Index

Tobit - Chapter 6

1 যুবকটি দূতের সঙ্গে রওনা হল ; কুকুরও পিছু পিছু চলে তাদের সঙ্গে রওনা হল। তাঁরা একসঙ্গে হেঁটে চললেন; আর প্রথম সন্ধ্যা এলে তাঁরা রাত কাটাতে টাইগ্রীস নদীর ধারে থামলেন।
2 পা ধুয়ে নেবার জন্য যুবকটি নদীতে নেমে গেছিল, এমন সময়ে, দেখ, বিরাট একটা মাছ জল থেকে লাফিয়ে উঠে ছেলেটির পা গ্রাস করতে চেষ্টা করল; আর সে চিৎকার করতে লাগল।
3 কিন্তু দূত তাকে বললেন, ‘মাছটা ধর! তাকে পালাতে দিয়ো না!' ছেলেটি মাছটাকে ধরতে পেরে ডাঙায় টেনে আনল।
4 দূত তাকে বললেন, 'মাছটা কেটে পিত্তি, হৃৎপিণ্ড ও যকৃৎ বের কর; সেগুলিকে রেখে অস্ত্ররাজি ফেলে দাও; কেননা পিত্তি, হৃৎপিণ্ড ও যকৃৎ চিকিৎসার জন্য উপকারী হতে পারে।'
5 ছেলেটি মাছটা কেটে পিত্তি, হৃৎপিণ্ড ও যকৃৎ বের করল; পরে মাছের একটা অংশ রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করল; এবং লবণ দিয়ে বাকি অংশটুকু বাঁচিয়ে রাখল।
6 পরে তাঁরা আবার যাত্রা করলেন যেপর্যন্ত মেদিয়ার কাছাকাছি এসে পৌঁছলেন।
7 তখন ছেলেটি দূতকে উদ্দেশ করে জিজ্ঞাসা করল, 'ভাই আজারিয়া, মাছের পিত্তিতে, হৃৎপিণ্ডে ও যকৃতে কেমন প্রতিকার থাকতে পারে?
8 তিনি উত্তর দিলেন, ‘হৃৎপিণ্ড ও যকৃৎ তুমি পুড়িয়ে দিলে তার ধূমে এমন পুরুষ বা মহিলা উপকৃত হবে, যাকে শয়তান বা অসৎ অপদূতে পেয়েছে; তেমন অসুস্থতা নিঃশেষ হয়ে যাবে, তার কোন চিহ্ন আর থাকবে না।
9 অন্যদিকে পিত্তি তারই জন্য মলম হিসাবে ব্যবহার করা যায়, যার চোখের উপরে সাদা সাদা দাগ পড়েছে; মলম দেওয়ার পর সেই দাগের উপরে ফুঁ দিলে চোখ সুস্থ হয়ে ওঠে।
10 তাঁরা মেদিয়ার মধ্যে প্রবেশ করে একবাতানার বেশ কাছেই এগিয়ে আসছেন,
11 এমন সময় রাফায়েল ছেলেটিকে বললেন, 'ভাই তোবিয়াস!' সে উত্তর দিল, 'এই যে আমি!' দূত বলে চললেন, 'আজ রাগুয়োলের বাড়িতে আমাদের রাত কাটাতে হবে; তিনি তোমার আপন জ্ঞাতি। তাঁর একটি মেয়ে আছে, তার নাম সারা;
12 কিন্তু সারা ছাড়া তাঁর আর কোন ছেলে বা মেয়ে নেই। ঘনিষ্ঠতম জ্ঞাতি বলে তোমারই অন্য কোন লোকের চেয়ে তাকে বিয়ে করার ও তার পিতার সম্পত্তি উত্তরাধিকাররূপে পাবার অধিকার আছে। মেয়েটি বুদ্ধিমতী, সৎসাহসিনী, খুবই সুন্দরী আর তার পিতা উত্তম মানুষ।
13 দূত বলে চললেন, ‘তাকে বিয়ে করার অধিকার তোমার আছে। তবে, ভাই, শোন: আমি আজ সন্ধ্যায় মেয়েটির পিতার কাছে কথা বলব, যেন তিনি তাকে তোমার বাগদত্তা বন্ধু রূপে রাখেন। আমরা রাজেশ থেকে ফিরে এলে বিয়ের অনুষ্ঠান করব। আমি তো জানি, তিনি মেয়েটিকে তোমাকে দিতে অস্বীকার করতে পারেন না, অন্য কাউকে দেবেন বলেও কথা দিতে পারেন না; তেমনটি করলে মোশীর বিধান অনুসারে তিনি প্রাণদণ্ডের যোগ্য হবেন, কেননা তিনি জানেন যে, অন্য সকলের আগে তোমারই তাঁর মেয়েকে পাওয়ার অধিকার আছে। তাই, ভাই, শোন। আজ সন্ধ্যায় আমরা মেয়েটির কথা উত্থাপন করে তাকে বধূরূপে গ্রহণ করতে যাচনা করব। রাজেশ থেকে ফিরে আসার পথে আমরা তাকে তুলে আমাদের সঙ্গে তোমার বাড়িতে নিয়ে যাব।'
