1 তিনি যা চাচ্ছিলেন জনগণ শুনবে, সেই সমস্ত কথা বলা শেষ করে তিনি ম কাফার্নাউমে প্রবেশ করলেন।
2 একজন শতপতির একটি দাস পীড়িত হয়ে প্রায় মৃত অবস্থায় ছিল; দাসটি শতপতির খুবই প্রিয় ছিল।
3 যিশুর কথা শুনে তিনি ইহুদীদের কয়েকজন প্রবীণকে পাঠিয়ে তাঁর কাছে মিনতি জানালেন যেন তিনি এসে তাঁর দাসকে ত্রাণ করেন।
4 যিশুর কাছে এসে তাঁরা ব্যাকুল মিনতি জানাতে লাগলেন, বললেন, “আপনি যে তাঁর উপকার করবেন, লোকটি তার যোগ্য,
5 কেননা তিনি আমাদের জাতিকে ভালবাসেন; আমাদের সমাজগৃহ নিজেই নিৰ্মাণ করে দিয়েছেন।
6 তাই যিশু তাঁদের সঙ্গে রওনা হলেন। তিনি বাড়ি থেকে আর তত দূরে নন, সেসময়ে শতপতি কয়েকজন বন্ধুর মধ্য দিয়ে তাঁকে বলে পাঠালেন, “প্রভু, কষ্ট করবেন না; আপনি যে আমার গৃহে পদধূলি দেবে, আমি তার যোগ্য নই;
7 এজন্যই আপনার কাছে আসব তেমন যোগ্যও নিজেকে মনে করলাম না। কিন্তু আপনি একটা বাণী দিন আর আমার দাস সুস্থ হয়ে উঠুক।
8 কেননা আমিও কর্তৃপক্ষের অধীনে নিযুক্ত লোক, আবার আমার সৈন্যরাও আমার অধীন; আমি একজনকে “যাও” বললে সে যায়, আর অন্যজনকে “এসো” বললে সে আসে, আর আমার দাসকে "একাজ কর” বললে সে তা করে।
9 এই সকল কথা শুনে, লোকটির বিষয়ে যিশুর আশ্চর্য লাগল, এবং যে লোকের ভিড় তাঁর অনুসরণ করছিল তাদের দিকে ফিরে বললেন, 'আমি তোমাদের বলছি, ইস্রায়েলের মধ্যে এত গভীর বিশ্বাস দেখতে পাইনি।'
10 পরে যাঁদের পাঠানো হয়েছিল, তাঁরা বাড়ি ফিরে গিয়ে দাসকে সুস্থ অবস্থায় পেলেন।
11 কিছু দিন পর তিনি নাইন নামে এক শহরে গেলেন; তাঁর শিষ্যেরা ও বহু লোক তাঁর সঙ্গে পথ চলছিলেন।
12 তিনি নগরদ্বারের কাছে এসেছেন, এমন সময়ে দেখ, লোকেরা একটা মৃত মানুষকে কবরস্থানে নিয়ে যাচ্ছিল সে নিজের মায়ের একমাত্র ছেলে, আর তার মা বিধবা; শহরের অনেক লোক তার সঙ্গে ছিল।
13 তাকে দেখে যিশু দয়ায় বিগলিত হয়ে তাকে বললেন, 'কেঁদো না।'
14 পরে কাছে গিয়ে খাটুলি স্পর্শ করলেন, তখন বাহকেরা থামল। তিনি বললেন, 'তরুণ, তোমাকে বলছি, ওঠ।'
15 আর সেই মৃত মানুষটি উঠে বসল ও কথা বলতে লাগল । আর তিনি তাকে তার মায়ের হাতে তুলে দিলেন।
16 সকলে ভয়ে অভিভূত হল এবং এই বলে ঈশ্বরের গৌরবকীর্তন করল, 'আমাদের মধ্যে এক মহানবীর উদ্ভব হয়েছে ; ঈশ্বর তাঁর আপন জনগণকে দেখতে এসেছেন।'
17 আর সমগ্র যুদেয়ায় ও চারদিকের সারা অঞ্চল জুড়ে তাঁর সম্বন্ধে এই খবর ছড়িয়ে পড়ল।
18 যোহনের শিষ্যেরা তাঁকে এই সকল ঘটনার কথা জানাল, এবং যোহন নিজের দু'জন শিষ্যকে কাছে ডেকে
19 তাদের মধ্য দিয়ে প্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করে পাঠালেন, ‘যিনি আসছেন, আপনিই কি সেই ব্যক্তি? না আমরা অন্যের অপেক্ষায় থাকব ?"
