1 একদিন তিনি এক জায়গায় প্রার্থনা করছিলেন; যখন প্রার্থনা শেষ করলেন, তখন তাঁর শিষ্যদের একজন তাঁকে বললেন, “প্রভু, আমাদের প্রার্থনা করতে শেখান, যেমন যোহনও নিজের শিষ্যদের শেখালেন।'
2 তিনি তাঁদের বললেন, 'তোমরা যখন প্রার্থনা কর, তখন বল :
পিতা,
তোমার নামের পবিত্রতা প্রকাশিত হোক,
তোমার রাজ্যের আগমন হোক।
3 আমাদের দৈনিক খাদ্য প্রতিদিন আমাদের দান কর
4 এবং আমাদের পাপ ক্ষমা কর,
কারণ আমরাও আমাদের প্রত্যেক অপরাধীকে ক্ষমা করি ;
আর আমাদের পরীক্ষার সম্মুখীন হতে দিয়ো না।
5 তিনি তাঁদের বলে চললেন, 'তোমাদের মধ্যে কারও যদি বন্ধু থাকে, আর সে যদি মাঝরাতে তাকে গিয়ে বলে, বন্ধু, আমাকে তিনখানা রুটি ধার দাও,
6 কারণ আমার এক বন্ধু পথে যেতে যেতে আমার কাছে এসে পড়েছে, ও তাকে খাবার মত দিতে আমার কিছু নেই;
7 আর সেই লোক ভিতর থেকে যদি এই বলে উত্তর দেয়, আমাকে বিরক্ত করো না, এখন তো দরজা বন্ধ, ও আমার ছেলেরা আমার পাশে শুয়ে আছে; তাই আমি উঠে তোমাকে কিছু দিতে পারি না,
8 তাহলে আমি তোমাদের বলছি, সে যদিও বন্ধুত্বের খাতিরে উঠে তা না দেয়, তবু ওর পীড়াপীড়ির জন্যই সে উঠে ওর যত প্রয়োজন তা দিয়ে দেবে।
9 তাই আমি তোমাদের বলছি: যাচনা কর, তোমাদের দেওয়া হবে; খোঁজ, তোমরা খুঁজে পাবে; দরজায় ঘা দাও, তোমাদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হবে।
10 কেননা যে যাচনা করে, সে পায়; আর যে খোঁজে, সে খুঁজে পায় ; আর যে ঘা দেয়, তার জন্য দরজা খুলে দেওয়া হবে।
11 তোমাদের মধ্যে এমন পিতা কি আছে যে নিজের ছেলে মাছ চাইলে মাছের বদলে তাকে সাপ দেবে,
12 কিংবা সে ডিম চাইলে তাকে কাঁকড়া বিছে দেবে?
13 সুতরাং তোমরা মন্দ হয়েও যখন তোমাদের ছেলেদের ভাল ভাল জিনিস দিতে জান, তখন যারা তাঁর কাছে যাচনা করে, স্বর্গস্থ পিতা যে তাদের পবিত্র আত্মাকে দেবেন তা আরও কতই না নিশ্চিত।'
14 তিনি একটা অপসৃত তাড়াচ্ছিলেন, তা ছিল বোবা। অপদূত বেরিয়ে গেলে সেই বোবা কথা বলতে লাগল; আর লোকেরা আশ্চর্য হল।
15 কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, 'এ অপদূতদের প্রধান সেই বেয়েজেবুলের প্রভাবেই অপদূত তাড়ায়।
16 আবার কেউ কেউ তাঁকে যাচাই করার জন্য তাঁর কাছে স্বর্গ থেকে - কোন একটা চিহ্ন দেখার দাবি করল।
17 তাদের চিন্তা-ভাবনা জানতেন বিধায় তিনি তাদের বললেন, 'বিবাদে বিভক্ত যে কোন রাজ্যের উচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী, ও এক একটা বাড়ি অন্য বাড়ির উপরে পড়ে যায়।
18 আচ্ছা, শয়তানও যদি বিবাদে বিভক্ত হয়, তবে তার রাজ্য কেমন করে স্থির থাকবে? তোমরা তো বলছ, আমি বেয়েজেবুলের প্রভাবে অপদূত তাড়াই !
