1 সেসময় যিশু সাব্বাৎ দিনে শস্যখেতের মাঝখান দিয়ে যাচ্ছিলেন, ও তাঁর শিষ্যেরা ক্ষুধার্ত হওয়ায় শিষ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে লাগলেন।
2 `ফরিসিরা তা লক্ষ করে তাঁকে বললেন, 'দেখুন, সাব্বাৎ দিনে যা করা বিধেয় নয়, আপনার শিষ্যেরা তা-ই করছে।''
3 তিনি তাঁদের বললেন, 'দাউদ ও তাঁর সঙ্গীরা ক্ষুধার্ত হলে তিনি যা করেছিলেন, আপনারা কি তা পড়েননি?
4 তিনি তো ঈশ্বরের গৃহে প্রবেশ করলেন, আর সেই যে ভোগ-রুটি যা তাঁর ও তাঁর সঙ্গীদের পক্ষে খাওয়া বিধেয় ছিল না, কেবল যাজকদেরই পক্ষে বিধেয় ছিল, তাঁরা তা খেয়েছিলেন।
5 আর আপনারা কি বিধানে একথা পড়েননি যে, সাব্বাৎ দিনে যাজকেরা মন্দিরে সাব্বাৎ লঙ্ঘন করলেও নির্দোষ থাকে?
6 এখন আমি আপনাদের বলছি, মন্দিরের চেয়ে মহত্তর কিছু এখানে রয়েছে।
7 কিন্তু আমি দয়া চাই, বলিদান নয় একথার অর্থ যে কি, তা যদি আপনারা জানতেন, তবে নির্দোষদের দোষী করতেন না।
8 কেননা মানবপুত্র সাব্বাতের প্রভু।'
9 সেখান থেকে চলে গিয়ে তিনি তাদের সমাজগৃহে প্রবেশ করলেন।
10 আর দেখ একজন লোক ছিল যার একটা হাত গুলো। তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “সাব্বাৎ দিনে কি নিরাময় করা বিধেয়?' অভিপ্রায় ছিল, তাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনতে পারবেন।
11 তিনি তাঁদের বললেন, 'আপনাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি কে, যাঁর একটা মেষ থাকলে আর সেটা সাব্বাৎ দিনে গর্তে পড়ে গেলে তিনি তা ধরে তুলবেন না ?
12 তবে মেষের চেয়ে মানুষের মূল্য অধিক বেশি! অতএব সাব্বাৎ দিনে সৎকর্ম করা বিধেয়।
13 তখন তিনি লোকটিকে বললেন, 'তোমার হাত বাড়িয়ে দাও!' সে হাত বাড়িয়ে দিল, আর তা আবার অন্যটার মত সুস্থ হয়ে উঠল।
14 এতে ফরিসিরা বাইরে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে লাগলেন কি ভাবে তাঁকে ধ্বংস করা যায়।
15 তা জানতেন বিধায় যিশু সেখান থেকে চলে গেলেন। বহু লোক তাঁর অনুসরণ করত, আর তিনি সকলকে নিরাময় করতেন,
16 কিন্তু এই কড়া নির্দেশ দিতেন, তারা যেন তাঁর পরিচয় প্রকাশ না করে,
17 যাতে নবী ইসাইয়ার মধ্য দিয়ে উচ্চারিত এই বচন পূর্ণ হয় :
18 এই যে আমার দাস, তিনি আমার মনোনীতজন,
আমার প্রিয়জন, আমার প্রাণ এঁতেই প্রসন্ন।
আমি তাঁর উপর আমার আত্মার অধিষ্ঠান ঘটাব :
সকল দেশের কাছে তিনি প্রচার করবেন ন্যায়বিচার
19 তিনি জোরে কথা বলবেন না, চিৎকার করবেন না,
রাস্তা-ঘাটে তাঁর কণ্ঠস্বর শোনা যাবে না;
20 তিনি দোমড়ানো নলগাছ ছিঁড়বেন না,
টিমটিমে সলতেও নিভিয়ে দেবেন না,
যতদিন না তাঁর দ্বারা ন্যায়বিচারের বিজয় ঘটে।
21 বিজাতীয়রা তাঁর নামেই প্রত্যাশা রাখবে।
22 তখন অপদূতগ্রস্ত একজন লোককে তাঁর কাছে আনা হল—সে ছিল অন্ধ ও বোবা; আর তিনি তাকে নিরাময় করলেন যেন সেই বোবা কথা বলতে ও দেখতে পায়।
23 সমস্ত লোক স্তম্ভিত হয়ে বলতে লাগল, 'ইনি কি সেই দাউদ সন্তান?'
24 কিন্তু ফরিসিরা তা শুনে বললেন, এ কেবল অপদূতদের প্রধান সেই বেয়েজেবুলের প্রভাবেই অপদূত তাড়ায়।'
25 তাঁদের চিন্তা-ভাবনা জানতেন বিধায় তিনি তাঁদের বললেন, 'বিবাদে বিভক্ত যে কোন রাজ্যের উচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী। বিবাদে বিভক্ত যে কোন শহর বা পরিবারও স্থির থাকতে পারে না।
26 আচ্ছা, শয়তান যদি শয়তানকে তাড়ায়, সে নিজেই বিবাদে বিভক্ত; তবে তার রাজ্য কেমন করে স্থির থাকবে?
