1 তখন তোবিয়াস তাঁর পিতা তোবিতকে উত্তরে বলল, 'পিতা, আপনি আমাকে যা করতে আজ্ঞা করেছেন, আমি তা করব।
2 কিন্তু আমি যখন তাঁকে চিনি না, উনিও আমাকে চেনেন না, তখন পুঁজিটা কেমন করে ফিরিয়ে নিতে পারব? উনি আমাকে চিনে যেন আমাকে বিশ্বাস করেন ও রুপোর তাল আমার হাতে তুলে দেন, এই উদ্দেশ্যে আমি তাঁকে কী চিহ্ন দিতে পারি? তাছাড়া মেদিয়ার মধ্যে এই যাত্রার জন্য যে কোন্ পথ আমাকে ধরতে হবে, তাও আমি জানি না।'
3 উত্তরে তোবিত তাঁর ছেলে তোবিয়াসকে বললেন, 'আমরা দু'জনে এক দলিলে স্বাক্ষর দিয়েছিলাম, তা আমি দু'টুকরো করেছিলাম, যেন এক একজনের হাতে অর্ধেক দলিল থাকে। আমি সেই এক টুকরো নিয়েছিলাম, আর এক টুকরোটা রুপোর সঙ্গে রেখে এসেছিলাম। আজ কুড়ি বছর হল যখন আমি রুপোটা তার কাছে গচ্ছিত রেখেছিলাম। এখন, সন্তান, এমন বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজে বের কর যে তোমার সহযাত্রী হতে পারে। যতদিন তুমি ফিরে না আস, তাকে ততদিনের জন্য উপযুক্ত মজুরি দেব। পরে যাও, রুপোটা ফিরিয়ে আনতে পাবায়েলের কাছে যাত্রা কর।'
4 মেদিয়ার মধ্যে তার সঙ্গে যাত্রা করবে, পথ-জানা এমন লোকের খোঁজে তোবিয়াস বেরিয়ে পড়ল। বেরিয়ে এসেই সে রাফায়েল দূতকে সামনে পেল সে তো আদৌ জানত না, তিনি ঈশ্বরের এক দূত।
5 সে তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, 'বন্ধু, তুমি কোথাকার মানুষ? তিনি উত্তর দিলেন, 'আমি তোমার ইস্রায়েলীয় ভাইদের একজন, কাজের অনুসন্ধানে এসেছি। তোবিয়াস বলে চলল, 'তুমি কি মেদিয়ার মধ্যে যাবার পথ জান?
6 তিনি উত্তর দিলেন, “নিশ্চয়! আমি বারবার সেখানে গিয়েছি, তার সকল পথ আমার ভালই জানা আছে। আমি মেদিয়ায় প্রায়ই গিয়েছি, গিয়ে মেদিয়ায় অবস্থিত রাজেশে বাস করে গাবায়েল নামে আমাদের এমন ভাইয়ের বাড়িতে থাকতাম। একবাতানা থেকে রাজেশ পর্যন্ত দু'দিনের পথ; রাজেশ পার্বত্য অঞ্চলে, আর এই এক্বাতানা সমতল ভূমিতে অবস্থিত।'
7 তোবিয়াস তাঁকে বলল, 'বন্ধু, একটু অপেক্ষা কর, আমি আমার পিতাকে কথা জানিয়ে দিয়ে আসি। আমার দরকার আছে, তুমি আমার সঙ্গে যাত্রা করবে; আমি তোমাকে উপযুক্ত মজুরি দেব।'
8 তিনি উত্তর দিলেন, 'দেখ, আমি অপেক্ষা করছি; কিন্তু বেশি দেরি করবে না।
9 তোবিয়াস গিয়ে তাঁর পিতাকে কথাটা জানিয়ে দিয়ে বলল, 'দেখুন, আমাদের ইস্রায়েলীয় ভাইদের মধ্য থেকে একজন লোককে পেয়েছি।' তিনি উত্তরে বললেন, “তাকে ভিতরে ডেকে নিয়ে এসো, যেন আমি জানতে পারি, সে কোন্ স্কুলের ও গোষ্ঠীর মানুষ; আবার, সন্তান, আমি যেন বুঝতে পারি, সে তোমার সঙ্গে যাত্রা করার মত বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি কিনা।
10 তোবিয়াস বাইরে গিয়ে লোকটিকে ডাকল, “বন্ধু, আমার পিতা তোমাকে ডাকছেন।' তিনি তাঁর বাড়ির ভিতরে গেলেন। তোবিত সর্বপ্রথমে তাঁকে স্বাগত জানালে অপরজন উত্তরে বললেন, 'আপনার প্রচুর আনন্দ হোক!' তোবিত বলে চললেন, আমার কী আনন্দ হতে পারে? আমি তো অন্ধ মানুষ ; স্বর্গের আলো দেখতে পাই না ; আমি সেই মৃতদেরই মত অন্ধকারে বসে আছি, যারা আলোর দর্শন আর পায় না। জীবিত হয়েও আমি মৃতদের সঙ্গেই বাস করছি; আমি মানুষদের কন্ঠস্বর শুনি বটে, কিন্তু তাদের দেখতে পাই না।' তিনি তাঁকে উত্তর দিলেন, “সাহস ধরুন! ঈশ্বর বেশি দেরি না করে আপনাকে নিরাময় করবেন। সাহস ধরুন!' তোবিত বলে চললেন, “আমার ছেলে তোবিয়াস মেদিয়ার মধ্যে যাত্রা করতে ইচ্ছুক। তুমি কি তার সঙ্গে যাত্রা করে তাকে পথ দেখাতে পারবে? ভাই, আমি নিশ্চয় তোমাকে তোমার পাওনা দেব!' তিনি উত্তর দিলেন, 'হ্যাঁ, আমি তার সঙ্গে যাত্রা করতে পারি ; আমি সেই সকল পথ জানি। মেদিয়ার মধ্যে বারবার গিয়েছি; সেই অঞ্চলের সমস্ত সমতল ভূমি ও পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাত্রা করেছি ; তার সকল পথ জানি।'
11 তোবিত তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'ভাই, তুমি কোন্ কুল ও গোষ্ঠীর মানুষ? ভাই, একথা আমাকে জানাবে কি?'
