1 আর এখন, ইস্রায়েল, মনোযোগ দিয়ে শোন সেই সমস্ত বিধি ও নিয়মনীতি যা আমি তোমাদের শিখিয়ে দিচ্ছি, যেন তা পালন করে তোমরা বাঁচতে পার, এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদের পরমেশ্বর প্রভু যে দেশ তোমাদের দিচ্ছেন, তোমরা যেন সেই দেশে প্রবেশ করে তা অধিকার করতে পার।
2 আমি তোমাদের যা কিছু আজ্ঞা করি, সেই বাণীতে তোমরা আর কিছুই যোগ করবে না, কিছুই বাদও দেবে না। আমি তোমাদের জন্য যে সমস্ত আদেশ জারি করছি, তোমাদের পরমেশ্বর প্রভুর সেই সকল আজ্ঞা পালন করবে।
3 বায়াল-পেওরের ব্যাপারে প্রভু যা করেছিলেন, তা তোমরা স্বচক্ষে দেখেছ : হ্যাঁ, তোমার মধ্য থেকে যারা বায়াল-পেওরের অনুগামী হয়েছিল, তোমার পরমেশ্বর প্রভু তাদের প্রত্যেককেই বিনাশ করেছিলেন।
4 কিন্তু তোমরা যত লোক তোমাদের পরমেশ্বর প্রভুর প্রতি বিশ্বস্ত হয়ে থেকেছিলে, সকলেই আজ জীবিত আছ।
5 দেখ, আমার পরমেশ্বর প্রভু আমাকে যেমন আজ্ঞা করেছেন, আমি তোমাদের তেমন বিধি ও নিয়মনীতি শিখিয়েছি, যেন অধিকার করার জন্য তোমরা যে দেশে প্রবেশ করতে যাচ্ছ, সেই দেশে সেগুলো পালন কর।
6 সুতরাং তোমরা সেগুলোকে মেনে চলবে ও পালন করবে, কেননা জাতিগুলোর সামনে তা ই হবে তোমাদের প্রজ্ঞা ও সুবুদ্ধির পরিচয় ; এই সমস্ত বিধির কথা শুনে তারা বলবে: এই মহাজাতির মানুষই একমাত্র প্রজ্ঞাবান ও সুবুদ্ধিসম্পন্ন লোক।
7 আসলে, এমন কোন বড় দেশ আছে, যার দেবতা তার তত নিকটবর্তী, আমাদের পরমেশ্বর প্রভু আমাদের যত নিকটবর্তী যখনই আমরা তাঁকে ডাকি?
8 আর আমি আজ তোমাদের সামনে যে সমস্ত বিধান তুলে ধরলাম, এমন কোন বড় দেশ আছে, যার বিধি ও নিয়মনীতি তেমনি ধর্মসম্মত?
9 কিন্তু তুমি নিজের বিষয়ে সাবধান, অতি সাবধান থাক, পাছে যে সকল ব্যাপার তুমি নিজের চোখে দেখেছ, তা ভুলে যাও : না, তা যেন তোমার সমস্ত জীবনকালে তোমার হৃদয় থেকে চলে না যায়। তুমি তোমার সন্তানদের কাছে ও তোমার সন্তানদের সন্তানসন্ততিদেরও কাছে তা শিখিয়ে দেবে।
10 সেই দিনটির কথা স্মরণ কর, যেদিন তুমি হোরেবে তোমার পরমেশ্বর প্রভুর সাক্ষাতে দাঁড়িয়েছিলে; সেদিন প্রভু আমাকে বলেছিলেন : তুমি আমার কাছে জনগণকে একত্রে সমবেত কর, আমি আমার বাণীগুলো তাদের শোনাব, তারা পৃথিবীতে যতদিন জীবিত থাকে, ততদিন যেন আমাকে ভয় করতে শেখে ও তাদের সন্তানদেরও সেই বাণী শেখায়।
