Index

Tobit - Chapter 3

1 প্রাণে দুঃখ পেয়ে আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাঁদতে লাগলাম। পরে এই বিলাপ-প্রার্থনা উচ্চারণ করলাম:
2 প্রভু, তুমি ধর্মময়, তোমার সকল কাজও ধর্মময়। তোমার সমস্ত পথ দয়া ও সত্যমণ্ডিত। তুমি বিশ্ববিচারক।
3 এখন, হে প্রভু, আমার কথা স্মরণ কর, আমার দিকে চেয়ে দেখ। আমার পাপের জন্য আমাকে শাস্তি দিয়ো না, আমার ও আমার পিতৃপুরুষদের ভুলভ্রান্তির জন্যও নয়।
4 তোমার আজ্ঞাগুলির প্রতি অবাধ্য হয়ে তারা তোমার সম্মুখে পাপ করেছে। তুমি আমাদের লুটপাট, বন্দিদশা ও মৃত্যুর হাতে তুলে দিয়েছ; যাদের মাঝে আমাদের বিক্ষিপ্ত করেছ, তুমি এমনটি হতে দিয়েছ, আমরা হব সেই সকল জাতির গল্প, বিদ্রূপ ও অবজ্ঞার বস্তু।
5 এখন, আমার ও আমার পিতৃপুরুষদের অপরাধ অনুসারে যখন তুমি আমার প্রতি ব্যবহার করতে যাচ্ছ, তখন তোমার সকল বিচার সত্যময়, কারণ আমরা তোমার আজ্ঞাগুলিও পালন করিনি, সত্যের শরণে তোমার সম্মুখেও চলিনি।
6 এখন তোমার যেমন ইচ্ছা, আমার প্রতি সেইমত ব্যবহার কর, দোহাই তোমার, আমার কাছ থেকে আত্মাকে কেড়ে নাও, মাটি থেকে অপহৃত হয়ে আমি যেন আবার মাটি হই ; আমার পক্ষে জীবনের চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়, কেননা আমাকে কতগুলো অন্যায্য টিটকারি শুনতে হয়েছে, আর আমার অন্তর বড় দুঃখেই ভরা। দোহাই প্রভু, এই পীড়ন থেকে আমাকে মুক্ত কর; আমার চিরন্তন স্থানের দিকে আমাকে রওনা হতে দাও; প্রভু, আমা থেকে ফিরিয়ে নিয়ো না তোমার শ্রীমুখ। কেননা এই মহা পীড়নের সম্মুখীন হয়ে জীবনযাপন করার চেয়ে আমার পক্ষে বরং মৃত্যুই ভাল : টিটকারি শোনা এবার আমার কাছে অসহ্য!
7 সারা
8 সেই একই দিনে এমনটি ঘটল যে, মেদিয়া দেশে একবাতানা-নিবাসিনী রাওয়েলের মেয়ে সারাকেও তার পিতার একটি দাসীর মুখে নানা টিটকারি শুনতে হল।
9 ব্যাপারটা হল এই যে, তাকে সাতবারই বিয়ে দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মিলন ঘটবার আগেই অসৎ অপদূত আমদেয়স তার প্রত্যেকটি স্বামীকে মেরে ফেলেছিল। এই সারাকেই সেই দাসী বলল, 'তুমি, তুমি নিজেই তোমার স্বামীদের মেরে ফেল! দেখ, এর মধ্যে সাতবারই তোমাকে বিয়ে করা হয়েছে, কিন্তু তাদের একজনকেও ভোগ করতে পারনি।
10 তোমার স্বামীরা মারা গেছে বলে আমাদেরই মারছ কেন? তাদের সঙ্গে চলে যাও! আর আমাদের যেন তোমার গর্ভজাত কোন ছেলে বা মেয়েকে দেখতে না হয়!'
11 সুতরাং সেদিনে সারা বড় দুঃখ পেল, চোখের জল ফেলল, এমনকি পিতার উপরতলার ঘরে গিয়ে গলায় ফাঁস দিতে চাচ্ছিল। কিন্তু আবার চিন্তা-ভাবনা করে সে মনে মনে বলল, 'পাছে লোকে আমার পিতাকে অপমান করে। লোকে নিশ্চয় তাঁকে বলবে : “তোমার একটিমাত্র মেয়ে ছিল, মেয়েটি তোমার খুবই প্রিয়া ছিল, এখন মনের দুঃখে সে গলায় ফাঁস দিয়েছে।” তাতে আমি আমার পিতার এমন ব্যথাই ঘটাব, যা তার বৃদ্ধ বয়সকে পাতালে নামিয়ে দেবে। না, গলায় ফাঁস না দিয়ে আমি বরং মৃত্যুর জন্য প্রভুকে মিনতি করব, আমাকে যেন জীবনে আর কোন টিটকারি শুনতে না হয়।
12 ঠিক সেই ক্ষণে সে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে দু'হাত বাড়িয়ে এই প্রার্থনা নিবেদন করল : “ধন্য তুমি, দয়াবান ঈশ্বর, যুগে যুগে ধন্য তোমার নাম। তোমার নিখিল সৃষ্টি তোমাকে ধন্য বলুক চিরকাল।
13 আমি এখন তোমার দিকে মুখ ফিরিয়ে তোমারই দিকে চোখ তুলি।
14 এমনটি বল আমি যেন পৃথিবী থেকে মুক্তি পাই, তবেই আমাকে আর কোন টিটকারি শুনতে হবে না।
15 তুমি তো জান, প্রভু, পুরুষের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক থেকে আমি নিজেকে শুদ্ধ রেখেছি,
16 আমার নিজের নামের অমর্যাদা করিনি, আমার পিতার নামেরও অমর্যাদা করিনি এই নির্বাসনের দেশে। আমি আমার পিতার একমাত্র মেয়ে ; তাঁর উত্তরাধিকারী হবে এমন পুত্রসন্তান তাঁর নেই ; ঘনিষ্ঠ তাঁর এমন আর কোন জ্ঞাতি বা আত্মীয়ও নেই, যার সঙ্গে বিয়ে করার জন্য আমি নিজেকে বাচিয়ে রাখব। সাত সাতজন স্বামীকেই তো এর মধ্যে হারিয়েছি। এখনও বেঁচে থাকব তাতে কী লাভ? আমার মৃত্যু ঘটাতে তুমি প্রীত না হলে, তবে দয়ার চোখেই আমার দিকে তাকাও ; এমন টিটকারি শোনার ধৈর্য আমার আর নেই।'
17 সেসময়ে দু'জনেরই প্রার্থনা ঈশ্বরের গৌরবের সাক্ষাতে গ্রাহ্য হল দু'জনকে নিরাময় করতে রাফায়েল প্রেরিত হলেন;
18 তাই তিনি তোরিতের চোখ থেকে সেই সাদা দাগ সরিয়ে দেবেন, যেন তোবিত তাঁর নিজের চোখেই ঈশ্বরের আলো দেখতে পান ; আবার তিনি রাগুয়েলের মেয়ে সারাকে তোবিতের ছেলে তোবিয়াসের হাতে বধূরূপে দান করবেন ও সেই অসৎ অপদূত আমদেয়স থেকে তাকে মুক্ত করে দেবেন। কেননা অন্য সকল প্রার্থীর চেয়ে তোবিয়াসেরই সারাকে বিয়ে করার অধিকার ছিল। যেসময় তোবিত উঠান থেকে ঘরে ফিরে আসছিলেন, সেই একই সময় রাগুয়েলের মেয়ে সারা সেই উপরতলার ঘর থেকে নিচে নেমে আসছিল।