19 আর আমি যদি বেয়েজেবুলের প্রভাবে অপদৃত তাড়াই, তবে তোমাদের শিষ্যেরা কার প্রভাবেই বা তাদের তাড়ায় ? এজন্য তারাই তোমাদের বিচারক হয়ে দাঁড়াবে।
20 কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের আঙুলের প্রভাবেই অপদূত তাড়াই, তবে নিশ্চয়ই ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের মাঝে এসেই পড়েছে।
21 একজন বলবান লোক যখন অস্ত্রসজ্জিত হয়ে নিজের বাড়ি রক্ষা করে, তখন তার বিষয়-সম্পত্তি নিরাপদে থাকে;
22 কিন্তু তার চেয়ে বলবান কেউ যদি এসে তাকে পরাজিত করে, তাহলে যে সমস্ত অস্ত্রের উপরে তার এত ভরসা ছিল, সে তা কেড়ে নেয়, ও তার কাছ থেকে লুট করা মাল ভাগ করে দেয়।
23 যে আমার সপক্ষে নয়, সে আমার বিপক্ষে, এবং আমার সঙ্গে যে কুড়োয় না, সে ছড়িয়ে ফেলে।
24 অশুচি আত্মা যখন কোন মানুষকে ছেড়ে বেরিয়ে যায়, তখন বিশ্রামের খোঁজে জলহীন নানা জায়গা দিয়ে ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু তা পায় না; তখন সে বলে, আমি যেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি, আমার সেই ঘরেই ফিরে যাব;
25 কিন্তু ফিরে এসে সে তা মার্জিত ও শ্রীমণ্ডিতই পায়;
26 তখন সে গিয়ে নিজের চেয়ে দুষ্ট অপর সাতটা আত্মাকে সঙ্গে নিয়ে আসে, এবং ভিতরে ঢুকে তারা সেখানে বসতি স্থাপন। করে ; ফলে সেই মানুষের প্রথম দশার চেয়ে শেষ দশা আরও খারাপ হয়।'
27 তিনি এই সকল কথা বলছেন, এমন সময়ে ভিড়ের মধ্য থেকে একজন স্ত্রীলোক জোর গলায় বলে উঠল : ‘সুখী সেই গর্ভ, যা আপনাকে ধারণ করেছে; সুখী সেই বুক, যা আপনাকে লালন-পালন করেছে।
28 কিন্তু তিনি বললেন, 'এর চেয়ে তারাই সুখী, যারা ঈশ্বরের বাণী শোনে ও পালন করে।'
29 বহু লোকের ভিড় তাঁর চারপাশে জমছিল, সেসময়ে তিনি বলতে লাগলেন, 'এই প্রজন্মের মানুষ অসৎ এরা একটা চিহ্ন দেখবার দাবি করে, কিন্তু যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্ন এদের দেখানো হবে না।
30 কারণ যোনা যেমন নিনিভে-বাসীদের কাছে চিহ্নস্বরূপ হয়েছিলেন, তেমনি মানবপুত্রও এই প্রজন্মের মানুষদের কাছে চিহ্নস্বরূপ হবেন।
31 দক্ষিণ দেশের সেই রানী বিচারে এই প্রজন্মের মানুষদের বিপক্ষে উঠে এদের দোষী সাব্যস্ত করবেন, কেননা সলোমনের প্রজ্ঞার উক্তি শুনবার জন্য তিনি পৃথিবীর প্রান্ত থেকে এসেছিলেন; আর দেখ, সলোমনের চেয়ে মহত্তর কিছু এখানে রয়েছে।
32 নিনিতের লোকেরা বিচারে এই প্রজন্মের মানুষদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে এদের দোষী সাব্যস্ত করবে, কেননা যোনার প্রচারে তারা মনপরিবর্তন করেছিল; আর দেখ, সোনার চেয়ে মহত্তর কিছু এখানে রয়েছে।
33 প্রদীপ জ্বালিয়ে কেউ তা গুপ্ত জায়গায় বা ধামার নিচে রাখে না, দীপাধারের উপরেই রাখে, যারা ভিতরে আসে তারা যেন আলো দেখতে পায়।
34 তোমার চোখ-ই দেহের প্রদীপ ; তোমার চোখ সরল হলে তোমার গোটা দেহও আলোময় হয় ; কিন্তু চোখ খারাপ হলে তোমার দেহও অন্ধকারময় হয়।
35 অতএব দেখ, তোমার অন্তরে যে আলো রয়েছে, তা যেন অন্ধকার না হয়।
36 তোমার গোটা দেহ আলোময় হলে, তার কোনও অংশও অন্ধকারে না থাকলে, তবে তোমার দেহ সম্পূর্ণরূপেই আলোময় হবে, ঠিক যেমন যখন প্রদীপ নিজের তেজে তোমাকে আলোকিত করে।'
37 তিনি কথা বলা শেষ করলেই একজন ফরিসি তাঁকে ভোজে নিমন্ত্রণ করলেন ; তিনি ভিতরে গিয়ে ভোজে আসন নিলেন।
38 ফরিসি আশ্চর্য হয়ে গেলেন যখন দেখলেন যে, খাওয়া-দাওয়ার আগে তিনি হাত-মুখ ধুয়ে নেননি।
39 কিন্তু প্রভু তাঁকে বললেন, “আপনারা ফরিসি তো থালা-বাটির বাইরের দিকটা পরিষ্কার করে থাকেন, কিন্তু আপনাদের ভিতরটা শোষণ ও দুষ্টতায় ভরা।
40 নির্বোধ ! যিনি বাইরের দিকটা গড়েছেন, তিনি কি ভিতরটাও গড়েননি?
