Index

উপদেশক - Chapter 2

1 আমি ভাবলাম, “আচ্ছা, আমি আমোদ পরীক্ষা করব; দেখতে চাই তার সুখভোগের ফল কি।' কিন্তু দেখ, তাও অসার !
2 হাসির বিষয়ে আমি বললাম, “মূর্খতা!” এবং আমোদের বিষয়ে বললাম, 'এতে কী লাভ?'
3 আমার মন তখনও প্রজ্ঞায় নিবিষ্ট থাকতেই আমি সম্ভৱ নিলাম, উগ্র পানীয় পান করে শরীর খুশি করব, উন্মাদনা আলিঙ্গন করব, যতদিন না আবিষ্কার করতে পারি, আকাশের নিচে যত আদমসন্তান রয়েছে, তাদের নিরূপিত জীবনকালে তাদের পক্ষে কী কী করা ভাল।
4 আমি মহা মহা কাজে হাত দিলাম, নিজের জন্য নানা গৃহ গেঁথে তুললাম, নানা আঙুরখেত প্রস্তুত করলাম।
5 আবার নিজের জন্য অনেক উদ্যান ও ফলবাগান প্রস্তুত করে তার মধ্যে সবরকম ফলগাছ পুঁতলাম;
6 আর সেই সমস্ত চাষভূমিতে সেচের জন্য স্থানে স্থানে পুকুর খনন করলাম।
7 আমি দাস-দাসী কিনলাম, আমার ঘরেও অনেক দাস জন্ম নিল; এবং আমার আগে যেরুসালেমে যাঁরা ছিলেন, সেই সকলের চেয়ে আমার গবাদি পশু ও ছাগ-মেষের পাল বেশিই ছিল।
8 আমি রুপো ও সোনা, এবং নানা রাজার ও নানা প্রদেশের ধন জমালাম ; অনেক গায়ক-গায়িকাকে যোগাড় করলাম, সেইসঙ্গে যোগাড় করলাম একটি উপপত্নীকে, নানা উপপত্নীকে, যারা আদমসন্তানদের পুলকস্বরূপ।
9 আমি মহান হলাম, আমার আগে যাঁরা যেরুসালেমে ছিলেন, সেই সকলের চেয়ে পরাক্রমশালী হলাম ; আমার প্রজ্ঞা কিন্তু আমার কাছেই থাকল!
10 আমার চোখ দু'টো যা কিছু আকাঙ্ক্ষা করত, তা আমি তাদের দিতে অস্বীকার করিনি; আমার হৃদয়কে কোন সুখভোগ করতে বারণ করিনি; বস্তুত আমার সমস্ত পরিশ্রমে আমার হৃদয় আনন্দ পেত : এ হল আমার সমস্ত পরিশ্রমের মজুরি।
11 আমার হাত যে সকল কাজ করেছিল, যে পরিশ্রমে আমি পরিশ্রান্ত হয়েছিলাম, সেই সমস্ত কিছু বিবেচনা করলাম; আর দেখ, সবই অসার, সবই বাতাসের পিছনে ধাওয়া করামাত্র: সূর্যের নিচে কিছুই লাভ নেই!
12 পরে আমি প্রজ্ঞা, মূর্খতা ও উন্মাদনার কথা বিবেচনা করে বসলাম; ভাবলাম, এই রাজার পরে যিনি রাজাসনে বসবেন, তিনি কী করবেন? আগে যা ঘটেছিল, তা-ই মাত্র!
13 তখন আমি লক্ষ করলাম যে, যেমন অন্ধকারের চেয়ে আলোর উপকার বেশি, তেমনি উন্মাদনার চেয়ে প্রজ্ঞারও উপকার বেশি ;
14 হ্যাঁ, প্রজ্ঞাবানের কপালেই তো চোখ থাকে, কিন্তু নির্বোধ অন্ধকারে হেঁটে বেড়ায় ; তবু একথাও জানি যে, দু'জনের শেষ দশা এক।
15 তখন আমি ভাবলাম, যেহেতু নির্বোধের যে দশা, তা আমারও দশা হবে, সেজন্য আমি যে বেশি প্রজ্ঞাবান হয়েছি, তাতে লাভ কী?' এই সিদ্ধান্তে এলাম : এও অসার!
16 কেননা নির্বোধই হোক, প্রজ্ঞাবানই হোক, কারও স্মৃতি চিরস্থায়ী নয়, ভাবীকালে কারও মনে কিছুই থাকবে না। নির্বোধ ও প্রজ্ঞাবান, দু'জনেরই মৃত্যু হবে।
17 তাই আমার চোখে জীবন ঘৃণার বিষয় হল, কেননা সূর্যের নিচে যা কিছু ঘটে, সবই আমার বিতৃষ্ণা জন্মায়, যেহেতু সবই অসার, সবই বাতাসের পিছনে ধাওয়া করামাত্র।
18 আমি সূর্যের নিচে যা কিছুর জন্য পরিশ্রম করলাম, সবই আমার ঘৃণার বিষয় হল, কারণ আমার পরে যে আমার পদে বসবে, তারই হাতে তা রেখে যেতে হবে।
19 আর সে যে প্রজ্ঞাবান হবে বা নির্বোধ হবে, একথা কে জানে? অথচ আমি সূর্যের নিচে যত পরিশ্রম ও বুদ্ধি খাটিয়ে যা কিছু সাধন করলাম, তার ফল সে-ই ভোগ করবে-এও অসার!
20 তাই আমি এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছলাম যে, সূর্যের নিচে যত পরিশ্রমে পরিশ্রান্ত হয়েছিলাম, তার অন্তরে নিরাশ হলাম,
21 কারণ যে মানুষ প্রজ্ঞা, বিদ্যা ও সাফল্যের সঙ্গে পরিশ্রম করেছে, তাকে তার সমস্ত বিষয়সম্পদ এমন অন্যজনের হাতে রেখে যেতে হবে, যে তার জন্য একটুও পরিশ্রম করেনি। এও অসার, এও আদৌ ঠিক নয়!
22 তবে তার সমস্ত পরিশ্রমে ও তার হৃদয়ের সমস্ত উদ্বেগে মানুষ সূর্যের নিচে যে পরিশ্রম করে, সেই পরিশ্রমে তার কী লাভ?
23 কেননা তার সমস্ত দিন ব্যথা ও কষ্টকর দুশ্চিন্তা দ্বারা চিহ্নিত; রাতেও তার হৃদয় বিশ্রাম পায় না। এও অসার!
24 সুতরাং ঘটা করে খাওয়া-দাওয়া ও নিজের পরিশ্রমের মধ্যে নিজেই সুখভোগ করা, মানুষের পক্ষে এর চেয়ে শ্রেয় কিছু নেই; এবং আমি লক্ষ করলাম, এও পরমেশ্বরের হাত থেকে আসে।
25 কেননা কেইবা ঘটা করে খাওয়া-দাওয়া ও সুখভোগ করতে পারে, যদি না এসব কিছু তাঁর হাত থেকে আসে?
26 যে মানুষ তাঁর প্রীতিভাজন, তাকে তিনি প্রজ্ঞা, বিদ্যা ও আনন্দ দান করেন, কিন্তু পাপীকে এমন দণ্ড দেন, সে যেন পরমেশ্বরের প্রীতিভাজনের জন্যই ধন সংগ্রহ ও সঞ্চয় করে। কিন্তু এও অসার, এও বাতাসের পিছনে ধাওয়া করামাত্র।