11 তোমরা কাছে এগিয়ে গিয়ে পর্বতের পাদদেশে দাঁড়িয়েছিলে, এবং সেই পর্বত আকাশের অভ্যন্তর পর্যন্তই আগুনে জ্বলছিল, অন্ধকার, মেঘ ও ঘোর তমসা ব্যাপ্ত ছিল।
12 প্রভু আগুনের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে কথা বললেন ; তোমরা কথার সুর শুনছিলে, কিন্তু মূর্তিমান কিছুই দেখতে পাচ্ছিলে না; কেবল একটি সুর ছিল।
13 তিনি তোমাদের কাছে তাঁর আপন সন্ধি প্রকাশ করলেন ও তা পালন করতে তোমাদের আজ্ঞা দিলেন, অর্থাৎ সেই দশ বাণী যা তিনি দু'খানা পাথরফলকে লিপিবদ্ধ করলেন।
14 সেসময়ে তিনি আমাকে বিধি ও নিয়মনীতি তোমাদের শেখাতে আজ্ঞা করলেন, যে দেশ তোমরা অধিকার করতে পার হয়ে যাচ্ছ, সেই দেশে তা যেন পালন কর।
15 “তাই, যেদিন প্রভু হোরেবে আগুনের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, যেহেতু সেদিন তোমরা মূর্তিমান কিছু দেখনি, সেজন্য তোমাদের নিজেদের বিষয়ে খুবই সাবধান হও।
16 পাছে ফ্রন্ট হয়ে তোমরা নিজেদের জন্য কোন দেবতার খোদাই করা মূর্তি তৈরি করতা পুরুষলোকের বা স্ত্রীলোকের প্রতিমূর্তি হোক।
17 পৃথিবীর কোন পশুর প্রতিমূর্তি বা আকাশে উড়ন্ত কোন পাখির প্রতিমূর্তি হোক,
18 ভূচর কোন সরিসৃপের প্রতিমূর্তি বা ভূমির নিচে জলচর কোন প্রাণীর প্রতিমূর্তি হোক না কেন!
19 আরও, আকাশের দিকে চোখ তুলে সূর্য, চন্দ্র ও তারানক্ষত্র, আকাশের সমস্ত তারকা বাহিনী দেখলে তোমরা পাছে ভ্রষ্ট হয়ে সেগুলোর উদ্দেশে প্রণিপাত কর ও সেগুলোর সেবা কর— সেইসব এমন কিছু, যা তোমার পরমেশ্বর প্রভু গোটা আকাশমণ্ডলের নিচে থাকা সকল জাতির কাছে তাদেরই প্রাপ্য বলে ফেলে রেখেছেন।
20 কিন্তু প্রভু তোমাদেরই নিয়েছেন, লোহা ঢালবার হাপর থেকে, সেই মিশর থেকে তোমাদেরই বের করে এনেছেন, যেন তোমরা তাঁর আপন অধিকাররূপে তাঁরই জনগণ হও, যেমনটি আজ আছ।
21 তোমাদের কারণে প্রভু আমার উপর ক্রুদ্ধ হয়ে শপথ করেছেন যে, তিনি আমাকে যদন পার হতে দেবেন না, এবং তোমার পরমেশ্বর প্রভু তোমাকে যে দেশ উত্তরাধিকার-রূপে দিতে যাচ্ছেন, সেই উত্তম দেশে আমাকে প্রবেশ করতে দেবেন না।
22 হ্যাঁ, যদন পার না হয়ে আমাকে এই দেশেই মরতে হবে; তোমরাই পার হয়ে সেই উত্তম দেশের অধিকারী হবে।
23 তোমরা নিজেদের বিষয়ে সাবধান থাক, তোমাদের পরমেশ্বর প্রভু তোমাদের সঙ্গে যে সন্ধি স্থির করেছেন, তা ভুলে যেয়ো না, কোন জিনিসের মূর্তিও তৈরি করো না, কারণ তোমার পরমেশ্বর প্রভু সেই ব্যাপারে তোমাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