41 ভিতরে যা আছে, তা-ই বরং অভাবীদের দান করুন, তবেই আপনাদের পক্ষে সবই শুচি হবে।
42 কিন্তু হায় ফরিসিরা ! আপনাদের ধিক্! আপনারা যে পুদিনা, তেজপাতা ও সব রকম শাকের দশমাংশ দিয়ে থাকেন, আর ন্যায়বিচার ও ঈশ্বর-প্রেম উপেক্ষা করেন; কিন্তু আপনাদের উচিত ছিল এগুলি পালন করা ও সেগুলিও অবহেলা না করা।
43 হায় ফরিসিরা ! আপনাদের ধিক্! আপনারা যে সমাজগৃহে প্রধান আসন, ও হাটে-বাজারে লোকদের শ্রদ্ধাপূর্ণ অভিবাদন ভালবাসেন।
44 আপনাদের ধিক! আপনারা যে অচিহ্নিত কবরের মত, যার উপর দিয়ে লোকে অজান্তে যাতায়াত করে।
45 তখন বিধানপণ্ডিতদের একজন তাঁকে উদ্দেশ করে বলে উঠলেন, 'গুরু, তেমন কথা বলে আপনি আমাদেরও অপমান করছেন।'
46 কিন্তু তিনি বললেন, 'হায় বিধানপণ্ডিতেরা আপনাদেরও ধিক্! আপনারা যে লোকদের মাথায় দুর্বহ বোঝা চাপিয়ে দিয়ে থাকেন, কিন্তু নিজেরা একটা আঙুল দিয়েও সেই সব বোঝা স্পর্শ করেন না।
47 আপনাদের ধিক! আপনারা যে সেই নবীদের সমাধিমন্দির গেঁথে থাকেন, আপনাদের পিতৃপুরুষেরাই যাঁদের হত্যা করেছিল।
48 এতে আপনারা সাক্ষ্যদান করছেন যে আপনাদের পিতৃপুরুষদের কর্মে আপনাদের সম্মতি আছে : তারা তাঁদের হত্যা করেছিল, আপনারা তাঁদের সমাধিমন্দির গেঁথে তুলছেন!
49 এজন্যই ঈশ্বরের প্রজ্ঞাও বললেন, আমি তাদের কাছে নবী ও প্রেরিতদূতদের প্রেরণ করব; আর তাদের কাউকে তারা হত্যা করবে ও নির্যাতন করবে,
50 যেন জগৎপত্তন থেকে যে সকল নবীর রক্ত ঝরানো হয়েছে, তার হিসাব এই প্রজন্মের মানুষদের কাছে চেয়ে নেওয়া হয়,-
51 আবেলের রক্ত থেকে শুরু ক'রে সেই জাখারিয়ারই রক্ত পর্যন্ত যাঁকে যজ্ঞবেদি ও গৃহের মাঝখানে হত্যা করা হয়েছিল। হ্যাঁ, আমি আপনাদের বলছি, এই প্রজন্মের মানুষদের কাছে এই সমস্ত কিছুর হিসাব চেয়ে নেওয়া হবে।
52 হায় বিধানপণ্ডিতেরা ! আপনাদের ধিক! আপনারা যে জ্ঞানলাভের চাবি সরিয়ে নিয়েছেন। আপনারা নিজেরাও প্রবেশ করলেন না, এবং যারা প্রবেশ করছিল, তাদেরও বাধা দিলেন!'
53 তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে এলে শাস্ত্রীরা ও ফরিসিরা তাঁকে উগ্রতার সঙ্গে প্রতিরোধ করতে ও বহু বহু বিষয়ে তাঁকে কথা বলাতে লাগলেন—
54 তাঁর মুখের কোন একটা কথা ধরবার জন্য তাঁরা ওত পেতে রইলেন।