকে কথাটা বললেন ; তাঁরা বাইরে ছিলেন।
23 শেম ও যাথে একটা কাপড় তুলে নিয়ে নিজেদের কাঁধে দিলেন, ও পিছু হেঁটে হেঁটে পিতার উলঙ্গতা ঢেকে দিলেন; তাঁদের মুখ পিছন দিকে ফেরানো থাকায় তাঁরা পিতার উলঙ্গতা দেখলেন না।
24 যখন নোয়া আঙুররসজনিত ঘুম থেকে জাগলেন, তখন নিজের প্রতি কনিষ্ঠ পুত্রের ব্যবহার জানতে পারলেন ;
25 তিনি বললেন,
“কানান অভিশপ্ত হোক,
সে নিজের ভাইদের দাসানুদাস হবে।
26 তিনি আরও বললেন,
ধন্য প্রভু, শেমের পরমেশ্বর!
কানান তার দাস হোক !
27 পরমেশ্বর যাফেথকে বিস্তৃত করুন ;
শেমের তাঁবুতে বাস করুন,
আর কানান তার দাস হোক!'
28 জলপ্লাবনের পরে নোয়া আরও তিনশ' পঞ্চাশ বছর জীবনযাপন করলেন।
29 সবসমেত নোয়ার বয়স হল ন'শো পঞ্চাশ বছর ; পরে তাঁর মৃত্যু হল।