1 যাকোব জানতে পারলেন যে, লাবানের ছেলেরা একথা বলছিল, আমাদের পিতার যা কিছু ছিল, তা যাকোব কেড়ে নিয়েছে; আমাদের পিতার যা কিছু ছিল, তা নিয়েই তার এই সমস্ত ঐশ্বর্য হয়েছে।
2 যাকোব লাবানের মুখও লক্ষ করলেন; আর দেখ, তা তাঁর প্রতি আর আগেকার মত নয়।
3 প্রভু যাকোবকে বললেন, 'তোমার পিতৃপুরুষদের দেশে, তোমার মাতৃভূমিতে ফিরে যাও, আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে থাকব।
4 তাই লোক পাঠিয়ে যাকোব রাখেল ও লিয়াকে মাঠে তাঁর পশুপালদের কাছে ডাকিয়ে এনে তাঁদের বললেন,
5 আমি তোমাদের পিতার মুখ লক্ষ করে বুঝতে পেরেছি, তা আমার প্রতি আর আগেকার মত নয়, কিন্তু তবু আমার পিতার পরমেশ্বর আমার সঙ্গে থাকলেন।
6 তোমরা নিজেরা তো জান, আমি সমস্ত শক্তি দিয়েই তোমাদের পিতার জন্য কাজ করেছি,
7 অথচ তোমাদের পিতা আমাকে প্রবঞ্চনা করে দশবার আমার মজুরি পাল্টিয়ে দিয়েছেন; কিন্তু পরমেশ্বর তাঁকে আমার ক্ষতি করতে দেননি।
8 হ্যাঁ, তিনি যদি বলতেন, “বিন্দুচিহ্নিত পশুগুলোই হবে তোমার মজুরি,” সমস্ত পাল বিন্দুচিহ্নিত বাচ্চা দিত; যদি বলতেন, “রেখাঙ্কিত পশুগুলোই হবে তোমার মজুরি,” সমস্ত মেষিকা রেখাঙ্কিত বাচ্চা দিত।
9 এইভাবে পরমেশ্বর তোমাদের পিতার কাছ থেকে পশু নিয়ে তা আমাকে দিয়েছেন।
10 পশুদের গর্ভধারণ-কালে আমি একদিন স্বপ্নে চোখ তুলে চাইলাম, আর দেখ, পালের মধ্যে মাদী পশুদের উপরে যত মদ্দা পশু উঠছে, সবগুলিই রেখাঙ্কিত, বিন্দুচিহ্নিত ও চিত্রবিচিত্র।
11 পরমেশ্বরের দূত স্বপ্নে আমাকে বললেন, “যাকোব!” আমি উত্তরে বললাম, এই যে আমি!
12 তিনি বলে চললেন, “চোখ তুলে চাও, মাদী পশুদের উপরে যত মন্দা পশু উঠছে, সবগুলিই রেখাঙ্কিত, বিন্দুচিহ্নিত ও চিত্রবিচিত্র, কেননা লাবান তোমার প্রতি যা কিছু করে এসেছে, আমি তা সবই দেখলাম।
13 আমি সেই ঈশ্বর যাঁর জন্য তুমি বেথেলে একটা স্মৃতিস্তম্ভ তেল দিয়ে অভিষিক্ত করেছিলে, সেখানে আমার কাছে মানতও করেছিলে। এখন ওঠ, এই দেশ ছেড়ে নিজের জন্মভূমিতে ফিরে যাও।"
14 তখন রাখেল ও লিয়া উত্তরে তাঁকে বললেন, 'পিতার বাড়িতে আমাদের কি আর কিছু অংশ ও অধিকার আছে?
15 আমরা তাঁর কাছে কি বিদেশিনী বলে গণ্য নই? তিনি তো আমাদের বিক্রি করেছেন, আর আমাদের রুপো নিজেই ভোগ করেছেন!
16 পরমেশ্বর আমাদের পিতার কাছ থেকে যা কিছু ধন কেড়ে নিয়েছেন, তা সবই আমাদের ও আমাদের সন্তানদের। সুতরাং পরমেশ্বর তোমাকে যা কিছু বলেছেন, তুমি তা কর।'
17 তখন যাকোব উঠে, কানান দেশে নিজের পিতা ইসায়াকের কাছে ফিরে যাবার জন্য, নিজের সন্তানদের ও বধূদের উটের পিঠে চড়িয়ে
18 নিজের সঞ্চয় করা যত পশু ও ধন—পাদ্দান-আরামে যে পশু ও যে সম্পত্তি সঞ্চয় করেছিলেন— তা সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন।
19 সেসময়ে লাবান মেষলোম কাটতে গিয়েছিলেন ; তখন রাখেল, তাঁর পিতার যে ঠাকুরগুলো ছিল, সেগুলো কেড়ে নিলেন।
20 তাছাড়া যাকোব নিজের পলায়নের কোন সংবাদ না দিয়ে আরামীয় লাবানের মনোযোগ এড়ালেন
21 ফলে তিনি নিজের সমস্ত সম্পত্তি নিয়ে পালাতে পারলেন। তাই তিনি উঠে নদী পার হয়ে গিলেয়াদ পর্বতমালার দিকে রওনা হলেন।
22 তিন দিন পরে লাবানকে সংবাদ দেওয়া হল যে, যাকোব পালিয়ে গেছেন :
23 নিজের ভাইদের সঙ্গে নিয়ে তিনি সাত দিন ধরে তাঁর পিছনে ধাওয়া করলেন এবং গিলেয়াদ পর্বতমালায় তাঁর নাগাল পেলেন।
24 কিন্তু পরমেশ্বর রাত্রিকালীন স্বপ্নে আরামীয় লাবানের কাছে এসে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বললেন, ‘সাবধান, যাকোবকে তুমি মঙ্গলকর কি অমঙ্গলকর কিছুই বলবে না!'