24 কেননা তোমার পরমেশ্বর প্রভু সর্বগ্রাসী আগুনস্বরূপ; তিনি এমন ঈশ্বর, যিনি কোন প্রতিপক্ষকে সহা করেন না।
25 সেই দেশে পুত্র পৌত্রদের জন্ম দিয়ে বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছবার পর যদি তোমরা ভ্রষ্ট হও, যদি কোন বস্তুর মূর্তি তৈরি কর, তোমার পরমেশ্বর প্রভুর দৃষ্টিতে যা অন্যায় তেমন কাজই করে যদি তাঁকে ক্ষুব্ধ করে তোল।
26 তবে আমি আজ তোমাদের বিরুদ্ধে স্বর্গমর্তকে সাক্ষী মেনে বলছি: তোমরা যে দেশ অধিকার করতে যদন পার হয়ে যাচ্ছ, সেই দেশ থেকে নিশ্চয়ই এক নিমেষে বিলুপ্ত হবে; সেখানে বহুকাল থাকতে পারবে না, বরং সকলে সম্পূর্ণরূপে উচ্ছিন্ন হবে।
27 প্রশ্ন জাতিগুলোর মধ্যে তোমাদের বিক্ষিপ্ত করবেন; যে জাতিগুলোর মধ্যে প্রভু তোমাদের নিয়ে যাবেন, তাদের মধ্যে তোমরা কেবল অল্পসংখ্যক হয়েই অবশিষ্ট থাকবে।
28 সেখানে তোমরা মানুষের হাতে তৈরী দেবতাদের—কাঠ ও পাথরের তৈরী এমন দেবতাদেরই সেবা করবে, যারা দেখে না, শোনে না, খায় না, ঘ্রাণও নেয় না।
29 কিন্তু সেখানে থেকে যদি তুমি তোমার পরমেশ্বর প্রভুর অন্বেষণ কর, তবে তাঁকে পাবে—সমস্ত হৃদয় দিয়ে ও সমস্ত প্রাণ দিয়ে তাঁর সন্ধান করলেই পাবে।
30 সঙ্কটের মধ্যে থেকে যখন এই সমস্ত তোমার প্রতি ঘটবে, তখন, সেই চরম দিনগুলিতে, তুমি তোমার পরমেশ্বর প্রভুর কাছে ফিরবে ও তাঁর প্রতি বাধ্য হবে।
31 কেননা তোমার পরমেশ্বর প্রভু স্নেহশীল ঈশ্বর; তিনি তোমাকে ত্যাগ করবেন না, এবং শপথ করে তোমার পিতৃপুরুষদের কাছে যে সন্ধি করেছেন, তা ভুলে যাবেন না।
32 পরমেশ্বর যেদিন পৃথিবীর বুকে মানুষকে সৃষ্টি করলেন, সেদিন থেকে যত যুগ কেটেছে, তোমার পূর্ববর্তী সেই যুগগুলিকে জিজ্ঞাসা কর, আকাশমণ্ডলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত এর মত মহান কিছু কি কখনও ঘটেছে? এর মত কোন কথা কি কখনও শোনা হয়েছে?
33 তোমার মত কি আর কোন জাতি ও পরমেশ্বরের কণ্ঠস্বর আগুনের মধ্য থেকে কথা বলতে শুনেছে আর তবুও প্রাণে বেঁচেছে?
34 তোমার পরমেশ্বর প্রভু যেমন মিশরে তোমাদের চোখের সামনে মহা ৩৪ মহা কাজ সাধন করেছেন, কোন দেবতা তেমনি কি নানা কঠোর পরীক্ষা, চিহ্ন ও অলৌকিক লক্ষণে, যুদ্ধ-সংগ্রামে, শক্তিশালী হাতে ও প্রসারিত বাহুতে, নানা ভয়ঙ্কর বিভীষিকার মধ্য দিয়ে অন্য জাতির মধ্য থেকে নিজের জন্য এক জাতিকে তুলে আনতে নিজেই কখনও গিয়েছে?
