1 পরদিন হলোফের্নেস সমস্ত সৈন্যদলকে ও সহকারী-সৈনা হিসাবে যারা তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল, তাদের সকলকে আদেশ করলেন, যেন বেথুলিয়ার দিকে রওনা হয়, এবং পর্বতের যত প্রবেশপথ দখল করে ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে শুরু করে।
2 সেদিন যুদ্ধ করতে উপযুক্ত সমস্ত লোক রণযাত্রায় যোগ দিল। তাদের সৈন্যসামন্তের মোট সংখ্যা ছিল এক লক্ষ সত্তর হাজার পদাতিক সৈন্য ও বারো হাজার অশ্বারোহী, এদের কথা বাদে সেই বিপুল সংখ্যক লোকের ভিড়ও ছিল, যারা মাল বাহনে নিযুক্ত হয়ে তাদের সঙ্গে পায়ে হেঁটে চলত।
3 তারা বেথুলিয়ার কাছাকাছি উপত্যকায় জলের উৎসের কাছে শিবির বসিয়ে, বিস্তারে দোখান থেকে বেলাইম পর্যন্ত, এবং গভীরে বেথুলিয়া থেকে এস্তেলোনের সম্মুখীন কিয়ামোন পর্যন্ত সৈন্যশ্রেণী বিন্যাস করল।
4 তেমন বিপুল সংখ্যা দেখে ইস্লায়েল সস্তানেরা একেবারে সন্ত্রাসিত হয়ে পড়ল ; একে অপরকে বলছিল, 'এরা এবার সারা দেশকেই গ্রাস করবে। এদের ওজনে সর্বোচ্চ পর্বতও দাঁড়াতে পারবে না, সবচেয়ে গভীরতম উপত্যকাও নয়, যত পাহাড়ও নয় !'
5 তারা এক একজন নিজ নিজ অস্ত্র তুলে নিল, এবং যত মিনারের উপরে আগুন জ্বালিয়ে সেদিন সারারাত ধরে প্রহরা দিল।
6 দ্বিতীয় দিনে হলোফের্নেস বেথুলিয়ায় থাকা ইস্রায়েল সন্তানদের সামনে সমস্ত অশ্বারোহী বাহিনীকে বের করে আনলেন,
7 তাদের শহরের দিকে সমস্ত প্রবেশপথ লক্ষ করলেন, জলের উৎসধারার স্থান পেয়ে তা দখল করলেন, এবং সেখানে চারদিকে অস্ত্রসজ্জিত লোকদের মোতায়েন রেখে মহাশিবিরে ফিরে গেলেন।
8 তখন সকল এসৌ-সন্তানদের সকল জননেতা, মোয়াবীয়দের সকল জনপ্রধান ও সমুদ্রতীরের সকল সমাজনেতা তাঁর কাছে এসে বলল,
9 আমাদের সেনানায়ক আমাদের কথা শুনুন, তবে আপনার সেনাদলকে কোন ক্ষতি বহন করতে হবে না।
10 এই জাতির মানুষেরা নিজেদের বর্শার উপরে নয়, পাহাড়পর্বতের উচ্চতার উপরেই নির্ভর করে; তারা সেইখানে তো ওত পেতে রয়েছে; আর আসলে তাদের পর্বতচূড়ার নাগাল পাওয়া আদৌ সহজ ব্যাপার নয়।
11 সুতরাং, হে সেনানায়ক, সাধারণ সংগ্রামে যেমন লড়াই করা হয়, সেইমত আপনি সংগ্রাম করবেন না, তাহলে আপনার সৈন্যদের একজনও মারা পড়বে না।
12 আপনি নিজের শিবিরেই বসে থাকুন, আপনার সমস্ত সৈন্যকেও সেখানে স্থির রাখুন, আর এদিকে আপনার সহকারী যারা, তারাই গিয়ে, পর্বতের পাদতলে যে জলের উৎসধারা নির্গত হয়, তা দখল করুক,
13 কেননা সেইখানে এসে বেথুলিয়ার সকল অধিবাসী জল তোলে; পিপাসাই তাদের নগরকে সঁপে দিতে তাদের বাধ্য করবে; এর মধ্যে আমরা ও আমাদের লোকেরা কাছাকাছি পর্বতচূড়ায় উঠে সেখানে ওত পেতে থাকব এবং নানা প্রহরী দল দেব যেন শহর থেকে কোন মানুষ বের হতে না পারে।
14 ক্ষুধাই তাদের ও তাদের স্ত্রী-পুত্রদের নিঃশেষ করবে, আর খড়্গা তাদের নাগাল পাওয়ার আগে তারা নিজেরাই তাদের ঘরের বাইরে রাস্তায় রাস্তায় শুয়ে পড়বে।
15 এভাবে, তারা যে আপনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে ও শান্তির মনোভাবে আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অস্বীকার করেছে, এর জন্য আপনি তাদের ভয়ঙ্কর প্রতিফল দেবেন।'
16 তাদের এই প্রস্তাবে হলোফের্নেস ও তাঁর পরিষদেরা প্রীত হলেন, আর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, সেই প্রস্তাব-মত কাজ করবেন।
