1 অন্ধকার নেমে এলে তাঁর অধিনায়কেরা তাড়াতাড়ি চলে গেল। বাগোয়াস বাইরে থেকে তাঁবু বন্ধ করে তাঁর প্রভুর দৃষ্টি থেকে প্রহরীদের দূরে সরিয়ে দিল; এক একজন সকলে নিজ নিজ বিছানায় গেল, কেননা সকলে শক্তিহীন হয়ে পড়েছিল, যেহেতু অতিরিক্ত আঙুররস পান করেছিল।
2 তাঁবুতে রইলেন কেবল যুদিথ আর বিছানায় শুয়ে পড়া হলোফের্নেস—তাঁর গায়ে ও তাঁর চারপাশে ছড়িয়ে পড়া যত আঙুররস !
3 তখন যুদিথ দাসীকে আদেশ করলেন, যেন সে তাঁর নিজের শোয়ার ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁর ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকে, যেমনটি প্রত্যেক দিন করেছিল; তিনি এই কথা বলে দিয়েছিলেন, তিনি নাকি প্রার্থনার জন্যই বেরিয়ে যাবেন; বাগোয়াসকেও একই কথা বলে দিয়েছিলেন।
4 সেসময় সকলেই তাঁদের সামনে থেকে দূরে সরে গেছিল; শোয়ার ঘরে ছোট-বড় কেউই থেকে যায়নি; তখন যুদিথ হলোফের্নেসের বিছানার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে মনে মনে বললেন, 'হে প্রভু, হে সমস্ত পরাক্রমের ঈশ্বর, আমার হাত যা করতে যাচ্ছে, যেরুসালেমের মহত্তর গৌরবের জন্য তুমি এখন তা সফল কর।
5 এখন তো তোমার আপন উত্তরাধিকার উদ্ধারের চিন্তা করার সময়! যারা আমাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, এখন তো সেই শত্রুদের বিনাশের জন্য আমার পরিকল্পনা সফল করার সময়!'
6 হলোফের্নেসের মাথার দিকে খাটের যে স্তম্ভ ছিল, তার কাছে এগিয়ে এসে যুদিও সেখানে ঝোলা তাঁর তলোয়ার খুলে নিলেন,
7 এবং খাটের কাছে এগিয়ে গিয়ে তাঁর মাথার চুল ধরে বলে উঠলেন, 'হে ইস্রায়েলের পরমেশ্বর প্রভু, এদিনে আমাকে শক্তি দাও!'
8 এবং যথাশক্তি তাঁর গলায় দু'বার আঘাত হেনে তাঁর মাথা ছিন্ন করলেন।
9 তারপর তাঁর দেহ বিছানা থেকে নিচে ঠেলে দিলেন ও ছতরি থেকে চাঁদোয়া ছিঁড়ে ফেললেন। তাই করে তিনি বেরিয়ে গিয়ে তাঁর দাসীর হাতে হলোফের্নেসের মাথা তুলে দিলেন,
10 আর দাসী মাথাটা খাদ্য-সামগ্রীর থলিতে রাখল। তাঁরা দু'জনে প্রথামত প্রার্থনার জন্য একসঙ্গে বেরিয়ে গেলেন; শিবিরের মধ্য দিয়ে গিয়ে তাঁরা গিরিখাত ঘেঁষে বেথুলিয়ার দিকে পর্বতে গিয়ে উঠে নগরদ্বারে এসে পৌঁছলেন।
11 দূর থেকে যুদিথ নগরদ্বারের প্রহরী দলকে উদ্দেশ করে জোর গলায় বললেন, ‘খুলে দাও, নগরদ্বার খুলে দাও : ঈশ্বর, আমাদের ঈশ্বর এখনও আমাদের সঙ্গে আছেন! তিনি এখনও ইস্রায়েলের মধ্যে তাঁর শক্তি ও শত্রুদের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতাপ দেখাবেন, যেমনটি আজ প্রমাণ করেছেন।
12 শহরবাসীরা তাঁর গলা শোনামাত্র নগরদ্বারের দিকে ছুটে গেল ও প্রবীণবর্গকে ডাকল।
13 ছোট-বড় সকলেই ছুটে এল, কারণ তাঁর আসাটা অপ্রত্যাশিতই ছিল নগরদ্বার খুলে দিয়ে তারা সেই দু'জনকে ভিতরে গ্রহণ করল, এবং আলো পাবার জন্য আগুন জ্বালিয়ে তাঁদের চারপাশে জড় হল।
14 যুদিথ জোর গলায় তাদের বললেন : 'ঈশ্বরের প্রশংসা কর, তাঁর প্রশংসা কর! ঈশ্বরের প্রশংসা কর, কারণ তিনি ইস্রায়েলকুল থেকে আপন দয়া ফিরিয়ে নেননি, বরং এই রাতে আমার হাত দ্বারা আমাদের শত্রুদের আঘাত করলেন।
15 থলি থেকে মাথাটা বের করে তিনি তা সকলের দৃষ্টিগোচরে তুলে ধরলেন; বললেন, 'এই যে আসিরিয়ার সৈন্যসামন্তের প্রধান সেনাপতি হলোফের্নেসের মাথা! এই যে সেই চাদোয়া, যার নিচে মাতাল অবস্থায় সে শুয়ে পড়ছিল। ঈশ্বর একটি নারীর হাত দ্বারাই তাকে আঘাত করলেন।
16 ঈশ্বরের জয়! তিনিই আমার এই কাজে আমাকে রক্ষা করেছেন; কেননা আমার মুখমণ্ডল তাকে ভোলালে সে নিজের সর্বনাশ ঘটাল, কিন্তু আমার সঙ্গে এমন কোন অন্যায় করতে পারেনি, যা আমার কলুষ ও লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।'
17 আবেগের আতিশয্যে গোটা জনগণ ভূমিষ্ঠ হয়ে ঈশ্বরের আরাধনা করল; তারা একসুরে বলে উঠল, 'হে আমাদের ঈশ্বর, তুমি ধন্য! তুমিই আজ তোমার আপন জনগণের শত্রুদের পরাস্ত করেছ।
18 উজ্জিয়া তখন যুদিথকে বললেন, “পৃথিবীর বুকে যত নারীর চেয়ে, পরাৎপর পরমেশ্বরের সম্মুখে, হে কন্যা, তুমিই ধন্যা; আর আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা যিনি, সেই পরমেশ্বর প্রভুও ধন্য! তিনিই তো আমাদের শত্রুদের নেতার মাথা কেটে দিতে আজ তোমাকে চালিত করেছেন।
19 সত্যিই, যে সাহস তুমি দেখিয়েছ, তা মানব-হৃদয় থেকে কখনও অতীত হবে না; তারা চিরকালের মত ঈশ্বরের শক্তির কথা স্মরণ করবে।
20 ঈশ্বর এমনটি মঞ্জুর করুন, তোমার এই মহাকীর্তির জন্য তুমি যেন নিত্যই মহিমার পাত্রী হতে পার; প্রতিদানে তিনি তোমাকে মঙ্গলদানে পরিপূর্ণ করুন, কারণ আমাদের জাতির অবনতির দিনে তুমি তৎপরতার সঙ্গে নিজের প্রাণ বিপন্ন করেছ, এবং আমাদের ঈশ্বরের সামনে ন্যায় পথে চলে আমাদের অবমাননা থেকে আমাদের উত্তোলন করেছ।' গোটা জনগণ তখন বলে উঠল, 'আমেন, আমেন!'