1 খাওয়া-দাওয়া সেরে তাঁরা মনে করলেন, ঘুমানোর সময় এসেছে। যুবকটিকে সেখান থেকে মিলন কক্ষে নিয়ে যাওয়া হল।
2 তখন তোবিয়াসের রাফায়েলের কথা মনে পড়ল : থলি থেকে সে সেই মাছের যকৃৎ ও হৃৎপিণ্ড বের করে জ্বলন্ত ধূপের উপরে দিল।
3 মাছের দুর্গন্ধ সেই শয়তানকে এতই ক্ষুব্ধ করে তুলল যে, সে মিশরের উত্তর অঞ্চলে পালিয়ে গেল। রাফায়েল সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে তাকে সেইখানে শেকলে বেঁধে তার গলা টিপে ধরে মেরে ফেললেন।
4 এদিকে অন্যান্যরা বাইরে গিয়ে কক্ষের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তোবিয়াস বিছানা ছেড়ে উঠে সারাকে বলল, 'বোন, ওঠ এসো, প্রার্থনা করি, প্রভুর কাছে যাচনা করি, যেন তাঁর অনুগ্রহ ও রক্ষা পেতে পারি।'
5 সারা উঠে দাঁড়াল, এবং দু'জনে প্রার্থনা করতে লাগল, যাচনা করল যেন তাদের উপরে রক্ষা নেমে এসে অধিষ্ঠান করে; তোবিয়াস বলল:
“হে আমাদের পিতৃপুরুষদের পরমেশ্বর, তুমি ধন্য,
যুগযুগ ধরে তোমার নামও ধন্য!
আকাশমণ্ডল ও নিখিল সৃষ্টি চিরকাল ধরে তোমাকে বলুক, ধন্য!
6 তুমিই আদমকে গড়েছ,
তাঁর বন্ধু হবাকেও তুমিই গড়েছ,
তিনি যেন হন আদমের সাহায্য ও অবলম্বন স্বরূপ।
তাঁদের দু'জন থেকে গোটা মানবজাতির জন্ম হল।
তুমিই বলেছ :
মানুষের পক্ষে একা থাকা ভাল নয়;
তার জন্য আমরা তার মত এক সাহায্যকারিণী নির্মাণ করব।
7 তাই আমি এখন আমার এই বোনকে বরণ করে নিচ্ছি
দেহলালসার আকর্ষণে নয়, বরং সৎ অভিপ্রায়ের সঙ্গে।
প্রসন্ন হয়ে তার প্রতি ও আমার প্রতি তোমার দয়া দেখাও,
বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত একসঙ্গেই আমাদের চালনা কর।
8 এবং দু'জনে একসঙ্গে বলল, 'আমেন, আমেন!'
9 তারপর সারারাত ধরে ঘুমাল।
10 কিন্তু রাগুয়েল বিছানা ছেড়ে উঠলেন ; চাকরদের ডেকে তিনি তাদের সঙ্গে একটা কবর খুঁড়তে গেলেন ; কেননা মনে মনে তিনি বলছিলেন, 'সে যেন না মরে! আমরা তো বিদ্রূপ ও ঘৃণার বস্তু হয়ে যাব।
11 তাঁরা কবরটা খোঁড়া শেষ করলে রাগুয়েল বাড়ির মধ্যে ফিরে গেলেন; স্ত্রীকে ডেকে
12 বললেন, 'চাকরানীদের একজনকে কক্ষে পাঠাও, সে দেখুক, তোবিয়াস বেঁচে আছে কিনা; কেননা সে যদি মরে গিয়ে থাকে আমরা তাকে সমাধি দেব, আর কেউই কিছু জানতে পারবে না।
13 তাঁরা চাকরানীকে আগে আগে পাঠিয়ে দিলেন, এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে দরজা খুলে দিলেন চাকরানী কক্ষের ভিতরে গেল, সে দেখল, দু'জনে একসঙ্গে ঘুমিয়ে আছে, গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন।
14 চাকরানী বেরিয়ে গিয়ে ফিস ফিস করে তাঁদের বলল, ছেলেটি বেঁচে আছে, অমঙ্গলকর কিছুই ঘটেনি।
15 তাঁরা তখন স্বর্গেশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলে উঠলেন :
হে পরমেশ্বর, তুমি সমস্ত শুদ্ধ-পবিত্র ধন্যবাদে ধন্য!
তুমি যেন অধিক ধন্যবাদের পাত্র হতে পার!
16 তুমি ধন্য, কারণ আমাকে আনন্দিত করে তুলেছ।
আমি যা ভয় করছিলাম, তা ঘটেনি,
তুমি বরং মহাদয়াই আমাদের প্রতি দেখিয়েছ।
17 তুমি ধন্য,
কারণ আমার এই একমাত্র পুত্রকন্যার প্রতি দয়া করেছ।
মহাপ্রভু, তোমার দয়া ও রক্ষা তাদের মঞ্জুর করা ;
তাদের এমন জীবন যাপন করতে দাও,
আনন্দ ও দয়ার মধ্যে যাপিত যে জীবন।'
18 তখন তিনি চাকরদের ভোর হওয়ার আগেই কবরটা ভরাট করতে বললেন।
19 রাগুয়েল তাঁর স্ত্রীকে প্রচুর রুটি তৈরি করতে বললেন; তিনি নিজে গিয়ে পশুপাল থেকে দু'টো বাছুর ও চারটে ভেড়া আনলেন, সেগুলিকে জবাই করালেন, আর এইভাবে তাঁরা ভোজ প্রস্তুত করতে লাগলেন।
20 পরে তিনি তোবিয়াসকে ডেকে তাকে শপথ করে বললেন, 'তুমি চৌদ্দ দিন ধরে এখান থেকে চলে যেতে পারবে না, আমার ঘরে থেকে খাওয়া-দাওয়া করবে; এভাবে, আমার মেয়ের তত দুঃখের পর তুমি তাকে আবার আনন্দিতা করে তুলবে।
21 তারপর, আমার যা কিছু আছে, তার অর্ধেক নাও, ও তোমার পিতার কাছে সুস্থ শরীরে ও নিরাপদে ফিরে যাও। আমার ও আমার স্ত্রীর মৃত্যুর পরে সম্পদের বাকি অর্ধেক অংশও তোমাদের হবে। সন্তান, সাহস ধর! আমি তোমার পিতা, ও এদ্না তোমার মাতা ; আমরা যেমন তোমার বোনের পিতামাতা, তেমনি এখন থেকে চিরকাল ধরে তোমারও পিতামাতা হব। সন্তান, সাহস ধর।'