Index

উপদেশক - Chapter 9

1 আসলে, এসমস্ত বিষয় ধ্যানে মনোনিবেশ করে আমি বুঝতে পেরেছি যে, ধার্মিক ও প্রজ্ঞাবান এবং তাদের কাজকর্ম সবই পরমেশ্বরের হাতে। মানুষ ভালবাসাকেও জানে না, ঘৃণাও জানে না : তার সামনে সবই অসার!
2 সকলের দশা এক — ধার্মিক কি দুর্জন, শুচি কি অশুচি, যজ্ঞবলি যে উৎসর্গ করে কি যজ্ঞবলি যে উৎসর্গ করে না, ন্যায়বান কি পাপী, শপথ যে করে কি শপথ যে করে না, -সকলের দশা এক।
3 সূর্যের নিচে যা কিছু ঘটে, তার মধ্যে অনিষ্ট ঠিক এ যে, সকলের একই দশা হয় ; তাছাড়া আদমসন্তানদের হৃদয়ও অনিষ্টে ভরা, আর তারা জীবিত থাকতে থাকতে মূর্খতা তাদের হৃদয়ের মধ্যে বসতি করে; শেষে তারা মৃতদের কাছে চলে যায়।
4 আসলে, কে মনোনীত হবে? সকল জীবিতদের জন্য একথা নিশ্চিত যে, মৃত সিংহের চেয়ে বরং জীবিত কুকুরই হওয়া শ্রেয়।
5 জীবিতেরা তো জানে, তাদের মরতে হবে; কিন্তু মৃতেরা কিছুই জানে না; তাদের জন্য আর কোন মজুরি নেই, কারণ তাদের স্মৃতি উবে গেছে।
6 তাদের ভালবাসা, তাদের ঘৃণা, তাদের হিংসা, সবই গেছে; সূর্যের নিচে যা কিছু ঘটে, তাতে তারা আর কখনও অংশ নিতে পারবে না।
7 তবে যাও, আনন্দের মধ্যে তোমার রুটি খাও, হৃষ্টচিত্তে তোমার আঙুররস পান কর, কারণ ইতিমধ্যে তোমার সমস্ত কাজকর্ম পরমেশ্বরের দৃষ্টিতে গ্রহণীয় হয়েছে।
8 তোমার পোশাক সর্বদাই শুভ্র থাকুক, তোমার মাথায় যেন কখনও তেলের অভাব না হয়।
9 সূর্যের নিচে পরমেশ্বর তোমার ক্ষণিকের জীবনের যত দিন তোমাকে দিয়েছেন, সেই সমস্ত দিন ধরে তোমার প্রিয়া বধূর সঙ্গে সুখে জীবনযাপন কর, কারণ এজীবনের মধ্যে ও সূর্যের নিচে যে কষ্ট ভোগ করছ, তার মধ্যে এ-ই তোমার দশা।
10 তুমি যে কোন কাজ করতে পাও, যথাশক্তিতে তা করে যাও ; কারণ তোমাকে যেখানে যেতে হচ্ছে, সেই পাতালে কাজও নেই, পরিকল্পনা, বিদ্যা ও প্রজ্ঞাও নেই।
11 আমি সূর্যের নিচে এও লক্ষ করলাম : দৌড় যে দ্রুতগামীদেরই হয়, এমন নয় ; যুদ্ধও বীরদের নয়, খাদ্যও প্রজ্ঞাবানদের নয়, ধনও কুটিলদের নয়, অনুগ্রহলাভও বুদ্ধিমানদের নয়, যেহেতু কাল ও দৈব সকলেরই প্রতি ঘটে।
12 বাস্তবিকই মানুষও তার কাল জানে না ; অশুভ জালে ধরা পড়া মাছের মত, ফাঁদে ধরা পড়া পাখির মত, তেমনি আদমসন্তানেরাও দুর্দশায় ধরা পড়ে থাকে, যখন তা তাদের উপরে অকস্মাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে।
13 সূর্যের নিচে আমার অর্জিত প্রজ্ঞার আর একটা উদাহরণ দেব, আর তা আমার কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় :
14 ক্ষুদ্র একটা শহর ছিল, বাসিন্দা ও স্বপ্ন ছিল : পরে মহান কোন এক রাজা এসে তা অবরোধ করে তার গায়ে বড় বড় অবরোধ-যন্ত্র গাঁথলেন।
15 কিন্তু সেই শহরের মধ্যে প্রজ্ঞাবান একজন গরিব লোক ছিল যে তার প্রজ্ঞা দ্বারা শহরটা বাঁচাতে পারল, কিন্তু সেই গরিব লোকের কথা কেউই আর স্মরণ করল না।
16 তাই আমি বলছি : বলের চেয়ে প্রজ্ঞাই শ্রেয়, কিন্তু গরিবের প্রজ্ঞাকে তুচ্ছ করা হয়, তার কথায় কেউ কান দেয় না।
17 নির্বোধদের প্রধানের চিৎকারের চেয়ে প্রজ্ঞাবানদের শান্ত কথাই বেশি শোনা হয়।
18 যুদ্ধাস্ত্রের চেয়ে প্রজ্ঞা শ্রেয়, কিন্তু একজনমাত্র পাপী বহু মঙ্গল নষ্ট করে।