20 তাঁর কাছে এসে সেই দু'জন বলল, 'বাপ্তিস্মদাতা যোহন আমাদের আপনার কাছে একথা জিজ্ঞাসা করতে পাঠালেন যিনি আসছেন, আপনিই কি সেই ব্যক্তি? না আমরা অন্যের অপেক্ষায় থাকব?'
21 সেই ক্ষণেই তিনি অনেক লোককে রোগ-ব্যাধি ও মন্দাত্মা থেকে নিরাময় করলেন, ও অনেক অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি দিলেন ;
22 পরে তিনি তাদের এই উত্তর দিলেন, 'তোমরা যা কিছু শুনেছ ও দেখেছ, তা যোহনকে গিয়ে জানাও : অন্ধ দেখতে পায়, খোঁড়া হেঁটে বেড়ায়, সংক্রামক চর্মরোগে আক্রান্ত মানুষ শুচীকৃত হয়, বধির শুনতে পায়, মৃত পুনরুত্থিত হয়, দীনদরিদ্রদের কাছে শুভসংবাদ প্রচার করা হয়;
23 আর সুখী সেই জন, আমার বিষয়ে যার পদস্খলন হয় না।'
24 যোহনের দূতেরা বিদায় নিলে তিনি লোকদের কাছে যোহনের বিষয়ে কথা বলতে লাগলেন: 'তোমরা প্রান্তরে কী দেখতে গিয়েছিলে? বাতাসে দোলা নলগাছ ?
25 তবে কি দেখতে গিয়েছিলে? মোলায়েম পোশাক-পরা কোন ব্যক্তিকে? দেখ, যারা জমকালো পোশাক পরে ও ভোগবিলাসিতায় দিন কাটায়, তারা তো রাজপ্রাসাদেই থাকে।
26 তবে কী দেখতে গিয়েছিলে? একজন নবীকে? হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, নবীর চেয়েও শ্রেষ্ঠই এক মানুষকে দেখতে গিয়েছিলে।
27 ইনিই সেই ব্যক্তি, যাঁর বিষয়ে লেখা আছে : দেখ, আমি আমার দূত তোমার সামনে প্রেরণ করছি; তোমার সামনে সে তোমার পথ প্রস্তুত করবে।
28 আমি তোমাদের বলছি, নারী-পর্ভজাতদের মধ্যে যোহনের চেয়ে মহান কেউ নেই; তবু ঈশ্বরের রাজ্যে যে ক্ষুদ্রতম, সে তাঁর চেয়ে মহান।
29 যে সমস্ত জনগণ তাঁর কথা শুনল, তারা এবং কর আদায়কারীরাও যোহনের বাপ্তিস্ম গ্রহণ করে ঈশ্বরকে ধর্মময় বলে স্বীকার করল ;
30 কিন্তু ফরিসিরা ও বিধানপণ্ডিতেরা তাঁর হাতে বাপ্তিস্ম গ্রহণ না করে নিজেদের সম্বন্ধে ঈশ্বরের সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিলেন।
31 তাই আমি কার সঙ্গেই বা এই প্রজন্মের মানুষদের তুলনা করব? তারা কিসের মত?
32 তারা এমন ছেলেদের মত যারা বাজারে বসে একজন আর একজনকে চিৎকার করে বলে,
আমরা তোমাদের জন্য বাঁশি বাজালাম,
কিন্তু তোমরা নাচলে না ;
বিলাপগান গাইলাম,
কিন্তু তোমরা কাদলে না।
33 কারণ বাপ্তিস্মদাতা যোহন এসে রুটি খান না ও আঙুররস পান করেন না, আর তোমরা বল, সে ভূতগ্রস্ত।
34 মানবপুত্র এসে আহার ও পান করেন, আর তোমরা বল, ওই দেখ, একজন পেটুক, একটা মাতাল, কর আদায়কারী ও পাপীদের বন্ধু ।
35 কিন্তু প্রজ্ঞা নিজের সকল সন্তান দ্বারা নির্দোষ বলে সাব্যস্ত হয়েছে!'