12 কিন্তু তিনি উত্তরে বললেন, 'আমার গোষ্ঠীর কথা জেনে আপনার কী লাভ?' তোবিত বললেন, 'তুমি যে কার ছেলে ও তোমার আসল নাম কী, এবিষয়ে আমি পুরা সত্য জানতে চাই।”
13 বললেন, “আমি আজারিয়া, সেই মহান আনানিয়ার ছেলে, যিনি আপনার ভাইদের দূত উত্তরে একজন।"
14 তখন তোবিত বললেন, 'তোমায় স্বাগতম! তোমার মঙ্গল হোক, ভাই! ভাই, আমি যে তোমার কুল সম্বন্ধে পুরা সত্য জানতে চেয়েছি, এর জন্য কিছু মনে করো না। তাই তুমি আমার জ্ঞাতি; উত্তম ও সুনামের বংশের মানুষ! মহান সেই সেমেইয়ার দু'ছেলে আনানিয়া ও নাথানকে আমি চিনতাম। তারা আমার সঙ্গে যেরুসালেমে যাত্রা করে সেখানে আমার সঙ্গে উপাসনা করত; তারা সৎপথ ছেড়ে সরে যায়নি। তোমার ভাইয়েরা ভাল লোক; তুমি উত্তম মূলের মানুষ: স্বাগতম!'
15 তিনি বলে চললেন, 'তুমি ও আমার ছেলে— দু'জনের যা প্রয়োজন, তা ছাড়া আমি তোমাকে দিনে এক দ্রাক্মাও দেব। তাই তুমি এখন আমার ছেলের সঙ্গে যাত্রা কর, পরে এর চেয়ে আরও বেশি দেব।'
16 দূত বললেন, 'আমি তার সঙ্গে যাত্রা করব। আপনি ভয় করবেন না; আমরা সুস্থ হয়ে রওনা হব, সুস্থ হয়ে ফিরে আসব, কারণ পথ নিরাপদ।
17 তোবিত তাঁকে বললেন, 'ভাই, আশীর্বাদ তোমার উপর বিরাজ করুক।' পরে ছেলেকে উদ্দেশ করে বললেন, 'সন্তান, যাত্রার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তা প্রস্তুত করে তোমার এই ভাইয়ের সঙ্গে রওনা হও। স্বর্গে আছেন যিনি, সেই ঈশ্বর সেখান পর্যন্ত তোমাদের সুস্থ রাখুন, এবং সুস্থ শরীরে ও নিরাপদে তোমাদের আমার কাছে ফিরিয়ে আনুন। সম্ভান, তাঁর দ্রুত তোমাদের সঙ্গে পথ চলুন, তোমাদের রক্ষা করুন!" তোবিয়াস যাত্রার জন্য নিজেকে তৈরি করল, তারপর পথে রওনা হওয়ার জন্য বেরিয়ে গিয়ে পিতামাতাকে চুম্বন করল। তোবিত তাকে বললেন, 'তোমার যাত্রা শুভ হোক!”
18 তার মা চোখের জল ফেলতে লাগলেন, তোবিতকে তিনি বললেন, ‘তুমি কেন চাইলে, আমার ছেলে চলে যাবে? আমাদের আগে চলতে চলতে সে-ই কি আমাদের হাতের লাঠি নয়?
19 অর্থের কথা যাক! তা তো আমাদের ছেলের চেয়ে বেশি মূল্যবান নয়!
20 প্রভু আমাদের যে জীবন-অবস্থা মঞ্জুর করেছেন, তা আমাদের পক্ষে যথেষ্ট।'
21 তোবিত তাঁকে বললেন, 'তেমন চিন্তা করো না; আমাদের ছেলের জন্য যাওয়াটাও শুভ হবে, ফিরে আসাটাও শুভ হবে। তোমার নিজের চোখই তা দেখতে পাবে, সে যখন সুস্থ শরীরে ও নিরাপদে তোমার কাছে ফিরবে।
22 বোন, তাদের বিষয়ে দুশ্চিন্তায় থেকো না; কেননা ভাল এক দূত তাঁর সঙ্গে সঙ্গে পথ চলবেন; তার যাত্রা শুভ হবে, সে সুস্থ শরীরে ও নিরাপদে ফিরবে।'
23 তখন তিনি আর কাঁদলেন না।