Index

Tobit - Chapter 2

1 সুতরাং, এসারহাদোনের রাজত্বকালে আমি আবার আমার বাড়িতে ফিরে গেলাম, এবং আমার স্ত্রী আন্না ও ছেলে তোবিয়াসের সাহচর্যও আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হল। আমাদের পঞ্চাশত্তমী পর্বের দিন উপলক্ষে, অর্থাৎ (সপ্ত)সপ্তাহ পর্বের দিন উপলক্ষে ভাল খাবার প্রস্তুত করা হয়েছিল, আর আমি ভোজে আসন নিলাম।
2 আমার সামনে নানা রকম রান্না করা খাদ্য পরিবেশন করা হচ্ছে, এমন সময় আমি আমার ছেলে তোবিয়াসকে বললাম, 'সন্তান, এবার যাও; নিনিম্ভেতে নির্বাসিত আমাদের ভাইদের মধ্য থেকে এমন কোন দরিদ্র মানুষকে খুঁজে বের কর যে সমস্ত হৃদয় দিয়ে প্রভুর কথা স্মরণ করে ; তাকে এখানে নিয়ে এসো, সে আমার সঙ্গে এই ভোজে সহভাগিতা করুক। দেখ, সন্তান, তুমি না আসা পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করব।'
3 তাই তোবিয়াস আমাদের ভাইদের মধ্যে এক দরিদ্র মানুষের খোঁজে বেরিয়ে পড়ল, কিন্তু ফিরে এসে বলল, 'পিতা!' আমি উত্তর দিলাম, ‘তবে, সন্তান, কী হল?' সে বলে চলল, 'পিতা, আমাদের স্বজাতীয় মানুষদের একজনকে এইমাত্র গলা টিপে খুন করা হয়েছে; তার মৃতদেহ বাজারের খোলা জায়গায় ফেলা হয়েছে, সে এখনও সেখানে পড়ে আছে।'
4 আমি আমার খাবার আর স্পর্শ না করে তখনই লাফিয়ে উঠে লোকটিকে সেই খোলা জায়গা থেকে তুলে নিয়ে আমাদের একটা কক্ষে রাখলাম, যেন সূর্যাস্তের পরে তার সমাধি দিতে পারি।
5 আবার ভিতরে এসে আমি স্নান করে শোকার্ত মনে খাওয়া-দাওয়া করলাম ;
6 হ্যাঁ, আমার মনে পড়ছিল বেথেল সম্বন্ধে নবী আমোসের এই উক্তি : তোমাদের সমস্ত উৎসব শোকে ; ও তোমাদের সকল ভোজ বিলাপে পরিণত হবে।
7 তখন আমি কাঁদলাম। সূর্য অস্ত গেলেই আমি গিয়ে একটা কবর খুঁড়ে তাকে সমাধি দিলাম।
8 আমার প্রতিবেশীরা আমাকে বিদ্রূপ করে বলছিল, 'দেখ, তার আর ভয় নেই! অথচ ঠিক একারণেই ওরা গতবার প্রাণদণ্ডের জন্য তাকে খোঁজ করেছিল। তখন তাকে পালাতে হয়েছিল, আর এখন, দেখ, সে আবার মৃতদের সমাধি দিচ্ছে!'
9 সেই রাতে স্নান করলাম; পরে উঠানে গিয়ে উঠানের প্রাচীরের ধারে শুয়ে পড়লাম। গরমের কারণে মুখ না ঢেকেই রেখেছিলাম;
10 আমি তো জানতাম না যে, আমার উপরে, সেই প্রাচীরে, কয়েকটা চড়ুই পাখি ছিল; তাদের গরম মল আমার চোখের মধ্যে পড়ল; তা কেমন সাদা সাদা দাগ জন্মাল, আর আমাকে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হল। কিন্তু তারা যত মলম লাগাত, সেই সাদা দাগের কারণে আমার দৃষ্টিশক্তি তত ক্ষীণ হয়ে যেত; শেষে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে গেলাম। চার বছর ধরেই আমি অন্ধ হয়ে রইলাম, আর এই ব্যাপারে আমার সকল ভাই যথেষ্ট দুঃখ পেল। আহিকার দু'বছর ধরে আমার ভরণপোষণের ভার নিল, পরে তাকে এলিমাইসে যেতে হল।
11 সেসময় আমার স্ত্রী আন্না মজুরির ভিত্তিতে কাজকর্ম করতে লাগল ;
12 সে নিজের কাজ মালিকদের দিত, আর তারা তার প্রাপ্য মজুরি দিত। একদিন — দিয় মাসের সপ্তম দিনে–সে একটা বোনা কাপড় শেষ করে মালিকদের কাছে পৌঁছে দিল, আর তারা তার পুরো প্রাপ্য ছাড়া উপহার হিসাবে রান্নার জন্য একটা ছাগলছানাও তাকে দিল।
13 ছাগলছানা আমার বাড়িতে ঢুকেই ডাকতে লাগল ; আমার স্ত্রীকে ডেকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, 'এই প্রাণী কোথা থেকে আসে? এমনটি কি হতে পারে না যে, তা চুরি করা হয়েছে? তা তার মালিকদের ফিরিয়ে দাও, কেননা চুরি করা জিনিস খাওয়ার অধিকার আমাদের নেই!'
14 সে আমাকে বলল, “ছাগটা মঞ্জুরির ওপরি উপহার হিসাবেই তো আমাকে দেওয়া হয়েছে।' আমি তার কথা বিশ্বাস করলাম না, আর তাকে তা তার মালিকদের ফিরিয়ে দিতে বললাম; এই ব্যাপারে আমি তার জন্য লজ্জাবোধ করছিলাম। এই পরিপ্রেক্ষিতে সে বলে উঠল, 'তোমার সমস্ত অর্থদান এখন কোথায় ? তোমার সমস্ত দয়াকর্ম কোথায়? এই যে, তোমার এ দুরবস্থা দেখেই তা স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে!'