17 তাই সেই অনুসারে মোয়াবীয়দের দল এগিয়ে গেল, ও তাদের সঙ্গে পাঁচ হাজার আসিরীয় যোগ দিল : তারা উপত্যকায় ঢুকে ইস্রায়েল সন্তানদের জলের সমস্ত প্রণালী ও উৎসধারা দখল করল।
18 সেইসঙ্গে এদোমীয়েরা ও আম্মোনীয়েরা, দোখানের উল্টো দিকে যে পাহাড়, তার উপরে উঠে সেখানে ওত পেতে থাকল। তারা তাদের কয়েকটা দলকে দক্ষিণ-পুরেও, এগ্নেবেলের উল্টো দিকে, পাঠাল; এই এপ্লেবেল খুইয়ের কাছাকাছি, মোর খাদনদীর ধারে অবস্থিত। আসিরীয়দের বাকি সৈন্যদল সমভূমির শিবিরেই থাকল : তারা গোটা অঞ্চল জুড়ে একেবারে ঘন ঘন হয়ে বিস্তৃত ছিল। তাঁবু ও মালপত্র বিপুল এক রাশি বলে প্রতীয়মান ছিল, বস্তুত তারা ছিল সীমাহীন এক লোকারণ্য।
19 তখন ইস্রায়েল সস্তানেরা তাদের ঈশ্বর প্রভুর কাছে চিৎকার করল, তাদের প্রাণ হতাশ হয়ে পড়েছিল, কেননা শত্রুদল চারদিকেই তাদের ঘিরে ফেলেছিল : তাদের মধ্য দিয়ে যাওয়ার কোন উপায় ছিল না।
20 আসিরীয় সৈন্যসামন্ত, তাদের পদাতিক সৈন্য, রথ ও অশ্বারোহী, তারা সকলে মিলে চৌত্রিশ দিন তাদের চারদিকে ঘিরে থাকল ; বেথুলিয়ার অধিবাসীদের সমস্ত পাত্র জলশূন্য ছিল,
21 সমস্ত পুকুরও শূন্য হতে চলছিল, কোনও দিনও একটি মানুষ তৃপ্তির সঙ্গে জল আর খেতে পারল না, কেননা নিরূপিত পরিমাণেই জল সরবরাহ করা হত।
22 তাদের ছোট ছেলেরা নিঃশেষিত হতে লাগল, স্ত্রীলোকেরা ও তরুণেরাও পিপাসায় দুর্বল হয়ে শহরের রাস্তা-ঘাটে পড়তে লাগল; তাদের মধ্যে আর তেজটুকু রইল না।
23 তখন যুবকেরা, স্ত্রীলোকেরা ও ছেলেমেয়েরা, গোটা জনগণই ভিড় করে উজ্জিয়ার কাছে ও শহরের জননেতাদের কাছে এসে চিৎকার করতে করতে প্রবীণবর্গের সামনে বলে উঠল :
24 আমাদের ও আপনাদের মধ্যে প্রভুই বিচারক হোন, কেননা আসিরীয়দের সঙ্গে শাস্তির প্রস্তাব অস্বীকার করে আপনারাই এত ভারী অমঙ্গল ঘটিয়েছেন।
25 আমাদের সাহায্য করবে, এখন আর কেউ নেই, কেননা ঈশ্বর ওদের হাতে আমাদের তুলে দিয়েছেন, যেন আমরা পিপাসা ও তীব্র যন্ত্রণায় ওদের সামনে নিঃশেষিত হয়ে পড়ি।
26 ওদের সঙ্গে সঙ্গেই ভিতরে ডেকে আনুন ; গোটা নগরীকে হলোফের্নেসের লোকদের হাতে ও তাঁর সমস্ত সৈন্যদলের হাতে লুটপাটের জন্য তুলে দেওয়া হোক;
27 বস্তুত পিপাসায় মরার চেয়ে ওদের লুণ্ঠিত সম্পদ হওয়াই আমাদের পক্ষে ভাল ; ওদের দাস হব বই কি, কিন্তু আমাদের প্রাণ কমপক্ষে বাঁচবে, এবং নিজেদের চোখে আমাদের বালকদের মৃত্যু দেখতে বাধ্য হব না, আমাদের স্ত্রীলোকদের ও ছেলেদেরও প্রাণত্যাগ করতে দেখব না।
28 আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে স্বর্ণ, পৃথিবী ও আমাদের পিতৃপুরুষদের প্রভু আমাদের সেই ঈশ্বরকেই সাক্ষীরূপে আহ্বান করছি, যিনি আমাদের পাপের জন্য ও আমাদের পিতৃপুরুষদের অপরাধের জন্য আমাদের শাস্তি দিচ্ছেন, তিনিই যেন আজকের মত এমন অবস্থায় আমাদের আর ফেলে না রাখেন।
29 তখন জনসমাবেশের মধ্যে তিক্ত ক্রন্দন উঠল ; তারা তাদের ঈশ্বর প্রভুর কাছে জোর গলায় চিৎকার করে মিনতি করতে লাগল।
30 উজ্জিয়া তাদের উদ্দেশ করে বললেন, 'ভাই সকল, সাহস ধর; এসো, আমরা আর পাঁচ দিন দাঁড়াই, এই সময়ের মধ্যে আমাদের ঈশ্বর প্রভু আমাদের প্রতি আবার তাঁর দয়া দেখাবেন, কেননা তিনি যে শেষ পর্যন্তই আমাদের ত্যাগ করবেন, তা সম্ভব হতে পারে না।
31 কিন্তু, এই দিনগুলি শেষে যদি কোন সাহায্য না আসে, তবে আমি তোমাদের কথামত কাজ করব।"
32 তাই বলে তিনি লোকদের যে যার এলাকায় বিদায় দিলেন : স্ত্রীলোকদের ও ছেলেমেয়েদের ঘরে পাঠিয়ে পুরুষেরা নগরপ্রাচীর ও দুর্গগুলোর উপরে গেল। নগরী জুড়ে মহা হতাশা বিরাজ করছিল।