35 তোমাকেই ওই সবকিছুর দর্শক করা হয়েছে, যেন তুমি জানতে পার যে, প্রভুই পরমেশ্বর, তিনি ছাড়া অন্য কেউ নেই।
36 তোমাকে জ্ঞানশিক্ষা দেবার জন্য তিনি স্বর্গ থেকে তোমাকে তাঁর আপন কন্ঠস্বর শোনালেন, মর্তে তোমাকে তাঁর আপন মহা আগুন দেখালেন, এবং তুমি আগুনের মধ্য থেকে তাঁর আপন বাণী শুনতে পেলে।
37 তিনি তোমার পিতৃপুরুষদের ভালবাসলেন ও তাঁদের পরে তাঁদের বংশধরদের বেছে নিলেন বলেই তাঁর আপন শ্রীমুখ ও মহাপরাক্রম দ্বারা তোমাকে মিশর দেশ থেকে বের করে এনেছেন।
38 যেন তোমার চেয়ে মহান ও পরাক্রমী দেশের মানুষকে তোমার সামনে থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তাদের দেশে তোমাকেই প্রবেশ করান ও তার অধিকার তোমাকেই দান করেন—ঠিক যেমনটি আজ দেখা যাচ্ছে।
39 সুতরাং আজ জেনে নাও, হৃদয়ে এই কথা গেঁথে রাখ যে, উর্ধ্বে সেই স্বর্গে ও নিম্নে এই মর্তে প্রভুই তো পরমেশ্বর, অন্য কেউ নয়।
40 তাই আমি আজ তাঁর যে ৪০ সকল বিধি ও আজ্ঞা তোমাকে দিলাম, তা পালন কর, যেন তোমার মঙ্গল হয়, তোমার পরে তোমার সন্তানদেরও মঙ্গল হয়, এবং তোমার পরমেশ্বর প্রভু যে দেশভূমি চিরকালের মত তোমাকে দিচ্ছেন, সেখানে যেন তুমি দীর্ঘজীবী হয়ে বাস করতে পার।
41 সেসময় মোশী যদনের ওপারে, সূর্যোদয়ের দিকে, তিনটে শহর বেছে নিলেন,
42 যে কেউ তার প্রতিবেশীকে আগে থেকে ঘৃণা না করে পূর্ণ সচেতন না হয়ে বধ করে, তেমন নরঘাতক যেন সেখানে গিয়ে আশ্রয় পেতে পারে ; এই সবগুলোর মধ্যে কোন একটা শহরে গেলে সে নিজেকে বাঁচাতে পারবে।
43 শহর তিনটে এই : রূবেনীয়দের জন্য সমভূমিতে মরুপ্রান্তরে অবস্থিত বেৎসের, পাদীয়দের জন্য গিলেয়াদে অবস্থিত রামোৎ, এবং মানাসীয়দের জন্য বাশানে অবস্থিত গোলান।
44 মোশী ইস্রায়েল সন্তানদের কাছে যে বিধান ব্যক্ত করলেন, সেই বিধান এ।
45 ইস্রায়েল সন্তানেরা মিশর থেকে বেরিয়ে আসবার পর মোশী ঘর্দনের পুবপারে, 80 বে-পেওরের সামনে অবস্থিত উপত্যকায়, হেসবোন-নিবাসী আমোরীয় রাজা সিহোনের দেশে তাদের কাছে এই সকল নির্দেশবাণী, বিধি ও নিয়মনীতি দিলেন।
46 মিশর থেকে বেরিয়ে এলে মোশী ও ইস্রায়েল সন্তানেরা সেই রাজাকে আঘাত করেছিলেন।
47 এবং তাঁর দেশ ও বাশানের রাজা গুণের দেশ—বদনের পুবপারে সূর্যোদয়ের দিকে আমোরীয়দের এই দুই রাজার দেশ,
48 আর্নোন উপত্যকার সীমায় অবস্থিত আরোয়ের থেকে সিরিয়ান পর্বত পর্যন্ত, অর্থাৎ হার্মোন পর্যন্ত গোটা দেশ,
49 এবং পিম্পার পাদদেশে অবস্থিত আরাবা নিম্নভূমির সমুদ্র পর্যন্ত যর্দনের পুবপারে অবস্থিত সমস্ত আরাবা নিম্নভূমি অধিকার করে নিয়েছিলেন।