14 তোবিয়াস রাফায়েলকে উত্তর দিলেন, 'ভাই আজারিয়া, আমি তো একথা শুনেছি যে, সাতবারই তার বিয়ে হয়েছে, আর তার প্রতিটি স্বামী যে রাতে তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার কথা, সেই রাতেই তার আপন মিলন কক্ষেই মারা গেছে! তাছাড়া একথাও শুনেছি যে, একটা শয়তান তার সকল স্বামীকে খুন করে ফেলে।
15 তাই আমার ভয় হয় : শয়তান ভালবাসায় কোন প্রতিযোগীকে সহ্য করে না; তার কোন অমঙ্গল ঘটায় না ঠিকই, কিন্তু যে কেউ তার কাছে যেতে চায়, শয়তান তাকে খুন করে ফেলে। আমি তো আমার পিতার একমাত্র সন্তান, আমার মরবার কোন ইচ্ছা নেই; আমার পিতামাতা সারা জীবন ধরে আমার উপরে শোক করবে, তা আমি চাই না; তাদের সমাধি দেওয়ার মত আমি ছাড়া তাদের আর অন্য সন্তান নেই।'
16 দূত তাকে বললেন, 'তুমি কি তোমার পিতার নির্দেশবাণী ভুলে গেছ? তিনি তো তোমাকে সনির্বন্ধ আবেদন জানিয়েছেন, যেন তুমি বধূরূপে তোমার কুলের একটি মেয়েকে নাও! তাই, ভাই, আমার কথা শোন : এই শয়তানের বিষয়ে তুমি তত ব্যস্ত হয়ো না; মেয়েটিকে নাও। আমি নিশ্চিত আছি, আজ সন্ধ্যায় মেয়েটিকে তোমাকে বধূরূপে দেওয়াই হবে!
17 যখন তুমি মিলন কক্ষের ভিতরে যাবে, তখন সেই মাছের হৃৎপিণ্ড ও যকৃৎ নিয়ে তার এক টুকরো ধূপের আগুনের উপরে দাও। তাতে তার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে, সেই শয়তান সেই দুর্গন্ধ ঘ্রাণ করতে বাধ্যই হবে, তখন পালিয়ে গিয়ে মেয়েটির কাছে আর কখনও দেখা দেবে না।
18 পরে, তুমি তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগে, তোমরা দু'জনে উঠে প্রার্থনা কর। স্বর্গের প্রভুকে মিনতি জানাও, যেন তাঁর অনুগ্রহ ও রক্ষা তোমাদের উপরে নেমে এসে অধিষ্ঠান করে। ভয় করো না: এই মেয়েটিকে অনাদিকাল থেকেই তোমার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে; তোমাকেই তাকে বাঁচাতে হবে; সে তোমার অনুসরণ করবে; আর আমি কথা দিচ্ছি, সে তোমাকে সন্তানাদি দেবে, যারা তোমার কাছে ভাইদের মত হবে চিন্তা করো না!'
19 যখন তোবিয়াস রাফায়েলের কথা শুনে বুঝতে পারল যে, সারা তার বোন, অর্থাৎ তার নিজের পিতার কুলের আতিকন্যা, তখন তাকে এমনই ভালবেসে ফেলল যে, সারা থেকে নিজের হৃদয় আর ছিন্ন করতে পারল না।