1 আলেফ আমি সেই মানুষ, যে তাঁর কোপের কশাঘাতে কষ্টের সঙ্গে পরিচিত।
2 তিনি আমাকে চালনা করছেন, আমাকে হাঁটিয়ে চলাচ্ছেন অন্ধকারে, আলোতে নয়।
3 কেবল আমারই বিরুদ্ধে তিনি তাঁর হাত ফেরালেন, হাত ফেরালেন সারাদিন ধরে।
4 তিনি জীর্ণ করছেন আমার মাংস, আমার চামড়া, ভেঙে ফেলছেন আমার হাড়সকল।
5 তিনি অবরোধ করছেন আমায়, আমায় ঘিরে ফেলছেন বিষ ও শ্রান্তি দ্বারা।
6 আমায় বাস করাচ্ছেন অন্ধকার স্থানে, বহুদিনের সেই মৃতদের মত।
7 তিনি আমার চারদিকে প্রাচীর দিয়েছেন, আমি আর বাইরে যেতে অক্ষম ; তিনি ভারী করেছেন আমার শৃঙ্খল।
8 আমি চিৎকার করি, আমি ডাকি, কিন্তু তিনি আমার প্রার্থনা শ্বাসরোধ করেন।
9 বিরাট পাথর দিয়ে তিনি অবরোধ করেছেন আমার পথ, প্রতিরোধক বসিয়েছেন আমার রাস্তায়।
10 তিনি আমার পক্ষে ওত পেতে থাকা ভালুকের মত, অন্তরালে গুপ্ত সিংহের মত।
11 আমার পথ অগম্য করে তিনি দীর্ণ-বিদীর্ণ করছেন আমায়, অসহায় করে ফেলে রাখছেন আমায়।
12 তাঁর ধনুক বেঁকিয়ে আমাকে তাঁর তীরের লক্ষ্যবস্তু করে রাখছেন।
13 তিনি তাঁর আপন তূণের তীর ঢুকিয়েছেন আমার বুকের পাশে।
14 আমি হয়েছি সর্বজাতির উপহাসের বস্তু, সারাদিন ধরে তাদের গানের বিষয়।
15 তিনি আমাকে তিক্ততায় পূর্ণ করছেন, আমার পিপাসায় নাগদানা পান করাচ্ছেন আমায়।
16 তিনি বালু দিয়ে ভেঙে দিচ্ছেন আমার দাঁত, ধুলায় শায়িত করেছেন আমায়।
17 শাস্তি-বঞ্চিতই এখন আমার প্রাণ, মঙ্গল যে কি, তা আমি ভুলে গেছি।
18 আমি বলি : ‘মিলিয়ে গেল আমার প্রতাপ, আমার সেই প্রত্যাশাও, যা প্রভুতে ছিল।'
19 স্মরণ কর আমার দুঃখ, আমার দুর্দশা, তা নাগদানা ও বিষের মত।
20 আমার প্রাণ তা নিত্যই স্মরণ করছে, বুকে তা শুধু অবসন্ন।
21 একথাই আমি বারবার মনে করি, এজন্যই আমার এখনও প্রত্যাশা আছে।
22 প্রভুর কৃপাধারা নিশ্চয়ই ফুরিয়ে যায়নি, তাঁর স্নেহধারাও নিঃশেষিত হয়নি।
23 প্রতি প্রভাতে নতুন নতুন স্নেহ, আহা, তাঁর বিশ্বস্ততা মহান !
24 আমার প্রাণ বলে : 'প্রভুই আমার স্বত্বাংশ, এজন্যই আমি তাঁর উপর প্রত্যাশা রাখব।'
25 তাঁর উপরে যে আশা রাখে, যে প্রাণ তাঁর অন্বেষণ করে, তার পক্ষে প্রভুই মঙ্গল।
26 প্রভুর পরিত্রাণের প্রত্যাশায় থাকা, নীরবেই প্রত্যাশায় থাকা, এ তো মঙ্গল।
27 তরুণ বয়স থেকে জোয়াল বহন করা মানুষের পক্ষে মঙ্গল।
28 সে একাকী বসুক, নীরব থাকুক, তিনিই তার ঘাড়ে তা চেপে রাখছেন ;
29 সে মুখ ধুলায় দিক, এখনও প্রত্যাশা থাকতেও পারে।
30 প্রহারকের কাছে সে গাল পেতে দিক, অবমাননায় পরিপূর্ণ হোক।
31 কেননা প্রভু সবসময়ের মতই পরিত্যাগ করেন এমন নয় :
32 যদিও দুঃখ এনে দেন, তবু তাঁর মহাকৃপা অনুসারে স্নেহ দেখাবেন।
33 কেননা মানবসন্তানদের দুঃখ দিয়ে, তাদের শোকার্ত ক'রে তাঁর ইচ্ছা তৃপ্তি পায়, এমন নয়।
34 দেশের বন্দি সকলকে পায়ের নিচে মাড়িয়ে দেওয়া,
35 পরাৎপরের সাক্ষাতেই মানব-অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা,
36 কারও মামলার অন্যায়-নিষ্পত্তি করা—তেমন কিছু প্ৰভু কি দেখেন না ?
