1 সেদিন যিশু বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে সমুদ্র-কূলে বসলেন,
2 কিন্তু এত বহুলোকের ভিড় তাঁর কাছে জমতে লাগল যে, তিনি একটা নৌকায় উঠে সেইখানে বসলেন। সমস্ত লোক তীরে দাঁড়িয়ে রইল,
3 আর তিনি উপমা-কাহিনীর মধ্য দিয়ে তাদের অনেক কথা বলতে লাগলেন। তিনি বললেন, “দেখ, বীজবুনিয়ে বীজ বুনতে বেরিয়ে পড়ল।
4 বোনার সময়ে কিছু বীজ পথের ধারে পড়ল ; তখন পাখিরা এসে তা খেয়ে ফেলল।
5 আবার কিছু বীজ পাথুরে জায়গায় পড়ল, যেখানে বেশি মাটি ছিল না; তাই মাটি গভীর না হওয়ায় তা শীঘ্র গজিয়ে উঠল,
6 কিন্তু সূর্য উঠলেই তা পুড়ে গেল, ও তার শিকড় না থাকায় শুকিয়ে গেল।
7 আবার কিছু বীজ কাঁটাঝোপের মধ্যে পড়ল ; তাই কাঁটাগাছ বেড়ে তা চেপে রাখল।
8 আবার কিছু বীজ উত্তম মাটিতে পড়ল ও ফল দিল কোনটায় একশ' গুণ, কোনটায় ষাট গুণ, ও কোনটায় ত্রিশ গুণ।
9 যার কান আছে, সে শুনুক।'
10 তখন শিষ্যেরা কাছে এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কেন উপমা-কাহিনীর মধ্য দিয়ে তাদের কাছে কথা বলেন?'
11 তিনি উত্তরে বললেন, 'এর কারণ, স্বর্গরাজ্য সংক্রান্ত রহস্যগুলো তোমাদের বুঝতে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাদের দেওয়া হয়নি;
12 যার আছে তাকে আরও বেশি দেওয়া হবে, আর সে প্রাচুর্যেই থাকবে; কিন্তু যার কিছু নেই, তার যেটুকু আছে তাও তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে।
13 এজন্য আমি তাদের কাছে উপমা-কাহিনীর মধ্য দিয়ে কথা বলি, কারণ তারা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না ও বোঝেও না।
14 ফলে তাদের সম্বন্ধে নবী ইসাইয়ার এই বাণী পূর্ণ হয় :
তোমরা কান পেতে শুনবে, কিন্তু বুঝবে না ;
তোমরা তাকিয়ে দেখবে, কিন্তু দেখতে পারে না,
15 কেননা এই লোকদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেছে,
তারা কানে খাটো হয়ে গেছে, চোখ বন্ধ করে দিয়েছে,
পাছে তারা চোখে দেখে ও কানে শোনে,
হৃদয়ে বোঝে ও পথ ফেরায়,
আর আমি তাদের সুস্থ করি।
16 কিন্তু তোমাদের চোখ সুখী, কারণ দেখতে পায়; তোমাদের কান সুখী, কারণ শুনতে পায়;
17 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা যা দেখছ, তা অনেক নবী ও ধার্মিক মানুষ দেখতে বাসনা করেও দেখতে পাননি; এবং তোমরা যা শুনছ, তা তাঁরা শুনতে বাসনা করেও শুনতে পাননি।
18 তাই তোমরা বীজবুনিয়ের উপমা-কাহিনী মন দিয়ে শোন :
19 যখন কেউ সেই রাজ্যের বাণী শুনে তা বোঝে না, তখন সেই ধূর্তজন এসে তার হৃদয়ে যা বোনা হয়েছিল, তা কেড়ে নেয়; এ হল সেই মানুষ যে পথের ধারে বোনা ।
