1 ইতিমধ্যে আসিরিয়ার সৈন্যদলের প্রধান সেনাপতি হলোফের্নেসকে এই খবর জানানো হয়েছিল যে, ইস্রায়েল সন্তানেরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে: তারা পার্বত্য যত প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়েছে, যত পর্বতচূড়ায় গড় স্থাপন করেছে, ও সমতল ভূমিতে কতগুলো বাধা বসিয়েছে।
2 তিনি মহাক্রোধে জ্বলে উঠলেন, এবং মোয়াবের সকল নেতাকে, আম্মোনের সমস্ত অধিনায়ক ও সমুদ্রতীরের অঞ্চলগুলোর সকল সমাজনেতাকে কাছে আহ্বান করে
3 তাদের বললেন, 'হে কানানের মানুষ, তোমরা আমাকে একটু অবগত কর, এই জাতি পর্বতমালায় যার বসতি, তা কেমন জাতি? তারা যে শহরগুলিতে বাস করে, সেগুলো কেমন? তাদের সৈন্যদের সংখ্যা কত? তাদের শক্তি ও তাদের তেজের উৎস কী? তাদের সৈন্যদলের রাজা ও নেতা হিসাবে কে দাঁড়িয়েছে?
4 পাশ্চাত্য জাতিগুলো যেমন করেছে, তারা তেমনিভাবে আমার অপেক্ষায় থাকতে কেন রাজি হয়নি?'
5 সকল আম্মোনীয়দের নেতা আকিওর তাঁকে উত্তরে বললেন, 'আমার প্রভু তাঁর এই দাসের মুখের উত্তর মনোযোগ দিয়ে শুনুন! আপনি এই যে জায়গায় আছেন, তার কাছাকাছি পর্বতমালার উপরে যে জাতি বাস করে, তার সম্বন্ধে আমি আপনাকে সত্যকথা বলব, আপনার এই দাসের মুখ থেকে কোন মিথ্যা বের হবে না।
6 এই জাতি কান্দীয়দের বংশধরদের নিয়েই পড়া।
7 প্রথমে ওরা মেসোপটেমিয়ায় গিয়ে বসতি করল, কারণ ওদের যে পিতৃপুরুষেরা কান্দীয়দের দেশে বসবাস করছিল, ওরা তাদের দেব-দেবীর অনুগামী হতে চাচ্ছিল না।
8 ওরা তাদের পিতৃপুরুষদের ঐতিহ্য ত্যাগ করে স্বর্গেশ্বরকে উপাসনা করেছিল, সেই যে ঈশ্বরকে ওরা জানতে পেরেছিল। এজন্য ওদের পিতৃপুরুষেরা নিজেদের দেব-দেবীর সামনে থেকে ওদের দূর করে দিল, আর ওরা মেসোপটেমিয়ায় আশ্রয় নিয়ে সেখানে বহুদিন ধরে থাকল।
9 কিন্তু যে দেশ ওদের আশ্রয় দিয়েছিল, ওদের ঈশ্বর সেই দেশ থেকে বেরিয়ে যেতে ও কানান দেশে আসতে ওদের আজ্ঞা দিলেন। আর আসলে ওরা এখানে বসতি করল, এবং প্রচুর পরিমাণ সোনা-রুপো ও গবাদি পশু অর্জন করে ধনবান হয়ে উঠল।
10 তারপর, সমস্ত কানান দেশ দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত হওয়ায় ওরা মিশরে গেল, এবং যতদিন ওদের বাঁচিয়ে রাখা হল, ওরা সেইখানে থাকল। এমনকি, সেখানে ওরা এমন বিপুল এক লোকসমাজ হয়ে উঠল যে, ওদের বংশধরদের সংখ্যা গণনা করা আর সম্ভব হল না।
11 কিন্তু মিশর-রাজ ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন, তিনি ইট তৈরি করতে ওদের বাধ্য করলেন, ওদের নত করা হল, ক্রীতদাসেরই মত ওদের সঙ্গে ব্যবহার করা হল।
