1 প্রভু যোশুয়াকে বললেন, “ভয় করো না, নিরাশ হয়ো না ! সমস্ত যোদ্ধাকে সঙ্গে করে নাও। ওঠ, আই আক্রমণ করতে বেরিয়ে পড়; দেখ, আমি আইয়ের রাজাকে, তার জনগণকে, তার শহর ও তার দেশ তোমার হাতে তুলে দিয়েছি।
2 তুমি যেরিখোর ও সেখানকার রাজার প্রতি যেমন করলে, আইয়ের ও সেখানকার রাজার প্রতিও তেমনি করবে; তথাপি লুটের মাল ও পশু তোমরা নিজেদের জন্য নেবে। তুমি শহরের বিরুদ্ধে, তার পিছনে, ওত পেতে থাক।'
3 তাই যোওয়া ও জনগণের মধ্যে যুদ্ধের যোগ্য সকল লোক উঠে আই আক্রমণ করতে রওনা হলেন; যোওয়া ত্রিশ হাজার বলবান বীরযোদ্ধা বাছাই করে রাতে তাদের পাঠিয়ে দিলেন;
4 তাদের এই আজ্ঞা দিলেন, “সতর্ক হও, তোমরা শহরের পিছনে তার বিরুদ্ধে ওত পেতে থাক; শহর থেকে বেশি দূরে যেয়ো না, সকলেই প্রস্তুত থাক।
5 পরে আমি ও আমার সঙ্গী সমস্ত লোক শহরের কাছে এগিয়ে যাব; আর যখন তারা আগের মত আমাদের বিরুদ্ধে বেরিয়ে পড়বে, তখন আমরা তাদের সামনে থেকে পালিয়ে যাব।
6 তারা আমাদের পিছনে ধাওয়া করতে বেরিয়ে আসবে যে পর্যন্ত আমরা শহর থেকে দূরেই তাদের টেনে আনব, কেননা তারা বলবে: এরা প্রথমবারের মত আমাদের সামনে থেকে পালাচ্ছে! আর আমরা তাদের সামনে থেকে পালাতে পালাতেই
7 তোমরা গুপ্ত স্থান থেকে উঠে শহরটাকে হস্তগত করবে; হ্যাঁ, তোমাদের পরমেশ্বর প্রভু শহরটাকে তোমাদের হাতে তুলে দেবেন।
8 শহরটাকে হস্তগত করামাত্র তোমরা শহরে আগুন লাগিয়ে দেবে: তোমরা প্রভুর আজ্ঞামতই কাজ করবে। সাবধান! এ আমার আজ্ঞা।
9 তখন যোওয়া তাদের পাঠিয়ে দিলেন, আর তারা ওত পেতে থাকার জায়গায় গিয়ে আইয়ের পশ্চিমে বেথেল ও আইয়ের মধ্যস্থানে অবস্থান নিল ; এদিকে যোওয়া জনগণের মধ্যে রাত কাটালেন।
10 ভোরে উঠে যোশুয়া লোক জড় করলেন, এবং তিনি ও ইস্রায়েলের প্রবীণবর্ণ লোকদের আগে আগে আইয়ের দিকে রওনা হলেন।
11 জনগণের মধ্যে যুদ্ধের যোগ্য যত লোক তাঁর সঙ্গে ছিল, তারা সকলে এগিয়ে চলল, এবং শহরের সামনে এসে পৌঁছে আইয়ের উত্তরদিকে শিবির বসাল। যোওয়া ও আইয়ের মধ্যে একটা উপত্যকা ছিল।
12 তিনি আনুমানিক পাঁচ হাজার লোক নিয়ে শহরের পশ্চিমদিকে বেথেল ও আইয়ের মধ্যস্থানে তাদের গোপন জায়গায় মোতায়েন করলেন।
13 এইভাবে জনগণ শহরের উত্তরদিকে শিবির বসাল ও তাদের পশ্চাদ্ভাগ শহরের পশ্চিমদিকে ওত পেতে থাকল ; সেই রাতে যোওয়া উপত্যকার মধ্যে গেলেন।