20 সেও আছে যে পাথুরে মাটিতে বোনা : এ এমন মানুষ যে সেই বাণী শুনতে না শুনতেই তা সানন্দে গ্রহণ করে,
21 কিন্তু তার অন্তরে শিকড় নেই; সে তো ক্ষণস্থির মানুষ, ফলে বাণীর কারণে কোন ক্লেশ বা নির্যাতন দেখা দিলেই সে স্খলিত হয়।
22 সেও আছে যে কাঁটাঝোপের মধ্যে বোনা : এ এমন মানুষ যে সেই বাণী শোনে, কিন্তু এসংসারের চিন্তা ও ধনের মায়া বাণীটা চেপে রাখে; তাই তা ফলহীন হয়।
23 সেও আছে যে উত্তম মাটিতে বোনা : এ এমন মানুষ যে সেই বাণী শুনে তা বোঝে; সে-ই বাস্তবিক ফলবান হয় : সে কখনও একশ' গুণ, কখনও ষাট গুণ, কখনও ত্রিশ গুণ ফল দেয়।
24 তিনি তাদের কাছে আর একটা উপমা-কাহিনী উপস্থাপন করলেন; তিনি বললেন, 'স্বর্গরাজ্য তেমন এক লোকের সঙ্গে তুলনা করা যায়, যে নিজের জমিতে ভাল বীজ বুনল।
25 সকলে যখন ঘুমোচ্ছিল, তখন তার শত্রু এসে ওই গমের মধ্যে শ্যামাঘাসের বীজ বুনে চলে গেল।
26 পরে যখন বীজ গজিয়ে উঠে ফল দিল, তখন শ্যামাঘাসও দেখা দিল।
27 সেই গৃহস্বামীর দাসেরা এসে তাকে বলল, প্রভু, আপনি কি জমিতে ভাল বীজ বোনেননি? তবে শ্যামাঘাস এল কোথা থেকে?
28 সে তাদের বলল, কোন শত্রু এ কাজ করেছে। দাসেরা তাকে বলল, তবে আপনি কি চান, আমরা গিয়ে তা সংগ্রহ করব?
29 সে বলল, না, পাছে শ্যামাঘাস সংগ্রহ করতে করতে তোমরা তার সঙ্গে গমও উপড়ে ফেল।
30 ফসল কাটার সময় পর্যন্ত তোমরা বরং দুই-ই একসঙ্গে বাড়তে দাও, আর ফসল কাটার সময়ে আমি কাটিয়েদের বলব, তোমরা আগে শ্যামাঘাস সংগ্রহ করে তা পোড়াবার জন্য আটি বেঁধে রাখ, কিন্তু গম আমার গোলায় এনে রেখে দাও।'
31 তিনি তাদের কাছে আর একটা উপমা-কাহিনী উপস্থাপন করলেন; তিনি বললেন, 'স্বর্গরাজ্য তেমন একটা সর্ষে দানার মত, যা একজন লোক নিয়ে নিজের জমিতে বুনল।
32 সকল বীজের চেয়ে ওই বীজ ছোট, কিন্তু একবার বেড়ে উঠলে তা যত শাকের চেয়ে বড় হয়; আর এমন গাছ হয়ে উঠে যে, আকাশের পাখিরা এসে তার শাখায় বাসা বাঁধে।'
33 তিনি তাদের কাছে আর একটা উপমা-কাহিনী উপস্থাপন করলেন: “স্বর্গরাজ্য দু এমন খামিরের মত, যা একজন স্ত্রীলোক নিয়ে তিন পাল্লা ময়দার সঙ্গে মাখল, শেষে সমস্তই পেজে উঠল।'
34 যিশু উপমা-কাহিনীর মধ্য দিয়েই লোকদের কাছে এই সমস্ত কথা বলতেন; উপমা না দিয়ে লোকদের কিছুই বলতেন না,
35 যেন নবীর মধ্য দিয়ে উচ্চারিত এই বচন পূর্ণ হয় :
উপমা-কাহিনী বলার জন্যই আমি মুখ খুলব,
এমন কিছু উচ্চারণ করব,
যা জগৎপত্তনের সময় থেকে গুপ্ত।
36 পরে তিনি লোকের ভিড় ছেড়ে বাড়ি ফিরে এলেন। তাঁর শিষ্যেরা কাছে এসে তাঁকে বললেন, “জমির শ্যামাঘাসের উপমা-কাহিনীটার অর্থ বুঝিয়ে দিন।'
37 উত্তরে তিনি বললেন, 'যিনি ভাল বীজ বোনেন, তিনি মানবপুত্র।