36 ফরিসিদের একজন তাঁকে নিজের বাড়িতে ভোজে নিমন্ত্রণ করলেন। যখন তিনি সেই ফরিসির বাড়িতে প্রবেশ করে ভোজে বসলেন,
37 তখন সেই শহরের এক পাপিষ্ঠা স্ত্রীলোক হঠাৎ এসে উপস্থিত হল; সে শুনতে পেয়েছিল যে, তিনি সেই ফরিসির বাড়িতে খেতে বসেছেন, তাই সাদা ফটিকের একটা পাত্রে করে সুগন্ধি তেল নিয়ে এসেছিল।
38 তাঁর পিছনে তাঁর পায়ের কাছে বসে কাঁদতে কাঁদতে সে চোখের জলে তাঁর পা ভিজাতে লাগল; পরে নিজের মাথার চুল দিয়ে তা মুছে দিল, ও সেই পা দু'টো চুম্বন করতে করতে সুগন্ধি তেল মাখাতে লাগল ।
39 তা দেখে, যে ফরিসি তাঁকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন, তিনি মনে মনে বললেন, “লোকটা নবী হলে তবে জানতে পারত, তাকে যে স্পর্শ করছে সে কে ও কেমন স্ত্রীলোক, কারণ সে পাপিষ্ঠা।'
40 তখন যিশু তাঁকে উদ্দেশ করে বললেন, 'সিমোন, আপনাকে আমার কিছু বলার আছে।' তিনি বললেন, 'বলুন, গুরু।
41 এক মহাজনের কাছে দু'জন লোক ঋণী ছিল; তার কাছে একজন ছিল পাঁচশ' রুপোর টাকা ঋণী, আর একজন পঞ্চাশ রুপোর টাকা ঋণী।
42 তাদের শোধ করার মত সামর্থ্য না থাকায় তিনি দু'জনের ঋণ মাপ করে দিলেন। আচ্ছা, তাদের মধ্যে কে তাঁকে বেশি ভালবাসবে?
43 সিমোন উত্তর দিলেন, 'আমি মনে করি, তিনি যার বেশি খাণ মাপ করলেন, সে-ই।' তিনি তাঁকে বললেন, 'আপনার বিচার ঠিক।”
44 এবং স্ত্রীলোকটির দিকে ফিরে তিনি সিমোনকে বললেন, 'এই স্ত্রীলোককে দেখছেন? আমি আপনার বাড়িতে প্রবেশ করলাম, আপনি আমার পা ধোবার জল দিলেন না, কিন্তু এই স্ত্রীলোক চোখের জলে আমার পা ভিজিয়ে দিল ও নিজের চুল দিয়ে তা মুছে দিল।
45 আপনি আমাকে চুম্বন করলেন না, কিন্তু যে সময় থেকে এ ভিতরে এল আমার পা চুম্বন করায় ক্ষান্ত হয়নি।
46 আপনি আমার মাথায় তেল মাখিয়ে দিলেন না, কিন্তু এ আমার পায়ে সুগন্ধি তেল মাখিয়ে দিল।
47 এজন্য আপনাকে বলছি, এর যে বহু পাপ, তা ক্ষমা করা হয়েছে, কারণ এ বেশি ভালবাসা দেখিয়েছে। কিন্তু যাকে অল্প ক্ষমা করা হয়, সে অল্প ভালবাসে।
48 পরে তিনি সেই স্ত্রীলোককে বললেন, 'তোমার পাপ ক্ষমা - করা হয়েছে।'
49 যারা তাঁর সঙ্গে ভোজে বসে ছিল, তারা মনে মনে বলতে লাগল, 'এ- কে, যে পাপও ক্ষমা করে ?”
50 তিনি কিন্তু সেই স্ত্রীলোককে বললেন, 'তোমার বিশ্বাস তোমার পরিত্রাণ সাধন করেছে : শান্তিতে যাও।'