14 আইয়ের রাজা ব্যাপারটা বুঝতে পারলেই শহরের সকল লোক, রাজা ও তাঁর গোটা জনগণ, শীঘ্রই ভোরে উঠে ইস্লায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে বেরিয়ে, আরাবা নিম্নভূমির সামনে যে ঢালু স্থান রয়েছে, তার দিকে গেলেন; কিন্তু শহরের পিছনে যে তাঁর জন্য সৈন্য ওত পেতে ছিল, তা তিনি জানতেন না।
15 যোশুয়া ও গোটা ইস্রায়েল তাদের দ্বারা পরাজিত হওয়ার ভান করে মরুপ্রান্তরের পথ দিয়ে পালাতে লাগলেন;
16 তখন শহরের মধ্যে থাকা সকল লোক তাদের পিছনে ধাওয়া করতে যোগ দিল, আর যোওয়ার পিছনে ধাওয়া করতে করতে শহর থেকে দূরেই টানা পড়ল।
17 বের হয়ে ইস্রায়েলের পিছনে গেল না, এমন একজনও আইতে বা বেথেলে বাকি রইল না; ইস্রায়েলের পিছনে ধাওয়া করতে গিয়ে তারা নগরদ্বার খোলাই রাখল ।
18 তখন প্রভু যোশুয়াকে বললেন, 'তোমার হাতে যে বর্শা, তা আইয়ের দিকে বাড়াও, কেননা আমি শহরটাকে তোমার হাতে দিচ্ছি। যোশুয়া তাঁর হাতে যে বর্শা ছিল, তা শহরের দিকে বাড়ালেন।
19 তিনি হাত বাড়ানো মাত্রই ওত পেতে থাকা লোকেরা তাদের জায়গা থেকে সঙ্গে সঙ্গেই ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং দৌড় দিয়ে শহরে ঢুকে তা হস্তগত করল ও দেরি না করে শহরে আগুন লাগাল।
20 আইয়ের লোকেরা পিছনে মুখ ফিরিয়ে হঠাৎ দেখল, শহরের ধূম আকাশে উঠছে; কিন্তু সেসময়ে এদিকে কি ওদিকে কোনও দিকেই তাদের আর পালাবার উপায় রইল না; আর যে লোকেরা মরুপ্রান্তরের দিকে পালাচ্ছিল, তারা তাদের পিছনে যারা ছুটছিল, তাদেরই দিকে ফিরে আক্রমণ করল।
21 কেননা যোশুয়া ও গোটা ইস্রায়েল যখন দেখতে পেলেন যে, যারা ওত পেতে ছিল, তারা ইতিমধ্যে শহর হস্তগত করেছে, এবং শহরের ধূম উঠছে, তখন তাঁরা ফিরে আইয়ের লোকদের আক্রমণ করতে লাগলেন।
22 অন্যেরাও শহর থেকে তাদের বিরুদ্ধে বেরিয়ে এল, ফলে তারা ইস্রায়েলের মধ্যে পড়ল— কতজন এপাশে কতজন ওপাশে। ইস্রায়েল সন্তানেরা তাদের এমন ভাবে আঘাত করল যে, তাদের বেঁচে থাকা বা পলাতক কেউই রইল না।
23 কিন্তু আইয়ের রাজাকে তারা জীবিতই ধরল এবং যোশুয়ার কাছে আনল।
24 যখন ইস্রায়েল তাদের সকলকে খোলা মাঠে, মরুপ্রান্তরে, অর্থাৎ আইয়ের লোকেরা যেখানে তাদের পিছনে ধাওয়া করেছিল, সেইখানে তাদের সংহার করা শেষ করল, আর তারা সকলেই খঙ্গের আঘাতে মারা পড়ল, তখন গোটা ইস্রায়েল ফিরে আইতে এসে সেখানকার লোকদেরও খঙ্গের আঘাতে প্রাণে মারল।