38 জমি হল জগৎ, ভাল বীজ রাজ্যের সন্তানেরা, শ্যামাঘাস সেই ধূর্তজনের সন্তানেরা ;
39 যে শত্রু শ্যামাঘাস বুনেছিল, সে দিয়াবল, ফসল কাটার সময় হল অন্তিম কাল, কাটিয়েরা হলেন স্বর্গদূত।
40 সুতরাং যেমন শ্যামাঘাস সংগ্রহ করে তা আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, অন্তিম কালে তেমনি ঘটবে :
41 মানবপুত্র নিজ দূতদের প্রেরণ করবেন ; যা যা স্খলন ঘটায় তাঁরা সেইসব কিছু ও যত জঘন্য কর্মের সাধককে তাঁর রাজ্য থেকে সংগ্রহ করবেন
42 ও তাদের সেই অগ্নিকুণ্ডে ফেলে দেবেন যেখানে হবে কান্না ও দাঁত ঘষাঘষি।
43 তখন ধার্মিকেরা নিজেদের পিতার রাজ্যে সূর্যের মত দীপ্তিমান হয়ে উঠবে। যার কান আছে, সে শুনুক। যা জগৎপত্তনের সময় থেকে গুপ্ত।
44 স্বর্গরাজ্য কোন জমিতে গুপ্ত এমন ধনের মত, যা খুঁজে পেয়ে একজন লোক প্র আবার গোপন করে রাখে; পরে মনের আনন্দে গিয়ে সবকিছু বিক্রি করে সেই জমি কিনে নেয়।
45 আবার, স্বর্গরাজ্য তেমন এক বণিকের মত যে উত্তম মুক্তার খোঁজে বেড়াচ্ছে ;
46 একটা মহামূল্যবান মুক্তা খুঁজে পেয়ে সে গিয়ে সবকিছু বিক্রি করে তা কিনে নেয়।
47 আবার স্বর্গরাজ্য তেমন এক টানা জালের মত, যা সমুদ্রে ফেলা হলে সব ধরনের মাছ সংগ্রহ করে।
48 জালটা ভর্তি হলে লোকে তা ডাঙায় টেনে তোলে, আর সেখানে বসে ভাল মাছগুলো সংগ্রহ করে ঝুড়িতে রাখে, ও মন্দগুলোকে ফেলে দেয় ।
49 অন্তিম কালে তেমনিই ঘটবে দূতেরা এসে ধার্মিকদের মধ্য থেকে দুর্জনদের পৃথক করে দেবেন,
50 ও তাদের সেই অগ্নিকুণ্ডে ফেলে দেবেন যেখানে হবে কান্না ও দাঁত ঘষাঘষি।
51 তোমরা কি এই সমস্ত কিছু বুঝেছ?” তাঁরা বললেন, 'হ্যাঁ।'
52 তখন তিনি তাঁদের বললেন, 'এজন্য যে শাস্ত্রী স্বর্গরাজ্যের শিষ্য হয়েছেন, তিনি তেমন গৃহস্বামীর মত, যে নিজের ভাণ্ডার থেকে নতুন ও পুরাতন দু' রকমেরই জিনিস বের করে আনে।'
53 এই সমস্ত উপমা-কাহিনী শেষ করার পর যিশু সেখান থেকে চলে গেলেন।
54 নিজের দেশে এসে তিনি তাদের সমাজগৃহে লোকদের উপদেশ দিতে লাগলেন ; আর লোকে বিস্ময়মগ্ন হয়ে বলছিল : 'এমন প্রজ্ঞা ও এমন পরাক্রম-কর্মগুলো কোথা - থেকেই বা এর কাছে আসে?
55 এ কি সেই ছুতোরের ছেলে নয়? এর মায়ের নাম কি মারীয়া নয়? এবং যাকোব, যোসেফ, সিমোন ও যুদা কি এর ভাই নয় ?
56 এর বোনেরাও কি সকলে আমাদের এখানে নেই? তবে এই সমস্ত কিছু কোথা থেকেই বা এর কাছে এল?'
57 এতে তিনি তাদের স্খলনের কারণ ছিলেন। কিন্তু যিশু তাদের বললেন, 'নবী কেবল নিজের দেশে ও নিজের পরিবার-পরিজনদের মধ্যেই অসম্মানিত হন!'
58 এবং তাদের অবিশ্বাসের কারণে তিনি সেখানে বহু পরাক্রম-কর্ম সাধন করলেন না।