1 অষ্টাদশ বর্ষে, প্রথম মাসের দ্বাবিংশ দিনে, আসিরিয়া-রাজ নেবুকাফ্লেজারের প্রাসাদে একথা ছড়িয়ে পড়ল যে, তিনি সকল দেশের উপর প্রতিশোধ নেবেন, যেইভাবে হুমকি দিয়েছিলেন।
2 তাঁর সকল পরিষদ ও সেনাপতিকে কাছে আহ্বান করে তিনি তাদের সঙ্গে গোপন মন্ত্রণাসভায় বসে নিজেরই মুখে তাদের কাছে সেই দেশগুলির সমস্ত শঠতা বিস্তারিত ভাবেই ব্যক্ত করলেন।
3 তারা তখন এই সিদ্ধান্ত নিল যে, যে কেউ রাজার আহ্বানে সাড়া দেয়নি, তাকে শাস্তি দিয়ে নিঃশেষে ধ্বংস করা হবে।
4 মন্ত্রণাসভা শেষ হলে আসিরিয়া-রাজ নেবুকাদেজার যাঁকে কেবল নিজেরই অধীনে রাখছিলেন, তাঁর সৈন্যসামন্তের প্রধান সেনাপতি সেই হলোফের্নেসকে ডেকে বললেন,
5 “সারা পৃথিবীর প্রভু মহারাজ এই কথা বলছেন : দেখ, তুমি আমার অধিনায়ক রূপে বেরিয়ে পড়ে বীরযোদ্ধাদের সঙ্গে করে নাও : এক লক্ষ কুড়ি হাজার পদাতিক সৈন্য, ও অশ্বারোহী সহ বারো হাজার ঘোড়ার দল,
6 তারপর পাশ্চাত্য সকল দেশের বিরুদ্ধে রণ অভিযান চালাও, কারণ সেই সকল অঞ্চল আমার আহ্বান অমান্য করেছে।
7 ওদের সকলকে তুমি দাসত্বের প্রমাণস্বরূপ মাটি ও জল প্রস্তুত করতে আজ্ঞা করবে, কারণ আমি ক্রোধে ওদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার সৈন্যদলের পায়ে গোটা পৃথিবীর বুক আচ্ছাদিত করব এবং লুট করার জন্য ওদের সবকিছু আমার সৈন্যদলের অধিকারে দেব।
8 ওদের মধ্য থেকে যারা মারা পড়বে, তাদের মৃতদেহে ওদের সব উপত্যকা ভরে যাবে, এবং যত জলস্রোত যত নদী তাদের লাশে এমন পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে যে, জল উপচে পড়বে ;
9 ওদের বন্দি সকলকে আমি পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্তই ঠেলে দেব!
10 তাই তুমি গিয়ে ওদের গোটা অঞ্চল আমার জন্য দখল কর, আর যখন ওরা তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করবে, তখন তুমি ওদের শাস্তির দিন পর্যন্ত ওদের আমার জন্য ধরে রাখ।
11 কিন্তু ওরা প্রতিরোধ করলে তবে তোমার চোখ যেন দয়া না দেখায় : তোমার হাতে সঁপে দেওয়া দেশ জুড়ে তুমি ওদের সকলকে মেরে ফেল ও সমস্ত কিছু লুটে নাও।
12 কেননা, আমার জীবনের দিব্যি ও আমার রাজ্যের প্রতাপেরও দিব্যি — আমি একথা বললাম, আমি একাজ নিজেরই হাতে সাধন করব!