12 ওরা ওদের ঈশ্বরের কাছে চিৎকার করল, আর তিনি সমগ্র মিশর দেশ এমন শাস্তি দানে আঘাত করলেন, যার প্রতিকার ছিল না। সেজন্য মিশরীয়েরা নিজ দেশ থেকে ওদের দূর করে দিল।
13 ঈশ্বর ওদের সামনে লোহিত সাগর শুষ্ক করে দিলেন
14 এবং সিনাই ও কাদেশ-বার্নেয়ার পথ দিয়ে ওদের চালনা করলেন। মরুপ্রান্তরের যত অধিবাসীদের দূর করে দিয়ে
15 ওরা আমোরীয়দের দেশে বসতি করল, এবং ওদের শক্তি হেসবোন-নিবাসীদের নিঃশেষ করে দিল; পরে যদন পার হয়ে ওরা এই সমস্ত পর্বত দখল করে নিল।
16 নিজেদের সামনে থেকে ওরা কানানীয়, পেরিজীয়, যেবুসীয়, সিখেমীয় ও সকল গির্গাশীয়কে দেশছাড়া করে বহু বছর ধরে তাদের অঞ্চলে বসবাস করল।
17 প্রকৃতপক্ষে, যতদিন ওরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করল না, ততদিন ওদের মধ্যে সমৃদ্ধি ছিল, কেননা ওদের সঙ্গে যে ঈশ্বর, তিনি তো দুষ্কর্ম ঘৃণাই করেন।
18 কিন্তু, তিনি যে পথ ওদের জন্য নির্দিষ্ট করেছিলেন, যখন ওরা তা ছেড়ে সরে গেল, তখন বহু যুদ্ধ-সংগ্রামে নিদারুণ ভাবেই পরাজিত হল, বন্দি অবস্থায় বিদেশেই ওদের নিয়ে যাওয়া হল, ওদের ঈশ্বরের মন্দির ধূলিসাৎ করা হল, আর ওদের শহরগুলো ওদের শত্রুদের হাতে পড়ল।
19 আচ্ছা, এখন ওদের ঈশ্বরের কাছে আবার ফিরে, যে সমস্ত জায়গা থেকে ওদের ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, ওরা সেই সমস্ত জায়গায় ফিরে এসেছে; ওদের পবিত্রধাম যেখানে রয়েছে, সেই যেরুসালেমকে আবার দখল করেছে, এবং যে সমস্ত পর্বত আগে জনশূন্য ছিল, ওরা সেইখানে বসতি স্থাপন করেছে।
20 এখন, হে মহারাজ, হে প্রভু আমার, এই জাতি তার ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করে যদি তাদের মধ্যে কোন অপরাধ থাকে, অর্থাৎ আমরা যদি বুঝি যে, ওদের মধ্যে এই বাধা রয়েছে, তবে আসুন, এগিয়ে গিয়ে ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি।
21 অন্যদিকে ওদের লোকদের মধ্যে যদি কোন অপরাধ না থাকে, তবে আমার প্রভু পিছটান দিন, পাছে তাদের ঈশ্বর যিনি, সেই প্রভু তাদের ঢালস্বরূপ হয়ে দাঁড়ান আর আমরা সারা পৃথিবীর সামনে তাচ্ছিল্যের বস্তু হই।'
22 তখন এমনটি ঘটল যে, আকিওর এই সমস্ত কথা বলা শেষ করামাত্র তাঁবুর চারদিকে দাঁড়িয়ে থাকা লোকের গোটা ভিড় অসন্তোষে গড়গড় করতে লাগল। হলোফের্নেসের অধিনায়কেরা, সমুদ্রতীরের সকল অধিবাসী ও মোয়াবীয়েরা এমন হুমকি দিচ্ছিল যে তারা তাঁকে খণ্ড খণ্ড করবে।
23 তারা বলছিল, 'আমরা ইস্রায়েল সন্তানদের সামনে নিশ্চয়ই ভীত হব না; দেখ, ওরা এমন জাতি, যার সৈন্যদল নেই, তীব্র হামলার সামনে দাঁড়াতে সম্পূর্ণরূপে অক্ষম। সুতরাং এসো, এগিয়ে চলি।
24 হে নৃপতি হলোফের্নেস, আপনার গোটা সৈন্যদল ওদের একেবারে গ্রাস করবে।