27 আর আমি যদি বেয়েজেবুলের প্রভাবে অপদূত তাড়াই, তবে আপনাদের শিষ্যেরা কার প্রভাবেই বা তাদের তাড়ায়? এজন্য তারাই আপনাদের বিচারক হয়ে দাঁড়াবে।
28 কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের আত্মার প্রভাবে অপদৃত তাড়াই, তবে নিশ্চয়ই ঈশ্বরের রাজ্য আপনাদের মাঝে এসেই পড়েছে।
29 একজন বলবান লোকের বাড়িতে ঢুকে কেমন করেই বা একজন তার জিনিসপত্র লুট করতে পারে, যদি না আগে সে সেই বলবান লোককে বেঁধে ফেলে? তবেই সে তার বাড়ির সবকিছু লুট করতে পারে।
30 যে আমার সপক্ষে নয়, সে আমার বিপক্ষে, এবং আমার সঙ্গে যে কুড়োয় না, সে ছড়িয়ে ফেলে।
31 এজন্যই আমি আপনাদের বলছি, মানুষের যে কোন পাপ ও ঈশ্বরনিন্দার ক্ষমা হবে, কিন্তু পবিত্র আত্মা-নিন্দার ক্ষমা হবে না।
32 আর যে কেউ মানবপুত্রের বিরুদ্ধে কোন কথা বলে, সে ক্ষমা পাবে; কিন্তু যে কেউ পবিত্র আত্মার ; বিরুদ্ধেই কথা বলে, সে ক্ষমা পাবে না—ইহকালেও নয়, পরকালেও নয়।
33 তোমরা যদি ভাল গাছের কথা ধর, তবে তার ফলও ভাল হবে, আর যদি মন্দ গাছের কথা ধর, তবে তার ফলও মন্দ হবে; কেননা ফল দ্বারাই গাছ চেনা যায়।
34 হে সাপের বংশ, আপনারা মন্দ হয়ে কেমন করে ভাল কথা বলতে পারেন? কেননা হৃদয় থেকে যা ছেপে ওঠে, মুখ তা-ই বলে।
35 ভাল মানুষ ভাল ভাণ্ডার থেকে ভাল জিনিস বের করে; মন্দ মানুষ মন্দ ভাণ্ডার থেকে মন্দ জিনিস বের করে।
36 আমি আপনাদের বলছি, মানুষ যত ভিত্তিহীন কথা বলে, বিচারের দিনে তার প্রত্যেকটার জন্য কৈফিয়ত দিতে হবে;
37 কারণ আপনার মুখের কথার ভিত্তিতেই আপনাকে ধার্মিক বলে সাব্যস্ত করা হবে, আবার আপনার মুখের কথার ভিত্তিতেই আপনাকে দোষী বলে সাব্যস্ত করা হবে।'
38 তখন কয়েকজন শাস্ত্রী ও ফরিসি তাঁকে বললেন, ‘গুরু, আমরা আপনার কাছে কোন একটা চিহ্ন দেখবার ইচ্ছা করি।
39 তিনি উত্তরে তাঁদের বললেন, 'এই প্রজন্মের অসৎ ও ব্যভিচারী মানুষ একটা চিহ্ন দেখবার দাবি করে, কিন্তু নবী যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্ন এদের দেখানো হবে না।
40 কারণ যোনা যেমন তিন দিন তিন রাত ধরে সেই অতিকায় মাছের পেটে থাকলেন, তেমনি মানবপুত্রও তিন দিন তিন রাত ধরে পৃথিবী-গর্ভে থাকবেন।
41 নিনিতের লোকেরা বিচারে এই প্রজন্মের মানুষদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে এদের দোষী সাব্যস্ত করবে, কেননা যোনার প্রচারে তারা মনপরিবর্তন করেছিল; আর দেখ, যোনার চেয়ে মহত্তর কিছু এখানে রয়েছে।
42 দক্ষিণ দেশের সেই রানী বিচারে এই প্রজন্মের মানুষদের বিপক্ষে উঠে এদের দোষী সাব্যস্ত করবেন, কেননা সলোমনের প্রজ্ঞার উক্তি শুনবার জন্য তিনি পৃথিবীর প্রান্ত থেকে এসেছিলেন ; আর দেখ, সলোমনের চেয়ে মহত্তর কিছু এখানে রয়েছে।
43 অশুচি আত্মা যখন কোন মানুষকে ছেড়ে বেরিয়ে যায়, তখন বিশ্রামের খোঁজে জলহীন নানা জায়গা দিয়ে ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু তা পায় না ;
44 তখন সে বলে, আমি যেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি, আমার সেই ঘরেই ফিরে যাব; কিন্তু ফিরে এসে সে তা শূন্য, মার্জিত ও শ্রীমণ্ডিতই পায়;
45 তখন সে গিয়ে নিজের চেয়ে দুষ্ট অপর সাতটা আত্মাকে সঙ্গে নিয়ে আসে, এবং ভিতরে ঢুকে তারা সেখানে বসতি স্থাপন করে; ফলে সেই মানুষের প্রথম দশার চেয়ে শেষ দশা আরও খারাপ হয়। এই প্রজন্মের দুষ্ট মানুষদের বেলায় ঠিক তাই ঘটবে।'
46 তিনি তখনও লোকদের এই সমস্ত কথা বলছেন, এমন সময় হঠাৎ তাঁর মা ও ভাইয়েরা তাঁর সঙ্গে কথা বলবার জন্য ব্যস্ত হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
47 48 49 এবং নিজের শিষ্যদের দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন, 'এই যে আমার মা; এই যে আমার ভাইয়েরা ;
50 কেননা যে কেউ আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে, সে-ই আমার ভাই ও বোন ও মা।'