1 সেই দু'জন স্বর্গদূত যখন সন্ধ্যাবেলায় সদোমে এসে পৌঁছলেন, সেসময়ে লোট সদোম-নগরদ্বারে বসে ছিলেন। তাঁদের দেখামাত্র তিনি উঠে তাঁদের স্বাগত জানাবার জন্য এগিয়ে গেলেন, ও ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করলেন;
2 বললেন, ‘প্রভুগণ আমার, আপনাদের অনুরোধ করি, আপনাদের এই দাসের গৃহে পদধূলি দিন; এইখানে রাত্রিযাপন করুন ও পা ধুয়ে নিন। পরে, প্রত্যূষে উঠে, পথে এগিয়ে যাবেন।' তাঁরা বললেন, 'না, আমরা রাস্তায় থেকে রাত্রিযাপন করব।'
3 কিন্তু লোট এমন সাধাসাধি করলেন যে, তাঁরা তাঁর সঙ্গে গেলেন ও তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন। তিনি তাঁদের জন্য একটা ভোজের আয়োজন করলেন, খামিরবিহীন রুটি পাক করালেন, আর তাঁরা ভোজে বসলেন।
4 তাঁরা শুতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় শহরের পুরুষলোকেরা অর্থাৎ সদোমবাসীরা যুবা-বৃদ্ধ সকলেই এসে ভিড় করে তাঁর ঘরের চারদিকে জমতে লাগল
5 লোটকে ডেকে তারা তাঁকে বলল, ‘আজ রাতে যে দু'জন তোমার ঘরে এল, তারা কোথায়? তাদের বাইরে পাঠাও, আমাদের কাছেই আন, যেন তাদের সঙ্গে মিলন করতে পারি।'
6 লোট ঘরের দরজার বাইরে তাদের কাছে গিয়ে নিজের পিছনে কবাট বন্ধ করে বললেন,
7 ভাইয়েরা, অনুরোধ করি, এমন কুব্যবহার করো না!
8 দেখ, আমার দু'টো মেয়ে আছে কোন পুরুষের সঙ্গে যাদের এখনও মিলন হয়নি; আমি তোমাদের কাছে এদেরই এনে দিই; তাদের নিয়ে তোমরা যা খুশি কর, কিন্তু এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কিছুই করো না, কেননা তাঁরা আমার ঘরের ছায়ায়ই আশ্রয় নিয়েছেন।'
9 কিন্তু তারা উত্তরে বলল, ‘সরে যাও!” আরও বলল, 'এ প্রবাসী হয়ে এখানে এল, আর এখন নাকি বিচারকর্তা হতে চায়! এবার তাদের চেয়ে তোমার প্রতি আরও খারাপ ব্যবহার করব।' একথা বলে তারা লোটের গায়ে ভারী ধাক্কা দিয়ে কবাট ভাঙবার জন্য এগিয়ে গেল।
10 তখন সেই দু'জন ভিতর থেকে হাত বাড়িয়ে লোটকে ঘরের মধ্যে নিজেদের কাছে টেনে নিয়ে কবাট বন্ধ করে দিলেন,
11 এবং ঘরের দরজার কাছে যত লোক ছিল, ছোট-বড় সকলকেই এমন তীব্র আলোক-ঝলকে বাঁধিয়ে দিলেন যে, তারা দরজাটা আর খুঁজে পেতে পারছিল না।
12 তখন সেই ব্যক্তিরা লোটকে বললেন, 'এখানে তোমার আর কে কে আছে ? তোমার জামাই ও মেয়ে যতজন এই শহরে আছে, তাদের সকলকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যাও,
13 কেননা আমরা এই জায়গাটাকে উচ্ছেদ করতে যাচ্ছি : প্রভুর সামনে এদের বিরুদ্ধে যে চিৎকার উঠেছে, তা এতই তীব্র হয়েছে যে, প্রভু আমাদের এই জায়গাটা উচ্ছেদ করতে পাঠিয়েছেন।
14 তাই লোট বাইরে পিয়ে, যারা তাঁর মেয়েদের বিবাহ করার কথা, তাঁর সেই জামাইদের বললেন, 'ওঠ, এই জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে যাও, কেননা প্রভু এই শহর উচ্ছেদ করতে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর জামাইদের মনে হচ্ছিল, তিনি উপহাস করছেন।
15 ভোরের আলো ফুটতেই সেই স্বর্গদূতেরা লোটকে তাড়া দিয়ে বলতে লাগলেন, “ওঠ, তোমার স্ত্রীকে আর এই যে মেয়ে দু'টো এখানে আছে, এদের নিয়ে যাও, পাছে শহরের শাস্তিতে তোমাদেরও বিনাশ হয়।
16 তিনি তখনও দেরি করছিলেন বিধায় সেই দু'জন তাঁর প্রতি প্রভুর মহাকরুণার দোহাই দিয়ে তাঁর হাত ও তাঁর স্ত্রীর ও মেয়ে দু'টোর হাত ধরে তাঁদের বাইরে এনে শহরের বাইরে পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে গেলেন।
17 এভাবে তাঁদের বের করে নিয়ে তাঁদের একজন লোটকে বললেন, 'প্রাণ বাঁচাও, পালিয়ে যাও। পিছনের দিকে তাকিয়ো না; এই সমভূমির কোন জায়গায়ও দাঁড়িয়ো না; পর্বতেই পালিয়ে যাও, পাছে তোমার বিনাশ হয়।'
18 কিন্তু লোট তাঁকে বললেন, “না না, প্রভু আমার !