25 তাই লাবান যখন যাকোবের কাছে এসে পৌঁছলেন, তখন যাকোব পাহাড়ের উপরে তাঁবু গেড়েছিলেন; তাই লাবান নিজ ভাইদের সঙ্গে গিলেয়াদ পর্বতমালার উপরে তাঁবু গাড়লেন।
26 লাবান যাকোবকে বললেন, “তুমি কেমন ব্যবহার করলে? আমার মনোযোগ এড়িয়ে তুমি তো আমার মেয়েদের যুদ্ধ-বন্দিদের মতই নিয়ে এলে!
27 আমাকে বঞ্চনা করে তুমি কেন গোপনে পালিয়ে এলে ও আমাকে কোন সংবাদ দিলে না? দিলে আমি উৎসব ও সঙ্গীতে এবং খঞ্জনি ও বীণার সুরে সুরেই তোমাকে বিদায় দিতাম।
28 আমার আপন ছেলেমেয়েদেরও তুমি আমাকে চুম্বন করতে দিলে না! সত্যি তুমি নির্বোধের মতই ব্যবহার করেছ।
29 তোমার অমঙ্গল করতে আমার হাতের সামর্থ্য আছে, কিন্তু গত রাতে তোমাদের পৈতৃক ঈশ্বর আমাকে বললেন, “সাবধান, যাকোবকে তুমি মঙ্গলকর কি অমঙ্গলকর কিছুই বলবে না!”
30 এখন পিতৃগৃহে যাবার আকাঙ্ক্ষায় মায়া বোধ করায় তুমি রওনা হলে বটে, কিন্তু আমার দেবতাদের কেন চুরি করলে?”
31 উত্তরে যাকোব লাবানকে বললেন, ‘আমার ভয় হয়েছিল; ভাবছিলাম, কি জানি আপনার মেয়েদের আপনি জোর করেই আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবেন।
32 যাই হোক, এখন আপনি যার কাছে আপনার দেবতাদের পাবেন, সে বাঁচবে না। আমাদের ভাইদের সাক্ষাতে খুঁজে আমার কাছে আপনারই যা কিছু থাকতে পারে, তা নিন।' আসলে যাকোব জানতেন না যে, রাখেল-ই সেগুলো চুরি করেছিলেন।
33 তখন লাবান যাকোবের তাঁবুতে এবং পরে লিয়ার তাঁবুতে ও দুই দাসীর তাঁবুতে ঢুকলেন, কিন্তু কিছুই পেলেন না। তারপর লিয়ার তাঁবু থেকে তিনি রাখেলের তাঁবুতে ঢুকলেন।
34 রাখেল সেই ঠাকুরগুলোকে নিয়ে উটের একটা গদির ভিতরে রেখে সেগুলোর উপরে বসে ছিলেন; লাবান তাঁর তাঁবুর সর্বত্র খোঁজাখুঁজি করলেও সেগুলোকে পেলেন না।
35 রাখেল সেই ঠাকুরগুলোকে নিয়ে উটের একটা গদির ভিতরে রেখে সেগুলোর উপরে বসে ছিলেন; লাবান তাঁর তাঁবুর সর্বত্র খোঁজাখুঁজি করলেও সেগুলোকে পেলেন না।
36 তখন যাকোব ক্রুদ্ধ হয়ে লাবানের সঙ্গে ঝগড়া করতে লাগলেন ; তাঁকে বললেন, ‘আমার অপরাধ কী, আমার পাপও কী যে, জ্বলে উঠে আপনি আমার পিছু পিছু ধাওয়া করেছেন?
