1 পরে প্রভু মায়ের গুরু বুঞ্জে তাঁকে দেখা দিলেন; তিনি দিনের সবচেয়ে গরম সময়ে তাঁবুর প্রবেশদ্বারে বসে ছিলেন।
2 চোখ তুলে তিনি দেখতে পেলেন, কারা তিনজন তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। দেখামাত্র তিনি স্বাগত জানাবার জন্য তাঁবুর প্রবেশদ্বার থেকে তাঁদের কাছে ছুটে এগিয়ে গিয়ে মাটিতে প্রণত হলেন,
3 বললেন, 'প্রভু আমার, যদি আপনার দৃষ্টিতে অনুগ্রহের পাত্র হয়ে থাকি, আপনার এই দাসের কাছে কিছুক্ষণ না থেমে এগিয়ে যাবেন না।
4 আমি এখন কিছুটা জল আনতে বলি, আপনারা পা ধুয়ে নিয়ে এই গাছের তলায় বিশ্রাম নিন;
5 আমি কিছুটা খাবার নিয়ে আসি, আপনারা পথে এগিয়ে যাবার আগে আপনাদের প্রাণ জুড়িয়ে যান, এই কারণেই তো আপনারা আপনাদের এই দাসের এই পথ দিয়ে চলেছেন। তাঁরা বললেন, 'আচ্ছা, যা বলেছ, তাই কর।'
6 তাই আব্রাহাম তাড়াতাড়ি তাঁবুতে সারার কাছে গিয়ে বললেন, 'শীঘ্রই তিন ধামা সেরা ময়দা মেখে পিঠা বানাও।'
7 তাঁর গবাদি পশু যেখানে ছিল, সেখানে তিনি নিজেই ছুটে গিয়ে উত্তম নধর বাছুর বেছে এনে তা চাকরকে দিলেন, আর সে সঙ্গে সঙ্গে তা প্রস্তুত করতে লাগল।
8 তিনি তখন দই, দুধ আর সেই রান্না করা বাছুরের মাংস এনে তাঁদের সামনে সাজিয়ে দিলেন। এভাবে তিনি তাঁদের কাছে গাছের তলায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তাঁরা খাওয়া-দাওয়া করলেন।
9 তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার স্ত্রী সারা কোথায়?” তিনি উত্তরে বললেন, “ওই যে, সে ওখানে, তাঁবুর ভিতরেই, আছে।
10 তখন তাঁর অতিথি একজন বললেন, 'এক বছর পরে এই সময়ে আমি তোমার কাছে আবার আসবই আসব; তখন তোমার স্ত্রী সারার একটি পুত্রসন্তান হবে। এর মধ্যে, তাঁবুর প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে, সারা শুনছিলেন ; তিনি তো সেই ব্যক্তির পিছনেই ছিলেন।
11 সেসময় আব্রাহাম ও সারা বৃদ্ধ ছিলেন; দু'জনেরই যথেষ্ট বয়স হয়েছিল; সারার মাসিকও তখন আর হত না।
12 তাই সারা মনে মনে হেসে বললেন, 'আমার এই জীর্ণ অবস্থায় আমার কি আর তেমন সুখ হবে? আমার প্রভুও তো বৃদ্ধ !”
13 প্রভু আব্রাহামকে বললেন, 'সারা কেন হাসল? কেন বলল, “এই বৃদ্ধ বয়সে আমি কি সত্যি মা হব?”
14 প্রভুর পক্ষে কি অসাধ্য কিছু আছে? নির্ধারিত সময়ে এই একই দিনে আমি আবার আসব, আর তখন সারার একটি পুত্রসন্তান হবে।”
15 সারা ব্যাপারটা অস্বীকার করলেন, বললেন, “কৈ, আমি তো হাসিনি!' তিনি তো ভয় পেয়েছিলেন; কিন্তু তবু তিনি বললেন, 'হ্যাঁ, তুমি হেসেইছিলে বটে!'
16 সেই ব্যক্তিরা সেখান থেকে উঠে সদোমের দিকে রওনা হলেন; আব্রাহাম তাঁদের কিছুটা এগিয়ে দেবার জন্য তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে চললেন।
17 প্রভু বলছিলেন, আমি যা করতে যাচ্ছি, তা কি আব্রাহামের কাছে গোপন রাখব?