19 দেখুন, আপনার দাস আপনার অনুগ্রহের পাত্র হয়েছে; আমার প্রাণ রক্ষা করায় আপনি আমার প্রতি আপনার মহাকৃপা দেখিয়েছেন; কিন্তু আমি পালিয়ে পর্বতে পৌঁছতে পারব না, কেননা তার আগেই সেই সর্বনাশ আমাকে ধরে ফেলবে, তখন আমিও মরব।
20 ওই যে দেখুন, ওই শহর যথেষ্টই কাছাকাছি আমি যেন ওখানে পালাতে পারি, তাছাড়া শহরটা ছোট; আমাকে বরং সেখানেই যেতে দিন — আসলে জায়গাটা খুবই ছোট, তাই না?—তাহলে আমার প্রাণ বাঁচবে।
21 তিনি বললেন, “আচ্ছা, আমি এই ব্যাপারেও তোমার প্রতি অনুগ্রহ দেখাব : ওই যে শহরের কথা তুমি বলছ, তা উৎপাটন করব না।
22 শীঘ্রই ওখানে পালাও, কেননা তুমি ওখানে না পৌঁছা পর্যন্ত আমি কিছুই করতে পারি না।' এজন্যই সেই জায়গার নাম জোয়ার হল।
23 লোট যখন জোয়ারে এসে প্রবেশ করছেন, তখন দেশের উপরে সূর্য উঠছে;
24 এমন সময় প্রভু আকাশ থেকে, নিজেরই কাছ থেকে, সদোম ও গমোরার উপরে গন্ধক ও আগুন বর্ষণ করলেন।
25 তিনি ওই শহর দু'টোকে উৎপাটন করলেন, আর সেইসঙ্গে সমস্ত সমভূমি, শহরবাসী ও মাটির যত সবুজ বস্তু উৎপাটন করলেন।
26 তখন এমনটি ঘটল যে, লোটের স্ত্রী পিছনের দিকে তাকাল, আর তখনই সে একটা লবণস্তম্ভ হয়ে গেল।
27 পরদিন আব্রাহাম খুব সকালে উঠে, যেখানে প্রভুর সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, সেখানে গেলেন;
28 সিদোম ও গমোরার দিকে ও সেই সমভূমির সারা অঞ্চলের দিকে তাকিয়ে দেখলেন; দেখলেন, মাটি থেকে ধূম উঠছে, যেন কোন ভাটার ধূম !
29 তাই এমনটি হল যে, পরমেশ্বর যখন সেই সমভূমির সমস্ত শহর বিনাশ করলেন, তখন আব্রাহামকে স্মরণ করলেন, এবং লোট যে যে শহরে বাস করছিলেন, সেই শহরগুলির উৎপাটনের দিনে লোটকে তিনি সেই উৎপাটনের হাত থেকে উদ্ধার করলেন।
30 পরে লোট ও তাঁর মেয়ে দু'টো জোয়ার ছেড়ে পার্বত্য অঞ্চলে গিয়ে সেখানে বসতি করলেন, কেননা তিনি জোয়ারে বাস করতে ভয় করছিলেন; নিজের মেয়ে দু'টোর সঙ্গে তিনি একটা গুহাতে বাস করতে লাগলেন।
31 একদিন বড় মেয়েটি ছোটজনকে বলল, “বাবা বৃদ্ধ, এবং এই দেশে আর এমন কোন পুরুষলোক নেই যে জগৎসংসারের সাধারণ ব্যবহার অনুসারে আমাদের বিয়ে করবে ;
32 এসো, আমরা বাবাকে আঙুররস পান করিয়ে তাঁর সঙ্গে শুই, এভাবে বাবার মধ্য দিয়ে বংশ রক্ষা করব।'
33 সেই রাতে তারা তাদের পিতাকে আঙুররস পান করাল, পরে বড় মেয়েটি পিতার সঙ্গে শুতে গেল; কিন্তু সে যে কখন তাঁর সঙ্গে শুতে এল ও কখন উঠে গেল, তা তিনি কিছুই টের পেলেন না।
34 পরদিন বড়জন ছোটজনকে বলল, “গতরাতে আমিই বাবার সঙ্গে শুয়েছিলাম; এসো, আমরা আজ রাতেও বাবাকে আঙুররস পান করাই ; পরে তুমিই তাঁর সঙ্গে শুতে যাও, এভাবে বাবার মধ্য দিয়ে বংশ রক্ষা করব।'
35 তারা সেই রাতেও পিতাকে আঙুররস পান করাল ; পরে ছোটজন তাঁর সঙ্গে শুতে গেল; কিন্তু সে যে কখন তাঁর সঙ্গে শুতে এল ও কখন উঠে গেল, তা তিনি কিছুই টের পেলেন না।
36 এভাবে লোটের মেয়ে দু'টোই তাদের পিতার মধ্য দিয়ে গর্ভবতী হল।
37 বড়জন একটি পুত্রসন্তান প্রসব করে তার নাম মোয়াব রাখল সে বর্তমানকালের মোয়াবীয়দের আদিপিতা।
38 ছোটজনও একটা পুত্রসন্তান প্রসব করল, তার নাম বেন্ আম্মি রাখল : সে বর্তমানকালের আমোনীয়দের আদিপিতা।