37 প্রভৃ আজ্ঞা না দিলে কার বাণী সিদ্ধিলাভ করে ?
38 পরাৎপরের মুখ থেকে কি অমঙ্গল ও মঙ্গল দুই-ই বের হয় না?
39 জীবিত প্রাণী কেন অসন্তোষ প্রকাশ করে, তার পাপ সত্ত্বেও সে যখন পায়ে দাঁড়াতে পারে ?
40 এসো, আমরা আমাদের আচরণ পরীক্ষা করি, তা তলিয়ে দেখি; প্রভুর কাছে ফিরে যাই।
41 এসো, আমাদের হাতের সঙ্গে হৃদয়কেও স্বর্গনিবাসী ঈশ্বরের উদ্দেশে উত্তোলন করি :
42 আমরাই অধর্ম করেছি, বিদ্রোহী হয়েছি তুমি আমাদের ক্ষমা করছ না।
43 তুমি ক্রোধে নিজেকে আচ্ছন্ন করে আমাদের ধাওয়া করছ, বধ করছ, দয়া না দেখিয়ে।
44 তুমি মেঘে নিজেকে আচ্ছন্ন করেছ, যেন কোন প্রার্থনা তোমার নাগাল না পেতে পারে।
45 তুমি জাতিগুলির মাঝে আমাদের করেছ জঞ্জাল ও আবর্জনার মত।
46 আমাদের শত্রুরা সকলে আমাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলে আছে সত্যি, তারা হা করে আছে।
47 সন্ত্রাস ও ফাঁদ হল আমাদের দশা ; হ্যাঁ, উৎসন্নতা ও বিনাশ।
48 আমার আপন জাতি-কন্যার বিনাশের জন্য আমার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুজল।
49 অশ্রুজলে অঝোরে ভাসছে আমার চোখ, কেননা তার শান্তি নেই।
50 যতক্ষণ না স্বর্গ থেকে প্রভু মুখ বাড়িয়ে দৃষ্টিপাত করেন।
51 আমার নগরীর সকল কন্যার দর্শনে আমার চোখ আমার প্রাণকে আর্দ্রসিক্ত করে।
52 যারা অকারণে আমার শত্রু, তারা আমাকে পাখির মত শিকার করেছে।
53 তারা আমার জীবনকে গহ্বরে একেবারে রুদ্ধ করেছে, পাথর বসিয়ে আমাকে গণ্ডিবদ্ধ করেছে।
54 আমার মাথার উপরে ছাপিয়ে উঠছে জল : আমি বলি : এবার উচ্ছিন্নই আমি!'
55 প্রভু, আমি গভীরতম সেই গহ্বর থেকে করছি তোমার নাম।
56 তুমি তো শুনছ আমার এই কণ্ঠ : 'রক্ষার জন্য আমার এই ডাকের প্রতি কান রুদ্ধ করো না!'
57 আমি ডাকলে তুমি তো কাছেই আছ, তুমি তো বল : ‘ভয় করো না!”
58 প্রভু, বিবাদে তুমি আমার পক্ষেই দাঁড়াচ্ছ, আমার জীবনের মুক্তি আদায় করছ।
59 প্রভু, আমার প্রতি সাধিত এই যত অমঙ্গল, তুমি তো তা সবই দেখছ, আমার অধিকার রক্ষা কর!
60 তুমি তো দেখছ ওদের সমস্ত প্রতিশোধ, আমার বিরুদ্ধে ওরা যত ষড়যন্ত্র আঁটছে, তাও দেখছ তুমি।
61 প্রভু, ওদের টিটকারি তুমি তো শুনতে পাচ্ছ, আমার বিরুদ্ধে ওরা যত ষড়যন্ত্র আঁটছে,
62 আমার প্রতিদ্বন্দ্বীরা যে সমস্ত কথা বলছে, সারাদিন ধরে আমার বিরুদ্ধে ওদের সমস্ত শত্রুমির কথাও শুনতে পাচ্ছ।
63 দেখ, ওরা বসুক বা উঠুক, আমাকে নিয়েই ওদের গান !
64 প্রভু, ওদের হাত যে অপকর্ম সাধন করছে, ওদের দাও তার যোগ্য প্রতিফল।
65 ওদের হৃদয় কঠিন কর, ওদের উপরে নেমে পড়ুক তোমার অভিশাপ !
66 সক্রোধে তাদের পিছনে ধাওয়া কর, স্বর্গের নিচ থেকে তাদের উচ্ছেদ কর, প্রভু।