37 আমার সব দ্রব্য-সামগ্রী খোঁজাখুঁজি করে আপনি এখন আপনার বাড়ির কোন্ জিনিস পেলেন? আমার ও আপনার ভাইদের সামনে তা রাখুন, এঁরাই দু'পক্ষের বিচার করুন।
38 এই কুড়ি বছর আমি আপনার কাছে কাটিয়েছি; আপনার মেষীদের বা ছাগীদের গর্ভপাত হয়নি, আর আমি আপনার পালের ভেড়া কখনও খাইনি।
39 বন্য পশুর মুখে বিদীর্ণ কোন মেষও আপনার কাছে কখনও আনিনি : এর ক্ষতি নিজেই বহন করতাম, এবং দিনে বা রাতে যা চুরি হত, তার বিনিময় আপনি আমার কাছ থেকেই নিতেন।
40 আমার এমন দশা ছিল যে, দিনমানে উত্তাপ ও রাত্রিবেলায় শীত আমাকে গ্রাস করত; ঘুম আমার চোখ থেকে দূরে পালিয়ে যেত।
41 এই কুড়ি বছর আমি আপনার বাড়িতে ছিলাম ; আপনার দুই মেয়ের জন্য চৌদ্দ বছর, ও আপনার পশুপালের জন্য ছ'বছর কাজ করেছি, আর আপনি এর মধ্যে দশ বারই আমার মজুরি পাল্টিয়েছেন।
42 আমার পিতার পরমেশ্বর, আব্রাহামের পরমেশ্বর ও ইসায়াকের সেই ভীতিপ্রদ যদি আমার পক্ষে না থাকতেন, তবে নিশ্চয়ই আপনি এখন আমাকে খালি হাতে বিদায় দিতেন! কিন্তু পরমেশ্বর আমার মনঃপীড়া ও আমার হাতের শ্রম দেখেছেন, এজন্য গত রাতে বিচারের নিষ্পত্তি করলেন।
43 তখন লাবান যাকোবকে উত্তরে বললেন, 'এই মেয়েরা আমারই মেয়ে, এই ছেলেরা আমারই ছেলে, আর এই পশুপাল আমারই পশুপাল ; তুমি যা কিছু দেখছ, এ সবই আমার। এখন আমার এই মেয়েদের এবং যাদের এরা প্রসব করেছে, তাদের সেই ছেলেদের আমি কি করব?
44 এসো, আমি ও তুমি নিজেদের মধ্যে একটা সন্ধি স্থির করি, আমার ও তোমার মধ্যে তা সাক্ষীরূপে দাঁড়াক।'
45 তখন যাকোব একটা পাথর নিয়ে স্তম্ভরূপে দাঁড় করালেন,
46 যাকোব তাঁর জ্ঞাতিভাইদের বললেন, ‘আপনারাও পাথর কুড়িয়ে নিন। তাই তাঁরা পাথর জড় করে এক শিলাস্তূপ করলেন, এবং সেই জায়গায় ওই স্তূপের কাছে খাওয়া-দাওয়া করলেন।
47 লাবান তার নাম যেগার-সাহাদুথা রাখলেন, অপরদিকে যাকোব তার নাম রাখলেন গাল্-এদ।
48 'লাবান বললেন, 'এই স্তূপ আজ তোমার ও আমার মধ্যে সাক্ষী হোক।' এজন্য তার নাম গাল্-এদ
49 ও মিস্পাও রাখা হল, কেননা তিনি বললেন, 'আমরা একে অপরের কাছে অদৃশ্য থাকলেও প্রভুই আমার ও তোমার মধ্যে প্রহরী থাকবেন।
50 তুমি যদি আমার মেয়েদের প্রতি দুর্ব্যবহার কর, আর যদি আমার এই মেয়েদের ছাড়া অন্য স্ত্রীকে বিবাহ কর, তবে কোন মানুষ আমাদের মধ্যে থাকবে না বটে, কিন্তু স্বয়ং পরমেশ্বর আমার ও তোমার মধ্যে সাক্ষী হবেন।'
51 লাবান যাকোবকে আরও বললেন, 'এই স্তূপ দেখ, এই স্তম্ভও দেখ যা আমি আমার ও তোমার মধ্যে দাঁড় করালাম।
52 আমিও এই রাশি পার হয়ে তোমার দিকে যাব না, তুমিও এই রাশি আর এই স্তম্ভ পার হয়ে আমার দিকে আসবে না, অন্যথা অমঙ্গল ঘটবে— এর সাক্ষী এই রাশি, আর এর সাক্ষী এই স্তম্ভ।
53 আব্রাহামের পরমেশ্বর ও নাহোরের পরমেশ্বর তিনি তো ছিলেন তাঁদের পিতার পরমেশ্বর— আমাদের মধ্যে বিচার করবেন।' তখন যাকোব তাঁর পিতা ইসায়াকের সেই ভীতিপ্রদের দিব্যি দিয়ে শপথ করলেন।
54 যাকোব সেই পর্বতে বলি উৎসর্গ করে খাওয়া-দাওয়া করতে তাঁর জ্ঞাতিভাইদের নিমন্ত্রণ করলেন; আর তাঁরা খাওয়া-দাওয়া করে সেই পর্বতে রাত কাটালেন।