1 প্রভু পরমেশ্বর যে সমস্ত বন্যজন্তু নির্মাণ করেছিলেন, তাদের মধ্যে সাপই ছিল সবচেয়ে ধূর্ত। সে সেই নারীকে বলল, 'পরমেশ্বর নাকি তোমাদের বলেছেন, তোমরা এই বাগানের কোন গাছের ফল খাবে না।
2 নারী সাপকে উত্তরে বলল, 'আমরা বাগানের গাছগুলোর ফল খেতে পারি ;
3 কিন্তু বাগানের মাঝখানে যে গাছ রয়েছে, তার ফল সম্বন্ধে পরমেশ্বর বলেছেন, তোমরা তা খাবে না, স্পর্শও করবে না, করলে তোমরা মরবে।'
4 তখন সাপ নারীকে বলল, 'তোমরা মোটেই মরবে না!
5 এমনকি পরমেশ্বর জানেন, যেদিন তোমরা তা খাবে, সেদিন তোমাদের চোখ খুলে যাবে আর তোমরা পরমেশ্বরের মত হয়ে মঙ্গল-অমঙ্গল জ্ঞান লাভ করবে।”
6 নারী দেখল, গাছটির ফল খেতে ভাল, চোখেও আকর্ষণীয়, এবং জ্ঞানদায়ী গাছ বিধায় আকাঙ্ক্ষণীয়; তাই সে তার কয়েকটা ফল পেড়ে নিজে খেল, ও তার সঙ্গে উপস্থিত তার স্বামীকেও দিল; সেও খেল।
7 তখন তাদের দু'জনেরই চোখ খুলে গেল, তারা এও বুঝতে পারল যে, তারা উলঙ্গ; তাই ডুমুরগাছের কয়েকটা পাতা সেলাই করে কোমরের জন্য এক প্রকার আবরণ তৈরি করল।
8 পরে মানুষ ও তার স্ত্রী প্রভু পরমেশ্বরের চলাচলের সাড়া পেল, তিনি দিনের স্নিগ্ধ বাতাসে বাগানের মধ্যে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন; তখন প্রভু পরমেশ্বরের সামনে থেকে তারা বাগানের গাছপালার মধ্যে নিজেদের লুকাল।
9 কিন্তু প্রভু পরমেশ্বর মানুষকে ডাকলেন; তাকে বললেন, 'তুমি কোথায় আছ?'
10 সে উত্তরে বলল, বাগানে তোমার সাড়া পেয়ে আমি ভয় পেলাম, কারণ আমি উলঙ্গ; তাই নিজেকে লুকিয়েছি।'
11 তিনি বললেন, “তুমি যে উলঙ্গ, একথা কে তোমাকে বলল? যে গাছের ফল খেতে তোমাকে নিষেধ করেছিলাম, তুমি কি তার ফল খেয়েছ?"
12 মানুষ উত্তরে বলল, 'আমার সঙ্গিনী করে যাকে তুমি আমাকে দিয়েছ, সেই নারীই আমাকে সেই গাছের ফল দিয়েছে, আর আমি তা খেয়েছি।
13 প্রভু পরমেশ্বর নারীকে বললেন, “তুমি এ কী করলে?” নারী উত্তরে বলল, ‘সাপ-ই আমাকে ভুলিয়েছে, আর আমি খেয়েছি।'
14 তখন প্রভু পরমেশ্বর সাপকে বললেন, 'এই কাজ করেছ বিধায় অভিশপ্তই তুমি সমস্ত গবাদি পশু ও সমস্ত বন্যজন্তুর চেয়ে! তোমাকে বুকেই হাঁটতে হবে, ও তোমার জীবনের সমস্ত দিন ধরে ধুলো খেতে হবে।
15 আমি তোমার ও নারীর মধ্যে, তোমার বংশ ও তার বংশের মধ্যে পরস্পর শত্রুতা জাগিয়ে তুলব; তার বংশ তোমার মাথা পিষে মারবে, আর তুমি তার পায়ের গোড়ালিতে ছোবল মারবে।”
16 নারীকে তিনি বললেন, 'আমি তোমার প্রসবযন্ত্রণা তীব্র করে তুলব, যন্ত্রণার মধ্যেই তুমি সন্তান প্রসব করবে; তোমার আকাঙ্ক্ষা হবে স্বামীর প্রতি, আর সে তোমার উপর কর্তৃত্ব চালাবে।
17 আদমকে তিনি বললেন, 'যে গাছের ফল সম্বন্ধে আমি তোমাকে বলেছিলাম, তুমি তা খাবে না, তোমার স্ত্রীর কথা শুনে তুমি তার ফল খেয়েছ বিধায় তোমার কারণে ভূমি অভিশপ্ত হোক! তোমার জীবনের সমস্ত দিন ধরে তুমি ক্লেশেই তা ভোগ করবে।
18 এই ভূমি তোমার জন্য কাঁটাগাছ ও শেয়ালকাঁটা ফলাবে, মাঠের উদ্ভিদ হবে তোমার খাদ্য।
19 তুমি মাথার ঘাম পায়ে ফেলেই আহার করবে-যতদিন না তুমি মাটিতে ফিরে যাও, যেহেতু মাটি থেকেই তোমাকে তুলে নেওয়া হয়েছে : কেননা তুমি ধুলো, আর ধুলোতেই আবার ফিরে যাবে।'
20 সেই মানুষ নিজের স্ত্রীর নাম হবা রাখল, কেননা সে সকল জীবিতের জননী হল।
21 কিন্তু প্রভু পরমেশ্বর মানুষ ও তার স্ত্রীর জন্য চামড়ার পোশাক প্রস্তুত করে তাদের পরালেন।
22 তখন প্রভু পরমেশ্বর বললেন, 'দেখ, মঙ্গল-অমঙ্গল জ্ঞান সম্বন্ধে মানুষ আমাদের একজনের মত হয়ে উঠল; এখন কিন্তু সে যেন হাত বাড়িয়ে জীবনবৃক্ষের ফলও পেড়ে না খায় ও চিরজীবী হয়!'
23 তাই প্রভু পরমেশ্বর তাকে এদেন বাগান থেকে বের করে দিলেন, যেন সে সেই মাটি চাষ করে যা থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল।
24 তিনি মানুষকে তাড়িয়ে দিলেন, এবং জীবনবৃক্ষের দিকের পথ রক্ষা করার জন্য এদেন বাগানের পুবদিকে খেরুবদের মোতায়েন করলেন, সেই অগ্নিময় খড়াও রাখলেন, চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে যার ঝলক।