25 সেদিন স্ত্রী-পুরুষ সবসমেত বারো হাজার লোক মারা পড়ল—সকলেই আইয়ের লোক।
26 যোশুয়া যে হাতে বর্শা ধরছিলেন, তাঁর সেই হাত ফেরালেন না, যতক্ষণ না তারা আইয়ের সকল অধিবাসীকে বিনাশ-মানতের বস্তু করল।
27 যোশুয়ার কাছে প্রভুর দেওয়া আজ্ঞামত ইস্রায়েল কেবল ওই শহরের পশু ও লুণ্ঠিত সম্পদ নিজেদের জন্য রাখল।
28 পরে যোশুয়া আই পুড়িয়ে দিয়ে তা চিরস্থায়ী টিপি করলেন, এমন উৎসন্ন স্থান করলেন, যা আজ পর্যন্ত সেইভাবে আছে।
29 তিনি আইয়ের রাজাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটা গাছে ঝুলিয়ে রাখলেন, পরে সূর্যাস্তের সময়ে যোশুয়া আজ্ঞা করলেন যেন তাঁর লাশ গাছ থেকে নামানো হয়; তারা লাশটা নগরদ্বারের প্রবেশস্থানে ফেলে তার উপরে পাথরের এক বিরাট ঢিপি করল: তা আজও রয়েছে।
30 সেই উপলক্ষে যোশুয়া এবাল পর্বতে ইস্রায়েলের পরমেশ্বর প্রভুর উদ্দেশে একটা যজ্ঞবেদি গাঁথলেন।
31 প্রভুর দাস মোশী ইস্রায়েল সন্তানদের যেমন আজ্ঞা করেছিলেন, তেমনি তারা মোশীর বিধান-পুস্তকে লেখা আদেশ অনুসারে অক্ষুণ্ণ পাথর দিয়ে, যার উপরে লৌহজাতীয় কোন যন্ত্র কখনও ব্যবহার হয়নি, এমন পাথর দিয়ে ওই যজ্ঞবেদি গাঁথল; তার উপরে তারা প্রভুর উদ্দেশে আহুতি দিল ; মিলন-যজ্ঞবলিও উৎসর্গ করল।
32 সেই জায়গায় পাথরগুলোর উপরে তিনি মোশীর সেই বিধানের এক অনুলিপি লিখলেন, যা মোশী ইস্রায়েল সন্তানদের সাক্ষাতে লিখেছিলেন।
33 ইস্রায়েল জাতিকে আশীর্বাদ করার জন্য, প্রভুর দাস মোশী যেমন আগে আজ্ঞা করেছিলেন, সেইমত গোটা ইস্রায়েল, তাদের প্রবীণেরা, শাস্ত্রীরা, বিচারকেরা, স্বজাতীয় বা প্রবাসী সমস্ত লোক মঞ্জুষার দু'পাশে প্রভূর সন্ধি-মঞ্জুষার বাহক সেই লেবীয় যাজকদের সামনে দাঁড়াল — তাদের অর্ধেক অংশ পারিজিম পর্বতের সামনে, আর অর্ধেক অংশ এবাল পর্বতের সামনে।
34 বিধান-পুস্তকে যা কিছু লেখা আছে, ঠিক সেই অনুসারে যোশুয়া বিধানের সমস্ত কথা, আশীর্বাদের ও অভিশাপের সেই কথাই পাঠ করে শোনালেন।
35 মোশী যা কিছু আজ্ঞা করেছিলেন, যোশুয়া গোটা ইস্রায়েল জনসমাবেশের সামনে — স্ত্রীলোক, ছেলেমেয়ে, তাদের মধ্যে বাস করছিল যত বিদেশী — সকলেরই সামনে সেই সমস্ত কথা পাঠ করে শোনালেন ; সেগুলোর একটামাত্র কথাও বাদ দিয়ে ত্রুটি করলেন না।