18 আব্রাহামেরই তো মহান ও বলবান এক জাতি হওয়ার কথা, আব্রাহামেই তো পৃথিবীর সমস্ত জাতি আশিসপ্রাপ্ত হওয়ার কথা !
19 কেননা আমি তাকেই বেছে নিয়েছি সে যেন তার সন্তানদের ও ভাবী বংশধরদের ধর্মময়তা ও ন্যায় পালন ক'রে প্রভুর পথে যেরে চলতে আজ্ঞা করে, এর ফলে প্রভু আব্রাহামকে যে কথা দিয়েছেন, তা যেন সফল করেন।'
20 তখন প্রভু বললেন, 'সদোম ও গমোরার বিরুদ্ধে মানুষের চিৎকার অধিক তীব্র হয়ে উঠেছে, তাদের পাপও এত ভারী হয়ে উঠেছে যে,
21 আমি নিজে নিচে গিয়ে দেখব, আমার কানে যে চিৎকার এল, সেই অনুসারে তারা সত্যিই এমন অধর্ম করেছে কিনা। হ্যাঁ, ব্যাপারটা আমি জানতে চাই!'
22 সেই তিনজন সেখান থেকে রওনা হয়ে সদোমের দিকে গেলেন, কিন্তু আব্রাহাম তখনও প্রভুর সাক্ষাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
23 আব্রাহাম এগিয়ে এসে বললেন, 'তুমি কি সত্যি দুর্জনের সঙ্গে ধার্মিককেও বিলুপ্ত করবে?
24 শহরটার মধ্যে হয় তো পঞ্চাশজন ধার্মিক মানুষ আছে; তবে তুমি কি সত্যিই জায়গাটা বিলুপ্ত করবে? ওখানকার ওই পঞ্চাশজন ধার্মিকের খাতিরে তুমি কি বরং জায়গাটাকে রেহাই দেবে না?
25 দুর্জনের সঙ্গে ধার্মিককেও বিনাশ করা, এমন কাজ করার চিন্তাটুকুও তোমাকে করতে নেই; ধার্মিককেও যে দুর্জনের সমান প্রতিফল পেতে হবে, তা দূরের কথা! সারা পৃথিবীর বিচারকর্তা কি ন্যায়বিচার করবেন না?'
26 প্রভু বললেন, 'আমি যদি সদোমের মধ্যে পঞ্চাশজন ধার্মিককে পাই, তবে তাদের খাতিরে সেই সমস্ত জায়গাটাকে রেহাই দেব।'
27 আব্রাহাম বলে চললেন, 'দেখ, ধুলো ও ছাইমাত্র যে আমি, আমি সাহস করে আমার প্রভুর সঙ্গে কথা বলব
28 হয় তো সেখানে পঞ্চাশজন ধার্মিকের জায়গায় পাঁচজন কম হয়েছে; তাহলে এই পাঁচজন না থাকার ফলে তুমি কি গোটা শহর বিনাশ করবে?” তিনি বললেন, 'না, সেই জায়গায় পঁয়তাল্লিশজনকে পেলে আমি তা বিনাশ করব না।”
29 তিনি তাঁকে আবার বললেন, হয় তো সেই জায়গায় চল্লিশজনকে পাওয়া যাবে।' তিনি বললেন, 'সেই চল্লিশজনের খাতিরে তা করব না।'
30 আবার তিনি বললেন, 'আমার প্রভু যেন বিরক্ত না হন, আমি তো আরও বলি; হয় তো সেখানে ত্রিশজনকে পাওয়া যাবে।' তিনি বললেন, 'সেখানে ত্রিশজনকে পেলে আমি তা করব না।
31 তিনি বললেন, 'দেখ, আমি সাহস করে আমার প্রভুর কাছে পুনরায় কথা বলি, হয় তো সেখানে কুড়িজনকে পাওয়া যাবে।' তিনি বললেন, 'সেই কুড়িজনের খাতিরে আমি তা বিনাশ করব না।
32 তিনি বললেন, “আমার প্রভু যেন ক্রুদ্ধ না হন, আমি কেবল আর একবার কথা বলি : হয় তো সেখানে দশজনকে পাওয়া যাবে।' তিনি বললেন, 'সেই দশজনের খাতিরে তা বিনাশ করব না।'
33 আর তখন, আব্রাহামের সঙ্গে তাঁর এই সমস্ত কথা শেষ করে প্রভু চলে গেলেন, এবং আব্রাহাম নিজের ঘরে ফিরে এলেন।