1 তখন যোসেফ কাছে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের সামনে নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না; তিনি বলে উঠলেন, 'আমার সামনে থেকে সব লোককে বের করে দাও।' তাই যোসেফ যখন তাঁর ভাইদের কাছে নিজের পরিচয় দিলেন, তখন সেখানে কেউই ছিল না।
2 কিন্তু তিনি এত জোরেই কেঁদে উঠলেন যে, মিশরীয়েরা সকলেই তাঁর চিৎকার শুনতে পেল ও কথাটা ফারাওর প্রাসাদেও জানা হল।
3 যোসেফ তাঁর ভাইদের বললেন, 'আমি যোসেফ ; আমার পিতা কি এখনও বেঁচে আছেন?' কিন্তু তাঁর উপস্থিতির জন্য বিহ্বল হয়ে তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে কোন উত্তর দিতে পারছিলেন না।
4 তখন যোসেফ তাঁর ভাইদের বললেন, 'এসো, আমার কাছে কাছেই এসো!' তাঁরা কাছে গেলে তিনি বললেন, 'আমি যোসেফ, তোমাদের ভাই, যাকে তোমরা মিশরের জন্য বিক্রি করেছিলে।
5 কিন্তু তোমরা যে আমাকে এখানে বিক্রি করেছ, এর জন্য দুঃখ করো না, শোক করো না; কেননা তোমাদের প্রাণ বাঁচাবার জনাই পরমেশ্বর তোমাদের আগে আগে আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন।
6 কেননা এ দু'বছর হল যে দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে; আর আরও পাঁচ বছর ধরেই কোন চাষ বা ফসল হবে না।
7 পরমেশ্বর পৃথিবীতে তোমাদের বংশ রক্ষা করার জন্য ও মহা উদ্ধারের মধ্য দিয়ে তোমাদের বাঁচাবার জন্যই তোমাদের আগে আগে আমাকে পাঠিয়েছেন।
8 তাই তোমরাই যে আমাকে এখানে পাঠিয়েছ, এমন নয়, পরমেশ্বরই পাঠিয়েছেন, এবং আমাকে ফারাওর পিতারূপে, তাঁর সমস্ত বাড়ির প্রভু ও সারা মিশর দেশের উপরে শাসনকর্তা করেছেন।
9 তোমরা শীঘ্রই আমার পিতার কাছে ফিরে যাও, তাঁকে বল, “তোমার ছেলে যোসেফ একথা বলছে, পরমেশ্বর আমাকে সারা মিশর দেশের কর্তা করেছেন। তুমি আমার কাছে চলে এসো, দেরি করো না।
10 তুমি গোশেন অঞ্চলে বাস করবে, সেখানে তুমি, তোমার সন্তানেরা, তোমার সন্তানদের সন্তানসন্ততিরা, তোমার পশুপাল ও তোমার সর্বস্ব আমার কাছে কাছে থাকবে।
11 সেখানে আমি তোমার অন্নসংস্থানের জন্য ব্যবস্থা করব, কেননা দুর্ভিক্ষ আর পাঁচ বছর থাকবে; তবে তোমাকে তোমার পরিজনদের ও তোমার সকল লোককে কোন দুরবস্থা ভোগ করতে হবে না।”
12 তোমরা স্বচক্ষেই দেখতে পাচ্ছ, আমার সহোদর বেঞ্জামিনও স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছে : আমার নিজের মুখই তো তোমাদের কাছে কথা বলছে!
13 তোমরা এই মিশর দেশে আমার গৌরবের কথা, এবং তোমরা যা কিছু দেখেছ, সেই সমস্ত কথা আমার পিতাকে জানাও। আর শীঘ্রই আমার পিতাকে এখানে নিয়ে এসো।'
14 তখন তিনি ভাই বেঞ্জামিনের গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন, বেঞ্জামিনও তাঁর গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।
15 তিনি তাঁর সকল ভাইকে চুম্বন করলেন, ও তাঁদের বুকে টেনে আলিঙ্গন করে কেঁদে ফেললেন। তারপর তাঁর ভাইয়েরা তাঁর সঙ্গে আলাপ করতে লাগলেন।
16 ইতিমধ্যে ফারাওর বাড়িতেও কথা রটিয়ে পড়েছিল যে, যোসেফের ভাইয়েরা এসেছে; এতে ফারাও ও তাঁর পরিষদেরা সকলেই খুশি হলেন।
17 ফারাও যোসেফকে বললেন, 'তোমার ভাইদের বল, তোমরা একাজ কর: তোমাদের বাহনদের পিঠে শস্য চাপিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কানান দেশের দিকে রওনা হও;
18 পরে তোমাদের পিতাকে ও নিজ নিজ পরিবারকে তুলে নিয়ে আমার কাছে ফিরে এসো ; আমি তোমাদের কাছে মিশর দেশের সর্বোত্তম জায়গা দেব, আর তোমরা দেশের সর্বোত্তম স্থান ভোগ করবে।
19 এখন তুমি তাদের এই আজ্ঞা দাও : তোমরা একাজ কর : তোমরা নিজ নিজ ছেলেমেয়ে ও বধূদের জন্য মিশর দেশ থেকে গাড়ি নিয়ে গিয়ে তাদের ও তোমাদের পিতাকে নিয়ে এসো।
20 তোমাদের দ্রব্য-সামগ্রীর জন্য অযথা দুঃখ করো না, কেননা সারা মিশর দেশের সর্বোত্তম অংশ তোমাদেরই হবে।'
21 ইস্রায়েলের ছেলেরা সেইমত করলেন। যোসেফ ফারাওর আজ্ঞা অনুসারে তাঁদের পাড়ি দিলেন, যাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যও দিলেন।
22 তিনি প্রত্যেকজনকে এক এক জোড়া করে জামাকাপড় দিলেন, কিন্তু বেঞ্জামিনকে তিনশ' রুপোর টাকা ও পাঁচ জোড়া জামাকাপড় দিলেন।
23 পিতার জন্য তিনি এই সমস্ত জিনিস পাঠালেন : দশটা গাধার পিঠে চাপিয়ে মিশরের সর্বোত্তম দ্রব্য, এবং পিতার যাত্রার জন্য দশটা গাধীর পিঠে চাপিয়ে শস্য, রুটি ও প্রভৃতি খাদ্য সামগ্রী।
24 এইভাবে তিনি ভাইদের বিদায় দিলে তাঁরা রওনা হলেন; তিনি তাঁদের বলে দিলেন, 'পথে নিরাশ হয়ো না !”
25 তাই তাঁরা মিশর ছেড়ে কানান দেশে তাঁদের পিতা যাকোবের কাছে এসে পৌঁছলেন।
26 তাঁকে বললেন, 'যোসেফ এখনও বেঁচে আছে, এমনকি সারা মিশর দেশের উপরে সে-ই শাসনকর্তা হয়েছে। কিন্তু তাঁর হৃদয় শীতল থাকল, কারণ তিনি তাঁদের কথা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
27 কিন্তু যোসেফ তাঁদের যে সমস্ত কথা বলেছিলেন, তাঁরা যখন তা তাঁকে বললেন, এবং তাকে নিয়ে যাবার জন্য যোসেফ যে সকল গাড়ি পাঠিয়েছিলেন, তাও যখন তিনি দেখলেন, তখন তাঁদের পিতা যাকোবের আত্মায় নতুন জীবন জেগে উঠল।
28 ইস্রায়েল বললেন, যথেষ্ট ! আমার ছেলে যোসেফ এখনও বেঁচে আছে। মরবার আগে আমাকে গিয়ে তাকে দেখতে হবে!"