13 তুমি কিন্তু সাবধান থাক : তোমার প্রভুর একটা কথাও অবহেলা করো না, বরং ইতস্তত না করে আমার দেওয়া সমস্ত আজ্ঞা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পালন কর।
14 তাঁর প্রভুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হলোফের্নেস সঙ্গে সঙ্গে আসিরিয়ার সৈন্যদলের সেনাপতিদের, অধিনায়কদের ও নায়কদের সঙ্গে সঙ্গে ডেকে সমবেত করলেন;
15 পরে যুদ্ধের জন্য সেরা যোদ্ধাদের গণনা করলেন— যেইভাবে তাঁর প্রভু তাঁকে আদেশ দিয়েছিলেন: এদের সংখ্যা ছিল এক লক্ষ কুড়ি হাজার, উপরন্তু বারো হাজার অশ্বারোহী তীরন্দাজ ;
16 এদের সকলকে তিনি যুদ্ধ-বিন্যাস অনুসারে শ্রেণিভুক্ত করলেন।
17 মাল বহনের জন্য তিনি বহু বহু উট, গাধা ও খচ্চর, এবং খাদ্য সরবরাহের জন্য অগণ্য মেষ, বলদ ও ছাগ নিলেন।
18 আরও, প্রত্যেকটি যোদ্ধার জন্য তিনি প্রচুর বরাদ্দ খাবার ও রাজার ভাণ্ডার থেকে আনা যথেষ্ট সোনা-রুপো বণ্টন করলেন।
19 পরে, নিজের রথগুলো, অশ্বারোহী ও সেরা পদাতিক সৈন্য দিয়ে পশ্চিম দেশ নিমজ্জিত করার জন্য তিনি ও তাঁর সৈন্যদল, রাজা নেবুকাদ্রেজারের আগে আগে, রণ-অভিযানে রওনা হলেন।
20 তাদের সঙ্গে এক বিপুল লোকারণ্য যোগ দিল, তারা পঙ্গপাল ও পৃথিবীর ধুলার মত এমনই বহুসংখ্যক ছিল, যা তাদের মহাপরিমাণের জন্য গণনা করা সম্ভব ছিল না।
21 নিনিভে থেকে রওনা হয়ে তারা তিন দিন বেস্তিলেৎ সমভূমির দিকে চলল, পরে বেক্তিলেৎ থেকে এগিয়ে গিয়ে, উত্তর কিলিকিয়ার বাঁ দিকে যে পর্বত রয়েছে, তার কাছাকাছি স্থানে শিবির বসাল।
22 সেখান থেকে তাঁর সমস্ত সৈনাদলকে, পদাতিক সৈন্যকে, অশ্বারোহীকে ও রথ চালিয়ে হলোফের্নেস পর্বতের দিকে চললেন।
23 পরে পুদ ও লুদের মধ্যে এগিয়ে গিয়ে তিনি রাস্সিস-সন্তানদের ও ইসমায়েলীয় সকলকে বন্দি করে নিলেন। খেলেয়োনের দক্ষিণে যে মরুপ্রান্তর, এরা তার অধিবাসী।
24 পরে ইউফ্রেটিস নদী পার হয়ে ও মেসোপটেমিয়ার মধ্য দিয়ে চলে আব্রোন খাদনদীর ধারে ও সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে যত সুরক্ষিত নগর ভূমিসাৎ করলেন ;
25 পরে কিলিকিয়ার সমস্ত অঞ্চল দখল করলেন; যে কেউ তাঁকে প্রতিরোধ করত, তাদের সকলকে নিঃশেষে সংহার করলেন, এবং আরবের সম্মুখীন যে যাফেথ, তার দক্ষিণ অঞ্চলের দিকে এগিয়ে চললেন,
26 মিদিয়ানীয়দের চারদিক থেকে সম্পূর্ণরূপে ঘিরে ফেললেন, তাদের সমস্ত তাঁবু পুড়িয়ে দিলেন, ও তাদের গোবাদি পশুকে লুট করে নিলেন।
27 আবার এগিয়ে চলে তিনি দামাস্কাসের সমভূমিতে নেমে এলেন : তখন গম কাটার সময় ; তিনি তাদের সকল খেতে আগুন লাগালেন, তাদের যত মেষ ছাগের পাল ও গবাদি পশুকে বিনাশ-মানতের বস্তু করলেন, তাদের সমস্ত শহর লুট করলেন, তাদের সকল মাঠ ধ্বংস করলেন ও সকল যুবকদের খঙ্গের আঘাতে মেরে ফেললেন।
28 তখন সমুদ্রতীরের জাতিগুলির মধ্যে, সিদোন ও তুরসের জাতিগুলির মধ্যে, এবং সুর, অকিনার ও যান্নিয়ার সকল জাতির মধ্যে তাঁর বিষয়ে ভয় ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ল। আজোতোসের ও আস্কালোনের অধিবাসীরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ল।